আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

'‌রাহেলা হত্যার বিচার চাই'-আসুন এই উচ্চারণটাকে সরব করি জনে জনে , পৌঁছে যাক আইনের কানে।

[অন্যর দোষ না খুঁজে আগে যদি সবাই নজের দোষটা খুঁজত তাহলে বোধহয় সব সমস্যার সমাধান হয়ে যেত]............... [পথের শেষ নেই, আমার শেষ আছে, তাইত দ্বন্দ্ব] http://mamunma.blogspot.com/

আর দশটা সাধারণ মানুষের মত আমিও সমাজের fifo( first in first out) নীতির প্রভাবে ভুলেই গিয়েছিলাম সেই গা শিউরে ওঠা ভয়াবহ ঘটনাটি। সাধাসিধে মানুষেরা কালো ঘটনাগুলো বেশী পরিমাণে ঘটলে আর মনে রাখতে পারেনা। প্রাথমিক এবং প্রবল একটা দুটোই কেবল মনে রাখতে পারে। তাই দেশের আপামর সাদাসিধে মানুষগুলো ঠিকই মনে রাখতে পারে একাত্তরে স্বাধীনতা যুদ্ধের নির্মমতা, ভয়াবহতা আর রাজকার আলবদর এই সব ইতর শ্রেণীর মানুষগুলোর কুকর্ম আর নিষ্ঠুরতা সযতনে মনের মধ্যে বদ্ধ কুঠুরিতে ধারন করে , লালন করে আর উচ্চ বাক্য খুব একটা করেনা। শুরতে যে গা শিউরে ওঠা ঘটনার কথা বলছিলাম সে রকম ঘটনার পর ঘটনা দৈনিক পত্রিকার পাতায় এত ব্যাপক পরিমাণে নিত্য নৈমত্তিক ছাপা হয় ( বাস্তবে না জানি আরও কত বেশী পরিমাণে ঘটে) যে সাদাসিধে সাধারণ মানুষের মন খুব বেশী কাল একখানা লালন করতে পারেনা।

যে সময়টুকু বা যেদিনগুলো খবরটি পড়ে তখন হয়তো প্রচন্ড ক্ষুব্ধ হয়,শিউরে ওঠে, আঁতকে ওঠে, বেদনার্ত হয়, সমব্যথি হয় এবং কালের স্রোতের স্বাভাবিকতায় ভুলে যায়। আমিও ভুলে গিয়েছিলাম রাহেলা নামের সেই মেয়েটির সাথে ঘটে যাওয়া নির্মম , পাশবিক , পৈচাশিক ঘটনাটি। কিন্তু পুরো ভুলতে দেয়নি। ভুলতে দেয়নি ইন্টারনেট ভিত্তিক বাংলা ভাষার ব্লগ, ব্লগে সমূহে অনেকের লেখা মনে করিয়ে দিয়েছিল কিছু দিন আগে সেই রাহেলার কথা, মনে করিয়ে দিয়েছে রাহেলা নামের চরম নির্ঘৃত সেই মেয়েটি এই পৃথিবীর বুকে তারই স্বজাতির কাছ থেকে পায়নি একটা শান্তির মৃত্যুর সুযোগ, পায়নি তার প্রতি অবিচারের নুন্যতমও বিচার। সাদাসিধে মানুষ এই আমার মনে কষ্টের দোলা লাগে।

ফিরে যাই স্মৃতির মই বেয়ে ২০০৪ সনের আগষ্ট মাসে। সেই অতীতে খবর টি পত্রিকার পাতায় পড়ে যে আর্ত শিহরণ হৃদকম্পন এলামেলো করে দিয়েছিল ণিক সেই স্পন্দই এই দীর্ঘ চার বছরের সময় মাঝে নাড়া চাড়া দিয়ে বর্তমানে যখন ফিরে আসে, কষ্ট যেন অনেকাংশে বেড়েই যায়। হয়তো বেড়ে যায় সাদাসিধে আপনাদের বেশীর ভাগ মানুষেরই। কি আজব, এই চার বছরে সেই ঘৃণ্য অপরাধের হোতারা কেউ কোন ক্ষুদ্রতম শাস্তিরই মুখোমুখি হয়নি বরং পেয়েছে চরম মুক্তি। দৈনিক পত্রিকাগুলোর প্রধান দায়বদ্ধতা বোধহয় এসব নৃশংস আর কলাম ভরানোর মত খবর গুলো ফলাও করে ছাপিয়ে মানুষের মনকে কেবল নাড়া দেয়া ।

তারপর সেই নাড়ার দোলায় কিছু মাত্র দিন পত্রিকার পাতা সরগরম করে তুলে ভাল কাটতি। কিন্তু সেই নৃশংস ঘটনায় জড়িত অপরাধিদের পেছনে লাগাতার লেগে থেকে সমাজের কর্তাশ্রেণী আর আইনমহলকে দৃষ্টান্তমূলক আর উপযোগী কোন বাস্তবভিত্তিক ভুমিকা রাখতে বাধ্য করাটা বোধহয় দৈনিক পত্রিকর দায়বদ্ধ কাজ নয়। তাই যথন অপরাধিদের অর্থ সবলতা, সমাজের আইনি দূর্বলতা, মানুষের স্বার্থপরতা এবং ভয়জনিত দূর্বলতা ইত্যাদির প্রত্য বা পরো সহযোগীতায় শাস্তি থেকে পার পেয়ে অবাধে সমাজে ঠাঁই নিয়ে জন্ম দিতে থাকে সমাজে নতুন কোন নৃশংসতার তখন পত্রিকাগুলো পুরনো সেই অপকর্মর খবরে নিশ্চুপ হয়ে যায়। এটাই স্বাভাবিক। তারপরও অস্বাভাবিক চিন্তাটা আসে যখন বুঝি পত্রিকা প্রকাশ তো একটা ব্যবসারই রকমফের।

তারপরও আছে, এই ইন্টারনেট জগতে ব্লগ আধারে এমন মানুষ ও আছে যারা ব্যবসা, অর্থ , সমাজের কালো কালো প্রভাব কে ছাড়িয়ে সময়কে আলোড়িত করে, সাদাসিধে এই আমাদের মতদের সাদাসিধে মনের নিরুত্তাপ ও নিষ্ক্রিয় শক্তির প্রবল শক্তির বাধটাতে ঝড় আঘাত হানার প্রয়াস ঘটায়, মনে করিয়ে দেয় সেই সব নৃশংস ঘটনা। মনে করিয়ে দেয় রাহেলার কথা। অথবা তার মত আরও অনেকেরই নাম, অনেক পৈশাচিক ঘটনার কথা। সেই সব রঙিন মানুষগুলোর প্রতি শ্রদ্ধা জানানো অবশ্যই কর্তব্য। মানসিক তাড়নায় সাদাসিধে সাধারণ মানুষগুলো আমরা রাহলো নামের ১৯ বছরের মেয়েটার উপর নির্মম গনধর্ষণ, তাকে মেরে ফেলার নির্মম পৈশাচিক প্রচেষ্টার পর প্রচেষ্টা এবং অবশেষে তার করুন মৃত্যুর বিচার পাওয়ার জন্য উদ্বেলিত হই।

ক্ষীণ স্বরে চিৎকার করে সমাজপতি আর আইনপতিদের স্ব আড়াল দেয়াল ভাঙতে চাই। কিন্তু সে আবেদন কখনই প্রয়োজনমত সবল হয়না। আইন কেবল প্রমান চায় আর প্রমান চায়। রাহেলা মেয়েটি নিজমুখে অপরাধীগুলোর নাম বলে যাওয়ার পরও কোন এক আইনী জটিলতায় সে জবানবন্দী আইনসম্মত বলে গৃহীত হয়না। আলামতের অভাবে স্বাক্ষীদের স্বাক্ষ্য নেয়া হয়না।

একজন অতি অল্প বুদ্ধির লোকও ঠিক বোঝে-ধর্ষন আর খুন এ দুটি অপরাধের ক্ষেত্রে স্বাক্ষ্য না থাকাটাইতো অস্বাভাবিক। আইন কি তা বোঝেনা? কোথায় যেন একটা পদ্ধতিগত সমস্যা আছেই। আমরা সাদাসিধে মানুষগুলো তাই চিৎকার করে বলতে চাই, চাই সুষ্ঠ সঠিক বিচার । সে আওয়াজ যেন বড় ক্ষীণ। কিন্তু যখন লক্ষ লক্ষ ক্ষীণ আওয়াজ একত্রিত হয়, তীব্রতা অবশ্যই বাড়বে।

অবশ্যই পৌঁছাবে যথাযথ কতৃপরে কানে। সৃষ্টিকর্তা রাহেলাকে অনেকদিন বাঁচিয়ে রেখেছিলেন। হয়তো তার মুখ দিয়ে অপরাধী মানুষরূপী কুকুর গুলোর নাম প্রকাশ করানোর জন্যই। সৃষ্টিকর্তা কিন্তু সুযোগ করেই দিয়েছেন আমরা মানুষেরা সেটাকে কাজে লাগাতে পারিনা , হয় আমারা কত কপাল পোড়া! ইন্টারনেট ভিত্তিক ব্লগ, পোর্টালে যারা তাই রাহেলার প্রাপ্য বিচার চেয়ে লিখেছেন, তাদের সাধু বাদ জানাই অনন্তবার। আজ ১৯ শে মার্চ বুধবার দৈনিক প্রথম আলোয় ডঃ মুহাম্মদ জাফর ইকবালের ‌‌ ‌'রাহেলার কথা মনে পড়ে' শীর্ষক আর্টিকেলটা চোখে পড়তেই বেশ ভাল লাগল।

ভাবলাম যাক অবশেষে সেই অগণিত সাদাসিধে সাধারণ মানুষের মনতন্ত্রীতে নতুন করে সাড়া পড়বে যারা ইন্টারনেট জগতের থেকে বাইরে। সেই মানুষের সংখ্যাই যে অনেক বেশী। আগেই তো বললাম পত্রিকার আবেদন বাস্তবিক অনেক অনেক বেশী প্রবল। তারপরও জাফর ইকবাল কিন্তু স্বীকার করেছেন তাঁর লেখায়- তিনিও রাহেলার বিষয়ে অনেক কিছু জেনেছেন ইন্টারনেটের সূত্রেই। আশাবাদী হই-কোন একদিন পত্রিকার আবেদন অপো অনেক বেশী আবেদন আর সাড়া জাগাবে ইন্টারনেট খবর নিঃসন্দেহে।

সেদিন নিশ্চয় পত্রিকার মত খুব বেশী আগপাছ ভেবে, ব্যবসায়িক লাভ তি হিসেব করে অকারণ মডারেশন আর এলিমিনেশন হবেনা খবর। থেমে যাবেনা পৈশাচিক কোন ঘটনার সুষ্ঠ বিচারের প্রতীক্ষা অথবা রাহেলার অসমাপ্ত বিচারে ঘটনা বা বিচারের দাবী। জাফর ইকবাল স্যার রাহেলার কাছে ক্ষমা চেয়ে শেষ করেছেন তার বক্তব্য। কিন্তু আমি রাহেলার কাছে ক্ষমা চাইনা। সেই মুখও কি আমাদের আছে? নিজের কাছে নিজেদের যে সামাজিক দায়বদ্ধতার অস্বীকার তার ক্ষমা কি? ভুলে যাওয়া শিহরণ যখন জেগে উঠেছেই, ক্ষীণ স্বরেই না হয় বলি-' বিচার চাই রাহেলার হত্যাকারীদের' আসুন না সকলে মিলে ক্ষীণ স্বরটাকেই তীব্রতর করি।

১৯/০৩/০৮

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.