হয়তো আমি কোন কিছু সম্পর্কে নিশ্চিত নই
প্রপঞ্চ হিসেবে ‘বিশ্ববিদ্যালয়’ শব্দটিকে ঘিরে অনেক বিতর্ক আছে। বর্তমানে সে বিতর্ক আরো তুঙ্গে- বিশেষ করে সমাজতান্ত্রিক এবং পুঁজিবাদী বিশ্বের অবস্থান এক্ষেত্রে দু’প্রান্তে না হলেও অন্তত নব্বই ডিগ্রি কৌণিকে। ট্রেনিং ইনস্টিটিউটক, স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয় কনসেপ্টের সাথে খাঁটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৌলিক পার্থক্য এবং বিষয়বস্তু বাছাইয়ের ক্ষেত্রে এদের দূরত্ব সম্পর্কে অনেকের ধারণা পরিষ্কার নয়। এর চেয়ে বড় বিতর্ক রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাইভেট ও পাবলিক ঘরানায়। অনেকে মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়-প্রপঞ্জ প্রাইভেট সেক্টরে চলে গেলে, বিশেষ করে পুঁজিবাদী সমাজে, তা মূলত ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানই হয়ে ওঠে, না হলে অন্তত সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
একটা বিষয় লক্ষণীয় যে, কয়েক শতক ধরে দার্শনিকরা বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থানের যে ব্যাখ্যা দিয়ে গেছেন, সমাজতান্ত্রিক বিশ্ব বিশ্ববিদ্যালয়কে সেই জায়গাতেই রেখেছেন- শুধু আর্থিক দিক দিয়ে নয়, বিষয়বস্তুগত দিক দিয়েও। কিন্তু পুঁজিবাদী বিশ্ব দুটো দিকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের পার্থক্য ঘুচাতে চেয়েছে।
আজকে একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউটের উদ্বোধন উপলক্ষে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলো, যেখানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন একজন বামপন্থী-সমাজতান্ত্রিক নেতা। বিশ্ববিদ্যালয় কনসেপ্ট নিয়ে এর আগে তার বক্তব্য শোনার সুযোগ আমার হয়েছিলো এবং সে কারণে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগ-উদ্বোধন উপলক্ষে তিনি কী বলেন- তা শোনার আগ্রহ নিয়ে আমি সেখানে গিয়েছিলাম। আমি জানতাম, তিনি নীতিগতভাবে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরোধী এবং বিভিন্ন সমাবেশে বক্তৃতায় তিনি সেসব কথা প্রতিনিয়তই বলেন।
কিন্তু উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বললেন- এই ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট স্থাপনে তিনি আনন্দিত। লেখাপড়া ও গবেষণার মাধ্যেম এটি সমাজের বৈষম্য দূর করার ক্ষেত্রে কাজ করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয়টি দেশের একটি শীর্ষস্থানীয় এনজিওর নামে এবং এই রাজনীতিকই কিছুদিন আগে প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে সংশ্লিষ্ট এনজিওর বিরোধিতা করেছিলেন। সম্ভবত প্রাথমিক শিক্ষা ও উচ্চ শিক্ষা এক নয় বলে এনজিওটির প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে বিরোধী অবস্থানে থাকলেও এনজিওর বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে ‘সমাজের বৈষম্য দূর করার’ ভূমিকা আশা করছেন।
তিনি আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন।
তিনি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়টিকে আহ্বান জানিয়েছেন, রাজনৈতিক কর্মীদের গবেষণার কাজে যুক্ত করতে। গবেষণা শব্দটির শাব্দিক অর্থ- বারবার কিছু খোঁজা অর্থে যদি তিনি এ আহ্বান জানিয়ে থাকেন, তাহলে ঠিক আছে। কিন্তু আমাদের সর্বস্তরে গবেষণা শব্দটিকে ঘিরে যে ধরনের উন্মাদনা সৃষ্টি হয়েছে, তাতে অনেকেই ভুলে যাচ্ছেন- অ্যাকাডেমিক গবেষণার একটি নীতি-পদ্ধতি আছে। কোনোকিছু খুঁজলেই তাকে গবেষণা বলা যায় না। রাজনৈতিক কর্মীরা গবেষণা দলের সাথে কতোটুকু এবং কী গবেষণা করবেন- বক্তব্যদাতার কথা থেকে কিছুই বুঝতে পারলাম না।
পাশাপাশি তিনি যদি তাঁর বামপন্থী রাজনৈতিক দলের কর্মীদের গবেষণার সাথে সম্পৃক্ত করতে চান, সেটা হয়তো ইতিবাচক ব্যাপার হবে; কিন্তু তার আগেই মনে রাখতে হবে- তর্ক করা এবং তথ্য বিশ্লেষণ করা এক নয়।
গল্পের গরু আকাশে চড়তে পারে, কিন্তু সেখানেও খেয়াল রাখতে হবে গরুটা কাঠের, না রক্তমাংসের।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।