আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

৪০০০ মানুষের জীবনের বিনিময়েও কি আমেরিকা জ্বালানী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবে?

যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবী করছি

আমার এক বন্ধু আমাকে ফোন দিয়ে বেশ উত্তেজিত ভঙ্গীতে খবরটা দিয়েছিলো। ইরাকে আমেরিকান সৈন্যের মুত্যুর সংখ্যা ৫০০ অতিক্রম করেছে। পরে সিবিসির রাতের খবরেও দেখলাম খবরটাও বেশ ফলাও করে প্রচার করছে। এই খবরটা যথেষ্ঠ গুরুত্ব পেয়েছিলো - কারন হয়তো আমেরিকান সুপার পাওয়ার নিয়ে তখনও মানুষের বিরাট ধারনা ছিলো। হয়তো মানুষ ভাবতো পৃথিবীর কোন বুলেট আমেরিকান সৈন্যদের গায়ে বিধবে না।

যাদের আছে অত্যাধুনিক সামরিক সরঞ্জাম - ইরাকের পায়ে হাঁটা লোকজন কিভাবে আমেরিকান সৈন্যদের মারতে পারবে - এইটা বোধহয় কারো বিশ্বাস হতো না। এই ঘটনা ছিলো তিন বছর আগে - গত মাসে এই সংখ্যা চার হাজার অতিক্রম করেছে। ৯/১১ এর ভয়াবহ ঘটনা ছিলো আমেরিকান ইতিহাসের সবচেয়ে বিষ্ময়কর - সেই বিষ্ময়ের ধাক্কা সামলানোর আগেই আমেরিকানদের নিয়ে একটা বিরাট একটা খেলা খেলে ফেললো শাসকগন। যেনতেন ভাবে ইরাকে আক্রমন করে ফেললো। বাগদাদ জয় করে যতটা না উল্লসিত হলো - তার চেয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ন খবর হলো ইরাকের তেলক্ষেত্র থেকে আমেরিকানরা সাফল্যজনক ভাবে তেল উত্তোলন করতে স্বক্ষম হয়েছে।

যখন ইরাক আক্রমন করা হয় - তখন টুইন টাওয়ারের নিহত ৩০০০ একটা বিরাট সংখ্যা ছিলো। কিন্তু গতমাসে আমেরিকান নিহত সৈন্যের সংখ্যা যখন ৪০০০ এ পৌছেছে। অন্যদিকে নিহত ইরাকীদের সংখ্যা (রিপোর্টট) ১,০০,০০০এর উপরে। এখন প্রায়ই শুনা যায় - আমেরিকান নেতারা বলছেন - ৪০০০ কি আর এমন বেশী-যেখানে প্রতি বছর আমেরিকায় ১২০০০ মানুষ মারা যায় সড়ক দূর্ঘটনায়। আর আমেরিকান যুদ্ধমন্ত্রী বেশ তৃপ্তির সাথে বলছে - আমরা ইরাকে তেলের স্থাপনাগুলো নিরাপদ করেছি।

৪০০০ আমেরিকান সৈন্য আর একলক্ষ ইরাকী নাগরিকের জীবন - সাথে সাথে প্রায় অর্ধ লক্ষ আমেরিকান ও কয়েক লক্ষ ইরাকীর পঙ্গুত্বের বিনিময়ে আমেরিকান আর ইউরোপিয়ানদের জন্যে জ্বালানী নিরাপত্তার যে কথা শুনি - আসলে কি তা হয়েছে। গত বছরে আমেরিকান তেল কোম্পানীগুলো প্রায় ৪০০ বিলিয়ন ডলার মুনাফা করেছে আর বাজারে তেলের দাম বেড়েছে দ্বিগুন। একদিকে জনগনের ট্যাক্সের ডলার দিয়ে যুদ্ধের বিল মেটাচ্ছে সরকার - যুদ্ধের কারনে তেলের দাম বাড়ায় সাধারন মানুষ বাড়তি ডলার গুনছে। কিন্তু তেল কোম্পানীগুলোর লাভের কোন কমতি হচ্ছে না। তাহলে ইরাক যুদ্ধটা আসলে কার জন্যে - আল-কায়দা নামক ভুতের বিরুদ্ধে? সাদ্দাম হোসেনকে বিতারন করে ইরাকে গনতন্ত্র প্রতিষ্টার জন্যে? আমেরিকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্যে? ইরাকের গনবিধ্বংসী অস্ত্র ধংশের জন্যে? উপরের সকল তত্ত্ব মিথ্যা প্রমানিত হয়েছে ইতোমধ্যে।

বাকী থাকলো জ্বালানী নিরাপত্তার নামে তেল কোম্পানীগুলোকে ইরাকের তেলের উপর অবাধ অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যেই কি এই যুদ্ধ। তাহলে কি তেল সম্পদই ইরাকী জনগনের জন্যে অভিশাপ হিসাবে কাজ করলো। একবার সাদ্দামের হাতে আর একবার আমেরিকানদের হাতে বেঘোরে প্রান দিতে হলো তাদের। অন্যদিকে আমেরিকান জনগন তেলের অতিরিক্ত দাম পরিশোধ করে - নিজেদের ট্যাক্সের টাকায় ৫০০ বিলিয়ন ডলারের যুদ্ধের বিল শোধ করে - ৪০০০ সন্তানের জীবন বলি দিয়ে তেল কোম্পানীগুলোর মুনাফার পথটা মসৃন করে দিলো?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.