যেকোনো ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্তের অপরাধ সংশ্লিষ্ঠতা এবং অপরাধের মাত্রা বিবেচনা করে উপযুক্ত শাস্তি প্রদানের বিষয়টা নির্ভর করে বিচারকের বিবেচনার উপরে- এবং বিচারকের ভেতরে বিন্দুমাত্র দ্বিধা থাকলে অপরাধীকে ছাড় দেওয়ার অলিখিত রীতি প্রচলিত- তাই রাহেলা ধর্ষণ এবং হত্যাচেষ্টার মামলার ভবিষ্যত বিষয়ে হঠাৎ করেই কিছু বলা সম্ভব না- তবে সবাই বিভিন্ন মাত্রায় আবেগাক্রান্ত এবং সবাই মামলার রায় হবার আগেই অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চায়-
এই মামলায় হতাশায় পরিমাণ বেশী- ধর্ষণ সংঘটিট হতে দেখে নি কেউ- অপরাধের সাথে সংশ্লিষ্ঠ কাউকে ধরে বেধে হয়তো অপরাধের স্বীকারোক্তি নেওয়া সম্ভব হতে পারে তবে অপরাধের সহযোগীদের সাক্ষ্য তেমন বিশ্বাসযোগ্য বিবেচিত হয় না আদালতে-
ঘটনা সম্পর্কে আমাদের অবগতি যতটুকু সেটা রাহেলার মৃত্যু কালীন জবানবন্দী- এবং মৃত্যুকালীন জবানবন্দী অনান্য সাক্ষ্যপ্রমাণের অনুপস্থিতিতে তেমন জোড়ালো সাক্ষ্য বিবেচিত হয় না- ডেথ বেড স্টেটমেন্ট বিষয়ে ভ্রান্ত একটা ধারণা আছে- মৃত ব্যক্তির প্রতি সম্মান প্রদর্শনপূর্বক এটাকে সবচেয়ে শক্তিশালী সাক্ষ্য বিবেচনা করা হয় এটা হয়তো হুমায়ুন আহমেদের বই পড়ে মানুষের ভেতরে বিশ্বাস জন্মেছে-
বাংলাদেশের অধিকাংশ আইনই ইংল্যান্ডের প্রচলিত আইনের রূপান্তর- আমরা ইংল্যান্ডের আইনের বাংলাদেশী ভাষ্যে আমাদের নাগরিকদের বিচার করি- এবং সেই ইংল্যান্ডেও শুধুমাত্র হত্যা মামলায় ডেড বেড স্টেটমেন্ট গ্রহন করা হয় সাক্ষ্য হিসেবে যদি পরিপার্শ্বিক ঘটনাগুলো এর সপক্ষে মত প্রদান করে- তবে বেশীর ভাগ সময় নিহত মানুষটার বিশ্বাসযোগ্যতা এবং যে এই জবানবন্দি গ্রহন করেছে তার কিংবা তাদের বিশ্বাসযোগ্যতাও বিবেচনা করা হয়-
শুধুমাত্র মৃত্যুকালীন জবানবন্দী আদতে মৃতের পক্ষে আদালতের রায় আনতে পারে না-
আমাদের প্রযুক্তিগতভাবে পিছিয়ে থাকা দেশে ডিএনএ ল্যাব হয়েছে মাত্র ৩ বছর এর আগে আমাদের এই প্রযুক্তিতে অপরাধি নির্ণয়ের কোনো প্রথা কিংবা পন্থা ছিলো না- রাহেলা হত্যাকান্ড ঘটেছে এরও আগে- তাই সে সময়ের ডিএনএ এভিডেন্স নিয়ে সিএসআই মুভি দেখে অপরাধী শনাক্ত করবার চেষ্টা কিংবা আবারও তার লাশের পোস্ট মর্টেম করে তার নির্যাতন এবং হত্যার নেপথ্যের মানুষদের পরিচয় উদঘাটন সম্ভব না-
এত সব হতাশার ভেতরে আমাদের আরও বেশী হতাশ করছে তার হত্যা মামলা চালানোর জন্য তার পরিবারের তেমন আগ্রহ নেই- এবং এই মামলা সংক্রান্ত নথি এবং সাক্ষ্য তেমন অবশিষ্ট নেই- ডাক্তারের রিপোর্ট আছে তবে তা নিশ্চিত ভাবে অপরাধীকে নির্দিষ্ট করে না-
আমরা বিচার নিশ্চিত করতে যতটুকু পদক্ষেপ নিতে পারি তা সামান্য- একটা অপ্রচলিত বিধি আছে হত্যা মামলার বাদী হতে পারে রাষ্ট্র- রাষ্ট্র নাগরিকের নিরাপত্তা বিবেচনা করে সাম্ভাব্য অপরাধীকে আটক করতে পারে- এবং অপরাধের তদন্ত চালাতে পারে- রাষ্ট্র এখন এই মামলার বাদী নয়- এই মামলার বাদী পুলিশও না- আর মামলাটা ধর্ষণ এবং হত্যার- ধর্ষণের মামলায় আক্রান্তকে হত্যা করবার প্রচ্ছন্ন চেষ্টা থাকে- কারণ আক্রান্ত ব্যক্তির সাক্ষ্যই প্রধান ভুমিকা গ্রহন করে অপরাধীর শাস্তি নির্ধারণে- তাই অভিযুক্তরা রাহেলাকে হত্যার চেষ্টা করেছিলো এবং তার মুমূর্ষু দেহ উদ্ধার করা হয়েছিলো যেখান থেকে , যে সহৃদয় মানুষগুলো তাকে উদ্ধার করে নিয়ে গিয়েছিলো হাসপাতালে- তাদের সাক্ষ্য গুরুত্বপূর্ণ-
আমরা যা করতে পারি- কোনোভাবে এই অপরাধের বিচারের কাজে মূল বাদী হিসেবে রাষ্ট্রকে নির্দিষ্ট করে দিতে পারি- তাহলে রাহেলার পরিচিতজনের অনীহা তার বিচার কাজে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না-
আমাদের মৃত্যুকালীন জবানবন্দি দেওয়া আক্রান্ত ব্যক্তির স্বীকারোক্তি শুনেছে সম্মানিত মানুষেরা- গণমাধ্যমে ছাপা হয়েছে- আদালতে সাক্ষ্য হিসেবে এসব উপস্থাপন করা যেতে পারে-
আমি যতটা আগ্রহ নিয়ে এই মৃত্যুকালীন জবানবন্দি নিয়ে পড়া শুরু করেছিলাম তা ক্রমশ ক্ষীণ হয়েছে- তবে অন্য বিষয়গুলো আশাবাদী করেছে খানিকটা- আমরা যদি কোনো ভাবে পুলিশকে মূল বাদী করে তুলতে পারি- আমরা যদি কোনোভাবে প্রতিষ্টা করতে পারি অভিযুক্তরা সেই নির্জন জায়গায় অকারণে ঘুরাঘুরি করেছিলো এবং তারা আদতে আমাদের সমাজের জন্য ক্ষতিকর এবং এরা আমাদের নিরাপত্তা বিঘ্নিট করছে এবং যেহেতু এটা প্রতিহিংসা পরায়নতা নয় তাই এই অভিযুক্তদের আরও কৃতকর্মের অতীত ইতিহাস থাকবে- তাদের এলাকাবাসী মেয়েদের কেউ যদি এমন পাওয়া যায় যে সীমিত ভাবে হলেও যৌন নির্যাতন কিংবা যৌন হয়রানীর শিকার হয়েছে অভিযুক্তদের কাছে তাহলে আমাদের সাক্ষ্য প্রমাণ শক্ত হয়-
যারা মামলার কাজের অগ্রগতি যাচাই করছেন- ফয়সাল সাহেব যিনি চ্যানেল আইতে একটি প্রতিবেদন করেছিলেন তিনি কিংবা এমন উৎসাহী কেউ সংশ্লিষ্ট এলাকায় গিয়ে খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন অভিযুক্তদের এমন অতীত ইতিহাস আছে কি নেই।
যদি এমন বিকল্প প্রমাণ যা অভিযুক্তদের পরোক্ষ ভাবে হলেও সাম্ভাব্য অপরাধী প্রমাণ করতে পারে তবে মৃত্যুকালীন জবানবন্দীর জোড়ে আমরা হয়তো অপরাধী নির্ধারণ করে তাদের শাস্তির দাবি জানাতে পারি কারণ সব আদালতের বড় আদালত জনতার রায়।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।