অতি দক্ষ মিথ্যুক না হলে সত্যবাদিতা উৎকৃষ্ট পন্থা
দৈনিক সংগ্রামের এই লেখাটি প্রতিটি দ্বীনি ভাইয়ের জন্য অবশ্যপাঠ্য-
আলোতে আলোকিত মানুষ ফাতেমা গারিম (জার্মানী)
ঈমানের সম্পদ লাভ
বিয়ের কয়েক মাস পর ১৯৬০ সালে আমি ইসলাম গ্রহণ করলাম। সে সময় আমি রোযা রাখতাম নামায আদায় করাও শিখে নিয়েছিলাম। কুরআন অধ্যয়ন করেছিলাম। এ সব কিছু এজন্যই করেছি যেন আমি ইসলামের অনুশাসন পুরোপুরি পালন করার মানসিক স্বস্তি লাভ করতে পারি। কুরআন আমার মনে আবেগ এবং ভালোবাসায় প্রেরণা জাগ্রত করে।
তবে আমি সর্বাধিক আনন্দ এবং তৃপ্তি নামায আদায়ের মাধ্যমে পেয়েছিলাম। বিনয় এবং নম্রতার সঙ্গে যখন আমি পরম করুণাময় আল্লাহর সামনে দাঁড়াতাম তখন আমার মনে হতো আল্লাহ আমার সঙ্গে রয়েছেন। আমি যে সত্য পথের অনুসারী হয়েছি এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ এবং সংশয় থাকতো না।
আমি এবং আমার স্বামী একটা বিষয়ে একমত ছিলাম যে, পাশ্চাত্যের কোন দেশের অমুসলিম পরিবেশে মুসলমান হিসেবে বসবাস করতে হলে অনেক ক্ষেত্রেই বাধ্য হয়ে আপোস করতে হয়। একটি মুসলিম সমাজেই সঠিকভাবে ইসলামের অনুশাসন পালন করা যায়।
কারণ, ইসলাম অন্যান্য ধর্মের মতো নামমাত্র ধর্ম নয় বরং ইসলাম হচ্ছে জীবনযাপনের এক পূর্ণাঙ্গ বিধান। আমরা উভয়ে যেহেতু স্বেচ্ছায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছি এ কারণে আমরা অসম্পূর্ণভাবে ইসলামের বিধান পালন করে তৃপ্ত হতে পারিনি।
এ কারণে ভেবেচিন্তে সফরের অর্থ সংগ্রহ হওয়ার পর ১৯৬৩ সালে আমরা পাকিস্তানে হিজরত করলাম। পাকিস্তানে এসে আমি বুঝতে পারলাম, কেউ যদি ঈমান অনুযায়ী জীবন কাটাতে চায় তবে একজন নওমুসলিমকে তার জীবনে ব্যাপক পরিবর্তন সাধন করতে হয়।
পাকিস্তানে আসার পর আমি পাঁচ ওয়াক্ত নিয়মিত নামায আদায় করতে শুরু করলাম।
আমি জানলাম নামায এমন এবাদত নয় যা সময় সুযোগ মতো বা যখন ইচ্ছা আদায় করা যায়। বরং জীবনের নানারকম কর্মব্যস্ততা নামাযকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়। আমি হিজাব ব্যবহার শুরু করেছিলাম।
আমি শিখলাম যে আমার স্বামী যখন ঘরের বৈঠকখানায় দ্বীনী ভাইদের সঙ্গে আলাপ আলোচনায় ব্যস্ত থাকবেন তখন আমাকে চা তৈরি করতে হবে। কার কার জন্য চা তৈরি করছি সেটা জানার প্রয়োজন নেই।
তারপর পর্দার
আড়াল থেকে চায়ের ট্রে মেহমানদের জন্য এগিয়ে দেবো। আর এতেই সন্তুষ্ট থাকতে হবে।
আমি সাধারণ ঘরে থাকা শুরু করলাম। বাজারে কেনাকাটা করতে যেতাম না। ইংরেজী ভাষায় লেখা ইসলাম সম্পর্কিত বই পড়ে সময় কাটাতাম।
আমি রোযা পালনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। প্রচণ্ড ক্ষুধা এবং পিপাসা সত্ত্বেও কিছুই পানাহার করতাম না। খাবার স্বাদ কেমন হচ্ছে যাচাই না করেই রোযার সময়ে রান্না করতাম। হাদীস এবং সুন্নাহ সম্পর্কিত গ্রন্থাবলী পাঠ করে আমি রাসূল (সা এবং তার সাহাবাদের ভালোবাসতে শিখলাম। তাঁরা ছিলেন আমার জন্য জীবন্ত আদর্শের নমুনা।
তাঁরা প্রশংসনীয় ঐতিহাসিক চরিত্রই ব্যক্তিত্বই শুধু ছিলেন না বরং তাঁরা উন্নত চরিত্র, বীরত্ব, আত্মত্যাগ এবং তাকওয়ার যে আদর্শ উপস্খাপন করেছিলেন সে আদর্শ ছিল আলোর মিনার। সেই আলোর মিনারের প্রতি লক্ষ্য রেখে জীবন পথের পথিক হয়ে মনজিলে মকসুদে পৌঁছা যায়। আমার কি করা উচিত আর কি করা উচিত নয়- এ সম্পর্কে আমার নিকট কোন অস্পষ্টতা ছিলো না, তখন আর আমি তথাকথিত বিবেকের উপরই শুধু নির্ভরশীল ছিলাম না। বরং আমার সামনে আল্লাহ এবং রাসূল (সা নির্দেশিত সুস্পষ্ট বিধান বিদ্যমান ছিলো।
আমি ভালোভাবেই জানতাম যে, ভালো হওয়ার জন্য, পার্থিব জীবনে শান্তি পাওয়ার জন্য, মৃত্যু পরবর্তী মুক্তি ও কল্যাণ লাভের জন্য আমাকে কি কি কাজ করতে হবে এবং কি কি কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।
পার্থিব জীবনের কাজের মাপকাঠিতেই আমার পারলৌকিক জীবনের কল্যাণ অকল্যাণ পরিণাম নির্ধারিত হবে।
সমালোচকদের উদ্দেশ্যে
দু'টি কথা
ইসলামের শত্রুরা কুরআনের বিভিন্ন বিধানের বিরুদ্ধে কথা বলে কেন? এ কারণেই বলে যে, তারা কখনো পক্ষপাতমূলক মানসিকতা নিয়ে কোন সমাজে বসবাস করেনি। তাদের পক্ষপাতিত্বমূলক মনোভাব তাদেরকে মুসলমানদের হালাল-হারাম ভালো-মন্দের আল্লাহ নির্দেশিত জ্ঞান সম্পর্কে কোন ধারণাই দিতে পারেনি।
যদি তারা বলে যে, একজন মানুষের একটির অধিক বিয়ে করা দোষণীয় তবে তারা বলুক দেখি একজন স্বামী স্ত্রীকে না জানিয়ে যখন রক্ষিতার কাছে যায় সেটা কি খুব ভালো কাজ? এ রকম ঘটনা পাশ্চাত্যে প্রচুর দেখা যায়। মুসলিম দেশসমূহে একাধিক বিয়ের ঘটনা আছে একথা সত্য কিন্তু সেটাতো যৌন জীবনের বৈধ পথ।
সমালোচকেরা বলে যে, মদ পানে কোন ক্ষতি নেই। যদি তাই হয়, তবে মদ পানের কারণে পাশ্চাত্যে যে ধ্বংসের বিস্তার ঘটছে তার কারণ কি? নিন্দুকেরা বলে, রোযা পালন করা হলে মানুষের শক্তি ও স্বাস্খ্য দুর্বল হয়ে যায়। এদের উচিত রমজান মাসে রোযা পালনরত অবস্খায় দৃঢ় সংকল্পের মুসলমানরা যেসব স্মরণীয় দায়িত্ব পালন ও কৃতিত্ব প্রদর্শন করেছেন সেসবের প্রতি দৃষ্টি দেয়া। রোযা পালনের সুফল সম্পর্কে এ যুগের চিকিৎসকগণ যেসব কথা লিখেছেন সেসব লেখাও তাদের পড়ে দেখতে অনুরোধ করি। এসব লেখা চিকিৎসকগণ বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকেই লিখেছেন।
নিন্দুকেরা বলে যে, নারী স্বাধীনতা অত্যন্ত জরুরী। তাদের বলি মুসলিম দেশের যুব সমাজের চরিত্র এবং পাশ্চাত্যের যুবসমাজের চরিত্র তুলনা করে দেখুন তো! মুসলমানদের সমাজে বিবাহ পূর্ব যৌন মিলন ছেলেমেয়েদের মধ্যে কদাচিত ঘটে অথচ পাশ্চাত্য দেশসমূহে চরিত্রবান ছেলেমেয়ে বিয়ের সময়ে পাওয়া যাবে কি না যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।
নিন্দুকেরা এবং সমালোচকেরা বলে যে, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা সময় এবং শক্তির অপচয়। তাদের নিকট প্রশ্ন করি যে, তারা পাশ্চাত্যের জীবনধারায় পালনীয় এমন কোন রুসম রেওয়াজের কথা বলুক দেখি যা মুসলমানদের নামাযের চেয়ে উত্তম এবং সেই রুসম-রেওয়াজ পালন নামাজের চেয়ে দেহ-মনের জন্য অধিক কল্যাণকর। তারা প্রমাণ করুক দেখি পাশ্চাত্যের লোকেরা অবসর সময়ে নামাযের চেয়ে কল্যাণকর কি কাজ করে।
মুসলমানরা নামাযের জন্য বড়জোর প্রতিদিন এক ঘন্টা সময় ব্যয় করে।
সকল মুসলমান যদিও ভালো নয় তবু বহু সংখ্যক পুরুষ নারী এ রকম পাওয়া যাবে যারা সর্বাঙ্গীন সুন্দর ইসলামী জীবনযাপনের সর্বাত্মক চেষ্টা করে। যারা সমাজের এ সকল ভালো মানুষের সান করে না বরং কিছু সংখ্যক মানুষের জীবনের বাইরের চিত্র দেখে সিদ্ধান্ত দেয় তারা ইসলামের প্রতি বড় রকমের অবিচারই করে।
কয়েক শত বছর আগে ইসলাম যেমন ভালো ছিলো কল্যাণকর ছিলো এখনও একই রকম রয়েছে। যদি বিকৃতির অংশ বাদ দিয়ে ইসলামকে সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করা হয়, উপস্খাপন করা হয় তবে বোঝা যাবে যে, কোন আদর্শই ইসলামের চেয়ে শ্রেষ্ঠ ও সুন্দর নয়।
বহু মানুষ আজও একথা বিশ্বাস করে। অনুভব করে। বর্তমান বিশ্বের অস্খিরতা এবং অশান্তির একমাত্র প্রতিষেধক হতে পারে ইসলাম অন্য কিছু নয়।
পাকিস্তানে আসার পর আমি এ বিষয়টি স্পষ্ট উপলব্ধি করেছি। এ অভিজ্ঞতা আমার মন আনন্দে পূর্ণ করে দিয়েছে।
জার্মানীতে আমি যা কিছু রেখে এসেছি সেসবের কথা আমার মনেই আসেনি। আমার ছিল সেক্রেটারী হিসেবে মোটা বেতনের চাকরি, ছিল নিজস্ব মোটর গাড়ি, ছুটির সময়ে বাইরে ঘুরে বেড়ানোর প্রচুর সুযোগ, প্রমোদ ভ্রমণ, আনন্দ বিনোদন, রেডিও, টিভি, ফিন্সজ, বহু মূল্যবান ফার্নিচারে সাজানো ফ্লাট কোনো কিছুর জন্যই আমার দু:খ হয় না। জার্মানীতে আমার পরিবারের লোকদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পেলে আমি তাদের কি কথা বলবো বুঝতে পারছি না। পাকিস্তানে দ্বীনী ভাইবোনদের সঙ্গে কথা বলে আমি মনে আশ্চর্য রকমের আনন্দ এবং ভালোবাসা অনুভব করি। তাদেরকে আমার মনে হয় একান্ত আপন।
এর কারণ হচ্ছে আমি নিজেকেও তাদেরই একজন মনে করি।
---------------------------------------------------------------
আমাদের সবার দিল উন্মুক্ত হয়ে সেখানে ইসলামের আলো প্রবেশ করুক।
আমি মল্লিকা শেরাওয়াতকে অনৈসলামিক পথ থেকে ফিরিয়ে আনতে চাই, ওর নফসের উপরে ওর নিজের কোনো নিয়ন্ত্রন নেই। ওকে বুঝাতে হবে। আমার জন্য দোয়া করবেন ভাইয়েরা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।