আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হেরে যাবো বলে তো স্বপ্ন দেখেনি



মানুষ তার জীবনে অনেক কিছু প্রত্যাশা বা আশা করে। অনেক স্বপ্ন দেখে। কিন্তু সব স্বপ্ন সবার পূরণ হয় না। কারণ তারা খুব অল্পতে ভেঙ্গে পড়ে। জীবন মানে দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় নৌকা পাড়ি দেয়া।

এখানে অনেক বিপদ সংকুল পথ আছে। এই পথ পাড়ি দেয়া অতো সহজ না। তাই সবাই জীবনে সাফল্য পায় না। আমি এক সাধারণ পরিবারের জন্মগ্রহণ করেছি। এখানে ছয় ভাই-বোনের মধ্যে আমি পঞ্চম।

জীবনে আশা ছিল সাংবাদিক হওয়ার। তাই ইচ্ছা ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা বিভাগে ভর্তি হওয়ার। কিন্তু বন্ধুমহল বলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা বিভাগে ভর্তি হওয়ার কঠিন। কিন্তু আমি এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম। প্রথমবার পারিনি কিছু সমস্যার কারণে।

কিন্তু দ্বিতীয়বার আমি পেরেছি। কারণ আমি স্বপ্ন দেখি হেরে যাওয়ার জন্য নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে ভর্তি হলাম। অনেক আনন্দ নিয়ে ক্লাশ করতে শুরু করলাম। স্বপ্ন ছিল অনার্সে ফাস্ট ক্লাশ পাবো।

বন্ধুদের মতে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফাস্ট ক্লাশ পাওয়া অনেক কঠিন। কারণ, এখানে শুধু পড়াশুনা নয়, স্যার-ম্যাডামদের সঙ্গে লবিং করতে হয়। কিন্তু আমি দমে যায়নি। আমি চেষ্টা করতে লাগলাম। প্রথম বছর সফল হয়নি।

দ্বিতীয় আবার চেষ্টা করলাম। তাতে কিছুটা সফল হলাম। তখন পুরোদমে পড়াশুনো করতে লাগলাম। বন্ধুরা প্রেম করে, আড্ডা দেয়, চাকরি করে। আর আমি পড়ার টেবিলে বসে অধ্যায়ন করি।

আমার স্বপ্ন অনার্স পরীক্ষায় ফাস্ট ক্লাস পাওয়া। তারপর সেই দিনটি এলো। আমাদের অনার্স পরীক্ষার রেজাল্ট বের হলো। আমি ফাস্ট ক্লাস পেলাম। কিন্তু সামান্য নম্বরের জন্য প্রথম হতে পারলাম না।

পেলেম না কোন স্বর্ণপদক। খুব খারাপ লাগলো। কিন্তু আমি দমে যায়নি। কারণ আমি হেরে যাওয়ার জন্য স্বপ্ন দেখেনি। মাস্টার্সে আবার পুরোদমে পড়াশুনো শুরু করলাম।

এখানেও অনেক চাকরির অফার। কিন্তু আমি সবকিছুকে তুচ্ছ করে পড়ার প্রতি মনোনিবেশ করলাম। তারপর দিন যেতে লাগল। আমাদের মাস্টার্স পরীক্ষার সময় দেশে শুরু হলো রাজনৈতিক অস্থিরতা। পরীক্ষা তো আর শেষ হয় না।

তারপর ১/১১ এরপর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে পরীক্ষা শেষ হলো। কিন্তু এখন তো আমি কোন চাকরি পায় না। কারণ রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের কারণে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ভাল না। আবার এদিকে পরীক্ষার রেজাল্ট বের হচ্ছে না। সব মিলেয়ে আমি এক ধরনের হতাশায় ভুগছি।

পরীক্ষার পর বের হবে, এমন সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র আন্দোলনের কারণে বিদ্যালয় অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ ঘোষণা। সুতরাং ফলাফল প্রকাশও অনির্দিষ্ট হয়ে গেল। তারপর রোজা এলো। আমি পড়লাম অসুখে। জ্বর প্রায় ১০৪ ডিগ্রী।

এমন সময় শুনতে পেলাম আমাদের মাস্টার্স পরীক্ষার ফল বের হবে। কিন্তু কবে তা আমরা জানতে পারছি না। তারপর এলো সেদিনটি যার জন্য আমি এতো প্রতীক্ষায় ছিলাম। আমার এক শিক্ষক আমাকে ফোন দিয়ে বলল. ' তুমি মাস্টার্স পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়েছো। ' কথাটা শুনে প্রথমে আমি বিশ্বাস করতে পারতে ছিলাম না।

কারণ আমার পরীক্ষা ভাল হয়েছে। কিন্তু এতো ভাল হয়নি যে আমি প্রথম হবো। কথাটা শুনার পর আমি ভাবলাম আমার চেষ্টার ফলাফল এদিনে সার্থক হয়েছে। যেদিন আমি প্রেসিডেন্ট ইয়াজউদ্দীনের কাছ থেকে স্বর্ণপদক নিই, সেদিন আমার কাছে অতীতের সব দুঃখ, কষ্ট, হতাশা দূর হয়ে গেছে। কারণ আমি হেরে যাওয়ার জন্য কোন স্বপ্ন দেখেনি।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।