আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ও বন্ধু তোদের মিস করছি ভীষণ

মধ্যবয়সী এক মানুষ সময় পেলেই খুঁজে ফেরে তার সোনালী অতীত

হারিয়ে গেছে বন্ধু মিজান- মিজানুল মাহবুব। মেধাবী ছিল। আঁকার হাতটা ছিল দারুণ। বুয়েটে যখন স্থাপত্য বিভাগে ভর্তি হলো আমরা কেউ অবাক হইনি। ক্যাডেট কলেজে ঢুকে আমাদের অধিকাংশ বন্ধুর ড্রইংয়ে হাতখড়ি হয়েছিল।

সেসময় মিজান, সোহেলসহ কয়েকজনকে আমরা রীতিমতো ঈর্ষা করতাম। মিজান স্থাপত্য পড়া শেষ করে ছোটখাট কিছু কাজ করছে এমন সময় তার অসুখটা ধরা পড়লো। দুটো কিডনিই তার পুরো নষ্ট হয়ে গেছে। রোগের সঙ্গে লড়াই করতে করতে বন্ধু মিজান হারিয়ে গেল। তাও ১৫ বছর হয়ে গেল।

তোর অভাবটা ভীষণভাবে অনুভব করি বন্ধু। আরেক বন্ধু শিলার। চমৎকার নজরুল গীতি গাইতো। কলেজে ক্লাস সেভেনে আমাদের যে সম্বর্ধনাটা হয়েছিল সেখানে শিলার গেয়েছিল, "আমার যাবার সময় হলো দাও বিদায়"। কলেজ থেকে ১৯৮০ সালে বেরুনোর পর শিলারের সঙ্গে তেমন আর দেখা হয়েছিল কিনা মনে নেই।

কেমন করে যেন শিলার হারিয়ে গেল কেউ জানে না। আজো আমরা বন্ধুরা যখন একসঙ্গে হই ওর কথা ওঠে। কেউ জানে না কোথায় গেছে শিলার। একটা জলজ্যান্ত মানুষ এভাবে হারিয়ে যায়! মরে গেলে শরীরটাতো পড়ে থাকে। কিন্তু সেটাও আজো আমরা পাইনি।

সময়ে-অসময়ে শিলারের গানটা বেঁজে ওঠে। ১৯৭৪ সালের ১৭ আগস্ট ফৌজদারহাটে আমরা ৫৬টি বালক ভর্তি হয়েছিলাম। এখন আমরা জানি সময়ের স্রোতে দুজনকে হারিয়ে ফেলেছি। অনেকদিন যোগাযোগ নেই হাসিবুল, মঞ্জুর ওয়াহিদের সঙ্গে। হাসিবুল শান্তিনগর থাকে।

ব্যবসা করে জানি। দেখা হয় না। মঞ্জুর ওয়াহিদ আরেক দারুণ বন্ধু, প্রানবন্ত সারাক্ষণ। হিন্দি গান ছিল ওর মুখে। একের পর এক গেয়ে যেত।

সত্তুর-আশির দশকের হিট হিন্দি গানগুলো ও যখন চিৎকার করে বাথরুমে গাইতো শুনে শুনে আমরাও শিখে নিতাম। সর্বশেষ শুনেছিলাম ও আছে সৌদি আরবে। বহু বছর কেটে গেল দেখি না ওকে। বন্ধুদের অনেকে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অষ্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডে থাকে। বেশির ভাগই অবশ্য ঢাকা আর চট্টগ্রামে।

ইয়াহু গ্রুপে প্রবাসীদের সঙ্গে খোঁচাখুঁচি, তর্ক-বিতর্ক চলে। মাসে-দুমাসে কখনো দু সপ্তাহে আমাদের পরস্পরের সঙ্গে দেখা হয় কারো না কারো বাসায়। বউ-বাচ্চারা থাকে, খেতে খেতে আড্ডা চলে। সামনে ১৭ আগস্ট। আগে বা পরের এক ছুটির দিনে আমরা আবার বসবো অলস আড্ডায়।

দেখতে দেখতে আমাদের বন্ধুত্বের ৩৪টা বছর হয়ে গেল। ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজের ৫০ বছর পূর্তি হলো এ বছর। সামনের ডিসেম্বরে কলেজে মহা(!)পূনর্মিলনী হবে। বিদেশ থেকে বন্ধুরা প্রস্তুত হচ্ছে দেশে আসার। ফিরোজ, আবুল কামাল, সাঈদ, ফাহাদ ইতিমধ্যে জানিয়েছে তারা আসছে।

সম্ভবত আসবে সাজিদও। আরো কেউ কেউ। ডিসেম্বরের আমাদের বন্ধুদের পূর্নমিলনীর জন্য ভীষণ অপেক্ষা করছি আমরা সবাই। ব্লগে এখন তরুণ-কিশোরদের রাজত্ব। আমার বয়সীদের সংখ্যা হাতে গোনা।

তবে এই জগৎটা ভীষণ উপভোগ করি। এখানে এলে আমার বয়সটা কমে যায়। সবুজ-প্রাণবন্ত হয়ে উঠি। ভালবাসি ব্লগের অদেখা-অচেনা সব নতুন বন্ধুদের। এই বন্ধু দিবসে আমার নতুন বন্ধুদের জন্য উষ্ণ ভালোবাসা।

ভালো থেকো বন্ধু তোমরা, আমিও ভালো থাকবো।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.