.
প্রথমতঃ রাহেলা হত্যা মামলাটি গত পরশু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের চাঞ্চল্যকর মামলা মনিটরিং সেলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। চাঞ্চল্যকর মামলা মনিটরিং সেল তাদের আমলে আনা মামলাগুলো অগ্রগতি নিয়মিত ফলো করে। এবং দ্রুত নিষ্পত্তিতে সহায়তা করে। মানবীসহ রাহেলা হত্যার বিচারের দাবিতে সোচ্চার সবার জন্য এটা হয়েছে নিশ্চয়ই।
২য়:রাহেলার করুণ জীবন ঘটনা ও খুনিদের শাস্তি চেয়ে মানবীর নতুন একটি লেখা ছাপা হয়েছে সচিত্র বাংলাদেশ পত্রিকায়।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর প্রকাশিত এই পত্রিকাটির এপ্রিল সংখ্যায় লেখাটি আছে। লেখাটির স্ক্যান কপি আপাততঃ দিলাম। পরে পুরো লেখাটি দেয়ার চেষ্টা করবো।
সবাইকে অনেক ধন্যবাদ
সচিত্র বাংলাদেশ,এপ্রিল সংখ্যায় মানবীর লেখা:
রাহেলাদের দীর্ঘশ্বাস
আমরা মানবতার জয়গান গেয়ে যাই। কেউ ধর্মের নাম তুলে কেউ বা ধর্মহীনতার।
ইরাকে নারী ধর্ষিতা হলে আমাদের শিউরে উঠি, ঘৃণা জানিয়ে বিচার চাই বিশ্ববাসীর কাছে। প্যালেস্টাইনে শিশু নির্যাতন, হত্যা হলে ক্ষত বিক্ষত হয় আমাদের বিবেক। আগুন ঝরা লেখায় সাধ্যমতো প্রতিবাদ জানাই, কেনই বা নয়!!! বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিমান রাষ্ট্রসমূহের এহেন কর্মে ঘৃণা জানানো ছাড়া আর কিইবা করার আছে আমাদের!!! বিশ্বমানবতা, ভাতৃত্ববোধও এমনটীই বলে..
অথচ, দুঃখজনক হলেও সত্য আমাদের দেশে আমার পাশে দাঁড়িয়ে ক্রন্দনরত চার বছরের নির্যাতিতা শিশু বন্যার আর্তনাদ আমাদের কানে পৌঁছেনা! ইরাকে ধর্ষিতা নারীর চেয়ে বর্বরোচিত ধর্ষন নির্যাতনের শিকার রাহেলাদের দীর্ঘশ্বাস আমাদের সেভাবে ব্যথিত করেনা, আমাদের বিবেককে জাগ্রত করেনা! রাহেলার ধর্ষকদের বিরুদ্ধে আমাদের লজ্জাকর নীরবতা... এই নীরবতা কোন অক্ষমতা থেকে নয়, এই মৌনতা আমাদের মৃত বিবেকের জড়তা থেকে। অন্যায় অবিচার মেনে নিয়ে নিজেদের মাথা নত করে চলার প্রবণতা থেকে। আমরা জানি যে আমাদের প্রত্যেকের একটু প্রচেষ্টা সন্মিলিত ভাবে হয়তো একটি শক্তিতে রূপ নিবে, এই নরপশুদের বিচারে সাহায্য করবে।
তবু, আমরা তা করিনা..
২০০৪ সালের ২২শে আগস্ট, ৪ নরপশু পাশবিক ভাবে ধর্ষন করে রাহেলাকে, অপকর্মের সাক্ষ্য মিটাতে হত্যার উদ্দেশ্যে ছুরি দিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে রাহেলার শরীর। গলা কেটে দেয়, ছিন্ন ভিন্ন করে রাহেলার স্পাইনাল কর্ড! পচে মরার জন্য ক্ষতবিক্ষত দেহটিকে ফেলে আসে ময়লা জঙ্গলে!
মানুষ রাগের মাথায় বা আতংকিত হয়ে অনেক সময় তাৎক্ষনিক ভাবে কান্ডজ্ঞান হারিয়ে ভয়ংকর কাজ করে বসে, তবে কিছুক্ষণ পর অথবা কয়েক ঘন্টা পর সম্বিৎ ফিরে পেলে অনুতপ্ত হয়। এই কুলাঙ্গার ধর্ষকদের নীচতা ও পাশবিকতা এমন ভয়াবহ যে, দু'তিন দিন পর পরিত্যাক্ত দেহটির হাল জানতে গেলে যখন দেখে, রাহেলা জীবিত এবং আকন্ঠ পিপাসার্ত হয়ে তাদের কাছে পানি চাইছে তৃষ্ণা মেটাতে.. এই নরপশুরা পানির পরিবর্তে এসিড ঢেলে দেয় তৃষ্ণার্ত মেয়েটির গলে পচে যাওয়া শরীরের উপর।
টানা ৩৩ দিন মৃত্যুর সাথে লড়াই করে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে রাহেলা। অভাগা দেশের হতভাগ্য এই তরুনীর অভিযুক্ত আসামীরা আজও সাজা পায় নি।
বিভিন্ন পত্রিকার সূত্রমতে হাসপাতালে অবস্থানকালে আততায়ী সম্পর্কে তথ্য দিয়েছিল রাহেলা। (সূত্র:ডেইলি স্টার,২৪ সেপ্টেম্বর ২০০৪)
দরিদ্র রাহেলারা মৃত্যুর সাথে সাথে বিস্মৃত হয়ে যায়। তার স্বামী দু'মাসের মধ্যে নতুন করে ঘর বাঁধেন। রাহেলার একমাত্র আপনজন হতদরিদ্র অসহায় মা এখন আর মামলার খোঁজ করেন না। অত্যন্ত দুঃখজনক যে,প্রধান আসামী আজো গেফতার হয়নি।
অভিযুক্ত সহযোগীরা নেই কারাগারে।
রাহেলার মতো অসহায় নারীদের জীবন যেন এভাবেই নিভে যাওয়া স্বাভাবিক। তাদের মুত্যু হবে অপঘাতে,নরপশুদের হিংস্র বাসনা চরিতার্থ করার একটা উপলক্ষ মাত্র তারা। মানবাধিকার সংস্থাগুলো কিছুকাল মিছিল,মিটিং,সড়ক অবরোধ করে,হৈ চৈ হয় চারদিকে...পত্রিকার পাতার শিরোনাম হয়। মৃত্যুর সাথে সাথে হারিয়ে যায় তাদের খবর।
মানবাধিকার সংস্থা,সংবাদ সংস্থাগুলো ব্যস্ত হয়ে পড়ে নতুন খবর নিয়ে। আমরা ভুলে যাই মৃত রাহেলার সাথে করা অন্যায়ের কথা। তার ঘৃন্য হত্যাকারীদেরকে প্রাপ্ত শাস্তি দেবার কথা।
বিশ্ব মানবতাবোধের আবেগে উদ্বেলিত আমরা আমাদের দেশের নারীদের নির্যাতনকারীদের বিচার করতে পারছিনা। রাহেলা হত্যা মামলা কোন দিন সুবিচারের মুখ দেখবে কিনা বুঝতে পারছি না।
এমন নয় যে অভিযুক্তরা খুব প্রতাপশালী কেউ তারপরও... এমন ভয়ংকর ধর্ষক,খুনিরা মুক্ত স্বাধীনভাবে হেসে খেলে আছে। ঘুরে বেড়ায় আমাদেরই মাঝে।
আমরা এদের বিচারে ব্যর্থ হই বলেই দিন দিন বেড়ে চলছে হত্যা। ধর্ষন আর নারী নির্যাতনের সংখ্যা। দিন দিন নির্ভীক আ বেপরোয়া হয়ে উঠছে এসব ঘৃন্য নরপশুর দল।
আজ আমরা রাহেলাদের হত্যাকারী,ধর্ষকদের বিচারে ব্যর্থ হলে আগামীকাল এদের শিকার হবে অন্য কোন নারী।
মানবতাবোধ ডুকরে কাঁদবে আর উল্লাসে মেতে উঠবে হায়েনার দল। রাহেলাদের দীর্ঘশ্বাস আমাদের জর্জরিত করবে... যুগে যুগে...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।