বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পুন্য হউক, পুন্য হউক, পুন্য হউক, হে ভগবান। বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ, পুর্ন হউক, পূর্ন হউক, পূর্ন হ্উক, হে ভগবান। রবীন্দ্রনাথ
ভাবতে ভালো লাগে যে-আমাদের এই পৃথিবীতে এককালে মুন্সিগঞ্জের অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান বেঁচেছিলেন। এককালে মানে, এক হাজার বছর আগে। এক হাজার বছর, কেননা অতীশের জন্ম হয়েছিল ৯৮০ খ্রিস্টাব্দে।
মুন্সিগঞ্জের বজ্রযোগীনি গ্রামে। আর মৃত্যু হয়েছিল ১০৫৩ সালে। তিব্বতে।
এসব কথা আমরা আবছা হলেও কমবেশি জানি।
অন্তত আমরা অতীশ নামে বিক্রমপুরের একজন বৌদ্ধ পন্ডিতের কথা জানি।
যাক। কিন্তু, আমরা কি জানি এক অনিবার্য যুদ্ধের মুখোমুখি হয়ে ওই মহৎ বাঙালি হৃদয় কি করেছিল?
আজ সে কথাই একবার মনে করি না কেন।
অতীশ তখন সোমপুর বিহারে।
তো কোথায় ছিল সোমপুর বিহার?
বিহারটি ছিল বর্তমান বাংলাদেশের নওগাঁ জেলার বদলগাছী থানার পাহাড়পুর গ্রামে। অনেকেই হয়তো পাহাড়পুর গিয়েছেন।
না গেলেও অন্তত ক্যালেন্ডারে পাতায় কি অন্যকোথাও মাটির উচুঁ ঢিবির সেই বিখ্যাত ছবিটি দেখেছেন। হ্যাঁ, ওটই সোমপুর বিহার। কিন্তু, বিহার কি? সহজ কথায় বিহার মানে বৌদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়। অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান জ্ঞানী ছিলেন বলেই ওরকম একটা বৌদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ছিলেন।
তো তখন উত্তর ভারতে কার্ণ্য নামে একটা রাজ্য ছিল ।
রাজ্যটি যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। ইতিহাসে তো যুদ্ধবিহগ্র লেগেই আছে। যুদ্ধের পিছনে কারণ আর কি। লোভ।
তো কার্ণ্যরাজ্য মগধ আক্রমন করলেন।
মগধ?
তখন বাংলায় ছিল পালদের শাসন। তারা শুধু বাংলা নয়-উড়িষ্যা এবং মগধ (বর্তমান বিহার) দখলে রেখেছিল। আমরা বলি না, বাংলা-বিহার-উড়িষ্যা। সেরকম।
সেই সময়টায় পাল রাজা ছিলেন নয় পাল।
বাঙালি বরাবরই সাহসী জাতি। বাংলা বরাবরই পশ্চিমের আগ্রাসন তুমুল রুখে দিয়েছিল। কাজেই পশ্চিমা হানাদার কার্ণ্য আক্রমনের বিরুদ্ধে প্রবলভাবে রুখে দাঁড়াল পাল সৈন্যরা।
ওদিকে কার্ণ্যসৈন্যরা বাংলার যত্রতত্র আক্রমন করতে লাগল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিল খুনিরা।
এমন কী ...এমন কী বৌদ্ধ মঠ আক্রমন করে ধ্বংস করল। নিরীহ বৌদ্ধদের হত্যা করল। কার্ণ্যরা হয় ছিল শৈব কি বিষ্ণুর উপাসক। তাদের তো শান্তিবাদী বৌদ্ধদের ঘৃনা করারই কথা। কিছুকাল আগে দক্ষিণ ভারতের চোল বংশের শৈব রাজা রাজেন্দ্র চোল বাংলা তছনছ করেছিল! ওই খুনি শৈবরাজ সুদূর সুবর্ণদ্বীপের শ্রী বিজয়া বৌদ্ধরাজ্যও ধ্বংস করেছিল।
যাক। কার্ণ্য আক্রমনের কথা অতীশের কানে পৌঁছেছিল ঠিকই। তিনি অস্থির বোধ করতেন। বাঙালি তো। সবাইকে নিয়ে সুখেশান্তিতে বেঁচে থাকতে চান।
তিনি বড় উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছিলেন অনুমান করি। শান্তির জন্য ঘন ঘন প্রার্থনা করতেন হয়তো। জগতের সকল প্রাণি সুখি হোক। নির্বান লাভ করুক।
যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত নয়পাল জয়ী হন।
আর, পরাজিত কার্ণ্যসৈন্যরা সব এদিক-ওদিক পালাতে লাগল।
শোনা যায়, অতীশ কয়েকজন কার্ণ্য সৈন্যকে পাল সৈন্যদের কাছে অর্পন না করে নিরাপদে কার্ণ্যরাজ্যে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন।
ওই সিদ্ধান্তটি সহজ ছিল না। কারণ কার্ণ্য সৈন্যরা ছিল খুনি। তারা বৌদ্ধ ভিক্ষুদেরও হত্যা করেছিল।
ধরুন, ১৯৭১। ডিসেম্বর মাস। যুদ্ধের সময়ে আপনি যে গ্রামে ছিলেন সে গ্রামে ক’জন নিরস্ত্র পাকিস্থানী সৈন্য পালিয়ে আছে। ধরা যাক-সাহসী মুক্তিযোদ্ধারা ঘিরে ফেলেছে গ্রাম। আপনি তখন কি করবেন?
যুদ্ধের পরে দুই রাজার মধ্যে সন্ধি স্থাপনেও অগ্রনী ভূমিকা পালন করেছিলেন অতীশ।
অতীশ আমাদের কাছে বিক্রমপুরের একজন বৌদ্ধ পন্ডিত মাত্র। আসলে অতীশ আরও অনেক অনেক বড়। অতীশকে আমাদের আরও বুঝতে হবে। তাঁর অপার উদারতার মানে খুঁজতে হবে।
তথ্যসূত্র:
(ক) বাংলাপিডিয়া।
(খ) একরাম আলী রচিত অতীশ দীপঙ্কর।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।