অনেকবার চেষ্টা করেছি কলম আর ক্যামেরার দাসত্ব থেকে বের হয়ে যেতে..কিন্তু পারি নি....পারবো কিনা জানি না---এভাবেই হয়তো চলবে...
লেখার শিরোনামটি ভালো লাগলো পড়ে তাই পোস্ট করলাম
লেখক : সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ
ইতিহাসের উষাকাল হতেই পূর্ব-ভারতের সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে উত্তর ও দক্ষিণ ভারত থেকে পৃথক বর্ণ-গন্ধ-রূপে। এ-অঞ্চলে মিলন ঘটেছে পূর্ব-পশ্চিম-উত্তর-দক্ষিণের বহু মানুষের জীবনধারার। বঙ্গ-রাঢ়-সমতটে চারদিকের জনস্রোত প্রবেশ করেছে সহজে, কিন্তু বেরোতে পারেনি-নিজ নিজ সংস্কৃতির উপাদান যোগ করতে গিয়ে নিজেরাই রূপান্তরিত হয়েছেন বঙ্গীয় মানুষে।
আমাদের এই বাঙালি-রূপ অবশ্য গড়ে উঠেছে হাজার-বারোশ’ বছর আগে যখন লেখা হচ্ছিল চর্যাপদ, যখন গড়ে উঠেছিল মহাস্থানগড়-পাহাড়পুর, যখন বাংলার বণিক নৌ-ভাসাচ্ছিল সাগরে মসলিন নিয়ে। তারপর পাল-সেন-তুর্কি-পাঠান-মোগল-ইংরেজ এই দেশ শাসন করেছে।
সে-আমলের সুজলা-সুফলা-শস্য-শ্যামলা-অরণ্য কুন্তলা-সমুদ্রমেখলা বাংলার কথা; গোলাভরা ধান, পুকুর ভরা মাছ, গোয়ালভরা গাই-এর কথা কিংবদন্তি হলেও রূঢ় ইতিহাস দুঃখিনী বাংলার কথাই বলে। স্বাধীনতা বা জাতীয়তাবাদের বর্তমান ধারণা তো তখন বিকশিতই হয়নি, তাই সে নিয়ে তর্ক করা অর্থহীন।
ইংরেজ শাসিত ঔপনিবেশিক কালে আধুনিকতা ও গণতন্ত্রের হাওয়া প্রথম লেগেছিল বাংলার পালেই। তাই গণতন্ত্রের কথা, জাতীয়তাবাদের কথা, ঐতিহ্যের কথা, স্বাধিকারের কথা ভারতবর্ষের মধ্যে প্রথম উচ্চারিত হয়েছিল বাংলাতেই। কিন্তু রাজনীতির চক্রাবর্তে বিশ শতকের সত্তরের দশকের আগে স্বাধীন বাংলার অভ্যুদয় ঘটেনি।
ইতিহাসের ঘটনাপ্রবাহে ১৯৭১ সালে বিশ্বের মানচিত্রে প্রথমবারের মত অঙ্কিত হয় স্বাধীন বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আবির্ভূত হন সে ঘটনাপ্রবাহের নায়কের মূর্তিতে। বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে তাঁর নাম লেখা হয়ে যায় স্বাধীন বাংলাদেশের স্থাপতিরূপে।
দীর্ঘ মুক্তি-সংগ্রাম এবং একটি স্বাধীনতা যুদ্ধ-সমগ্র বাঙালি ঝাঁপিয়ে পড়েছিল সে সংগ্রামে। মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে বঙ্গবন্ধু রূপান্তরিত হন একজন রাজনৈতিক নেতা থেকে ইতিহাসের মহানায়কে।
পরিতাপের বিষয়, স্বাধীনতা লাভের মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে একদল অকৃতজ্ঞ বাঙালির হাতে তিনি নির্মমভাবে সপরিবারে নিহত হন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একজন রাজনীতিবিদ ছিলেন, একজন রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন; সর্বোপরি তিনি একজন মানুষ ছিলেন-তাই কিছু ভুল-ভ্রান্তি তাঁর কর্মেরই অংশ হবে, এটাই স্বাভাবিক। স্বাধীনতার পর স্বাধীনতার স্থপতির জীবননাশও ইতিহাসে নতুন কোনো ঘটনা নয়। কিন্তু জাতির একটা অংশ যেভাবে তাঁর কর্ম ও চরিত্রকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করে চলেছে তা শুধু কৃতঘেœর পক্ষেই সম্ভব। এটাও সত্য যে, সে বিতর্ক-প্রচেষ্টা আপামর মানুষের হৃদয় থেকে বঙ্গবন্ধুকে দূরে সরাতে পারে নি।
লেখক : মহাপরিচালক, বাংলা একাডেমী
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।