বাংলাদেশে পথে পথে যেসব সৌন্দর্য ছড়িয়ে আছে, বেশিরভাগ সময়েই আমরা তা খুব একটা নজরে আনি না। আবার যখন দেখতে শুরু করি, তখন ভীড় করে হাট-বাজার বানিয়ে খাবলে-খুবলে নষ্ট করে তারপর ছাড়ি। তখন সৌন্দর্য উপভোগের বদলে যন্ত্রনাই বেশি হয়। কক্সবাজার তার সর্বোত্কৃষ্ট উদাহরণ।
এইসব যন্ত্রনা থেকে একটু হাঁফ ছাড়ার জন্য গিয়েছিলাম টেকনাফে।
পাহাড়ী টেকনাফের নিজস্ব রূপ আছে, তবে বৈশাখের তাপে সে যেনো চোখ বুঁজে পড়ে থাকে, বিশ্রাম খোঁজে হাঁটতে-চলতে, পদে পদে। আমাদের উদ্দেশ্য লম্বরী সৈকত; শহর থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে, কুমিরের মত শুয়ে থাকা পাহাড়সারির কোলে নারিকেল-সুপারিতে ঠাসা লম্বরী ইউনিয়ন, তার পাশেই নির্জন সৈকত আমাদের কাছে কি বলার জন্য যেন উন্মুখ ছিল। বৈশাখের উত্তপ্ত বালুর পেট নিয়ে পড়ে থাকা সৈকতের ওপরের দিকটায় ছায়াঘন ঝাউবন। কিছুদূর পরপর মাছের ট্রলারের ছোটো ছোটো ঝাঁক, নতুন ট্রলারের কূলের দিকে ধেয়ে আসা, আর সবাই মিলে ছুটে যাওয়া সেটিকে চাকায় তুলে একেবারে সৈকতের ওপরে নিয়ে আসার জন্য। এরপর মাছ মাপামাপি, আরও আরও হিসাব-নিকাষ, তারপর "দইওয়ালা"র মত কাঁধে মাছ নিয়ে কিশোরদের তরতর করে টেকনাফের দিকে ধেয়ে চলা।
এখানে ঝাউবনের ভেতর অনেকগুলো অস্থায়ী ঘর আছে, এরা সবাই মাছের কাজ-কর্মের সাথে জড়িত, বেশিরভাগই শ্রমিক ও রোহিঙ্গা। ঝাউবন থেকে কূলের দিকে টেকনাফ-কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ, এটি এখনও বালুর পথ, তার ওপরে গ্রাম পর্যন্ত খোলা জায়গা, তরমুজ, পান, ইত্যাদির চাষ হয়। এই খোলা স্থানে পর্যটন কর্পোরেশন জমি ঘিরে রেখেছে, আরও অনেকেই কিনছে। এখন অবশ্য সৈকতের পাড়ে থাকার কোনও ব্যবস্থা নেই, রাত্রিবাস টেকনাফেই করতে হবে। তবে ব্যবস্থা হতে বেশিদিন হয়তো লাগবে না।
ভয় হয়, এটি আবার বাজার না হয়ে যায়।
সেন্টমার্টিনসের প্রবাল এখানেও চলে আসে, কক্সবাজারের থেকে অনেকটাই নীল পানি, সবুজে মোড়া উপকূল, সবচেয়ে উপভোগ্য পানিতে নেমে ঝাউয়ের ফাঁক দিয়ে পাহাড়ের কোলে সবুজ গ্রামগুলো দেখা। এখানকার শিশু কিশোররাও আপনার ক্রিকেট বা ফুটবল খেলার সাথী হতে পারে- যদি আপনি চান। ওরা খুব অল্পতেই খুশি হয়, একটা ছবি তুললেন বা একটা খালি পেট বোতল দিলেন, তাতেই আপনি মন পেয়ে যাবেন। এই দেশহীন শিশুদের সাথে মিশলে মন ভালো হয়ে যাবে, আবার একটা গভীর খারাপ লাগা কাজ করবে।
সে খারাপ লাগার হয়তো কোনো কূল খুঁজে পাওয়া যাবে না। গ্রীষ্মের সন্ধ্যায় যদি এরকম একটা মানসিক অবস্থায় হাবুডুবু খেতে থাকেন, সৈকত ধরে চলে যেতে পারেন খন্দকার পাড়া পর্যন্ত, তিন কিলোমিটারের বেশি হবে না। সাগরের বাতাস আপনাকে নিরাশ করবে না।
শুনেছি বর্ষায় নাকি লম্বরীর রূপ ধরে রাখা যায় না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।