আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রথম ছিনতাইকারীর কবলে আমি যেদিন

বাংলাদেশ ব্লগারস এসোসিয়েশন সদস্য নং: ১০ । facebook.com/milton3d

সেটা বোধহয় আজ থেকে প্রায় ৯/১০ বছর আগে। আমি গিয়েছিলাম সেবার দিনাজপুরে একটা কাজে। ওখান থেকে কাজ শেষে নাইট কোচ হানিফে করে ঢাকা ফিরলাম। বাস আমাদের কলেজ গেট কাউন্টারে নামিয়ে দিলো তখন প্রায় রাত ৪টা বাজে।

বাসের সুপারভাইজার আমাদের বলল, আপনারা যদি কেউ নিজের দায়িত্বে যেতে চান তবে যেতে পারেন। আর যারা সকাল হলে যাবেন তারা এখন আমাদের কাউন্টারের ভিতরে বসার জায়গা আছে সেখানে বসতে পারেন অথবা বাসের মধ্যেও ছিটে বসে থাকতে পারেন। আমি বাস থেকে নেমে একটু টয়েলেট থেকে ফ্রেশ হয়ে ঘুরে আসলাম। তারপর চা আর সিগারেট। একটা পর একটা।

কখন সকাল হবে। এই অপেক্ষা করা কাজটা মনে হয় সবচেয়ে কঠিন এবং কষ্টদায়ক। শুধু ঘড়ি ঘুরছেই কিন্তু সকাল হচ্ছে না। আবার কেউ কেউ নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। অসহ্য লাগে এই নাক ডাকা।

চারিদিকে ঘ্যা ঘো। কখনও পায়চারী কখন একটু বসছি। এমন করতে করতে ভোর হয়ে এলো। সুর্য্যমামা হেসে উঠল। দুই একটি বাস চলতে শুরু করেছে।

আমি একটা রিক্সা ঠিক করলাম বাসা পর্যন্ত। রিক্সা উঠতে যাবো এমন সময় একটা ১৭/১৮ বয়সী ছেলে এসে পাশে দাঁড়ালো। বললো, আপনি কি মিরপুর যাবেন? আমি বললাম হ্যাঁ। ছেলেটিকে আমি গাড়ীতে দেখেছি। সেও দিনাজপুর থেকে এসেছে।

কিছু মনে না করলে আমি আপনার সাথে যেতে চাই। আমি একা। আর এখন কোন রিক্সাও পাচ্ছিনা। আমি কিছুক্ষণ ভেবে বললাম, ঠিক আছে চলেন। ছেলেটি রিক্সায় উঠলো রিক্সা চলতে শুরু করলো।

একটু ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব। দুই একটি কথা বার্তা বললাম যেটা না বললেই না। জানলাম, সে কমার্স কলেজে পড়ে। বাড়ী দিনাজপুরেই। তখন টেকনিক্যাল মোড় থেকে মিরপুর এক নাম্বার পর্যন্ত পুরো রাস্তাটা রিপেয়ারিং এর কাজ চলছিল।

মিরপুর এক এর যখন কাছাকাছি আমরা তখন হঠাৎ কোথা থেকে লুঙ্গি আর গেঞ্জি পরা ২/৩ লোক চলে এসে বলছে, যা কিছু আছে দিয়ে দে। আমি সামনে তাকিয়ে দেখি আমাদের রিক্সাওয়ালা রিক্সা রেখে এক ভোঁ দৌঁড়। ওদের মধ্যে একজন কোথা থেকে এক ইয়া লম্বা জং ধরা গরু জবাই করার ছুরি বের করলো। আর আর আমাদের সামনে তলোয়ারের মত ঘোরাতে লাগলো। তারা প্রথমে সেই ছেলেটিকে রিক্সা থেকে নামিয়ে ছুরির উল্টো দিক দিয়ে পেটাতে লাগলো।

ছেলেটির পকেট হাতিয়ে সাড়ে সাত হাজার টাকা (যা পরে জেনেছিলাম) নিয়ে নিলো। এরপর ধরলো আমাকে, আমি বোধ হয় ছিলাম খুব সৌভাগ্যবান। কারণ তখন আমি হাতে ২ টি সোনার আংটি পরতাম। আমি আমার হাতটি উল্টো করে প্যান্টের সাথে চেপে ধরেছিলাম যার জন্য বোধ হয় ওটা দেখা যায়নি। তবে আমার হাতে ক্যাসিও ডাটা ব্যাংক একটা ঘড়ি ছিল, ওটা নিয়ে নিলো।

এরপর নিল আমার মোবাইলটি। এটির পর তারা আমার মানিব্যাগ বের করলো কিন্তু কেন যেন খুলে দেখলো না। হাতে নিয়ে মনে হয় ওজন দেখে ফেলে দিলো। টোটাল ছিনতাই এর কাজটি ২০/২৫ সেকেন্ডের মধ্যে ঘটলো। আমরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই ব্যাটারা রাস্তার ডিভাইডার পার হয়ে একটা গলির দিকে ঢুকে যাচ্ছিল।

আমি তখন চিৎকার করে বলি যে, ভাই ওটা সিটিসেল মোবাইল। ওটা নিয়ে কোন কাজ হবে না। এইরকম কয়েকবার বলার পর, ওদের একজন আরেকজনের সাথে কি যেন কথা বলে মোবাইলটা ঢিল দিয়ে রাস্তার এপারে ফেলে দিলো। আমি ওটা তুলে নিলাম। দেখলাম একপাশ একটু চটে গেছে আর ওটা বন্ধ হয়ে গেছে।

পরে চালু করে দেখলাম, ঠিকই আছে। কোথাথেকে রিক্সাওয়ালা এসে হাজির সময় মত। আবার রিক্সা চলতে শুরু করলো। আমরা দুজন ভগ্ন হৃদয়ে আবারো চলতে থাকলাম। সেদিন ছেলেটিকে দেখে খুব খারাপ লাগছিল কারন ও বলছিল, আমি এখন কিভাবে পরীক্ষা দিবো।

ওখানে আমার মাসের খরচ আর পরীক্ষার ফি ছিল। ছেলেটিকে নেমে গেল কমার্স কলেজের কাছেই। বিদাই দিলাম। কিই বা বলবো? ওকে শান্তনা দেবার ভাষা নেই। জানিনা পরে ছেলেটি কিভাবে পরীক্ষার ফি জোগাড় করেছিল।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.