দুঃখটাকে দিলাম ছুটি, আসবে না ফিরে
আগের পোস্টে লিখেছিলাম অদ্ভূত ধরনের ছিনতাইয়ের ঘটনা (কারও কারও মতে এটা ছিনতাই নয় বাটপারি), আজ লিখব অদ্ভূতভাবে ছিনতাই থেকে রেহাই পাওয়ার ঘটনা।
আজ থেকে আড়াই তিন বছর আগের ঘটনা; এক ছাত্র ধরা যাক তার নাম সুজন, সময়টা বিকাল মত হবে। সে যাচ্ছিল ঢাকা কলেজের সামনে দিয়ে আজিমপুরের দিকে। হঠাৎ দুজন ভারী বয়সের যুবক সুজনকে ক্রস করে গেল। চার পাঁচ কদম যাওয়ার পর ঐ যুবকেরা সুজনকে ডাকল, এই যে ভাই শুনেন! সুজন পিছন ফিরে দেখল তাকেই ডাকছে।
ঃ জ্বি! আমাকে কিছু বলছেন?
ঃঃ আপনি 'অমুক' না?
ঃ না, আমার নাম সুজন।
ঃঃ আচ্ছা আপনার বাড়ী কোথায় যেন?
দেশের বাড়ী কোথায় সুজন বলল।
ঃঃ ও হ্যাঁ হ্যাঁ তাই। আপনাকে আমি কোথায় যেন দেখেছি।
ঃ সরি, আমার তো মনে পড়ছে না।
ঃঃ আচ্ছা আপনার এলাকার অমুককে চিনেন ঢাবিতে পড়ে, ও রাজনীতি করে... ছাত্রদল করে (বিএনপি তখন ক্ষমতায়!).......ভদ্রলোক সুজনের হাত ধরে রেখেছেন।
ঃ না ঠিক চিনলাম না, সরি, আমার একটু তাড়া আছে।
ঃঃ কোথায় গিয়েছিলেন? টিউশনিতে?
ঃ না, খালার বাসায়।
এইভাবে কথা চলতেছে, সুজন কিছুই বুঝে নাই। সে কথা চালিয়ে যাচ্ছে।
হঠাৎ লোকটি প্রসংগ পাল্টিয়ে বলল, আমি ঢাকা কলেজের ছাত্রদলের অমুক। কয়েকদিন আগে 'অমুক' হোস্টেলে জোড়া খুন হয়েছে, সে খুনের আসামী আমি। জানেন তো! পত্রিকায় আমার নাম দেখেন নি?
ঃ সরি, দেখিনি।
কষে এক ধমক দিল, কি মিয়া পত্রিকা পড়েন না নাকি? আমার নামে থানায় অনেকগুলো খুনের মামলা আছে।
ঃ হতে পারে।
ঃঃ আমার কোমরে জিনিস আছে। বিশ্বাস না হলে হাত দিয়ে দেখেন।
ঃ না দরকার নেই, থাকতেই পারে।
ঃঃ আপনি এখন চিৎকার করে দেখেন কেউ এগিয়ে আসবে না। আপনি আশপাশের লোকদের জিজ্ঞাসা করে দেখেন!
ঃ না ঠিক আছে, বুঝতে পারছি।
ঃঃ আমাকে এক হাজার টাকা দেন।
ঃ সরি, আমার কাছে ২০/২২ টাকার মত আছে। (টাকাটা বের করে সুজন উনাকে দেখাল, সে ভয় পাচ্ছিল- মোবাইলটা আবার চায় কিনা। )
ঃঃ ঐ পকেটে কি? (অপর পকেট ফুলে ছিল)
সুজন পকেট থেকে বের করল একটি বই তাওহীদের তত্ত্বকথা, বইটি মাওলানা আব্দুর রহীমের লেখা.....মোটামুটি পাতলা একটা বই। লোকটা বইটি হাতে নিয়ে দেখল।
হঠাৎ গলার স্বর একটু নরম করে বলল...
ঃঃ আপনি নামাজ পড়েন।
ঃ জ্বী।
ঃঃ পাঁচ ওয়াক্ত!
ঃ জ্বী।
ঃঃ ঠিক আছে, ভাল। আপনি সোজা সামনে তাকায়ে চলে যাবেন, পিছন দিকে ফিরলেই আপনার খবর আছে।
ঃ জ্বী আচ্ছা......
এই সুযোগ আর হাত ছাড়া করে! সুজন হন হন করে হাঁটা দিল। নিরাপদ দুরত্বে গিয়ে পিছনে একবার সে তাকিয়েছিল, ওদের আর দেখতে পাইনি। একটি মজার অভিজ্ঞতাকে সম্বল করে স্রষ্টাকে ধন্যবাদ দিয়ে সুজন স্থান ত্যাগ করল।
উক্ত ঘটনার সুজন এবং ব্লগার মাহমুদ রহমান একই ব্যক্তি। বেশ পুরানা ঘটনা নতুন করে সামনে আনার কারণ হলো বিবেক সত্যি।
ছিনতাইয়ের ঘটনা সংক্রান্ত আগের পোস্টে সে ধন্যবাদের পুরোটা দেয়নি। বাকীটা তার কাছ থেকে এই পোস্টে পাব বলে আশা রাখছি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।