আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অতীশ দীপঙ্কর।



অতীশ দীপঙ্কর ৯৮২ খ্রিস্টাব্দে বিক্রমপুর পরগনার বজ্রযোগিনী গ্রামে জন্মুগ্রহণ করেন। এটি বর্তমানে বাংলাদেশের মুন্সিগঞ্জ জেলার অন্তর্ভুক্ত। অতীশ দীপঙ্করের বাসস্থান এখনও 'নাস্তিক পণ্ডিতের ভিটা' নামে পরিচিত। অতীশ দীপঙ্কর গৌড়ীয় রাজ পরিবারের রাজা কল্যাণশ্রী ও প্রভাবতীর সন্তান। ছোটবেলায় তাঁর নাম ছিল আদিনাথ চন্দ্রগর্ভ।

তিন ভাইয়ের মধ্যে অতিশ ছিলেন দ্বিতীয়। আদিনাথ প্রথমে নিজের মায়ের কাছে এবং পরে সে সময়ের প্রখ্যাত বৌদ্ধ পন্ডিত অবধূত জেতারির কাছে বিদ্যালাভ করেন। তিনি জ্ঞানার্জনের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়িয়েছেন এবং বহু গুরুর কাছে দীক্ষা গ্রহণ করেছেন। রাজগৃহের দক্ষিণে সাতটি পর্বত ঘেরা নির্জন পরিবেশে অতীশ ১২-১৮ বছর বয়স পর্যন্ত বাস করেন এবং অবদূতীপাদ নামক দীক্ষাগুরুর কাছ থেকে তন্ত্র শাস্ত্র শিক্ষালাভ করেন। তিনি ১৮ থেকে ২১ বছর বয়স পর্যন্ত চুরাশী সিদ্ধাচার্যের অন্যতম ও বিক্রমশীলা বিহারের উত্তর দ্বারের দ্বার পন্ডিত নারোপা/ নাঙপাদ এর কাছে তন্ত্র শাস্ত্র শিক্ষালাভের জন্য শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন।

১০১১ সালে তিনি ১২৫জন অনুগামী ভিক্ষুসহ এক সওদাগরী জাহাজে মালয়দেশের সুবর্ণদ্বীপে যান এবং সেখানে প্রখ্যাত আচার্য ধর্মকীর্তির কাছে ১২ বছর বৌদ্ধশাস্ত্র অধ্যয়ন করেন। সেখানে তিনি বহু পন্ডিতব্যক্তিকে যুক্তি-তর্কে পরাজিত করে ক্রমেই একজন অপ্রতিদ্বন্দী পন্ডিত হয়ে উঠেন। ফেরার পরে কিছু দিন শ্রীলংকায় অবস্থান করে ১০২৫ খ্রিস্টাব্দে ৪৪ বছর বয়সে তিনি আবার ভারতবর্ষে ফিরে আসেন। এ সময় বজ্রাসন মহাবোধি বিহারে (বর্তমান বৌদ্ধগয়া) আয়োজিত সংবর্ধনায় তার অসামান্য পান্ডিত্যের জন্য 'ধর্মপাল' উপাধি দেওয়া হয়। ভারতবর্ষে ফিরে ১৫ বছর ধরে তিনি ওদন্তপুরী ও সোমপুরী বিহারে অধ্যাপক ও পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন।

বঙ্গদেশের রাজা প্রথম মহীপালের অনুরোধে বিক্রমশীলা মহাবিহারের প্রধান অধ্যক্ষের পদ গ্রহণ করেন। তিব্বতের রাজা হ্লা-লামা তাঁকে সেখানে ধর্ম প্রচারের আহ্বান জানান, কিন্তু দীপঙ্কর তা প্রত্যাখ্যান করেন। তিব্বতের পরবর্তী রাজা চ্যান-চাব জ্ঞানপ্রভ তাঁকে পুনরায় আমন্ত্রণ করলে তিনি ১০৪১ সালে বিক্রমশীলা বিহার থেকে যাত্রা শুরু করে দুর্গম হিমালয় পর্বতমালা পার হয়ে তিব্বতে যান। পথে নেপালের রাজপুত্র পথপ্রভা তাঁর কাছ থেকে বৌদ্ধধর্মে দীক্ষাগ্রহণ করেন। তিব্বতে পৌঁছে দীপঙ্কর রাজকীয় মর্যাদা লাভ করেন।

এখনও সেখানকার মঠের প্রাচীরে এই সংবর্ধনার দৃশ্য আঁকা আছে। তিব্বতবাসীরা গৌতম বুদ্ধের পরেই তাঁকে স্থান দেয় এবং তাঁকে 'জোবো ছেনপো' বা মহাপ্রভুরূপে মান্য করে। তিনি তিব্বতে বহু প্রাচীন সংস্কৃত পুঁথি আবিষ্কার করেন এবং নিজ হাতে সেগুলির প্রতিলিপি করে বাংলায় পাঠান। অতীতের তিব্বতের যেকোন আলোচনাতেই অতীশ দীপঙ্কর ঘুরে ফিরে আসেন। তিনি তিব্বতের ধর্ম, ইতিহাস, রাজকাহিনী, জীবনীগ্রন্থ, ও স্তোত্রনামা লেখেন।

তাঁর মূল সংস্কৃত রচনাগুলি বর্তমানে বিলুপ্ত। ১৩ বছর তিব্বতে বাস করার পর ১০৫৪ সালে বাহাত্তর বছর বয়সে তিব্বতের লাসা নগরীর অদূরে ঞেথাং বিহারে অতীশ দীপঙ্কর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ১৯৭৮ সালের ২৮শে জুন তাঁর দেহভস্ম চীন থেকে ঢাকার ধর্মরাজিক বৌদ্ধবিহারে অনীত হয় এবং সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.