আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নেলসন ম্যান্ডেলার উক্তিগুচ্ছ



উদভ্রান্ত সেই আদিম যুগে স্রষ্টা যখন নিজের প্রতি অসন্তোষে নতুন সৃষ্টিকে বারবার করছিলেন বিধ্বস্ত, তাঁর সেই অধৈর্য ঘন-ঘন মাথা নাড়ার দিনে রুদ্র সমুদ্রের বাহু- প্রাচীণ ধরিত্রির বুকের থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গেল তোমাকে, আফ্রিক- বাঁধলে তোমাকে বনস্পতির নিবিড় পাহারায় কৃপণ আলোর অন্তঃপুরে। (আফ্রিকা : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর) আফ্রিকা মহাদেশ সম্পর্কে যে গল্পটা খুব শোনা যায়, তা হচ্ছে- `সেখানকার বিশাল জঙ্গলে এক ধরনের গাছ আছে, রক্তচোষা বা মানুষ খেকো। ওই গাছের তলা দিয়ে কোনো প্রাণী গেলে ওই গাছ তার লতা দিয়ে আঁকড়ে ধরে রক্ত পান করে!' এ গল্পটার কারণেই হয়তো আফ্রিকা সম্পর্কে অনেকের মন কৌতূহলী হয়ে ওঠে। আমিও কৌতূহলী হয়ে উঠেছিলাম এ মহাদেশ সম্পর্কে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের `আফ্রিকা' কবিতাটি পড়ে টের পেয়েছিলাম, অন্য অনেকের মতো তিনিও বিশ্বাস করতেন- আফ্রিকা এক অন্ধকারে ঢাকা মহাদেশ।

যা স্রষ্টার অসন্তোষ মুহূর্তেরই ফল। যেখানে কেবল দুর্গম্য বনই নয়, ব্যাধি, অশিক্ষা, অন্নাভাবের অন্ধকারে নিমজ্জিত নিগ্রো জীবন। কিন্তু আফ্রিকানরা কি তাই মনে করেন, নিজেদের সম্পর্কে? নিশ্চয়ই না। আফ্রিকানরা অহংকারের সঙ্গে মনে করেন তাদের মহাদেশ হলো foot of god বা ঈশ্বরের পায়ের পাতা। এটা মনে করার কারণ অবশ্য আফ্রিকা মহাদেশের মানচিত্রটার দিকে তাকালেই টের পাওয়া যাবে।

ওই মানচিত্রটা যেন অনেকটা পায়ের পাতার মতো। এখানকার অধিবাসীরা অতিথিপরায়ণ, খুব সহজেই সম্মান দেখায় বিদেশিদের। তাদের কাছে বিদেশি অতিথি মানেই ঈশ্বরের প্রতিনিধি বা দেবতা। এ বিষয়ে অতিথিদের উদ্দেশে তাদের একটি কবিতাই আছে `হে ঈশ্বর, আসো আমার ঘাড়ে মাথা রাখো। ' আর এ আহ্বানের সুযোগই যেন নিয়েছিল ধূর্ত পশ্চিমা বিশ্ব সেখানে মাথা না দিয়ে পা রেখে।

সেখানে ছড়িয়ে দিয়েছিল উপনিবেশবাদী বর্বরতা ও বর্ণবৈষম্যের কুয়াশা। এসবের বিরুদ্ধেই সারাজীবন সংগ্রাম করেছেন যিনি, তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা। জন্মগ্রহণ করেন ১৯১৮ সালে। ১৯৪৩ সালে ছাত্র অবস্থায়ই জড়িয়ে পড়েন সরাসরি রাজনীতিতে। বর্তমান আধুনিক আফ্রিকানরা মনে করেন, যদি তাদের পূর্বপুরুষরা তাদের দৈহিক শক্তি সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা রাখতেন তবে আফ্রিকায় সাম্রাজ্যবাদীর পতন হতো চোখের নিমিষে।

এ ধারণা তৈরির পেছনে ম্যান্ডেলার কিছুটা হলেও ভূমিকা রয়েছে। এ কারণে আমেরিকার সন্ত্রাসী লিস্টেও তার নাম ছিল দীর্ঘদিন। ১৯৬৪ সালে তাকে দেয়া হয়েছিল যাবজ্জীবন কারাদ-, রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ এনে। ১৯৯০ সালে দীর্ঘ কারাবাসের পর তিনি ছাড়া পান। ১৯৯৩ সালে লাভ করেন শান্তিতে নোবেল পুরস্কার।

বর্তমান বিশ্বে তরুণদের মনে বিপ্লবের অনুপ্রেরণা হয়ে যে দুজন মহান প্রবীণ নেতা জীবিত রয়েছেন তাদের একজন হচ্ছেন কিউবার ফিদেল ক্যাস্ত্রো আর অপরজন নেলসন ম্যান্ডেলা। তাঁর বিভিন্ন ভাষণ বা সাক্ষাৎকার থেকে নেয়া উল্লেখযোগ্য কিছু উক্তি অনুবাদ করে দেয়া হলো। এ উক্তিগুলো পাঠে পাঠক হয়তো কিছুটা হলেও উপলব্ধি করতে পারবেন এই কৃষ্ণাঙ্গ নেতার দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে। ১. কোনো বিশাল পাহাড়ের চূড়ায় ওঠার পর একজন দেখতে পায়, আরোহণের মতো আরও পাহাড় রয়েছে। ২. একটা মেধাবী মস্তিষ্ক এবং ভালো মনের সমন্বয় সবসময়ই দুর্দান্ত।

৩. ঔপনিবেশিক দেশগুলোর স্বাধীনতা সংগ্রামে কমিউনিস্টদের সবসময়ই সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে। কেননা- কমিউনিজমের স্বল্পমেয়াদি উদ্দেশ্য স্বাধীনতা আন্দোলনের দীর্ঘ মেয়াদি উদ্দেশ্যের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। ৪. আমি যুদ্ধ করেছি শ্বেতাঙ্গদের প্রভাবের বিরুদ্ধে এবং একই সঙ্গে কৃষ্ণাঙ্গদের প্রভাবের বিরুদ্ধেও। ৫. আমি মনে করি না, আরব দেশগুলো সুনিশ্চিত সীমান্তের আওতায় ইসরায়েলকে স্বীকৃতি না দিলে ইসরায়েল নিজেকে প্রত্যাহার করবে। ৬. বর্ণবাদকে আমি অত্যন্ত ঘৃণা করি, কেননা আমি এটিকে বর্বরোচিত মনে করি, সেটা কৃষ্ণাঙ্গ বা শ্বেতাঙ্গ যাদের কাছ থেকেই আসুক।

৭. আমি আফ্রিকার ঐক্য বাস্তবায়নের স্বপ্ন দেখি যেখানে নেতারা এই মহাদেশের সমস্যা সমাধানে তাদের প্রচেষ্টায় ঐক্যবদ্ধ থাকবে। আমি আমাদের বিশাল মরুভূমি, আমাদের বন ও বিশাল ঊষর প্রান্তর নিয়ে স্বপ্ন দেখি। ৮. আমি জেনেছি সাহস অর্থ ভয়হীনতা নয়, বরং ভয়ের ওপর বিজয় লাভ। একজন সাহসী লোক মানে এই নয় যে সে কখনো ভয় পায় না বা ভয়কে অনুভব করে না। সেইই প্রকৃত সাহসী যে ভয়কে উপলব্ধি করে এবং তা জয় করে।

৯. যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন যখন নির্বাচন করে, তখন তারা আফ্রিকা অথবা এশিয়া থেকে পর্যবেক্ষক ডাকে না। আমরা যখন নির্বাচন করি তখন তারা পর্যবেক্ষকের কথা বলে। ১০. একটি সুন্দর দক্ষিণ আফ্রিকার স্বপ্ন যখন রয়েছে, তখন লক্ষ্যে পৌঁছানোর পথও রয়েছে। এই দুটি পথের একটি হচ্ছে মঙ্গল, অপরটি ক্ষমা। ১১. একটি লোক বুঝতে পারে এমন ভাষায় যদি আপনি কথা বলেন, সে কথা তার মাথায় পৌঁছবে।

আপনি যদি তার ভাষায় তার মতো করে কথা বলেন, সে কথা তার অন্তরে প্রবেশ করবে। ১২. আপনি যদি আপনার শত্রুর সঙ্গে শান্তি স্থাপন করতে চান, আপনাকে আপনার শত্রুর সঙ্গে কাজ করতে হবে। তারপর সে হবে আপনার সহযোগী। ১৩. আমার দেশে আমরা প্রথমে কারাগারে যাই, তারপর প্রেসিডেন্ট হই। ১৪. না করা পর্যন্ত যে কোনো কাজই অসম্ভব মনে হয়।

১৫. নেতৃত্ব দানের জন্য তোমাকে থাকতে হবে পেছনে এবং অন্যদের রাখতে হবে সামনে। বিশেষ করে বিজয় উৎসব ও সুন্দর ঘটনার সময় তোমার পেছনে থাকই ভালো। তবে বিপজ্জনক মুহূর্তে তোমাকে অবশ্যই সামনে অবস্থান নিতে হবে। তাহলে জনগণ তোমার নেতৃত্বের প্রশংসা করবে। ১৬. আমাদের সবার জন্য কাজ, রুটি, পানি এবং লবণ দিতে হবে।

১৭. কেবল মুক্ত মানুষ আলোচনা করতে পারে, বন্দি কখনও চুক্তিবদ্ধ হতে পারে না। ১৮. একটা গৌরবময় বিজয় কখনই ম্লান হয় না ১৯. কোথাও স্বাধীনতার পথ সহজ নয়। বারবার মৃত্যুর পথ আমাদের অতিক্রম করতে হয় আকাঙ্খার পর্বতশীর্ষে পৌঁছানোর জন্য। ২০. স্বাধীনতার অংশ হওয়ার মতো কোনো বস্তু নেই। ২১. শিক্ষা অত্যন্ত শক্তিশালী একটা অস্ত্র, যা তুমি বিশ্বের পরিবর্তনে ব্যবহার করতে পার।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।