``চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই। তা প্রকাশ করতে যদি লজ্জাবোধ হয়, তবে সে ধরনের চিন্তা না করাই বোধ হয় ভাল। ' -- প্রাচীন গ্রীক কবি ইউরিপিডিস (৪৮০-৪০৬ খ্রীঃ পূঃ)
বিয়ে করার আকস্মিক সিদ্ধান্ত নিয়ে হাঁদারাম আমি তখনও বুঝিনি, কী ভয়ঙ্কর অপরিণামদর্শি ভুলের ফাঁদে পা দিতে যাচ্ছি। চল্লিশ পেরিয়েও অকৃতদার পাড়াতো ভাই অরুনদা’র বিজ্ঞজনোচিত পরামর্শকে ‘দিল্লীকা লাড্ডু জো ভি নেহি খায়া, সো ভি পস্তায়া’ ভেবে নিজকে কী হতে যে কী ভেবে বসেছিলাম, তা আর নাই বললাম। দক্ষিণ পাড়ার দিগম্বর দাদু, যাকে দুই পয়সার পাত্তা দিতেও আজ পর্যন্ত কাউকে দেখি নি, আমাকে ভালোবাসেন বলেই হয়তো নির্বুদ্ধি ভেবে খুব করে বলে দিয়েছিলেন, দেখো হে, হটকারী একটা সিদ্ধান্তই যথেষ্ট, পুরুষ মানুষের সটান উল্লম্ব সিনা চোখের পলকেই ভূমির সমান্তরালে বেঁকে সোজা হওয়ার সমস্ত ক্ষমতা চিরতরে হারিয়ে ফেলে।
কণ্ঠে যে বাঘের হুঙ্কার গর্জে ওঠতো, ওটা আর কখনোই ভ্যাঁ ভ্যাঁ করার সীমানা ছেড়ে পূর্বাবস্থায় ফিরে যেতে পারে না। অতএব এতো তড়িঘড়ি না করে বাপু মাথার বায়ু নামিয়ে ফেলো। মস্তিষ্কে বায়ু চড়ে গেলে বুদ্ধি নাকি হাঁটুতে নেমে আসে। আমার বুদ্ধিবৃত্তিও যে হঠাৎ করে হাঁটু থেকেও বিপজ্জনক নীচে নেমে গেছে, এ বিষয়ে তাঁর কোন সন্দেহ নেই। আমি আর কী বলবো ! সত্যি সত্যি আমি তখন কল্পনার চিত্রল সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছি।
যেদিকেই চাই, হতে যাওয়া তুমি আর তুমি শুধু।
তবু আমার ইতস্তত বিক্ষিপ্ত মতিগতি খুব একটা সুবিধের নয় আঁচ করেই হয়তো পক্ষকালের হাজতবাস অভিজ্ঞ আমাদের সবার মতি ভাই আমাকে সার্বক্ষণিক সাহস যুগিয়ে যেতে লাগলেন, আরে মিয়া পুরুষ হইছো আর মাইয়া মানুষের গন্ধ নিবা না এইটা কী করে হয় ! তুমি মিয়া ঐ শালাগো কারো কথাই শুইনো না। হেগোর মেরুদণ্ড আছে নাকি ! একে তো নাচনে বুড়ি, তার উপর ঢোলের বাড়ি। আমাকে আর পায় কে। কি জানি উদ্যমে ভাটা দিয়ে বসে, তাই লজ্জা-শরমের মাথা খেয়ে সর্বশক্তি দিয়ে তটস্ত করে তুললাম মুরুব্বিদেরকে, যারা সম্মন্ধসূত্র গড়ে দেয়ার মহান ব্রত নিয়ে চিরকালই নিজেদের বিলীন করে দিয়ে আসছেন বলে সেই ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি।
অতএব যা হবার তাই হলো। কোন এক শুভলগ্ন (?) বেছে শেষ পর্যন্ত ওয়ান ওয়ে রোডে বিয়েটা করেই ফেললাম।
আহারে ! আমার মতো কেউ কি এখন হাঁড়ে হাঁড়ে টের পাচ্ছেন, দুপেয়ে একটা বীর পুরুষপুঙ্গব বিয়ে নামক সংশোধনের অযোগ্য এক বালখিল্য ঘটনার শিকার হয়ে চোক্ষের সামনে কী করে ধোপী-গাধার মতো চতুষ্পদী একটা প্রাণীতে পরিণত হয়ে যায় ! প্রবল মাধ্যাকর্ষণ উপেক্ষা করা টানটান সিনা তার কীভাবে ভারবাহী চতুষ্পদী স্বভাবে নুয়ে পড়ে ভূমির সমান্তরালে ক্রমশই নিকটবর্তী হতে হতে শেষপর্যন্ত অদ্ভুত মাটি-লগ্নতায় পেয়ে বসে তাকে ! বার্ষিকীপূর্ণ হতে না হতেই ষড়পদ ধারণ করে দর্পাহত বুকটা তার মাটি ঘষটাতে শুরু করে দেয় ! আর পরাক্রমশীলতায় যিনি যতো অহঙ্কারী ছিলেন বলে শুনা যায়, তার নাকি পদের সংখ্যা বাড়তে বাড়তে বাড়তে বাড়তে পদহীন কেঁচোর মতোই......শেষপর্যন্ত গড়াতে গড়াতে মাটিই পরম আশ্রয় হয়ে যায় !
আহা, তবে কি জীবনটাই মাটি ! কেউ কি জানেন, গাধারাই বিয়ে করে, না কি বিয়ে করেই গাধা হতে হয় !
(০৮/০৭/২০০৮)
[লেখাটি অন্যত্র প্রকাশিত]
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।