সাহিত্যের সাইটhttp://www.samowiki.net। বইয়ের সাইট http://www.boierdokan.com
কয়দিন আগে আমার এক বন্ধু বলতেছিল জারিফের ওপর একটা লেখা লিখে সামহয়ারে পোস্ট করতে। আমি কইলাম, হাসান বিপুল একটা লেখা লিখছেন (Click This Link) আর সেইটা স্টিকিও হইছে। বন্ধু বলে, তারপরও লিখলেন। একটু মনে করায়া দিলেন।
আমি ফোন-আলাপে কইলাম, লিখবোনে একটা। ব্লগ লেখা তেমন আর কী ব্যাপার। প্রায় দিনই তো লেখি। কিছু একটা মাথায় আইলেই লেখে ফেলি।
তো, বন্ধুরে কথা দিয়া আইসা ব্লগ খুইলা দেখি সাহায্য-সহেযোগিতা নিয়া ঝামেলা চলতেছে।
ভাবলাম, ঝামেলা একটু কমুক। দেখি কী হয়। দিন দিন দেখি ঝামেলা বাড়তেই আছে। এবং সেইটা কাল এবং আজ মিলে হৃদয়বিদারক পরিণতির দিকে আগায়া গেল। আমি ভাবলাম, না সাহায্য সহযোগিতা নিয়া পোস্টটা আর দিবো না।
আগেও দেই নাই। গল্পকার রবিউল করিম আমার পোস্টে আইসা আহবান জানাইছিলেন, তাই সমুদ্র গুপ্তরে নিয়া পোস্ট দিছিলাম। সেইটা অনেকের পছন্দ হয় নাই। কারণ সাহায্যের জন্য যে অ্যাপ্রোচ দরকার সেই মানবতাবাদী অ্যাপ্রোচটা আমার লেখায় নাই। আমি এইটা আনতে পারি না।
কারণ আমার চিন্তায় সেই মানবতাবাদী অ্যাপ্রোচের জায়গাটা ঠিক ওইরকম না। আমি ওইভাবে ভাবতে পারি না।
মানুষের জীবনের মূল্য অনেক। তাই মৃত্যুকে সবচেয়ে ভয় মানুষের। ভগবান বুদ্ধ মৃত্যু-জরার কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়া বুদ্ধত্ব লাভ করছিলেন।
প্রভু যীশু মৃতকে জীবনদান করে মানুষের সামনে নতুন জীবনের দিশা এনে দিছিলেন। মানুষকে জীবনদান তাই মানুষের আদিপূণ্য। একমাত্র ইশ্বর ও ঈশ্বরের প্রেরিত পুরুষই মানুষকে জীবন দিতে পারে। মানুষে ঈশ্বরের এই মহীয়ান ক্ষমতাকে ঈর্ষা করে। সে কারণে জীবন দান করতে না পারুক, জীবন রক্ষার জন্য নিজেকে উৎসর্গ করা, সেই আদিপূণ্যের সঙ্গে নিজের অংশদারীত্বকে বাড়িয়ে চলা তার সহজাত প্রবণতা।
যিনি ডাক্তার, যিনি সেবিকা, যিনি মানুষের শুশ্রূষা দেন তিনি সেই আদিপূণ্যে মহীয়ান। যিনি মাতা তিনিও। সাধারণ মানুষ অর্থ, শ্রম, রক্ত ব্যতিরেকে আর কী দিয়েই বা মৃত্যুপথযাত্রীকে বাঁচাইতে পারে? ফলে, সে সাহায্য করে। মানুষকে জীবনদানের ঐশ্বরিক অনুভবে দোলায়িত হয়। যে সাহায্য করে সেই মহান।
যে মৃত্যুপথযাত্রী যে আর দশজন মানুষের মতোই নশ্বর মানুষ। আর দশজন ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিতে যাইতেছে। উনি একটু গতিতে যাইতেছেন। এই যা পার্থক্য।
কিন্তু সত্য হইলো, মৃত্যুকে জয় করা সম্ভব না।
মৃত্যু হবেই। আজ হউক, কাল হউক। কিন্তু মানুষের সভ্যতা মৃত্যুকে জয় করতে না পারুক, কিছু সান্ত্বনা অন্তত তৈরি করতে পারছে। প্রতিদিন বহু মানুষ মরে, শুধু মানুষ না, প্রতি পলে কত কীট, কত বৃক্ষ, কত প্রাণ ঝরে যায়। তার জন্য আমাদের দুঃখবোধও প্রগাঢ়।
তারপরও আমাদের সান্ত্বনা, আমরা ওষুধ খাইতে পারি, অপারেশন করতে পারি, দুর্ঘটনাকে জোড়া দিতে পারি। অপমৃত্যু, বিনাচিকিৎসায় মৃত্যুকে রোধ করতে পারি। কিন্তু সত্যিই পারি তো?
আমার মনে হয় না, মৃত্যুকে জয় করা যায়। তাই বলে, আমি চিকিৎসার বিরুদ্ধে নই। কিন্তু মৃত্যুবোধ আমাকে রোগির শুশ্রূষার জন্য তাড়িত করে না।
আমি আদিপূণ্যের আস্বাদ নিতে চাই না।
তারপরও, যে ব্লগাররা যুথবদ্ধ হয়ে অর্থ তুলেছেন, ফাউন্ডেশন করেছেন, মানুষের কাছে হাত পেতেছেন, পোস্ট লিখেছেন তাদের জন্য আমার শুভকামনা ছিল। আর দশজন ব্লগারের মতো আমিও আশা করেছিলাম :
১. এই কাজের জন্য নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষমতা ব্লগারদের কারো কারো আছে।
২. নেতারা সবার সাহায্য নিয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সঙ্গে কাজটি করবেন।
৩. কাজের ক্ষেত্রে বিভিন্ন স্তরগুলো নিয়ে ব্লগাররা সচেতন আছেন।
৪. যোগাযোগের এই যুগে শাশ্বত সত্য ও তার আপনজনদের সঙ্গে উপযুক্ত যোগাযোগের ভিত্তিতেই কাজ এগিয়ে যাবে।
৫. নানা মতের নানা মুনীর সম্মিলনের মধ্যে 'মহৎ' এই উদ্যোগটি প্রভাবিত হবে না।
কিন্তু দেখা গেল অনেক সমস্যাই হইলো। যা যা সমস্যা এই ধরনের উদ্যোগের ক্ষেত্রে হইতে পারে তার সবই হইলো। জিনিশটা আমার ভাল লাগে নাই।
দেখলাম, অনেকেরই জিনিশটা ভাল লাগে নাই। আমার ব্লগে অনেকে হতাশ। সামহয়ারে জিনিশটা নিয়া একাধিক পোস্ট পড়ছে। আমি হতাশ না। কিছুটা বিরক্ত।
কারণ, ব্লগারদের খারাপ ইমেজ আমারও খারাপ ইমেজ। কথা ঠিক, একজন অভাগা হিসাবে আমি একদিনে জন্যও বসুন্ধরায় যাই নাই। পকেট থেকে এক টাকাও দেই নাই। কাউরে বলি নাই সাহায্য করতে। ব্লগে পোস্ট দেই নাই।
কাউরে পোস্ট দিতে উৎসাহিত করি নাই। কিন্তু তারপরও সৌভাগ্য যে, দায়টা আমার উপরেও আইসা পড়ে। ব্যক্তিগতভাবে তো আমি ব্লগার। পেশাগতভাবে আমি প্রথম আলো পত্রিকার ব্লগের দায়িত্বে আছি। রাহা নামে আমার প্রিয় একজন ব্লগার সামহয়ারের এই সাম্প্রতিক সাহায্য-সহযোগিতা সমস্যার লগে প্রথম আলোকে যুক্ত কইরা ফেলছেন।
তিনি ভীত, প্রথম আলো ব্লগ করলে সংগঠন তৈরি হইবে আর ব্লগে ঝামেলা বাড়বে। পুরা টাসকি খায়া গেলাম। চকির তলার সঙ্গে আগরতলাকে মিলানোর কী অসাধারণ চেষ্টা।
আমার কথা হইলো, প্রাপ্তির সময় ব্লগ ছোট আছিল। সমস্যা হয় নাই তেমন।
এখন ব্লগ বড়, সমস্যা একটু বেশি হইছে। মানুষ বেশি হইলে দল উপদল তৈরি হইবে, ঠেকানোর উপায় নাই। কারণ মানুষ মাত্রই মতামত আছে। মানুষ মাত্রই মতামতরে ভিন্নতাও আছে। সেইসব নিয়াই থাকতে হবে।
কাজ চলতে হবে। আমি সাহায্যের দর্শনে বিশ্বাসী না। কিন্তু সাহায্য বন্ধ করার দর্শনেও বিশ্বাসী না। একটা আমার ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি। আরেকটা আমার সমাজ ভাল মনে করে।
আমি যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করি সেই প্রতিষ্ঠানও সাহায্য-সহযোগিতায় বিশ্বাস করে। কিন্তু রাহা কী মনে কইরা নিজেদের ব্যর্থতাকে অদেখা প্রথম আলো ব্লগের লগে মিলাইলেন বুঝতে পারলাম না। এখন দায়টা কি আমরা অদেখা, অচেনা একটা ব্লগের ওপর চাপাবো? নাকি নিজেদের ব্যর্থতা, দুর্বলতাগুলারে শনাক্ত করার চেষ্টা করবো?
রাহার মতে, বাংলা ব্লগের ভবিষ্যত অন্ধকার। অন্তত তার ইঙ্গিত তাই বলে। আমি বলি, চ্যাটিং রুম, আর ইয়াহু গ্রুপের চেয়ে ব্লগ একেবারেই আলাদা।
এইখানে লোকজন লেখে। প্রত্যেকেই অর্থপূর্ণ কিছু লেখার চেষ্টা করে। পড়ার চেষ্টা করে। বুঝার চেষ্টা করে। কিছু মানুষ সবখানেই অসহনশীল।
কিছু মানুষ সব জায়গা থেকেই ফায়দা তোলার চেষ্টা করে। কিন্তু বহু মানুষ আসলে কাজ করতে চায়, নতুন কিছু করতে চায়, বলতে চায়, শেয়ার করতে চায়। চ্যাটরুমের আলো আঁধারিতে সেইটা হয়া ওঠে না। ইয়াহুগ্রুপেও সেইটা হয় না। ব্লগ আমার কাছে একটা খোলা মাঠের মতো।
প্রত্যেকে প্রত্যেকের চেহারা দেখতে পাই আমরা। চিনি। যার নাম জানি না, চেহারা চিনি না, এমনি তাকেও চিনি। শুধু সামনে আইসা বললেই হবে যে আমি অমুক। এই সম্ভবনাটারে আশংকা আর ভুল পদক্ষেপ দিয়া নষ্ট কইরেন না।
ভুল হইলে ঠিক করা যায়। যাবে না কেন?
ভুলটারে ঠিক করেন। আলোচনা করেন। আলোচনার আগে ঠিক করেন, অন্যের ওপর দোষ চাপাবেন না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।