অফিসের কাজে ব্যস্ত থাকায় গত এক সপ্তাহ ধরে মনির সাথে যোগাযোগ হয়নি। এর মধ্যে সেও কোন খবর নেয়নি অথবা কোনো কল করেনি। একদিন সন্ধ্যায় ওর মিসড কল। একটা অনুষ্ঠানে ব্যস্ত থাকায় সাথে সাথে কলব্যাক করা হয়নি। ফ্রি হয়ে রাত দশটার দিকে ওকে কল করলাম।
ও তো ফোন পেয়ে রেগে আগুন।
- তুমি এমন একটা কাজ করতে পারলে রাজা?
- আমি আবার কি করেছি?
- কি করোনি, সেটা বলো।
- কি করেছি, খুলে বলো প্লিজ। আমি বুঝতে পারছিনা।
- কি করার বাকী রেখেছো?
আমি আসলে বুঝতে পারছিলামনা, তেমন কি অপরাধ করে ফেলেছি।
মনে মনে ভড়কে গেছি।
- একটু সহজ করে বলোনা, প্লিজ।
- এ্যাই যে গত সাত দিন ধরে তুমি একটা খোঁজ খবর নিলে না। আমি যেভাবে জ্বরে ভুগছিলাম, মরেও তো যেতে পারতাম। আমার জানাজাও পড়তে পারতে না।
- ওহ মাই গড, তুমি অসুস্থ্য ছিলে? আমাকে জানাওনি কেন? একটা কল দিতে পারতে?
- ইচ্ছে করে ফোন দেইনি। দেখতে চেয়েছি, তুমি কতোদিন আমাকে ভুলে থাকতে পারো?
- স্যরি ডিয়ার। অফিসে একটু কাজের প্রেসার ছিলো।
- ঠিক আছে, থাকো তোমার কাজ নিয়ে। আমি রাখলাম।
- রাগ করোনা প্লিজ। এমন আর হবেনা।
- প্রমিজ?
- প্রমিজ। ইমরানের কি খবর?
- এ কদিন আমাকে নিয়ে বিজি ছিলো। এখন একটু পড়াশুনার চাপ যাচ্ছে।
সামনে ওর ফাইনাল পরিক্ষা। কিন্তু মাঝে মাঝে ইমি নাকি সিক হয়ে পড়ে। শরীর ঝাঁকুনি দিয়ে নাকি জ্বর আসে।
- তাই নাকি? ওকে ইমিডিয়েটলি ডাক্তার দেখাও।
- ঠিক আছে দেখাবো।
আগামী পরশু সন্ধ্যা সাতটায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে চৈত্র-সংক্রান্তির একটা অনুষ্ঠান আছে। তুমি কি আসবে রাজা? ইমি থাকবে। ওর সাথে তোমাকে পরিচয় করিয়ে দেবো।
- ঠিক আছে থাকবো। তাহলে রাখছি এখন।
টেক কেয়ার।
- ওকে, বাই রাজা।
- বাই।
চৈত্র-সংক্রান্তির অনুষ্ঠানে সন্ধ্যা সোয়া সাতটায় উপস্থিত হয়ে দেখি ওরা তখনো আসেনি। মিনিট দশেক পর হন্ত-দন্ত হয়ে মনি একা এসে জানালো যে, ইমরান নাকি ভীষণ অসুস্থ।
আসতে পারবেনা। ইমরান যে হলে থাকে, সেই হল থেকেই এখন ও এসেছে। ওকে খুউব টেনসড মনে হলে। আমাকে বললো, অনুষ্ঠানে এ্যাটেন্ড করতে হবেনা। চলো কোথাও বসি।
তোমার সাথে কথা আছে।
- ঠিক আছে। চলো ছাঁদে বসি। ছোলা-মুড়ি আর চা এর সাথে তোমার কথাও শোনা হবে।
- ঠিক আছে চলো।
মনির কাছ থেকে সব শুনে আমিতো থ। কি বলছে ওসব! ইমরান ড্রাগএডিকট্যাড? ওর হলে গিয়ে ওর বিছানায় অনেকগুলো নেশা জাতীয় বড়ি-ট্যাবলেট পাওয়া গেছে। এখন খিঁচুনি দিয়ে জ্বর আসে। কখনো কাঁপুনি দিয়েও জ্বর আসে। মনি ভেউ ভেউ করে কেঁদে ওঠলো।
- কি করেনি আমি ইমির জন্য বলো? প্রতি মাসে বাবা যে টাকা পাঠায়, তার বাইরেও আমি দুটি মেয়ে পড়াই। একটা মোহাম্মদপুর আরেকটা ধানমন্ডি গিয়ে। বেশিরভাগ টাকাই আমি তুলে দিয়েছি ইমির হাতে। সেই টাকায় ও বইপত্র না কিনে নেশা করতো। আমার সব টাকাই সে নেশার পেছনে উড়িয়েছে।
আমি ওকে কক্ষনো ক্ষমা করবোনা, রাজা। হি ইজ এ লায়ার এন্ড ফ্রড। আই হেইট হিম। তুমিই বলো রাজা, এখন আমি কি করবো? প্লিজ হেল্প মি।
- এতোটা ভেঙ্গে পড়োনা মনি।
এখনই ওর প্রপার ট্রিটমেন্ট দরকার। সবচেয়ে বেশী দরকার তোমার সান্নিধ্য এবং ভালোবাসা। তোমার সঙ্গ ওকে সুস্থ্য করে তুলতে পারবে।
- কি বলছো এসব? আমি আর ওর ধারে কাছেও যাবোনা। ওর একটা পানিশমেন্ট দরকার।
- এসব কথা এখন বলার সময় না, মনি। ইমরান ভুল করেছে বলে তুমি আরেকটি ভুল করোনা। আমি 'আপন' এর ঠিকানা দিচ্ছি তোমাকে। ওখানে ব্রাদার রোনাল্ড ড্রাহোজাল আছেন। ব্রাদার তোমাকে সব ধরণের সহযোগিতা করবেন।
আগে ওকে সুস্থ করে তোলো। তারপর ওকে যা শাস্তি দিতে চাও দিয়ো।
- আমি কিছু জানি না। যা করতে হয়, তোমাকেই করতে হবে রাজা। তুমি আমাদের সাথে যাবে ব্রাদার এর কাছে।
- ঠিক আছে, যাবো। তুমি কোনো চিন্তা করোনা। এবার চোখের পানি মোছো। হলে গিয়ে ফ্রেস হয়ে ওকে ফোন করো। খোঁজ খবর নিয়ে আমাকে জানাও।
- তুমি কতো ভালো, তা তুমি নিজেই জানোনা। ইউ আর মাই বেস্ট ফ্রেন্ড, রাজা। গড ব্লেছ ইউ।
- অল দ্যা বেস্ট। টেক কেয়ার।
মাস খানেক ট্রিটমেন্টের পর ইমরান এখন সম্পূর্ণ সুস্থ। স্বাভাবিক জীবন যাপন করছে সে। অনেকবার কান্নাকাটি করেছে। ওর ভুলের জন্য মনির কাছে ক্ষমা চেয়েছে। ইমরান এখন আমারো ভালো বন্ধু।
আমরা সবাই ব্রাদারের কাছে কৃতজ্ঞ।
(শেষ)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।