অক্ষর আর বালির পৃষ্ঠাগুলি/ ধর্মবক
বেনজিন'কে
গ্রীষ্মে মরা নদীর পাশে দাঁড়িয়ে সবুজ বাংলাদেশের কথা ভাবি।
ভাবি রবি বাবুর কী হবে। এত ধান গান, এত ফুল,
এত সবুজ ছায়াবিথি তার অক্ষরে অক্ষরে! ভাবি
জীবন বাবুর কী হবে। অক্ষরে অক্ষরে তারও
এত গাছপালা, এত পাখি, এত নদী!
কে বলবে না তোমাকে পড়ে, রবি বাবু, এই দেশ
নরোম পলিছাওয়া আর সবুজে স্বচ্ছল খুব, স্বর্গেরও ঈষর্ণীয়।
কে বলবে না জীবন নাবু, তোমার দেশের
নদী পদ্মা, কীর্তিনাশা, গঙ্গা সবদিকে বয়-
কি অন্নে, কি কর্মে, কি পুন্যে, এমনকি বুকের মাঝ দিয়েও।
জীবন বাবু, তোমার মা অনেক পাখি আর গাছের নাম
শিখিয়েছিলেন তোমাকে। কিন্তু আমাদের নগরের মা-রা সন্তানদের
এসব শেখায় না আর গাছের ছায়ায় হেঁটে হেঁটে। মলাটবন্দী সবুজ
দেখে না হাপুস নয়নে এখানকার শিশুরা আর। মলাটবন্দী নদীদের নাম
তোতা পাখির মতো মুখস্ত করেও মনে রাখতে পারে না শিশুরা আর।
অথচ তাদেরও শিরা উপশিরায় পাকখাচ্ছে বইছে
এইসব নদীরই স্বচ্ছ মিষ্টি জল ও পলির আদর।
গঙ্গা আর পদ্মার
মরার সাথে মরছে আমাদের ধর্মকর্ম আর সনাতন হৃদয়
আমাদের চিরসবুজ ও সরল দুই চোখ।
মরা নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে ভাবি, এরা কারা সুযোগ পেলে
এদেশে এসে ইলিশ, ভাঁটিয়ালি, ভাওয়াইয়া আর বাউলগানের
গুলতানি মেরে আমাদের নাগরিক পাড়া মাত করে রাখে। কখনই
নদীর সন্তান নয় যেনো এরা। আমাদের সংস্কৃতির-আত্মা
নয় যেনো নদী, যেনো আমাদের সাহিত্যের আত্ম-প্রবাহ নয়
নদী। আর তারা এমন দেখো
কৃষ্ণকে ভালোবাসে খুব কিন্তু যমুনাকে নয়।
মরা নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে শুনি- তাদের ইলিশফিলিশ পীরিত্
ভাউয়াফাওয়াইয়া টান, ভাঁটিয়ালিফাটিয়ালির মরণবঞ্চিত বাকবিলাপ!
ধানগান, ভাওয়াইয়া-ভাঁটিয়ালি মিঠেপানি মাছভাত দুধভাত গরুবাছুর
গাছপালা ফুলপাখি মাতৃপলি ওই বিলাপের সমান্তরালে
বালির সমতল পৃষ্ঠা থেকে ক্রমে মুছে যেতে দেখি আমি।
হায় রবি বাবু আর জীবন বাবু, এদেরই ভাইব্রাদার নাকি
সাহিত্য করে খায়। আর তোমাদের ও নদীর
উপাসনা করে চলে, অথচ দেখো এদেরই ভাবেবেরাদর
রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় ব্যাপার বলে বলে নদীতে বাঁধ দিয়ে দিয়ে
তোমাদেরকেও ক্রমাগত মেরে ফেলছে। তারা চুপ।
আমাদেরকে তো মারছেই।
নদীর অবাধ প্রবাহকে কি তারা
আর কোনদিনই ভালোবাসতে পারবে না!
মরা নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে কেউ যদি ভাবে তোমরা বড় বেশি
রূপকথা লিখেছো, সে কি ভুল করবে খুব! যদি ভাবে তোমরা দুজন
যে দেশের কবি সে-এখন আর কোনভাবেই তার দেশ নয়,
ভুল করবে কি খুব!
০২.০৫.০৮
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।