যখন বিকাল হতে থাকে, হতে হতে সূর্যটা ঢলে পড়ে, পড়তে থাকে
ভুবনেশ্বর নন্দী বনানী পোস্ট অফিসে বদলী হয়ে আসার পর থেকে অশান্তীতে আছে। সরকারী একটা গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট অফিসের প্রধান হিসাবে তার সেই জৌলুস নাই। পাশের এবিসি টাওয়ারের অফিসগুলোর পিয়নের জামাটাও তার চেয়ে দামী। একটু দূরের খাবারের দোকানের বয়টাও তার চেয়ে বেশী বেতন পায়।
এসব আগে তার দেখতে হতো না।
বাড্ডা আর বনানীর মধ্যে অনেক পার্থক্য। বনানীর যেকোন অফিস-প্রধানের বেতন তার চেয়ে দশগুন বেশী। দুপুরের পরে একটু সময়ের জন্য ভীড়টা কমে মানিঅর্ডার বন্ধ হলে। সরকারী পত্রিকাটা তখন মাত্র চোখের সামনে মেলে ধরা যায়।
গতকাল অর্থ উপদেষ্টার বক্তব্য শুনে তার মনে হয়েছে সম্ভবত শায়েস্তা খান দু'বছর আগে ক্ষমতায় ছিল।
বর্তমান বাজার মূল্য দেখলে দুই বছরের আগের সময়কে তেমনই ধরতে হয়। কিন্তু ভুবন বাবু একটা বিষয় কোনভাবে মেলাতে পারেন না, অর্থ উপদেষ্টা যে বাজার থেকে মানুষ ব্যাগ ভর্তি ফেরে, এটা জানলেন কিভাবে!
এই যেমন আজকের সকালের ঘটনাই। ভুবন বাবু কলোনীর আরো পড়শীর সামনে দিয়ে ব্যাগ দোলাতে দোলাতে বাজারে গেল। গিয়ে দেখলো শবজীর দাম আরো এক দফা বেড়ে গেছে এক রাত্রের মধ্যে। এক টাকা দুইটাকা নয়।
পাঁচ টাকা থেকে দশটাকা।
কলোনীর লোকজন সাতসকালে যার যার বেলকনীতে বসে মুড়ি চা খায়। পেপারটা উল্টে পাল্টে দেখে। বাজারের ব্যাগ এখানে সবসময় সামাজিক অবস্থানের নির্ণায়ক। যখন ব্যাগটা ফুলেটুলে থাকে, পড়শীদের চোখে ভুবন বাবুর আভিজাত্য বাড়ে।
মতিঝিলের কলোনীপাড়ার বাজারের পাশেই ভাঙা দেয়ালের মেরামতের কাজ হচ্ছে। ভুবন বাবু আধা কেজি বেগুন আর পটল কিনে দেখেন ব্যাগটা চর্মসারই আছে। নেতিয়ে আছে। কিন্তু পকেট খালি।
ভাঙা দেয়ালটায় এক কোনে বসার মত একটা জায়গা আছে।
সেখানে সে বসে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। এবার বোধহয় প্রেস্টিজটা পাঙচারই হয়ে গেল। ইটের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে তার মাথায় একটা চমৎকার আইডিয়া খেলে। এদিক সেদিক তাকিয়ে ব্যাগে পুড়ে নিলেন দুটো আস্ত ইট। ব্যাগটা ওজনে নুয়ে পড়তেই ভুবন বাবুর মনটা খূশীতে ভরে ওঠে।
আজকে পড়শীরা নিশ্চয়ই ধরে নেবে খাশীর মাংশ কিনেছে ভুবন বাবু।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।