চলে যেতে যেতে বলে যাওয়া কিছু কথা
ফাহিমকে পাড়ার বখাটেরা আটকে রেখেছে খবর পেয়ে বড়ভাই নাদিম ভাই তড়িঘড়ি করে বাড়ি ফেরল অফিস ছুটি নিয়ে। নাদিম ভাই ফাহিমের চাইতে ১০ বছরের বড়। ওদের বাবা মারা গেছেন বেশ কয় বছর আগে। মা আর তিন ভাইবোনের সংসারে নাদিম ভাইকে এখন বাবার ভুমিকা পালন করতে হয়। ঢাকার অন্য প্রান্ত থেকে নতুন পাড়ায় এসেছে ওরা মাত্র কয়মাস আগে।
বাসায় ফেরে সবকিছু জানতে পারল নাদিম ভাই। টুনিকে কয়টি বখাটে কটু কথা বললে বাসায় এসে কান্নাকাটি করে টুনি। কারন জানতে পেরে ফাহিম যায় প্রতিবাদ করতে। ওল্টো ফাহিমকে আটকে রাখে ওরা।
যে দোকানটিতে বসে ছেলেগুলো আড্ডা মারে সেখানে গিয়ে পৌছে নাদিম ভাই।
গুমরো মুখো একটি মাত্র ছেলে বসে আছে দোকানটিতে। ছেলেটির দিকে দৃষ্টি না দিয়ে দোকানির সাথে দুএকটা কথা সেরে নেয় নাদিম ভাই। নিরাশ হয়ে দোকান থেকে বেরুচ্ছে যখন সে পেছন থেকে ডাক দেয় ছেলেটি। বুঝতে অসুবিধা হয় না ওদেরই একজন সে।
কিছুক্ষন পর আবার দোকান থেকে বের হয় নাদিম ভাই।
বেশ কিছুদুর হেটে পোছে যায় অপেক্ষাকৃত নীরব একটি স্থানে। দোকানের ছেলেটির নির্দেশমতে প্রবেশ করে ভাংগা চোড়া একটি দালানে।
বিশ পচিশ মিনিটের ব্যবধানে দুভাই যখন রাস্তায় নামে তখন সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে।
তড়িঘড়ি করে রিক্সায় চেপে বাসার দিকে রওয়ানা দেয় দুভাই। বাসায় পৌছে নিজের রুমে ঢুকে নাদিম, তারপর দরজা বন্ধ করে দেয়।
অন্যদিকে ফাহিম মাকে জড়িয়ে কান্নায় ভেংগে পড়ে, টুনিও যোগ দেয় দুজনের সাথে। ঐদিন ঐ বাসাটিতে রাতের খাবার না খেয়েই ঘুমিয়ে পরে সবাই।
মধ্যরাতে ঘুম ভেংগে গেলে ফাহিম নাদিম ভাইয়ের বিছানা খালি দেখতে পায়। বিছানা থেকে উঠে পা বাড়ায় সে দরজার দিকে। আলতো হাতের ছোয়ায় দরজা খুলে যায়।
ছাদের ঠিক নিচ তলায় ওদের বাস। সিড়ি বেয়ে নি:শব্দে ছাদে উঠে ফাহিম।
ছাদের এক কোনায় নাদিম ভাই বসে আছেন। পেছনে এসে দাড়ায় ফাহিম। বসে পড়ে নাদিম ভাইয়ের পাশে।
পাশে বসে একসময় ফুপিয়ে কাদতে শুরু করে ফাহিম।
আমার জন্য তোমাকে ওদের পায়ে ধরে ক্ষমা চাইতে হলো ভাইয়া, কাদতে কাদতে বলে ফাহিম।
"না হলে ওরা তোর বড় কোন ক্ষতি করতে পারত। "
"তোমার কি খুব খারাপ লাগছে ভাইয়া। " ধরা গলায় বলে ফাহিম
"না"
"না হলে মাঝরাতে একলা ছাদে বসে থাকতে না।
"
"দেখ, আমাদের বিশাল এই জীবনে ক্ষুদ্র সব অঘটনগুলোকে সহজভাবে নেয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ, জীবনে হোচট খেয়ে থেমে গেলে চলবে কেন। অন্য একটা কারনে মনটা খুব খারাপ"
"আমাকে কি বলা যাবে না" অনুনয় ফুটে উঠে ফাহিমের গলায়।
"তুই তখন ছোট আর আমি কৈশোর পেরিয়ে যৌবনের দিকে পা বাড়িয়েছি। খুব দুষ্ট প্রকৃতির ছিলাম আমি। ঐসব বখাটেদের মত।
এরি মধ্যে একটি মেয়েকে দেখে ভাল লাগে আমার। সারা না দিলে উত্যক্ত করা শুরু করি মেয়েটিকে। একসময় পরিবারশুদ্ধ মেয়েটি পাড়া ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যায়। এরিমধ্যে বাবার ক্যান্সার ধরা পরে। ধীরে ধীরে বাবা এগিয়ে যান মৃত্যুর দিকে।
মৃত্যুর ঠিক আগে বাবা আমাকে দিয়ে প্রতিজ্ঞা করিয়ে নেন আমি যেন ভাল হয়ে চলি। জানিস, বাবা আমার কাছে এক গ্লাস পানি চেয়েই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। বাবার মুখে পানি তুলে দেয়ার আর সুযোগ পাইনি।
কিছুক্ষন দম নিয়ে নাদিম ভাই আবার বলা শুরু করেন।
"অনেক বছর পর বখাটে ছেলেগুলো মাঝে নিজেকে আবার আবিস্কার করে মনটা আমার খুব খারাপ হয়ে গেছে রে।
খালি মনে হচ্ছে আমার মত ওরাও যদি সুন্দর স্বাভাবিক জীবনের ফেরার সুযোগ পেত। খারাপ হয়ে বেচে থাকাটা খুবই কষ্টের, যে কষ্টটা অন্য কারোর সাথে ভাগাভাগি করা যায় না"
হঠাৎ বয়ে আসা ঠান্ডা বাতাসে দুভায়ের গা জুড়িয়ে যায়। ওদের মন হালকা হতে শুরু করেছে। দুজনে তাকিয়ে থাকে রাতের আকাশের দিকে। যেখানে তারা গুলো স্পষ্ট হয়ে জ্বলছে।
ভোরের খুব একটা বাকি নেই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।