আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমি হেরে গেলাম

একটা সুন্দর পৃথিবী চাই.....

আনমনা ক্লান্তিতে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে বেকার জীবনের কিছু সময় পার করার চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম। এমন সময় শিমা আফার মেয়ে মিতু তার খাতা ও কলম নিয়ে হাজির এবং বলল, মামা, তুমিতো পড়াশুনা শেষ করেছ। তোমার হাতের লেখা নিশ্চই খুব সুন্দর হবে। আমাকে একটু লিখে দাওনা, আমি প্রাকটিস করবো। আমার হাতের লেখা কোন ভাবেই ভাল করতে পারছিনা।

মিতুর আম্মা ও আমি ক্লাস ফোরে পড়ি। শিমার হাতের লেখা ছিল সবার ছেয়ে খারাপ। হাতের লেখা প্রতিযোগীতায় আমি বার বার প্রথম হলেও শিমা সেমি ফাইনালের আগেই বাদ পড়ে যেত। একবার পুরষ্কার হাতে বাড়ি পিরছি শিমা শিা আমার জন্য রাস্তায় দাড়িয়ে রইল। কগ্রেসুলেশন জানিয়ে বলল দেখিস একদিন আমার হাতের লেখা হবে সবার সেড়া।

তার লেখা সে ছাড়া আর কেউ বুঝতে না পারলে কি? সে ছিল সবার চেয়ে ভাল ছাত্রি। তার কথায়, আচার-আচরন, চাল-চলন সবকিছু সকলকে মুগ্দ করত। তাই স্যারেরা তার লেখা বুঝতে না পারলেও এটুকু নিশ্চই বুঝতেন সে যা লিখেছে ঠিকই লিখেছে তাই তাকে পাশ করিয়ে দিত। স্যারেরা অনেক চেষ্টা করেও তার হাতের লেখা ভাল করতে পারলনা। অবশ্য তাকে সেই সমাজে বেশিদূর পড়াশুনা করতে দেয়া হয়নি।

চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্তই হয়েছে। এরপর তার বাবা মা আর স্কুলে আসতে দেয়নি। এর দু’ বছর পর তাকে আমাদের গ্রামের পাশের গ্রামের টিটু ভাইর সাথে বিয়ে দিয়ে দেয়। মা যেমন মেয়ে হয়ত তেমনই হবে, এই ভবনায় খাতা হাতে নিয়ে এক লাইন লিখে দিলাম। মিতু আমার লেখার নিছে একলাইন লিখল।

তার লেখা দেখে আমি লজ্জাই মরি। এত ছোট মানুষের হাতের লেখা এত সুন্দর হতে পারে! আমার জিবনে কখনো এত সুন্দর হাতের লেখা দেখিনি। তার হাতের লেখা দেখে মনে হলো সে সুতনি এমজি চৌদ্দ ফন্টে লিখেছে। না দেখলে কেউ বিশ্বাস করতেই পারবে না এটা কারো হাতের লেখা। মনে হবে কম্পিউটারে কম্পোজ করা হয়েছে।

অবাক দৃষ্টিতে তার লেখার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। ভাবলাম তার মা থ্রিতে থাকতে একদিন স্কুলের বার্ষিক ক্রিড়া প্রতিযোগীতায় বক্তব্যে বলেছিল, ‘আমাদের পিতা মাতা জীবনের সবচেয়ে বেশি আমাদের ভালবাসেন। তারা সবচেয়ে ভাল জিনিসটা আমাদের জন্য রাখেন। তারা শৈশবে যা চেষ্টা করে নানান প্রতিকূলতার কারণে পারেননি তা আমাদের মাধ্যমে সফল হওয়ার চেষ্টা করেন। এভাবেই একটি জাতি শিক্ষিত ও দক্ষ হয়ে উঠে।

’ আজ মনে হল সে যা ছাত্রজীবনে চেষ্টা করেও সফল হতে পারেননি তা তার মেয়ের মাধ্যমে পেরেছে। মিতুর হাতের লেখার উপর আমার হাতের লেখা এতটাই বিশ্রি দেখাচ্ছে যে শিমা আফার শৈশবের হাতের লেখাকে হার মানিয়েছে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।