আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নির্বাচন নিয়ে কে কি ভাবছেন

বিনোদন প্রিয় লোকের সংখ্যাই বেশি।

নির্বাচন নিয়ে কে কি ভাবছেন তালুকদার মনিরুজ্জামান রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও জাতীয় অধ্যাপক নির্বাচনে সব দলের উপস্থিতি দেখতে চাই। এজন্য রাজনীতিবিদদের নিয়ে সব ঝামেলা তাড়াতাড়ি মিটিয়ে নির্বাচনের পথ সুগম করা উচিত। এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকাই মুখ্য। নির্বাচন কমিশনকে কোন দলের প্রতি দুর্বলতা প্রদর্শন করা মোটেই কাম্য নয়।

দেশের মানুষ একটা নিরপেক্ষ অবাধ, সুষ্ঠু ও অর্থবহ নির্বাচন দেখতে চায়। এ ব্যাপারে সরকার এবং নির্বাচন কমিশনকে সচেতন থাকতে হবে, সেই সঙ্গে রাজনীতিবিদদেরকেও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে হলে সংবাদপত্রসহ সকল গণমাধ্যমকে দল নিরপে ভূমিকা পালন করতে হবে। দেশের মানুষ আশা করে, রাজনৈতিক দলসমূহ সৎ ও যোগ্য প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচনকে অর্থবহ করে তুলবে। এ ব্যাপারে সরকারের ভূমিকাকেও খাটো করে দেখার অবকাশ নেই।

মোটকথা রাজনীতিবিদ এবং সরকার উভয়েই মিলে এক মনে যেভাবে অর্থবহ একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান করা যায় সে ব্যাপারে সকলেই আশা করে তাকিয়ে আছে। কাজী ফজলুর রহমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রথম উপদেস্টা ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে দেশের সাধারণ নির্বাচন করার বিষয়ে সরকার ও মতাসীন মহলের আন্তরিকতা সম্পর্কে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। আমার বিশ্বাস তারা যথেষ্ট জ্ঞানী ও গুণী ব্যক্তি। আন্তর্জাতিক ও দেশের পরিস্থিতি অর্থনৈতিক ও অন্যান্য কারণে সামনের দিনগুলোকে যে উত্তরোত্তর ঝঞ্ঝাবদ্ধ করে তুলবে সে সম্পর্কে তারা নিশ্চিতই অবহিত। সেই সময়ে তারা আন্তর্জাতিক স্বীকৃত পদ্ধতির ব্যতিক্রমী কোন শাসন ব্যবস্থার দায়িত্ব নিতে চাইবে না- এটাও স্বাভাবিক।

তাদের আন্তরিকতা ও প্রচেষ্টা সত্ত্বেও আমি একেবারে নিশ্চিত হতে পারছি না, কেন না, মনে হয় প্রস্তুতিপর্ব প্রয়োজনের চাইতে কিছুটা পিছিয়ে আছে। ক্ষমতা ছাড়ার আগে অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের ভাল কাজগুলোর সুফল কিভাবে টিকিয়ে রাখা যায় এবং তাদের নিজেদের দায়মুক্তির ব্যবস্থা কিভাবে করা যায় এই বিষয়গুলোও নিশ্চয়ই তাদের সক্রিয় বিবেচনার মধ্যে রয়েছে। কারো কারো মতে, নির্বাচন কমিশন গত দেড় বছরের সময়ে যতটুকু নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেয়ার প্রয়োজন ছিল তা করে উঠতে পারেনি। উদাহরণস্বরূপ নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনঃনির্ধারণের বিষয়টি উল্লেখ করা যায়। এই কাজটি আরো এক বছর আগে কেন শুরু করা গেল না তা বোঝা মুশকিল।

প্রক্রিয়াটি জটিল এবং যে কোন পরিস্থিতিতেই সময় সাপে। তবে আশা করা যায় যদি আইন-আদালতের ঝামেলা না হয় তবে যথোপযুক্ত সময়ে এই কাজটি সম্পন্ন হবে। আমাদের জাতি বড় বিস্মৃতিপ্রবণ। কারো খারাপ কাজের সঙ্গে অন্যদের ভাল কাজের কথা খুব তাড়াতাড়ি ভুলে যায়। যতই সময় যাবে ততই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভালো কাজগুলোর সঙ্গে পূর্ববর্তী সময়ে যে সব অপকীর্তির বিবরণ প্রকাশ পেয়েছে দু’দিনেই ভুলে যাবে।

অতএব জাতির স্বার্থে, দেশের স্বার্থে এমনকি মতাসীনদের স্বার্থে যেভাবেই হোক ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করা ছাড়া অন্যকোন পন্থা নেই। রাজনৈতিক প্রস্তুতিপর্ব সন্তোষজনকভাবেই এগুচ্ছে। বড় দলগুলো মুখে যাই বলুক কাজে তাদের নির্বাচনমুখিতার সুষ্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে। তারাও নিশ্চয়ই ক্ষমতার বাইরে থাকায় তাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে অতীতের যে ভুলগুলো দেখানো হয়েছে তা ভুলে যাবে না। একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে তাদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করা অবাস্তব হবে না।

ড. মীজানূর রহমান শেলী সমাজ বিজ্ঞানী সাম্প্রতিক দিনগুলোতে দেশের রাজনৈতিক মঞ্চে যেসব নাটকীয় ঘটনা ঘটেছে তার অভিঘাত সম্পর্কে নিশ্চয় করে বলার সময় এখনও আসেনি। চলমান জাতীয় সংলাপ প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণের বিষয়ে অনিশ্চিতির কারণে যখন প্রায় নিষ্প্রাণ হয়ে উঠেছিল সেই সময় নাটকীয় দ্রুততায় আওয়ামী লীগ প্রধান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুক্তি ও চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়া এবং সঙ্গে সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংলাপে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত দৃশ্যপটে ঘটায় বিপুল রদবদল। সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত এখনো গৃহীত না হওয়া সত্ত্বেও অপর শীর্ষ নেত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন ও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও তাঁর দুই পুত্রের মুক্তির বিষয়ও শিগ্গির একই রকম কিছু ঘটবে বলে মনে করা অযৌক্তিক নয়। শীর্ষ নেত্রীদের মুক্তি, তা সাময়িক হোক বা শর্তাধীন এবং জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার না হলেও শিথিল করার ব্যবস্থার ফলে এ বছরের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় নির্বাচন সকলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হবে বলে ব্যাপক আশার সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু এ নিয়ে সংশয়ের পূর্ণ অবসান এখনো ঘটেনি।

বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ অনেকগুলো ছোট ছোট রাজনৈতিক দলের আপত্তি সত্ত্বেও সরকার ও নির্বাচন কমিশন স্থানীয় সরকার বিশেষত উপজেলা পর্যায়ের নির্বাচন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই অনুষ্ঠান করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। এর পরিণতিতে যে জটিলতা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা তা যথাসময়ে সকলের অংশগ্রহণে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথে বাধা-বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে। তাছাড়া রাজনীতিকে দূষণমুক্ত ও গণতন্ত্রকে অর্থবহ করার যে ঘোষিত দায়িত্ব অন্তর্বর্তীকালীন তদারকী সরকার নিয়েছিলো তা পূর্ণভাবে পালন করতে গেলেও নানা বাস্তব সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। দৃশ্যত সরকার আশা করে যে, রাজনৈতিক সংলাপের ফসল হবে এক জাতীয় সনদ। সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষ রাজনীতিকে সন্ত্রাস, কাল টাকা, গণতন্ত্রবেশী স্বৈরতন্ত্র ও পরিবারতন্ত্রের অবসানের প্রতিজ্ঞাপত্র হিসেবে এই সনদকে কাজে লাগাবে এটাই সরকারের অভিলাষ।

নির্বাচনী আইন, বিধি-রীতি এবং রাজনৈতিক দলের গণতন্ত্রমুখী সংস্কারের ব্যাপারে দলগুলো নীতিগত সম্মতি ব্যক্ত করেছে। কিন্তু রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় ভারসাম্য এবং স্থানীয় সরকারকে সাংবিধানিকভাবে বলিষ্ঠতর করার বিষয়ে শাসনতান্ত্রিক সংস্কারের প্রশ্নে গভীর মতপার্থক্য রয়েছে। এই বিষয়টিও আসন্ন্ নির্বাচনের পথকে কন্টকাকীর্ণ করতে পারে। খাদ্য ও জ্বালানি সংকট, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দুঃসহ ঊর্ধ্বগতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সার্বিক অর্থনীতিতে শ্মথতার সমস্যায় জর্জরিত এই অনির্বাচিত ও অরাজনৈতিক সরকার কতটা সফলভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রবল চাপ মোকাবেলা করতে পারবে তা নিয়েও সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। ভবিষ্যৎ ঘটনাবলী সংস্কারের কাজটি অপূর্ণ রেখে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান করার পথকেই সুগম করে তুলতে পারে।

এ ধরনের পরিস্থিতিতে নির্বাচন, তা যতই সুষ্ঠু, স্বচ্ছ, অবাধ ও নিরপেক্ষ হোক না কেন, দেশ ও জাতিকে আবার দূষিত ও সাংঘর্ষিক রাজনীতির ঘূর্ণাবর্তে ফিরিয়ে নিতে পারে। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে দেশের জন্য তা যে মঙ্গলকর হবে না এটা দেশবাসী জানে। কিন্তু তারা চালকের আসনে নেই। নেপথ্যে কোথায় কি ঘটছে তাও তারা জানে না। এ অবস্থায় বিবর্তনশীল প্রোপটের দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া তাদের পক্ষে আর কিছু করা সম্ভব নয়।

তারা শুধু আশা করে যে, সরকার ও রাজনৈতিক শক্তিগুলো দেশ ও জাতির মঙ্গলের জন্য সতর্কতা ও সাবধানতার সঙ্গে এমন পদপে গ্রহণ করবে যার ফলে শুধু নির্বাচন নয় অর্থবহ ও কল্যাণমুখী গণতান্ত্রিক রাজনীতির পত্তন ও বিকাশ সম্ভব হবে। সিরাজউদ্দিন আহমেদ ইতিহাসবিদ নির্বাচন নিয়ে জাতি উদগ্রীব। যেহেতু অস্বাভাবিক পরিস্থিতির জন্যে সরকারের আয়ুষ্কাল বিলম্বিত হয়েছে সুতরাং এই সরকারের উচিত ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা এবং প্রয়োজনে জরুরি অবস্থা খুব শিগিগির উঠিয়ে নেয়া। আর রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্ব হলো তাদের দলের ভেতরে সংস্কার করা এবং সৎ ও যোগ্য প্রার্থীদের নির্বাচনে নমিনেশন দেয়া। এই সময়ে নির্বাচন কমিশন সীমানা নির্ধারণ থেকে বিরত থাকা প্রয়োজন।

কারণ হলো, নতুন এলাকায় প্রার্থীরা অনেকেই অপরিচিত, আবার অনেক এলাকায় আসন কমে যাচ্ছে। রাজধানীতে লোকসংখ্যা বাড়বে এটা স্বাভাবিক। সেজন্যে গ্রামাঞ্চলে বা পল্লী অঞ্চলে আসন কর্তন করার এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনের নেই। সংসদই একমাত্র আসন বৃদ্ধি করতে পারে। সরকারের উচিত হবে অবিলম্বে রাজনৈতিক কার্যকলাপ মুক্ত করে দেয়া।

ডিসেম্বরে নির্বাচন করতে হলে মাত্র পাঁচমাস বাকি। তাই আর বিলম্ব নয়। রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশ্যে আর একটি কথা তাহলো নমিনেশন বাণিজ্য যেনো আর না হয় এবং যোগ্য প্রার্থীদের বাছাই বাছাই করে তারপর যেনো নমিনেশন দেয়। উল্লেখ্য যে ১৯৭০ সালের নির্বাচন ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তৎকালীন সামরিক সরকার ১৯৭০ সালের জানুয়ারি মাসে রাজনীতির ওপর বিধি-নিষেধ প্রত্যাহার করে নেয়।

ড. কামাল আহমেদ অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমি মনে করি বাংলাদেশের বর্তমান জাতীয় রাজনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণের একটি উপায় হচ্ছে আগামী ডিসেম্বরে একটি স্বাধীন, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। অবশ্য সে লক্ষে বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে এগিয়ে যাচ্ছে। বৃহৎ দলগুলোকে নিজেদের প্রয়োজনীয় সংস্কার কর্মসূচি সফল করে পরে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে। পূর্ণ সহযোগিতার ও সমঝোতার হাত প্রসারিত করে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সৎ ও যোগ্য প্রার্থীকে মনোনয়নের ব্যবস্থা রাজনৈতিক দলগুলোকেই করতে হবে। মনে রাখতে হবে বাইরের কোন শক্তি এসে আমাদের সংস্কার করে যাবে না, আমাদের রাজনৈতিক সংস্কার আমাদের রাজনীতিবিদরাই করবেন।

যদি রাজনৈতিক দলগুলো নিজেরা নিজেদের সংস্কার না করে তাহলে ওপর থেকে কেউ চাপিয়ে দিলেও তা গ্রহণযোগ্য হবে না। যার ফলে রাজনৈতিক দলগুলোকেই এ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে। আমার বিশ্বাস পেশীশক্তি ও কালো টাকার অধিকারীদের বাদ দিয়ে সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব আগামী নির্বাচনে জয়লাভ করে আসবে, এবং আমাদের এই উন্নয়নশীল দেশকে সমৃদ্ধির দিকে, শক্তিশালী গণতন্ত্রের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। তাই আগামী জাতীয় নির্বাচনে বৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রার্থী নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বিরাট এক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হবে। নির্বাচনে জয়লাভের জন্য প্রার্থী মনোনয়ন দিতে হবে সাবধানতা, সতর্কতা ও বিচক্ষণতার মাধ্যমে।

কারণ, দুর্নীতিবাজ হিসেবে প্রমাণিত, পেশীশক্তি ও কালো টাকার অধিকারীকে মনোনয়ন দিলে পূর্বের চেয়ে অধিকতর রাজনৈতিক সচেতন জনগণ তা প্রত্যাখ্যান করবে। এবার জনগণ চায় সত্যিকারের জনগণের জন্য নিবেদিত সরকার, জনগণের জন্য জবাবদিহিতামূলক সরকার এবং জনগণ দ্বারা পরিচালিত সরকার। বহু ত্যাগ, তিতিক্ষা ও এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের মাতৃভূমির এই স্বাধীনতা। ‘Freedom first, freedom second and freedom everything’. মনে রাখতে হবে এদেশ আপনার, আমার, সবার। শুধুমাত্র কিছুসংখ্যক রাজনীতিবিদ ও অন্যান্য পেশাজীবী বা আমার মত শিক্ষকের সংকীর্ণ স্বার্থ রা করার জন্য স্বাধীনতা সংগ্রাম হয়নি।

দারিদ্র্য বিমোচনের মাধ্যমে আমাদেরকেই স্বাধীনতার সুফল, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার এবং জনগণের মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করতে হবে। দেশ পরিচালনায় ক্ষমতাশীল নেতৃবর্গের মিথ্যে আশ্বাস ও মিথ্যে প্রতিশ্রুতি জনগণ আর আশা করে না। জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবার আগেই আগামীতে যারা দেশ পরিচালনা করবেন- তাদেরকে ‘মিডিয়ার’ মাধ্যমে জনগণের কাছে সুস্পষ্ট অঙ্গীকার করতে হবে। সারাবিশ্ব তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে। রাজনৈতিক সংঘাত নয়- সকল পক্ষের সহযোগিতা ও অংশগ্রহণ অত্যন্ত প্রয়োজন আগামী নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য।

নির্বাচনের আগে অবশ্যই জরুরি অবস্থা তুলে নেয়া দরকার বলে আমি মনে করেন। মীর নাসির হোসেন সাবেক সভাপতি এফবিসিসিআই নির্বাচন যথাসময়ে হওয়া উচিত এবং ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই। কারণ অনেকে রাজনৈতিক কারণে নির্বাচনটা হওয়ার জন্যে বলবেন। আমি সে কারণে না বলে বলতে চাই নির্বাচনটা সঠিক সময়ে হওয়াই বাঞ্ছনীয়। কারণ, যেহেতু আমরা একটি অন্তর্বর্তীকালীন সময় অতিক্রম করছি সেহেতু এই সময়টাতে অনেক দেশি-বিদেশী বিনিয়োগকারী সংগত কারণেই বিনিয়োগের সিদ্ধান্তে একটু সতর্কতা অবলম্বন করছেন।

তাই নির্বাচনটা যদি সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য এবং নিরপেক্ষভাবে সঠিক সময়ে অনুষ্ঠিত হয় তাহলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা বৃদ্ধি পাবে এবং বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত হবে। আর বিনিয়োগ হলেই শিল্পায়নসহ অন্যান্য অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের গতি সঞ্চারিত হবে। যার ফলে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। তাই আমি মনে করি নির্বাচন সঠিক সময়ে অনুষ্ঠিত হওয়া বাঞ্ছনীয়। বিচারপতি গৌর গোপাল সাহা সাবেক বিচারপতি প্রত্যাশিত জাতীয় সংসদের জন্যে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও সাধারণের গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের বিষয়টি আজ বাংলাদেশের গণমানুষের নিত্যদিনের ভাবনা।

অধিকাংশ মানুষ অশিতি হওয়া সত্ত্বেও অতীতে এদেশের সাধারণ মানুষ জাতীয় দুর্যোগপূর্ণ সময়ে নির্বাচনে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে দেশ ও জাতির অশেষ কল্যাণ সাধন করেছেন। তাই এবারকার বিশেষ পরিস্থিতিতে আগামী সাধারণ নির্বাচনে সাধারণ মানুষের ভূমিকা কোনক্রমেই ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। এখন প্রশ্ন হলো নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে এতো আশা-নিরাশার নাগরদোলায় মানুষ ঝুলছে কেন? ১/১১-এর ঐতিহাসিক ঘটনার প্রেক্ষিত সকল স্তরের মানুষ বিকৃত ও কলুষিত রাজনীতির ফলে সুষ্ঠু ও গঠনমূলক রাজনীতি সংগতকারণেই দেখতে চেয়েছে। যেসব রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের সীমাহীন মতার লোভ, অসহিষ্ণুতা, দলবাজি, ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্যে অথবা মতায় ফিরে আসার জন্যে হেন অপকর্ম নেই নেতারা করেননি, তাদের কাছ থেকে প্রকাশ্যে ভুল স্বীকার করে জনগণের দেয়া মতা অপব্যবহারের জন্য নিঃস্বার্থ মা প্রার্থনা করা এবং সব ভুলের পুনরাবৃত্তি করা থেকে বিরত থাকার সুস্পষ্ট অঙ্গীকার জনগণ অবশ্য আশা করেছিলেন। দুর্ভাগ্য আমাদের, আমাদের দেউলিয়া রাজনৈতিক নেতৃত্ব সে উদারতা দেখাতে পারেননি।

যে দুঃশাসন, অপশাসন ও অযোগ্যতার ফলে দেশ এক রক্তয়ী গৃহযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে উপস্থিত হয়েছিল, তাদের এই নির্মম মানসিকতা এক কথায় জনগণের প্রতি নির্মম ও নিষ্ঠুর পরিহাস। ব্যাপক রাজনৈতিক সংস্কারের প্রয়োজনের কথা প্রথম প্রথম প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলের অনেক নামি-দামি নেতাই বলেছিলেন। তাদের সৎ সাহসের জন্য তারা সাধারণ মানুষের প্রশংসাও পেয়েছিলেন। কিন্তু রাজনীতিতে সনাতন পন্থিদের এবং সুবিধাবাদীদের প্রবল বিরোধিতা এবং সরকারের কার্যকরণে গতিশীলতা, সমন্বয়ের অভাব এবং কূটচালে অদতাজনিত কারণে সে সুযোগ ইতিমধ্যেই অনেকটা ভেস্তে গেছে। সংলাপের নামে যুক্তিহীন দীর্ঘসূত্রতা এবং নির্বাচনী আচরণবিধিতে গ্রহণযোগ্য বিধিমালা আজ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারেননি।

অথচ একথা সকলেরই জানা রাজনীতিতে গুণগত মৌলিক পরিবর্তন না এনে নির্বাচন অনুষ্ঠান কখনো অর্থবহ হবে না। অন্যদিকে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত প্রধান রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের বিচার গত দেড় বছরে শেষ না হওয়ায় এবং চাল, ডাল, তেল, নুনসহ নিত্য ব্যবহার্য জিনিসের অগ্নিমূল্য রোধে সরকারের অপারগতা এই সব কারণে সময় প্রবাহের তালে তালে রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের অপকর্মের কথা আস্তে আস্তে ভুলে যাচ্ছে এবং একথা পরিত্যক্ত নেতা-নেত্রীদের প্রতি এক প্রকারের সহানুভূতির আবহাওয়া সৃষ্টি করছে। সত্যি বলতে সাধারণ মানুষ সঙ্গতভাবে দ্বিধাগ্রস্ত ও হতাশায় ভাসমান। একথা সকলেরই জানা রাজনীতির মীমাংসা রাজনৈতিকভাবেই হতে হবে এর অন্য কোন বিকল্প নেই। রাজনৈতিক নেত্রীকে ইতিমধ্যে বিদেশে চিকিৎসার জন্য প্যারোলে মুক্তি দেয়া হয়েছে।

তবে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব যেহেতু বর্তমান সরকারের, তাই সময় নষ্ট না করে এ ব্যাপারে প্রত্যয়ী ও বাস্তবসম্মত পদপে সরকারকে এখনই গ্রহণ করতে হবে। সকল প্রকার দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ও দোদুল্যমানতা পরিহার করে স্বচ্ছ ও অতিপ্রয়োজনীয় নির্বাচন বিধি সন্নিবেশ করে দৃঢ় পদক্ষেপে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.