আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

লোকসভায় আস্থাভোটে বিজয়ী মনমোহন : সরকার বাঁচলেও বাঁচনেনি মান



তুমুল বিতর্ক, হট্টগোল ও কোটি কোটি রুপি লেনদেনের অভিযোগের মধ্য দিয়ে ভারত- মার্কিন পরমাণু সহায়তা চুক্তিকে কেন্দ্র করে নজিরবিহীন এক নাটকীয়তায় গত ২২জুলাই ভারতের লোকসভার ইতিহাসে অনুষ্ঠিত হল ১১তম আ¯'াভোট। ভোটে ক্ষমতাসীনদের বিজয় হলেও ভারতীয় রাজনীতিতে স"ষ্টি হয়েছে প্রবল বিতর্কের। আ¯'াভোটে বিজয়ী হয়ে কংগ্রেস সরকার আপাতত টিকে গেলেও স"ষ্ট বিতর্কে তাদের ভিত কেঁপে উঠেছে একথা বলা যায় নির্দ্বিধায়। ২৭৫ ভোট পেয়ে ১৯ ভোটের ব্যবধানে ক্ষমতাসীনরা বিজয়ী হয়। প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেয় ২৫৬ জন।

১০জন ভোট দানে বিরত ছিলেন। উল্লেখ্য ভারতের লোকসভায় মোট আসন সংখ্যা ৫৪৫। কেন এই আস্থাভোট? ভারতীয় লোকসভার এই আ¯'াভোটের মূলে রয়েছে ঐতিহাসিক ভারত-মার্কিন পরমাণু সহায়তা চুক্তি। এ চুক্তির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ সনদে স্বাক্ষর না করেও যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে পারমাণবিক জ্বালানী খাতে প্রযুক্তিগত সহায়তা পাবে ভারত। বিনিময়ে ভারতের সব পরমাণু চুল্লি আন্তর্জাতিক পরমাণু সং¯'া (আইএইএ)-এর পরিদর্শনের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হবে।

ক্ষমতাসীন ইউপিএ জোটের বাম শরিক ও বিজেপির যত অভিযোগ এখানেই। আন্তর্জাতিক আণবিক সং¯'ার পরিদর্শকদের জন্য সব ¯'াপনা উন্মুক্ত করার বিপক্ষে তারা। সেক্ষেত্রে বাম দলগুলোর যুক্তি, এ চুক্তির মাধ্যমে ভারতের পরমাণু ক্ষেত্র ও পররাষ্ট্র নীতির ওপর সাম্রাজ্যবাদী যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ আরও জোরালো হবে। আর বিজেপির বক্তব্য ভারত কিছুতেই পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা সংকুচিত করে নিজের নিরাপত্তা বিঘিœত করতে পারে না। যাই হোক, এ চুক্তিকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন ইউপিএ জোটের প্রধান শরীক কংগ্রেসের সাথে বামপš'ী দলগুলোর বিরোধের এক পর্যায়ে সরকারের উপর থেকে বামপš'ী দলগুলো সমর্থন প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর লোকসভায় এ আ¯'া ভোট অপরিহার্য হয়ে পড়ে।

আগাম নির্বাচন এড়াতে অন্য দলগুলোর কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সমর্থন লাভের জন্য প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং- কে আ¯'া ভোটের মুখোমুখি হতে হয়। বিজেপি ও বামপন্থীদের গোপন অভিপ্রায় : প্রকাশ্যে দেশের স্বার্থের কথা বললেও মনমোহন সরকারের বিরোধিতার পেছনে বিরোধীদল বিজেপি এবং সরকারের এত দিনের মিত্র বামপš'ী দলগুলোর এক্ষেত্রে ভিন্ন কোন অভিপ্রায় থাকতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলেন, যে পরমাণু চুক্তিকে কেন্দ্র করে বিজেপি ইউপিএ সরকারের বিরোধিতা করছে, সে চুক্তির প্রক্রিয়াটি শুরু হয়েছিল অটল বিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ক্ষমতায় থাকা অব¯'ায়। তারপরও বিজেপি সরকারের বিপক্ষে ভোট দিয়েছে। বিজেপি নেতাদের ধারণা ছিল, আস্থাভোটে হারলে আগাম সাধারণ নির্বাচন অনিবার্য।

আর এই নির্বাচনের সুফল তারা ঘরে তুলতে পারবে। কারণ, ভারতে মুদ্রাস্ফীতি বর্তমানে সাড়ে ১১ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির আকাশছোঁয়া দামে ভীষণ ক্ষুব্ধ সাধারণ জনতা। জনগণের এই ক্ষোভকে কাজে লাগাতে চেয়েছিল বিজেপি’র নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট। অন্যদিকে বামপš'ীরা তিনটি রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ, কেরালা ও ত্রিপুরায় ক্ষমতাসীন।

এই তিনটি রাজ্যেই তাদের অন্যতম প্রধান প্রতিপক্ষ কংগ্রেস। লোকসভা নির্বাচনের সময় এগিয়ে আসায় বামফ"ন্টের নেতারা ভেবেছিলেন, কেন্দ্রে কংগ্রেস সরকারের সাথে থাকলে আসন্ন নির্বাচনের সময় সরকারের প্রতি জনগণের ক্ষোভ তাদেরও বিপক্ষে যাবে। অনেকটা এ বিবেচনা থেকেই তারা লোকসভা নির্বাচনের প্রায় এক বছর আগে সরকারের ওপর থেকে তাদের সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয়। যদিও ২০০৪ সালের নির্বাচনে ঝুলন্ত লোকসভায় ইউপিএ জোটকে ক্ষমতায় বসানোর ক্ষেত্রে বাম নেতাদের ভূমিকা ছিল বেশ জোরালো। তাই আ¯'াভোটের দিন বিতর্কে অংশ নিয়ে মনমোহন সিং প্রবীণ দুই সিপিআই (এম) নেতা জ্যোতি বসু ও হরকিষেণ সিং সুরজিতকে ধন্যবাদ দিতে কার্পণ্য করেননি।

যেভাবে হলো ভোটাভুটি : আস্থাভোটের পক্ষে পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং-এর ভাষণের পর প্রথমে ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতিতে ভোট নেয়া হয়। এতে দেখা যায়, সরকারের আ¯'া প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে ২৫৩ জন সংসদ সদস্য, বিপক্ষে ভোট পড়েছে ২৩২। আর অনুপ¯ি'ত দেখানো হয়েছে দু’জন পার্লামেন্ট সদস্যকে। অর্থাৎ প্রদত্ত ভোটে সরকার পক্ষ ২১ ভোট বেশি পেয়েছে। কিš' প্রায় ৫১ জন পার্লামেন্ট সদস্য অভ্যাস না থাকায় ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে নিজের ভোট দিতে পারেননি।

তাছাড়া বেশ কিছু ভোটার অনভ্যাসের কারণে সঠিক সময়ে ভোটিং মেশিনের বোতাম চাপতে পারেননি। তাই ব্যালট পেপারের মাধ্যমেই ভোট নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন স্পিকার। ভোটের ফলাফল : লোকসভায় ভোটাভুটির পর ভোটপত্র গননা শেষে দেখা যায়, সরকারে পক্ষে ভোট পড়েছে ২৭৫টি। আর বিপক্ষে পড়েছে ২৫৬ ভোট। অর্থাৎ ১৯ ভোটের ব্যবধানে সরকারপক্ষ জয়লাভ করল এই আ¯'াভোটে।

অবশ্য ভোটাভুটির সময় বিরোধী পক্ষের ১১জন সংসদ সদস্য অনুপ¯ি'ত ছিলেন। ঘুষ দেয়ার অভিযোগে তোলপাড় লোকসভা : লোকসভায় ভোটাভুটির আগে এক জরিপে দেখা গিয়েছিল, সরকারের পক্ষে এমপি ছিলেন ২৬৯ আর বিপক্ষে ২৬৮ জন। ৪জন কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারছিলেন না। অথচ ভোটে জিততে সকারের প্রয়োজন ছিল ২৭২ জনের সমর্থন। সুতরাং সরকার এক্ষেত্রে সংসদ সদস্য কিনতে পারে এমন অনুমান আগে থেকেই করা হ"িছল।

কিš' ভোটের দিন বিজেপির এক সংসদ সদস্য অশোক আরগল ১ লাখ টাকার ১০০টি বান্ডিলভর্তি ব্যাগ নিয়ে সরাসরি হাজির হন লোকসভায়। তিনি অভিযোগ করেন, ঐ দিন সকালেই তার দিল্লি¯' ৪ নম্বর ফিরোজ শাহ রোডের বাড়িতে সমাজবাদী পার্টির নেতা অমর সিংহের নির্দেশে এক ব্যক্তি ঐ টাকা দিয়েছেন তাকে। তিনি এবং তার আরও দুই বিজেপি সদস্য যাতে সংসদে অনুপ¯ি'ত থাকেন সেজন্য ৯ কোটি রুপি দেয়ার প্রতিশ্রুতিও দেয়া হয়েছে তাকে। তার মধ্যে এই এক কোটি দেয়া হয়েছে অগ্রিম। পুরো ঘটনাটি একটি টিভি চ্যানেলের ক্যামেরাবন্দী করা হয়েছে বলেও তথ্য দেন তিনি।

এরপরই উত্তাল হয়ে ওঠে লোকসভা। বিজেপির সঙ্গে সুর মিলিয়ে বামপš'ীরাও বিষয়টি তদন্তের দাবি জানান। তখন স্পীকারের আসনে ছিলেন ডেপুটি স্পিকার চরণজিৎ সিং আটওয়াল। বিষয়টি তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যা"েছ দেখে সভায় আসেন স্পীকার সোমনাথ চট্টপাধ্যায়। কিš' তিনিও বিরোধীদের সমবেত প্রতিবাদের সামনে দাড়াতে না পেরে সভা মুলতবি করে চলে যান।

যেভাবে শান্ত হলো লোকসভা : ঘটনার পরে লোকসভার সদস্যদের শান্ত করতে, দিল্লির পুলিশ প্রধানকে ডেকে ঘটনাটির তদন্ত করার নির্দেশ দেন স্পীকার সোমনাথ চট্টপাধ্যায়। পাশাপাশি পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করতে ডাকা হয় সর্বদলীয় সভা। সভাশেষে সোমনাথ বাবু সংসদ সদস্যদের আশ্বাস দেন, দোষী কাউকেই ছাড়া হবে না। তিনি বলেন, ‘শাস্তি দেয়ার ভারটা আমার উপর ছেড়ে দিন। ঘটনা সত্য হলে নজিরবিহীন শাস্তি হবে সংশ্লিষ্টদের’।

স্পিকারের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে ধীরে ধীরে শান্ত হন লোকসভার সদস্যরা। এর আগেও ঘটেছে ঘুষ কেলেঙ্কারী : এবারের ঘটনার আগে, বিজেপির সভাপতি বঙ্গারু লক্ষণ ঘুষ গ্রহণ করে ক্যামেরাবন্দী হয়ে ছিলেন। তার আগেও সরকার বাঁচাতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নরসীমা রাও এবং বুটা সিং ঝাড়খ মুক্তিমোর্চার সাংসদ শৈলেন্দ্র মাহাতো ও শিবু মোরেনকে কয়েক কোটি রুপি ঘুষ দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছিল। কিš' ঘুষের টাকা সংসদে নিয়ে আসার ঘটনা এবারই প্রথম। তবে প্রশ্ন উঠেছে, এত টাকা নিয়ে একজন সংসদ সদস্য কীভাবে সংসদে ঢুকলেন? নিরাপত্তারক্ষীদের চোখেও কি পড়েনি টাকাগুলো? রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের প্রতিক্রিয়া : আস্থাভোটে বিজয়ের পর মনমোহন সিং বলেন, “সোনিয়াজি ও ইউপিএ’র সব নেতাকে ধন্যবাদ।

আর যারা আমাদের জয়ের জন্য সক্রিয় ছিলেন, ধন্যবাদ তাঁদেরকেও। এই জয় সারা দুনিয়ায় এই বার্তা ছড়াবে যে, ভারত বিশ্বসভায় নিজের জায়গা চাইছে। ” তিনি আরও বলেন, তার সরকার এখন পরমাণু চুক্তি করার ব্যাপারে সম্পূর্ণ স্বাধীন। অপরদিকে সরকারের সাবেক মিত্র সিপিএম-এর সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাত মন্তব্য করেন, ভারতীয় গণতন্ত্রের জন্য চরম দুঃখজনক দিন আজ। আজ পারমাণবিক চুক্তির জন্য সকল নৈতিকতা পরিহার করা হয়েছে।

বিরোধীদল বিজেপির প্রেসিডেন্ট রাজনাথ সিং বলেন- ‘এই জয় দুর্নীতির। লোকসভায় অনুপ¯ি'ত কিংবা সরকারের পক্ষে ভোট দেয়ার জন্য আমাদের সদস্যদের উপর চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে। আমাদের পার্লামেন্টে কখনও এমন লজ্জাকর ও কলঙ্কজনক ঘটনা ঘটেনি। ’ তবে সরকার সমর্থক কাশ্মীরের আইনপ্রণেতা ওমর আব্দুল্লাহ বলেছেনÑ যদিও সরকারের জয় হয়েছে, তবে পার্লামেন্ট আজ হেরেছে। ভারত ও বিশ্বে ভোটপরবর্তী প্রতিক্রিয়া : আস্থাভোটে মনমোহন সরকারের বিজয়ের পর ঘটে চলছে একের পর এক ঘটনা।

বামপš'ীদের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে নতুন রাজনৈতিক ফ"ন্ট, বিভিন্ন দল বহিস্কার করেছে তাদের সংসদ সদস্যদের। এমনকি লোকসভার স্পিকার ১০ বারের নির্বাচিত এমপি সোমনাথকেও দল থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। ভারতের শেয়ার বাজারে দেখা দিয়েছে চাঙ্গাভাব। এদিকে আ¯'াভোটে মনমোহন সরকার জিতে যাওয়ায় উজ্জীবিত মার্কিন সরকারও। বিজয়ের পর মনমোহনকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আশা প্রকাশ করা হয়েছে যে, ভারত সরকার এখন দ্রুত চুক্তিটি বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যাবে।

ভারতের চির প্রতিদ্বন্দী পাকিস্তান সরকারও মনমোহনকে অভিনন্দন জানিয়েছে। যারা বহিষ্কৃত হয়েছেন দল থেকে: আ¯'াভোটে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকারের বিজয়ের পর বিরোধীদল বিজেপি বহিস্কার করেছে তাদের ৮ এমপিকে। এদের ৪ জন সরকারের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন, আর বাকি ৪ জন ছিলেন অনুপ¯ি'ত। বহিস্কৃত বিজেপি সদস্যরা হলেন- ব্রিজভুষণ শরণ সিং, মঞ্জুনাথ, চন্দ্রভান সিং, এইচ টি স্যাঙ্গিয়ানা, মনোরমা, হরিভাই মাধব, বাবু ভাই কাটারা ও সোমভাই প্যাটেল। অন্যদিকে তেলুগু দেশম পার্টি একই কারণে তাদের ২ এমপি ডি কে আদিকেশভুলু নাইডু ও এম জননাধামকে বহিস্কার করেছে।

উল্লেখ্য পার্লামেন্টে দলটির ৫ জন সদস্য রয়েছেন। ঘটনার পর সিপিআই(এম) বহিস্কার করেছে তাদের প্রায় অর্ধশতাব্দীর সতীর্থ, ১০ বারের নির্বাচিত এমপি ও বর্তমান লোকসভার স্পিকার সোমনাথ চট্টপাধ্যায়কে। অবশ্য দল থেকে বহিস্কারের পরও স্পিকার পদে থাকতে সোমনাথের কোন অসুবিধা হবে না। বিরোধীদের নতুন ফ্রন্ট: অব্যাহত দ্রব্যমূল্য ব"দ্ধি এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাথে পারমাণবিক চুক্তি প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন গড়ে তুলতে ভারতের কমিউনিস্টরা ও অন্য বিরোধী দলের একটি নতুন ফ"ন্ট গঠন করা হয়েছে। এ ফ"ন্টে রয়েছে সরকারের সাবেক মিত্র চার বামপš'ী দল এবং সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী(?) মায়াবতীর নেতৃত্বাধীন বহুজন সমাজপার্টি (বিএসপি)।

এগিয়ে যাচ্ছেন মনমোহন: এদিকে আস্থাভোটে বিজয়ের পর সরকারের অনিশ্চয়তা কেটে গেছে বলে ধারণা করা হ"েছ। মনমোহন সরকার পরমাণু চুক্তিকে দ্রুত এগিয়ে নেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র সরকারও উজ্জীবিত হয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছ। সরকার টিকে যাওয়ায় ভারতের শেয়ার বাজার হয়েছে চাঙ্গা। সরকারের অর্থনৈতিক সংস্কারের পথও সুগম হয়েছে।

তবে বিরোধী বিজেপি ও বামদলগুলো সারাদেশে সরকারের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানোর ঘোষণা দিয়েছে। সে অনুযায়ী কাজও শুরু করেছে তারা। এর আগেও হয়েছে আস্থাভোট: ভারতের লোকসভার ইতিহাসে এটাই প্রথম আ¯'া ভোট নয়। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে ১০ বার অনুষ্ঠিত হয়েছে এ ধরণের ভোট। প্রথম আ¯'া ভোট অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭৯ সালে।

গত ২৯ বছরে অনুষ্ঠিত ১০টি আস্থাভোটের মধ্যে সরকার পক্ষ ৬বার বিজয়ী হয়। ভোটাভুটির আগেই প্রধানমন্ত্রী হার স্বীকার করে পদত্যাগ করায় ২ বার ভোটই অনুষ্ঠিত হয়নি। ১৯৭৯ সালের আগে কখনো আস্থাভোটের প্রয়োজন হয়নি। কেননা ১৯৫২ থেকে ১৯৭৭ পর্যন্ত লোকসভায় কংগ্রেস সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয়ী ছিল। মনমোহন সিং-ই প্রথম প্রধানমন্ত্রী যিনি তার বিরুদ্ধে অনুষ্ঠিত আ¯'াভোটে লোকসভার সদস্য না হওয়ার কারণে ভোট দিতে পারেননি।

তাছাড়া ১৯৮৯ সালের পর তিনিই প্রথম প্রধানমন্ত্রী যিনি ৪ বৎসর ধরে অফিস করার পর আস্থাভোটের সম্মুখীন হলেন। ভিপি সিং পরবর্তী ৬ জন প্রধানমন্ত্রীই তাদের প্রথম ২ বছর অফিসকালের মধ্যে আস্থাভোটের মুখোমুখি হন। এছাড়া ১৯৭৯ সালের ২০ আগস্ট অনুষ্ঠিতব্য আ¯'াভোটের আগে প্রধানমন্ত্রী চরণ সিং এবং ১৯৯৬ সালের ২৭-২৮মে অনুষ্ঠিতব্য আ¯'াভোটের মুখোমুখি হয়ে অটল বিহারী বাজপেয়ী, নিশ্চিত পরাজয়ের কথা ভেবে ভোট অনুষ্ঠানের আগেই পদত্যাগ করেন। বিগত আস্থাভোটসমূহ: ১ম দফা আস্থাভোট ১৯৭৯ সালের ২০ আগস্ট চরন সিং প্রধানমন্ত্রী থাকা অব¯'ায় জনতা পার্টিতে ভাঙ্গন দেখা দিলে লোকসভায় প্রথম আস্থাভোটের প্রয়োজন পড়ে। ভোটে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সমর্থন পাবেন না বুঝতে পেরে চরন সিং পদত্যাগ করেন।

এমনকি তিনি পার্লামেন্টে পর্যন্ত আসেননি। ২য় দফা আস্থাভোট প্রথম আস্থাভোটের প্রায় এক দশক পরে ১৯৮৯ সালের ডিসেম্বর মাসে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ভি পি সিং ভারতীয় লোকসভায় দ্বিতীয় বারের মত আস্থাভোটের সম্মুখীন হন। ভোটে জয়লাভ করেন তিনি এবং তার সরকার টিকে যায়। ৩য় দফা আস্থাভোট ২য় দফা আ¯'াভোটের মাত্র ১১ মাস পর ১৯৯০ সালের ৮ নভেম্বর ইস্যুতে বিজেপি সমর্থন প্রত্যাহার করলে ভি পি সিং আবার আস্থাভোটের সম্মুখীন হন। আস্থাভোটে ভিপি সিং ১৪২-৩৪৬ ভোটে হেরে যান।

উগ্রপš'ী হিন্দুদের সমর্থিত বিজেপি ষোড়শ শতকে নির্মিত অযোধ্যার বাবরী মসজিদের স্থলে রামমন্দির স্থাপনের দাবী জানিয়েছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী কোন সিদ্ধান্ত না দেয়ায় বিজেপি সরকারের ওপর থেকে তাদের সমর্থন প্রত্যাহার করেছিল। সরকারের পতন নিশ্চিত করতে কংগ্রেসও বিজেপির সাথে হাত মিলিয়েছিল সেসময়। ৪র্থ দফা আস্থাভোট ১৯৯০ সালের নভেম্বরে চন্দ্র শেখর রাজীব গান্ধির কংগ্রেসের সমর্থনে প্রধানমন্ত্রী হন। কিš' মাত্র ৫ মাসের মাথায় রাজীব গন্ধীর কংগ্রেস সরকার থেকে সমর্থন প্রত্যাহার কররে চন্দ্র শেখর পদত্যাগ করেন।

৫ম দফা আস্থাভোট ১৯৯১ সালের জুলাই মাসে প্রধানমন্ত্রী পি ভি নরসীমা রাও আস্থাভোটের সম্মুখীন হয়ে ২৬৫-২৫১ ভোটে বিজয়ী হন। পরবর্তীতে সমর্থন কমে গেলেও পুরো পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকেন। ৬ষ্ঠ দফা আস্থাভোট ১৯৯৬ সালে মে মাসে অটল বিহারী বাজপেয়ী আস্থাভোটের মুখোমুখি হয়েছিলেন। কিš' তিনি ভোটের পূর্বেই পদত্যাগ করেন। কারণ টিকে থাকার মত সমর্থন তার সরকারের ছিলনা।

৭ম দফা আস্থাভোট একই বছরের জুন মাসে এইচ ডি দেব গৌড় একটি আস্থাভোটে জিতলেও মাত্র ১০ মাস পর কংগ্রেসের সমর্থন প্রত্যাহারের কারণে তার সরকারের পতন হয়। ৮ম দফা আস্থাভোট ১৯৯৭ সালের এপ্রিল মাসে আইকে গুজরাল ইউনাইডেট ফ"ন্ট সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হন। তবে সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন হারানোর পর ১৯৯৭ সালের নভেম্বরে তিনি পদত্যাগ করেন। ৯ম দফা আস্থাভোট আইকে গুজরাল সরকারের পতনের পর এনডিএ ১৯৯৮ সালে লোকসভায় একক সংখ্যাগরিষ্টতা অর্জন করে। ফলে ১৯৯৮ সালের মে সাসে অনুষ্ঠিত এক আস্থাভোটে বাজপেয়ী বিজয়ী হন।

১০ম আস্থাভোট ১৯৯৯ সালের মে মাসে অনুষ্ঠিত আস্থাভোটে বাজপেয়ী মাত্র ১ ভোটের জন্য হেরে যান। এসময় তার পক্ষে ২৬৯, বিপক্ষে ২৭০ ভোট পড়েছিল। বাজপেয়ীই একমাত্র প্রধানমন্ত্রী যাঁর দুবার আস্থাভোটে হারের নজির আছে। বিগত অনাস্থাভোটসমূহ: ১৯৫২ সাল থেকে এ পর্যন্ত ভারতীয় লোকসভায় বিরোধীদের পক্ষ থেকে ২৬ বার অনাস্থা প্রস্তাব উপস্থাপিত হয়। তন্মধ্যে ইন্দিরা গান্ধী ১৫ বার, লাল বাহাদুর শাস্ত্রী ও নরসীমা রাও প্রত্যেকে ৩ বার, মরাজি দেশাই ২ বার এবং জওহর লাল নেহেরু, রাজিব গান্ধী এবং বাজপেয়ী প্রত্যেকে ১ বার করে অনাস্থা ভোটের সম্মুখীন হন।

১৯৫২ সাল থেকে এ পর্যন্ত উপস্থাপিত অনাস্থা প্রস্তাবে একমাত্র প্রধানমন্ত্রী মোপরাজি দেশাই ১৯৭৯ সালের ১২ জুলাই পরাজিত হয়ে পদত্যাগ করেন এবং বাকি সবগুলোই অনাস্থা প্রস্তাবই বাতিল হয়ে যায় অর্থাৎ এগুলোর ফলাফল ছিল নেতিবাচক। আস্থাভোট - অনাস্থাভোট: আস্থাভোট হ"েছÑ নির্বাচিত সরকার কর্র্ত"ক পার্লামেন্টের সদস্যদের প্রদত্ত একটি প্রস্তাব, যেটির পক্ষে কিংবা বিপক্ষে ভোট দিয়ে পার্লামেন্টের সদস্যরা সরকারের প্রতি তাদের সমর্থন কিংবা অনাস্থা জানাতে পারেন। এ প্রস্তাব সরকারের সদস্যরা যৌথভাবে কিংবা প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের যে কোন সদস্যই পার্লামেন্টে উপস্থাপন করতে পারেন। অধিকাংশ সদস্য যদি প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয় তবে ঐ সরকার তার মেয়াদ পূর্ণ করতে পারে। আর যদি বিপক্ষে ভোট দেন, তাহলে সরকারের সামনে দুটি বিকল্প থাকে।

সরকারের পদত্যাগ কিংবা আগাম সাধারণ নির্বাচন । সরকারকে এ দুটি বিকল্পের একটিকে অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে। অন্যদিকে অনাস্থা ভোট হচ্ছেÑ পার্লামেন্টে সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধীদল কর্তৃক আনিত প্রস্তাব। সরকারকে পরাজিত কিংবা দূর্বল করার উদ্দেশ্যে বিরোধীদল এ ধরণের প্রস্তাব উপস্থাপন করে থাকে। আস্থাভোট ও অনাস্থাভোটের মধ্যে একটি সুক্ষ্ম পার্থক্য আছে যা আমাদের অনেকেরই অজানা।

পার্থক্যটি হলোÑআস্থাভোটের প্রস্তাব সরকার উপস্থাপন করে কিš' অনাস্থা প্রস্তাব উপস্থাপন করে বিরোধীদল। বিশ্বের প্রথম অনাস্থাভোট: পার্লামেন্টের ইতিহাসে প্রথম অনাস্থা ভোট অনুষ্ঠিত হয় ১৭৮২ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে। সেসময় আমেরিকার সাথে ব্রিটিশদের যুদ্ধে ইয়র্কটাউনে ব"টিশরা পরাজিত হলে গ্রেট ব্রিটেনের পার্লামেন্টে তৎকালীন মন্ত্রিপরিষদের বিরুদ্ধে এ অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়। তখন প্রধানমন্ত্রী লর্ড নর্থ, রাজা তৃতীয় জর্জের কাছে পদত্যাগপত্র পেশ করেন। হ


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.