আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বেগম খালেদা জিয়ার মার্কিন দালালিঃ সাম্রাজ্যবাদীদের সেবাদাসত্ব করে ক্ষমতার স্বাদ আস্বাদনের প্রয়াস” প্রসঙ্গঃ ওয়াশিংটন টাইমস এ প্রকাশিত কলাম

যদি ঠাঁই দিলে তবে কেন আজ হৃদয়ে দিলে না প্রেমের নৈবদ্য “হাসিনা সরকারের কাছে গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার, মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং মানবাধিকার নিরাপদ নয় বরং বিপর্যস্ত” এই অভিমত ব্যক্ত করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশে গণতন্ত্র সুরক্ষার জন্য সরাসরি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পাশ্চাত্য পরাশক্তি বর্গের প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এবং বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের উপর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপের আহবান জানিয়েছেন! তাঁর মতে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে বাঁচানোর জন্য মার্কিন নেতৃত্বাধীন বিশ্ব শক্তিগুলোর এখনই কার্যকর সময়। “It is impossible to say in good conscience that democracy, justice and the alleviation of poverty in Bangladesh under Ms. Hasina are safe. Indeed, all are in grave danger. It is time for the world, led by America, to act and ensure that democracy is saved in Bangladesh”. “The thankless role in saving democracy in Bangladesh; corruption and stealing threaten a once-vibrant nation” এই শিরোনামের ওয়াশিংটন টাইমস পত্রিকার নিজস্ব কলামে বেগম জিয়া বাংলাদেশের রাজনীতিতে এবং ক্ষমতার পটপরিবর্তনে এভাবেই পরাশক্তিদের সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন। বর্তমান সরকারের অগণতান্ত্রিক শাসনের সমালোচনা করে বেগম জিয়া তার কলামে উল্লেখ করেনঃ ১। বর্তমান শাসনামলে ৩০০ গুপ্তহত্যা করেছে সরকারের RAB বাহিনী ২। শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামকে দমন করতে শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলামকেও হত্যা করেছে সরকারী আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ৩।

বাংলাদেশ গত ৪ বছরের শাসনামলে প্রতিশ্রুতিশীল গণতান্ত্রিক শাসন কাঠামো থেকে সরে এসে এক পরিবার কেন্দ্রিক একনায়কতান্ত্রিক শাসন কাঠামোতে প্রবেশ করেছে। হাসিনা সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশ এ বাধা দান সহ বিরোধীদের উপর দমন নীতির মাধ্যমে তাদের গণতান্ত্রিক রাজনীতি চর্চাকে বাধাগ্রস্ত করেছে এবং দেশের সর্বময় ক্ষমতা এক পরিবারের উপর নাস্ত করেছে। ৪। সরকার সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করে নিজের অধীনে নির্বাচন করে পুনরায় ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে চাচ্ছে। অবশ্যই এটা অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই যে বর্তমান সরকারের আমলে গুম খুন গুপ্তহত্যার মাধ্যমে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হয়েছে, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে অথবা সন্ত্রাসীদের হাতে ৩০০ লোক গুপ্তহত্যার স্বীকার হয়েছেন যার মধ্যে বিরোধী দলের অনেক স্থানীয় নেতাও ছিলেন, অবশ্যই বর্তমান সরকার জাতীয় ও তৃণমূল পর্যায়ের বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের দমন, নিপীড়ন এমনকি গুম খুনের মাধ্যমে বিরোধী রাজনৈতিক মত প্রকাশের অধিকার ক্ষুণ্ণ করেছে, বিরোধী দলকে তাদের গণতান্ত্রিক সভা সমাবেশ করতেও বাধা দিয়ে গণতান্ত্রিক চর্চাকে রুদ্ধ করেছে-কিন্তু তার জন্য বেগম জিয়ার উচিত জনগনের সামনেই তা তুলে ধরা এবং জনগণকে সাথে নিয়ে তার প্রতিবাদ করা।

প্রয়োজন হলে গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরকারকে গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার, মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং মানবাধিকার সুরক্ষায় যথার্থ ব্যবস্থা গ্রহনে বাধ্য করা। গণআন্দোলনের উপর আস্থা না রেখে কেন তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের দ্বারস্থ হলেন? গণতন্ত্র মানে যদি হয় জনগণই ক্ষমতার উৎস তাহলে সেই জনগনের উপর বাংলাদেশের নেতাদের আস্থা কই? জনগণকে উপেক্ষা করে ক্ষমতার পালাবদলে সাম্রাজ্যবাদীদের সাহায্য প্রার্থনা করে বেগম জিয়া প্রমাণ করলেন গণতন্ত্র তিনি নিজেই বিশ্বাস করেন না, বিশ্ব পরাশক্তির দাসত্ব, দালালী করে তাদের সবরকম অন্যায্য এবং অবৈধ হুকুম মেনে চলে বাংলাদেশের সমস্ত প্রাকৃতিক সম্পদ, তেল-গ্যাস- বন্দর, বাংলাদেশের বাজার সব কিছু পরাশক্তির বহুজাতিক কোম্পানির কাছে নিরঙ্কুশভাবে তুলে দিতে রাজি হলেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাকে তথাকথিত গণতান্ত্রিক মসনদে বসিয়ে দিবেন বলেই বেগম জিয়ার বিশ্বাস ! পরাশক্তির হস্তক্ষেপ কামনা করে জানিয়ে দিলেন তিনি এখন আর জাতীয়তাবাদের উপরও আস্থা রাখেন না, আন্তর্জাতিক আধিপত্যবাদ এবং সাম্রাজ্যবাদ এর অন্ধ দালালীই ক্ষমতায় আরোহণের সহজ সাবলীল পথ!! ক্ষমতা ফিরে পাবার তীব্র নেশায় উন্মত্ত হয়ে বেগম জিয়া যেভাবে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী শক্তির হস্তক্ষেপ কামনা করলেন তা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে চরম বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো ছাড়া আর কিছুই নয়। দেশের বিরোধী দলের প্রধান যিনি তিন তিন বার বাংলাদেশের সরকারপ্রধানও ছিলেন তাঁর এভাবে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির কাছে প্রকাশ্য সাহায্য কামনা বাংলাদেশের রাজনীতিতে পরাশক্তির চলমান খবরদারীকে নিরংকুশ করে তুলবে! নোবেল বিজয়ী ডক্টর ইউনুসকে গ্রামীণ ব্যাঙ্কের ম্যানেজিং ডিরেক্টর থেকে হাসিনা সরকার সরিয়ে দেয়ায় মার্কিন কংগ্রেসের বাংলাদেশ ককেশাস এই সিদ্ধান্তের নিন্দা জানায় উল্লেখ করে বেগম জিয়া বলেন গ্রামীণ ব্যাঙ্ক নাকি বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ দরিদ্র মানুষের দারিদ্র্য দূর করেছেন। ডক্টর ইউনুস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের খুবই পছন্দের লোক এবং সেকারনেই ডক্টর ইউনুস এর সকল কাজের ভূয়সী প্রশংসাই করে যাচ্ছেন বেগম জিয়া, পাছে আবার তাঁর প্রভু আমেরিকা নাখোশ না হয় যেন! ইউনুস সাহেবের ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচীর নামে দারিদ্র্য বাণিজ্য এর মাধ্যমে তিনি যেভাবে দেশের হতদরিদ্রদের কিভাবে শোষণ করা যায় তার আধুনিক ফর্মুলা আবিষ্কার করলেন তার সমালোচনা করার মত স্বাধীনচেতা মনোভাব না দেখাতে পারুন অন্তত এই কর্মসূচীর মাধ্যমে মিলিয়ন মিলিয়ন লোক দারিদ্র্যের হাত থেকে মুক্তি পেয়েছে এই নির্লজ্জ মিথ্যাচার না করলেই ভাল হত না? কয়েক মাস আগে ভারত সফরে গিয়ে ভারতের সাথে নতুন করে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়ে বেগম জিয়া বাংলাদেশের রাজনীতিতে চমক সৃষ্টির পর আবারও ভারতের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির ভূয়সী প্রশংসা করে তাঁর কলামে উল্লেখ করেন, “ ভারত পৃথিবীর সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে” , অথচ বাংলাদেশ যদি পরিবার কেন্দ্রিক (মুজিব পরিবার) শাসনেই রয়ে যায় তাহলে সামগ্রিকভাবে দক্ষিন এশিয়ার জন্য এটা হবে পিছনের দিকে হাঁটার মত”। ভারত পৃথিবীর সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ নামে এক ধরণের হেজিমনিক অপপ্রচার চালু আছে।

স্বয়ং ভারতের মানবতাবাদী লেখক অরুন্ধতী রায় তাঁর বিভিন্ন লেখনীতে ভারতের ৭ টি অঙ্গরাজ্যের (আসাম, কাশ্মীর, ত্রিপুরা, মিজোরাম ইত্যাদি) প্রতিটিতে লক্ষ লক্ষ সেনা মোতায়েনের কথা উল্লেখ করে তুলের ধরেন যে ভারত মূলত পরিণত হয়েছে গণতন্ত্রের আবরণে বৃহৎ সামরিক শাসনের কেন্দ্রভুমিতে! শুধু কাশ্মীরেই নিয়োজিত আছে ৫ লক্ষাধিক ভারতীয় সেনা যারা নির্বিচারে কাশ্মীরের অধিবাসীদের উপর দমন পীড়ন জারি রেখে সামরিক শাসন চালু রেখেছে। লেখিকা অরুন্ধতী রায় কাশ্মীর, নাগাল্যান্ড, মনিপুর, ছত্তিশগড়, ঝাড়খণ্ড ও উড়িষ্যায় ভারতীয় শাসকদের অবিচারের কথা উল্লেখ করে বলেন ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে ভারত একটি ঔপনিবেশিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে!উপরন্তু ভারতের রাজনৈতিক দল কংগ্রেস তো নিজেই এক পরিবার কেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে। তাই এই ভারতের ভূয়সী প্রশংসা করে কি বেগম জিয়া ভারতেরও অনুকম্পা চাচ্ছেন না কি? “দক্ষিন এশিয়ায় বর্তমানে আশার সঞ্চার হয়েছে কেননা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চলের মুক্তির বিষয়কে তরান্বিত করছে” উল্লেখ করে বেগম জিয়া দক্ষিন এশিয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের পক্ষে যেভাবে সাফাই গাইলেন তাতে করে বাংলাদেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যবাদী নীতি বাস্তবায়নে বেগম জিয়া এবং তার দল সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে বলে আশংকা দেখা দিয়েছে। সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন এবং আধিপত্য প্রতিষ্ঠার মার্কিনী চক্রান্তকে মুক্তির বিষয় বলে তুলে ধরে বেগম জিয়া নিজেকে সাম্রাজ্যবাদের দেশীয় এজেন্ট হিসেবে নগ্নভাবে উপস্থাপন করে তিনি বাংলাদেশের জনগনের মুক্তির আকাঙ্ক্ষার বিপরীতে অবস্থান নিয়েছেন। Bangladesh’s neighbor Burma is emerging from exile with the visit of President Obama in the aftermath of his re-election. India continues its growth as the world’s largest democracy. If Bangladesh succumbs to the rule of one family, it would be a major step backward for the region. Southeast Asia is now a region full of hope because of the freedoms America has helped foster. তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি পুনঃ প্রতিষ্ঠা করে বাংলাদেশের জনগণের ভোটাধিকার রক্ষার জন্য হাসিনা সরকারকে বাধ্য করার জন্য আমেরিকা এবং তার মিত্র গ্রেট ব্রিটেন এর যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে বলে মত দেন বেগম জিয়া এবং এর মাধ্যমে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে সুরক্ষার জন্য কথায় ও কাজে আরও শক্তিশালী ভূমিকা পালনের জন্য এসব পরাশক্তির প্রতি উদাত্ত আহবান জানান তিনি! The United States and its allies, such as Great Britain, have the influence to insist that a caretaker government is instituted so the views of the voters are respected. To ensure this, their words and actions must be much stronger, to keep Bangladesh from slipping away from democracy. বেগম জিয়ার তাঁর কলামে উল্লেখ করেন, “তাদেরকে (আমেরিকা , ব্রিটেন) হাসিনার কাছে ব্যাখ্যা করে বলতে হবে যে যদি শ্রমিক আধিকার রক্ষার আন্দোলনকারী এবং বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিকে তাদের মতামত প্রকাশ করতে দেয়া না হয় , তাহলে বাংলাদেশের বাণিজ্যে জিএসপি সুবিধা প্রত্যাহার করে নেয়া হবে! হাসিনা সরকারের মধ্যে যারা গণতন্ত্র, মত প্রকাশের অধিকার এবং মানবাধিকারকে পদদলিত করে কিংবা বাধাগ্রস্ত করে তাদের উপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞাসহ অন্যান্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার জন্য বেগম জিয়া পশ্চিমা পরাশক্তিবর্গের কাছে আহবান জানান!! এভাবেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সমগ্র পৃথিবীতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মিশন বাস্তবায়ন করতে পারে!! They also must explain to Ms. Hasina that general preferences for trade will be withdrawn if those who support workers’ rights and have political views opposed to those of the prime minister are not now allowed to express their beliefs. The Western powers should consider targeted travel and other sanctions against those in the regime who undermine democracy, freedom of speech and human rights. This is how the United States can ensure that its mission to democratize the world continues. বাংলাদেশের রাজনীতি ও অর্থনীতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন এমনিতেই প্রকট ।

দেশের অধিকাংশ তেল গ্যাসের মালিকানা বর্তমানে মার্কিন কোম্পানি শেভ্রন এবং কনকোফিলিপ্স ও ব্রিটিশ কোম্পানি তাল্লোর নিয়ন্ত্রণে। উৎপাদন অংশীদারিত্ব চুক্তি (production sharing contract) বা পি,এস,সি অনুযায়ী আমাদের বিভিন্ন গ্যাস ব্লক সমূহকে বহুজাতিক কোম্পানি যেমন কনোকোফিলিপস, শেভরন, সান্তোস, কেয়ারন্স, তাল্লোর কাছে ইজারা দেয়া হয়েছে যেখানে এসব বহুজাতিক কোম্পানিকে উত্তোলিত গ্যাসের ৮০% পর্যন্ত রপ্তানির সুযোগ রাখা হয়েছে অর্থাৎ দেশের গ্যাস সম্পদের ৮০% মালিকানা বহুজাতিক কোম্পানির হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন চাচ্ছে ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কো-অপারেশন ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট (টিকফা) এর মাধ্যমে এদেশের বাজার পুরাপুরি মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানির দখলে নিয়ে যেতে। চুক্তির বিভিন্ন প্রস্তাবনায় এবং অনুচ্ছেদে বাজার উন্মুক্তকরণ এবং সেবা খাতের ঢালাও বেসরকারিকরণের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক খাতসমূহে বিশেষ করে সেবা খাতগুলোতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক কোম্পানির আধিপত্য প্রতিষ্ঠার সুস্পষ্ট রূপরেখা তুলে ধরা হয়েছে। ফলে চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হলে দেশের সেবাখাতসমূহ রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত হয়ে মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানির দখলে চলে যাবে।

টেলিযোগাযোগ, বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি, চিকিৎসা, শিক্ষা, বন্দর প্রভৃতির ব্যবহার মূল্য বহুগুণ বেড়ে যাবে। চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশকে কৃষিতে ভর্তুকি হ্রাসকরণ এবং মুক্তবাজার অর্থনীতি গ্রহণ করতে হবে এবং ২০১৬ সালের আগেই বাণিজ্য সম্পর্কিত মেধাস্বত্ব অধিকার (TRIPS) এবং অন্যান্য প্রচলিত মেধাস্বত্ব আইন বাস্তবায়ন করতে হবে । এর ফলে বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প, কম্পিউটার সফটওয়্যার সহ গোটা তথ্যপ্রযুক্তি খাত আমেরিকার কোম্পানিগুলোর পেটেন্ট, কপিরাইট, ট্রেডমার্ক ইত্যাদির লাইসেন্স খরচ বহন করতে গিয়ে অভূতপূর্ব লোকসানের কবলে পড়বে। অন্যদিকে অ্যাকুইজেশন ও ক্রস সার্ভিসেস অ্যাগ্রিমেন্ট (আকসা) স্বাক্ষরের মাধ্যমে বাংলাদেশের সামরিক খাতে সহায়তার নামে বঙ্গোপসাগরে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি নিশ্চিত করে দক্ষিন এশিয়ার উপর মার্কিন নিয়ন্ত্রন পাকাপোক্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে তারা। প্রস্তাবিত আকসা চুক্তি অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে ‘গাইডেড মিসাইল’সহ বেশ কয়েক ধরনের আধুনিক অস্ত্র সরবরাহ করবে।

এসব অস্ত্র ব্যবহারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে প্রশিক্ষণ ও প্রয়োজনীয় অন্যান্য সহযোগিতা দেয়ার কথাও রয়েছে। এছাড়া থাকবে যৌথ মহড়া ও সংলাপের ব্যবস্থা। প্রস্তাবিত ‘আকসা’ চুক্তি অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনী জ্বালানি সংগ্রহ, যাত্রাবিরতি, সাময়িক অবস্থানসহ এ ধরনের বিভিন্ন সুবিধার জন্য বাংলাদেশে ‘পোর্ট অব কল’ সুবিধা পাবে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনীর বাংলাদেশে উপস্থিতিরও সুযোগ সৃষ্টি হবে। আকসা চুক্তির আওতায় বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করতে চায় মার্কিন নৌবাহিনী।

পরাশক্তি হিসেবে চীনের অগ্রগতি ঠেকানো, এ অঞ্চলের গভীর সমুদ্রে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের বিপুল জ্বালানি সম্পদ এর উপর মার্কিন নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে নিয়ে একটি সন্ত্রাসবিরোধী মোর্চা গঠন করে এই অঞ্চলে মার্কিন স্বার্থ বিরোধী শক্তির রাজনৈতিক এবং সামরিক উত্থান প্রতিরোধের জন্য আকসা চুক্তি স্বাক্ষর করতে বাংলাদেশের উপর চাপ প্রয়োগ করছে যুক্তরাষ্ট্র । সন্ত্রাস দমন, আন্তর্জাতিক অপরাধ তদন্ত এবং এসব বিষয়ে বিশেষজ্ঞ বিনিময়ের কাজে বাংলাদেশ সরকারকে সহায়তা দেয়ার নামে বাংলাদেশে এফবিআই’র একজন স্থায়ী প্রতিনিধি নিয়োগ দানে ইতোমধ্যেই সরকার যুক্তরাষ্ট্রের সাথে চুক্তি করেছে। মূলত এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী ্যে কোন আন্দোলন প্রতিরোধের যাবতীয় কৌশল প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের জন্যই এফবিআই’র স্থায়ী প্রতিনিধি কাজ করবেন। অর্থাৎ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক এবং সামরিক খাতকে পুরাপুরি মার্কিন বলয়ে নিয়ে এসে বাংলাদেশসহ সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার উপর সাম্রাজ্যবাদী নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এই প্রেক্ষিতেই বাংলাদেশের রফতানি পণ্যের জি এস পি সুবিধা নিয়ে নতুন করে কূটনৈতিক রাজনীতি শুরু করে দিয়েছে আমেরিকা।

বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ বিরোধী এইসব অন্যায্য চুক্তি স্বাক্ষরের বিনিময়ে বাংলাদেশকে তৈরি পোশাক খাতে জি এস পি সুবিধা দানের লোভ দেখিয়ে যাচ্ছে তারা। আবার এই চুক্তি গুলো স্বাক্ষর না করলে প্লাস্টিক ও সিরামিক সহ যে অল্প কয়েকটি পন্নের জিএস পি সুবিধা চালু আছে তাও প্রত্যাহার করে নেয়ার হুমকি দিয়ে রেখেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তাই যে রাজনৈতিক দল আগামীতে টিকফা চুক্তি, আকসা চুক্তি সহ নানাবিধ জাতীয় স্বার্থ বিরোধী চুক্তি স্বাক্ষর করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ সুরক্ষার ব্যাপারে সুনিশ্চিত রাজনৈতিক অঙ্গিকার করবে তাদেরকেই ক্ষমতায় আনার ব্যাপারে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদানে রাজি হবে যুক্তরাষ্ট্র। এই পটভূমিতেই বেগম জিয়া “ওয়াশিংটন টাইমস’ এর কলামের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি বিএনপি’র নিরঙ্কুশ আস্থা, আনুগত্য এবং সেবাদাসত্ব প্রকাশ করে জানিয়ে দিয়েছেন বর্তমানে ক্ষমতাসীন দলের চেয়ে তিনি এবং তার দল মার্কিন স্বার্থ দেখভালের দায়িত্ব সুনিপুনভাবে আঞ্জাম দিতে সক্ষম এবং প্রস্তুত। বেগম জিয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেনের কাছে এসব দেশে বাংলাদেশি রফতানি পণ্যের জি এসপি সুবিধা বাতিল করে হাসিনার সরকারের চলমান অগণতান্ত্রিক শাসনের বিপক্ষে শাস্তি আরোপ করার আহবান জানান।

এটা বাংলাদেশের জনগণের উপর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করার আহবানের শামিল। হাসিনা সরকারের অগণতান্ত্রিক নীতির জন্য এবং মানবাধিকার ও বাক স্বাধীনতা হরণের জন্য কেন বাংলাদেশের উপর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করতে হবে? বেগম জিয়া অনেক বছরই বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিলেন, তিনি নিশ্চয়ই জানেন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (WTO) দোহা এজেন্ডা অনুযায়ী অনুন্নত সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে উন্নত দেশের বাজারে বাংলাদেশি পণ্য শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার/ জিএসপি সুবিধা এমনিতেই পাওয়ার অধিকার রাখে। এটা ইউরোপীয় ইউনিয়ন কিংবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশের প্রতি বিশেষ কোন করুণা নয়। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মাধ্যমে মুক্ত বাজার অর্থনীতির বিশ্বায়নের ফলে বাংলাদেশের মত অনুন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোকে তাদের অভ্যন্তরীণ বাজার উন্নত দেশের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হয়েছে এবং এই সুবাদে অনুন্নত দেশের উদারনৈতিক বাজার ব্যবস্থাপনার সুযোগ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত দেশগুলোর বহুজাতিক কোম্পানি আমাদের বাজার দখল করে নিচ্ছে। এভাবে বাজার উন্মুক্তকরনের অসম বিনিময়ে উন্নত দেশগুলো আমাদের জিএসপি সুবিধা দানে নিজেরাই প্রতিজ্ঞা করেছে।

চুক্তি অনুযায়ি আমেরিকা বাংলাদেশের ৯৭% পণ্যের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দেয়ার কথা। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের যে চার দশমিক আট বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাজার রয়েছে তার মধ্যে মাত্র শূন্য দশমিক ৫৪ শতাংশ পণ্য শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা পায়। রফতানির হিসাবে এর পরিমাণ দুই কোটি ৬০ লাখ ডলার। এ পণ্যের মধ্যে রয়েছে টোব্যাকো, সিরামিকস, ফার্নিচার, প্লাস্টিক এবং খেলনা। বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাককে জি এস পি সুবিধার বাইরে রাখা হয়েছে অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের কোন পোশাকেরই শুল্কমুক্ত বাণিজ্য প্রবেশাধিকার নেই।

বাংলাদেশের রফতানিকারকরা ১৫ শতাংশেরও বেশি শুল্ক দিয়ে এ পণ্যটি রফতানি করে থাকেন। তাই বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার চুক্তি অনুযায়ী স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) হিসেবে বাংলাদেশকে পোশাকপণ্যে জিএসপি-সুবিধা না দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রই আমাদের প্রাপ্য অধিকার ক্ষুণ্ণ করেছে। এই বিষয়কে আড়াল করে উল্টো মার্কিন কর্মকর্তারা পোশাকপণ্যে জি এস পি সুবিধা দেয়ার মুলো ঝুলিয়ে বাংলাদেশকে বিভিন্ন অন্যায্য অসম চুক্তিতে সই করার জন্য চাপ সৃষ্টি করছে এবং এসব চুক্তি স্বাক্ষর না করলে যেসব অল্প পরিমাণ পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিয়ে আসছে বাংলাদেশের পোশাক কারখানার কাজের পরিবেশমান বজায় না থাকার অজুহাতে তাও প্রত্যাহারের হুমকি দিয়ে রেখেছে। যেখানে বেগম জিয়ার উচিত দেশের একজন অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দলের চেয়ারপার্সন হিসেবে বাংলাদেশের সব পণ্যে ন্যায্য জিএসপি সুবিধা দানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আহবান জানানো সেখানে তিনি উল্টো বর্তমান সরকারের উপর শাস্তিস্বরূপ “জিএস পি” সুবিধা বাতিলের মত অবরোধ আরোপের আহবান জানান কিসের ভিত্তিতে? বাংলাদেশ যদি চরম একনায়কতান্ত্রিক শাসনেও চালিত হয় তারপরও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার এলডিসিভুক্ত সদস্য হিসেবে জি এস পি সুবিধা বাংলাদেশের প্রাপ্য। বাংলাদেশের পোশাক খাতে জি এস পি সুবিধা না দিলে কিংবা যে কয়েকটি পণ্যে এই সুবিধা বহাল আছে তাও বাতিল করলে মূলত ক্ষতি হবে এদেশের খেটে খাওয়া আপামর জনসাধারণের ।

এদেশের রাজনৈতিক নেতারা কতটা দেউলিয়া হলে এবং ক্ষমতার নেশায় কতটা অন্ধ হলে দেশের অর্থনীতির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর “জি এস পি” বাতিলের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আবেদন জানাতে পারেন? বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে এখন চলছে কে কত আমেরিকা, ভারত, রাশিয়ার দালালি/ সেবাদাসত্ব করতে পারে তার প্রতিযোগিতা, এই অসুস্থ প্রতিযোগিতায় দেশের সর্বনাশ হলেও তাতে বিন্দুমাত্র আপত্তি নেই তাদের। সাম্রাজ্যবাদীদের আনুগত্য কে কত বেশি করতে পারবে তার উপরই নির্ভর করবে আগামি নির্বাচনে কে পরাশক্তির আনুকূল্য পাবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আনুকুল্য এবং কৃপা লাভের জন্য দেশের প্রধান দুটি দল যেভাবে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছে তাতে আবারো প্রমানিত হল এ দেশের শাসকগোষ্ঠী যতোই জনগণের কথা বলুক না কেন তাদের মূল কাজ হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদীদের সেবাদাসত্ব করে ক্ষমতার স্বাদ আস্বাদনের প্রয়াস চালানো। দেশের রাজনৈতিক দলগুলো যদি মনে করে জনগনের ভোটেই তারা ক্ষমতায় আসবেন এবং জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস তবে এত মার্কিন তোষণ কেন? আসলে দেশে আজ গণতন্ত্রের নামে যা চলছে তা হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদ নিয়ন্ত্রিত স্বৈরাচারী বুর্জোয়াতন্ত্র। দেশের রাজনীতিতে এখন আর জনগণের অংশগ্রহণ মুখ্য নয়; বাইরের শক্তির আনুকূল্য এবং কৃপালাভই রাজনীতিতে সফল হওয়ার প্রধান উপায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।