বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পুন্য হউক, পুন্য হউক, পুন্য হউক, হে ভগবান। বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ, পুর্ন হউক, পূর্ন হউক, পূর্ন হ্উক, হে ভগবান। রবীন্দ্রনাথ কয়েকজন পলাতক সৈন্য গভীর নির্জন শালবনের ভিতরে লুকিয়েছিল । পাল সৈন্যদের অতর্কিত আক্রমনের ভয়ে পলাতক সৈন্যদের বুক হিম হয়ে ছিল। শালবনের ভিতরে একটি পুরাতন বৌদ্ধ বিহার।
পলাতক সৈন্যরা সেই বিহারের দিকে তাকিয়ে ছিল। ১০২৫ খ্রিস্টাব্দ। হেমন্তকাল। শেষ বিকেলের নিষ্প্রাণ আলোয় সোমপুর বিহারটি কেমন হলুদাভ দেখায়। শালবনেও মরাটে হলদে রং ছড়িয়ে ছিল।
শালবনের ভেজা মাটিতে শুকনো শালের পাতা, মলিন ঘাস, পাখির পালক আর এলোমেলো পায়ের ছাপের ওপরেও হেমন্ত-বিকেলের ম্লান আলো ঝরে ঝরে পড়ছিল। সেই ম্লান আলো থেকে আড়াল চাইছিল পলাতক সৈন্যরা।
বঙ্গের পাহাড়পুর গ্রামে অবস্থিত সোমপুর বৌদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শতাধিক বৌদ্ধ ভিক্ষু এবং অধ্যক্ষের বাস। বৌদ্ধধর্ম সম্বন্ধে জ্ঞানলাভ করতে ভারতবর্ষের নানা স্থান থেকে ভিক্ষুরা সোমপুর বিহারে আসে। সম্প্রতি অতীশ দীপঙ্কর সোমপুর বিহারের অধ্যক্ষ নিযুক্ত হয়েছেন।
অধ্যক্ষের জন্ম বঙ্গের বিক্রমপুর নামক এক নদীবহুল স্থানে । পন্ডিত হিসাবে তাঁর জ্ঞানের সুখ্যাতি ইতোমধ্যেই ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়েছে। পন্ডিতের বয়স বয়স বর্তমানে ৪৫ বছর। সোমপুর বিহারের ভিক্ষুদের মধ্যে অতীশ দীপঙ্কর অত্যন্ত জনপ্রিয়।
বিহারের একটি কক্ষে শেষ বেলার মৃদু আলো ছড়িয়ে আছে।
কিছুদিন হল অতীশ ‘বুদ্ধের অন্তিম জীবন’ নামে একটি বই লিখছেন। মেঝের ওপর বসে কাঠের আসনের উপর ভোজপাতা রেখে মন দিয়ে লিখছিলেন অতীশ। বইটি লিখতে অতীশকে অনুরোধ করেছে ভিক্ষু সুমিত। ভিক্ষু সুমিত- এর অনুরোধ অগ্রাহ্য করা যায় না। তার কারণ আছে ...
ভিক্ষ সুমিত আগে কর্ণসুবর্ণের অরণ্যে বনদস্যু ছিল, অতীশের সংস্পর্শে এসেই সে বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহন করেছে।
সুমিত-এর পূর্বের নাম ছিল: শল্য । বছর কয়েক আগে এক ভিক্ষু সম্মেলনে যোগ দিতে কর্ণসুবর্ণ নগরে গিয়েছিলেন অতীশ। সে নগরের উপান্তে শল্য অতীশকে আক্রমন করতে উদ্যত হলেও নির্ভীক অতীশ মৃত্যুভয় জয় করেছিলেন বলেই দস্যু শল্য কাতর বোধ করে। সে শান্তিময় ধর্মজীবন সম্বন্ধে কৌতূহলী হয়ে ওঠে এবং অতীশের কাছে দীক্ষা গ্রহন করে। অতীশ শল্যের নাম পরিবর্তন করে রাখেন সুমিত ।
ভিক্ষু সুমিত ক্রমশ মহামতি বুদ্ধের জীবনী ও দর্শন সম্বন্ধে অবহিত হয় এবং মুগ্ধ হয় । মাস কয়েক আগে সুমিত বলছিল, মহামতি বুদ্ধের অন্তিম জীবনে শিক্ষণীয় অনেক বিষয় আছে। আচার্য, আপনি এ বিষয়ে কিছু লিখুন না। সুমিত অধ্যক্ষ অতীশের প্রিয় শিষ্য। তার অনুরোধ উপেক্ষা করা যায় না।
অতীশ বুদ্ধের অন্তিম জীবন' বইটির ভূমিকায় লিখেছেনঃ
... আমরা সকলেই জানি বুদ্ধ মহৎ ছিলেন। কিন্তু বুদ্ধ কেন মহৎ ছিলেন। বুদ্ধ কি এই জন্যেই মহৎ যে তিনি প্রাচীন ভারতীয় জনসমাজে নৈতিক সুবচন প্রচার করিয়া গিয়াছেন? মানবসমাজে নৈতিক সুবচন প্রচার করা এমন কি দুরূহ কার্য? মনুষ্যজাতির মধ্যে অনেকেই এরূপ করিয়া থাকে। বুদ্ধের জীবনে কি এমন কোনও মহৎ ঘটনা নাই-যাহা স্মরণ করিয়া আমরা অভিভূত হইয়া যাইতে পারি? আছে বৈ কী। বুদ্ধের জীবনের অন্তিম লগ্নে তেমনই এক বিস্ময়কর ঘটনা ঘটিয়াছিল।
বুদ্ধের তখন আশি বৎসর বয়স। তৎকালে মগধে (প্রাচীন ভারতবর্ষের এক রাজ্যের নাম) চন্দ নামক এক ব্যক্তি বাস করিত। নিম্নবর্গীয় চন্দ ছিল অচ্ছুত । সে বুদ্ধকে তাহার গৃহে নিমন্ত্রণ করিল । একে চন্দ সমাজের নিম্নবর্গ, তাহার উপর সে অচ্ছুত চন্ডাল গোত্রের অর্ন্তগত; সে কি খায় না খায় ... এই সমস্ত ভাবিয়া বুদ্ধের শিষ্যগণ বুদ্ধকে চন্দের নিমন্ত্রণ রক্ষা করিতে বারণ করিল।
বুদ্ধ তাহাদের নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করিয়া নিমন্ত্রনের দিনে চন্দের গৃহে আসিলেন। চন্দ বুদ্ধকে সমাদর করিয় বসাইয়া ‘শূকরমদ্দপ’ খাইতে দেয়। শূকরমদ্দপ খাইয়া বুদ্ধ অসুস্থ হইয়া পড়িলেন; আর সুস্থ হইলেন না। ইহার জন্য বুদ্ধ চন্দকে দোষারোপ করেন নাই। বরং তিনি মৃত্যু শয্যায় বলিয়া গিয়াছেন, জীবনে আমি দুই বার খাইয়া তৃপ্তি পাইয়াছি।
প্রথমবার সুজাতার পায়স; দ্বিতীয়বার, চন্দের শূকরমদ্দপ ...এই কারণেই আমি বলিতেছিলাম- বুদ্ধ কি এই জন্যেই মহৎ যে তিনি প্রাচীন ভারতীয় জনসমাজে নৈতিক সুবচন প্রচার করিয়া গিয়াছেন? না। বুদ্ধ এই জন্যেই মহৎ যে তিনি মৃত্যুর সম্ভাবনা আছে জানিয়াও অচ্ছুত চন্ডাল চন্দ কে ফিরাইয়া দেন নাই, তাহার নিমন্ত্রণ রক্ষা করিয়া মৃত্যুর কোলে ঢলিয়া পড়িয়াছিলেন ...
লিখতে লিখতে অতীশ ছোট্ট শ্বাস ফেললেন। ঠিক তখনই জানালার বাইরে কোলাহল শুনতে পেলেন । কারা যেন উত্তেজিত হয়ে চিৎকার করছে। অতীশের কপালে ভাঁজ পড়ল ।
কার্ণ্যসৈন্য ধরা পড়ল কি?
বাংলায় বর্তমানে শাসন করছেন পাল রাজা নয়পাল । তাঁর শাসন কেবল বাংলায় নয়-উড়িষ্যা এবং মগধের কিয়দংশেও বিস্তৃত । কার্ণ্য রাজ্যটি বাংলার পশ্চিমে; উত্তর ভারতে। সেই কার্ণ্য রাজ্যের সৈন্যরা বাংলায় অনুপ্রবেশ করে নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিয়েছে, এমন কী বৌদ্ধবিরোধী কার্ণ্যরা বৌদ্ধমঠ আক্রমন করে ধ্বংস করে দিয়েছে, নিরপরাধ বৌদ্ধদেরও হত্যা করছে।
যুদ্ধে অবশ্য শেষ পর্যন্ত পাল রাজা নয়পাল জয়ী হয়েছেন। এখন পরাজিত কার্ণ্যসৈন্যরা প্রাণভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। বঙ্গবাসীরা তাদের ধরে ধরে কুপিয়ে কুপিয়ে হত্যা করছে, বৌদ্ধ ভিক্ষুরাও পলাতক সৈন্যদের হত্যা না-করলেও ধরে পাল সৈন্যদের হাতে তুলে দিচ্ছে ...
অধ্যক্ষ অতীশ দীপঙ্কর অহিংস ধর্মে বিশ্বাসী। যে কারণে সাধারণ বঙ্গবাসী আক্রমনকারী কার্ণ সৈন্যদের মনেপ্রাণে ঘৃনা করলেও অতীশ কাউকে ঘৃনা করেন না। বরং তিনি পলায়নপর কার্ণসৈন্যদের নিরাপত্তার কথা ভেবে
উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন।
শান্তির জন্য ঘন ঘন প্রার্থনা করছেন: জগতের সকল প্রাণি সুখি হোক।
হন্তদন্ত হয়ে ভিক্ষু সুমিতকে কক্ষে প্রবেশ করতে দেখে অতীশের ভাবনায় ছেদ পড়ল। ভিক্ষু সুমিতকে কেমন উত্তেজিত দেখায়। ভিক্ষু সুমিত বলল, আচার্য, বিহারের পিছনে শালবনে কয়েকজন নিরস্ত্র কার্ণ্য সৈন্য লুকিয়ে ছিল। কিছুক্ষণ আগে ভিক্ষুরা তাদের ঘিরে ফেলেছে।
বন্দি সৈন্যদের বিহারের একটি কক্ষে আটকে রেখেছে। ভিক্ষুরা আপনার সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করছে।
অতীশ উঠে দাঁড়ালেন।
কক্ষের বাইরে ইঁটের তৈরি ঢাকা-দেওয়া একটি সরু গলিপথের দু'পাশে সার সার দরজা। দ্রুত হেঁটে একটি কক্ষের সামনে উপস্থিত হল ভিক্ষু সুমিত ।
প্রবেশপথের সামনে দুই জন ভিক্ষু দাঁড়িয়ে ছিল। তাদের ঈষৎ উত্তেজিত মনে হল। অতীশকে দেখে তারা সচকিত হয়ে সরে দাঁড়াল।
অতীশ কক্ষের ভিতরের প্রবেশ করলেন। কক্ষটি মাঝারি আকারের ।
শেষবেলার আলো এসে পড়েছে। অমসৃণ মেঝের উপর কয়েক জন যুবক বসে আছে। যুবকদের হাত পা বাঁধা। তাদের বসার ভঙিটি বিধ্বস্ত । পরনের পোশাক ছেঁড়া, চেহারা ধুলি মলিন।
যুবকদের চোখেমুখে মৃত্যুভয় আর হতাশার ছাপ স্পষ্ট।
অতীশ দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। এই যুবকেরা কার্ণ্য রাজ্যের সৈন্য, সেনাপতির আদেশে বাংলা আক্রমন করতে এসেছে। কিন্তু, এদের কি দোষ। হয়তো এরা কর্মহীন ছিল, কর্মহীনতার গ্লানী ঘুচাতেই যোগ দিয়েছিল সৈন্যবাহিনীতে।
অথচ এরা গৃহী, এদেরও বাবা-মা, ভাইবোন আছে। কারও বা আছে স্ত্রী-সন্তান। এদের মুখে অন্ন যোগাতেই এরা সৈন্যবাহিনীতে যোগ দিয়েছে। এরা এদের সাম্রাজ্য লোভী রাজার নির্দেশে যুদ্ধ করতে এসেছে। কার্ণ রাজ্যের রাজা পররাজ্যের সম্পদ গ্রাস করে ভোগবিলাসে মত্ত হবেন।
জগৎময় এই তো চলেছে। যুবক সৈন্যরা এখন রাজার ইচ্ছে পূরণের মূল্য দিয়ে মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে উপস্থিত হয়ে গভীর আতঙ্কে প্রহর গুনছে। এদের কিই-বা দোষ। পাল সৈন্যদের হাতে এদের তুলে দিলে পাল সৈন্যরা এই হতভাগা যুবকদের বর্শা দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করবে কিংবা শূলে চড়াবে। তাতে কি প্রাণিহত্যা হবে না?
অতীশ শিউরে উঠলেন।
ভিক্ষু সুমিত বলল, আচার্য, পাল সৈন্যরা কাছেই একটি গ্রামে ছাউনি ফেলেছে। আপনি এখুনি কাউকে সেনাছাউনি তে যেতে নির্দেশ দিন। পাল সৈন্যরা এসে এই খুনিদের বন্দি করে নিয়ে যাক।
অতীশ গম্ভীর কন্ঠে বললেন, এদের মুক্ত করে দাও।
কক্ষে যেন বজ্রপাত হল।
আচার্য! এ আপনি কি বললেন! ভিক্ষু সুমিত স্থানকালপাত্র বিস্মৃত হয়ে চিৎকার করে উঠল।
অতীশ পুনরায় গম্ভীর কন্ঠে বলিলেন, এদের মুক্ত করে দাও।
সুমিত প্রতিবাদ করল, আচার্য! এরা খুনি!
সে আমি জানি সুমিত। কার্ণ্যসৈন্যরা বাংলায় অনুপ্রবেশ করে যত্রতত্র আক্রমন করছে। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছে, অজস্র নিরপরাধ মানুষ হত্যা করেছে।
সুমিত উচ্চকন্ঠে বলল,আচার্য, এরা কেবল নিরপরাধ বঙ্গবাসীদের হত্যা করে নি, এরা শান্তিবাদী বৌদ্ধ ভিক্ষুদেরও হত্যা করেছে। এই খুনিদের ছেড়ে দিলে অন্যায় হবে, পাপ হবে।
অতীশ দীপঙ্করের প্রসন্ন মুখটি গম্ভীর হয়ে ওঠে। বঙ্গজুড়ে কার্ণ্য সৈন্যদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তার কারণ সহজেই অনুমান করা যায়।
আক্রমকারী কার্ণ্য সৈন্যরা নির্বিচারে বঙ্গদেশে লুন্ঠন ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। সাধারণ মানুষের পক্ষে কার্ণ্য সৈন্যদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে ওঠাই স্বাভাবিক । কিন্তু ভিক্ষু সুমিত তো সাধারণ মানুষ নয়, সে অহিংস ধর্ম গ্রহন করেছে, সে সাধারণ মানুষের মত আচরণ করছে কেন?
কক্ষে আরও কয়েকজন ভিক্ষু দৌড়ে এল। তাদের ভিক্ষু চন্দ্রকান্তও রয়েছেন। মধ্যবয়েসি মিতভাষী এই ভিক্ষুটি অতীশ দীপঙ্করকে গভীর শ্রদ্ধা করে।
ভিক্ষু চন্দ্রকান্তর দিকে তাকিয়ে অতীশ দীপঙ্কর বললেন, ভিক্ষু চন্দ্রকান্ত।
বলুন আচার্য।
অতীশ বললেন, আপনি অতি সত্ত্বর এই যুবকদের মাথা ন্যাড়া করার ব্যবস্থা করে এদের স্নানঘরে নিয়ে যান । তার আগে এদের হাতপায়ের বাঁধন খুলে দিন। স্নান শেষ হলে এদের কিছু খেতে দিন।
এই রকম বিস্ময়কর নির্দেশ শুনে ভিক্ষু চন্দ্রকান্ত চুপ করে রইলেন।
অতীশ বললেন, খাওয়া হয়ে গেলে এদের চীবর পরতে দিন । তারপর যাত্রা করুন।
যাত্রা করব? কোথায়? ভিক্ষু চন্দ্রকান্ত কে কেমন বিভ্রান্ত দেখাল।
অতীশ বলিলেন, আপনি এই যুবকদের নিয়ে কার্ণ্য রাজ্যে যাবেন।
সেই রাজ্যে পৌঁছে এদের কে এদের বাড়িতে পৌঁছে দেবেন। আপনার সঙ্গে আরও কয়েকজন ভিক্ষুকে নিন, যাতে পাল সৈন্যরা মনে করে ভিক্ষুরা তীর্থযাত্রায় বের হয়েছে।
ভিক্ষু সুমিত বলল, আচার্য! তার কন্ঠস্বরে তীব্র ক্ষোভ।
বল কি বলবে? ভিক্ষু সুমিতের মুখের দিকে সরাসরি তাকালেন অতীশ।
আপনি হত্যাকারীদের মুক্তির আদেশ ফিরিয়ে নিন!
না, আমার পক্ষে তা সম্ভব না।
ভিক্ষু সুমিত শ্বাস টানল। তার শরীরে টলমল করছিল ক্রোধ। বৌদ্ধধর্ম গ্রহন করার আগে সে ছিল কর্ণসুবর্ণের অরণ্যে বনদস্যু। সেই তস্করপ্রবৃত্তির প্রবল টান যেন সে টের পায় । সে বলল, আপনি এই খুনিদের ছেড়ে দিলে আমি বৌদ্ধধর্ম ত্যাগ করব।
তারপর কর্ণসুবর্ণের অরণ্যে ফিরে গিয়ে দস্যুবৃত্তি করব।
অতীশ দীপঙ্করের কপালে ভাঁজ পড়ল। বিক্রমপুরের বাঙালি এই বৌদ্ধ পন্ডিতের ভূতপূর্ব ওই অরণ্যদস্যুটির প্রতি কেমন করুণা হল। সুমিত এতকাল সোমপুর বিহারে বাস করেও বুদ্ধের দর্শনের মূল ভাবনাটি অনুধাবন করতে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছে । বৌদ্ধধর্ম গ্রহন করার পর তার বহিরঙ্গেই কেবল পরিবর্তন এসেছে, তবে তার হৃদয় আগের মতোই অপরিসর রয়ে গেছে, যে হৃদয়ে থিকথিক করছে হিংসা আর বিদ্বেষ ।
এই সমস্ত ভেবে গভীর দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললেন অতীশ। তিনি প্রসন্ন থাকবার চেস্টা করলেও কিছু বিষন্নতা তাঁকে আচ্ছন্ন করে । মানবজাতির ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ বোধ করলেন। সাম্রাজ্যবাদী কর্ণ রাজ্য বাংলা আক্রমন করল।
তাহলে কি বুদ্ধের বাণী ব্যর্থ হতে চলেছে?
অতীশ দীপঙ্কর ভিক্ষু সুমিতের দিকে তাকালেন।
তারপর বললেন, আমি এই বিহারের অধ্যক্ষ, আমি আমার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করব না, তুমি বৌদ্ধধর্ম পরিত্যাগ ...
অতীশ দীপঙ্করের কথা শেষ হল না, ভিক্ষু সুমিত দ্রুত কক্ষ থেকে বের হয়ে যায় ...
... এই ঘটনাটি আমি ইকরাম আলীর লেখা "ছোটদের অতীশ দীপঙ্কর" বইতে পড়েছি। এখন সেটিই একটু গুছিয়ে লিখলাম। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।