চোখ মেলে দেখি জানালায় ভোরের পাখি
পাচ ইঞ্চি চওড়া একটা তক্তার উপর সটান শুয়ে থাকতে থাকতে আমি আকাশ দেখছিলাম। দুপুরের রোদোজ্জল আকাশ। একটু দুরে বাশঝাড়, মাঝে মাঝেই বাতাসের দোলায় কচি বাশের মাথা ঢুকে পড়ছে দৃস্টির সীমানায়। আমাদের সেই আকাশেই হঠাৎ কাজী নজরুলের কাঠবিড়ালীর আগমন। আমি স্বাগতম জানিয়ে তড়াক করে উঠে বসলাম।
তারপর শুরু হল তাড়া। সেকি তাড়ানো। এডাল থেকে ও ডালে, এ গাছ থেকে ওগাছে লাফিয়ে,ঝাপিয়ে চলছে আর আমি নিচে থেকেই বাগান জুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছি। নজরুল কাঠবিড়ালীর সাথে ভালই গালগল্প জুড়ে দিয়েছিলেন কিন্তু আমার সে সময় নেই। গাছের নারিকেল নাকি একটাও থাকেনা ওর জ্বালায়।
সুতরাং নো খাতির, পিটাও বাছাকে।
মেটে রঙের লম্বা লেজওয়ালা বড় সড় ইদুরের মত দেখতে বৃক্ষচারী প্রানীটাকে বেশ ছোট থেকেই চিনি। কাদামাটির মধ্যে যারা জন্ম নিয়েছেন, মানুষ হয়েছেন তারা সবাই চিনেন বোধ হয়। না চিনলেও অচিরেই ওটাকে চিনে নেবেন যখন দেখবেন আপনার গাছের নারিকেলের মধ্যে কিছু নেই। বিলেতি গাবের মধ্যখানে বিশাল এক গর্ত।
বাতাবী নেবুর অর্ধেক নেই, আমের একপাশ পচে আছে মিস্টি পাকা পেয়ারাটা হঠাৎ উধাও। বুঝবেন ওটা কাঠবিড়ালীর কাজ এবং অতঃপর কাঠবিড়ালী দেখা মাত্রই আমার মত নেমে পড়বেন হৈহৈ রৈরৈ করে।
কাঠবিড়ালী বুঝেছে আজ আর ওর রক্ষে নেই। তরতর করে ওটা নেমে আসে তাল গাছ ধরে। মাঝামাঝি এসে লাফ দিয়ে পড়ে সুপারী গাছের মাথায়, ওখান থেকে দেবদারুর ডালে ঝাপিয়ে পড়ে।
এরপর আবার উপরে উঠতে থাকে। ভীষন একটা ঝাকুনি দেই দেবদারু ধরে আর তৎক্ষনাৎ নুয়ে পড়া শাল গাছে ঝাপিয়ে পড়েই জামের ডাল বেয়ে দৌড়াতে থাকে। কিছু সময়ের জন্য হারিয়ে যায়, পাতার শিরশিরানী দেখে খুজে বের করি। আবার তাড়া, যথারীতি এডাল থেকে ওডালে দৌড়াদৌড়িকরে একসময় মাটিতে নেমে আসে একটু পড়েই বেল গাছ বেয়ে আবার উপরে ওঠে, চালতা পাতার আড়ালে কিছু সময় বিশ্রাম নিয়ে পুকুর পাড়ের ঝুকে পড়া আম গাছ পার হয়ে পেয়ারা গাছে। পেয়ারা গাছে আসামাত্রই কবি নজরুল আমার স্মৃতিতে উকি দেয়।
নজরুলের সম্মানে কিংবা ইতমধ্যে ছুটাছুটির ক্লান্তিজনিত কারনে আমার মধ্যে কিছুটা মানবতাবোধ জাগ্রত হয়। আমি ছেড়ে দেই এ যাত্রায়। আজ না হয় একটা অবলা প্রানীকে মাফ করে দেয়া যায়। ক্ষমা বড় মহৎ গুন, ধরতে না পারলে দুর থেকে ক্ষমা করতে পারা আরো মহৎ নিসন্দেহে। এ মুহুর্তে আমি কি একজন মহৎ লোক চিন্হিত হতে পারি না !
কাঠবিড়ালী, কই পালালি
কোথায় গেলি হারিয়ে
কার পিটুনী ভুত ছাড়ালো
স্বস্তি দিলো তাড়িয়ে
পেয়ারা খাবি? সাহস আছে!
আয়না কাছে, দেখাচ্ছি
আজ না পারি, কালতো আছে
এখন তবে যাচ্ছি।
মহৎ হৃদয়ের কোলাহল আবার আকাশ দেখায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। কি সুন্দর নীল রং ছড়িয়ে আছে। কাঠবিড়ালী তার সুন্দর লেজটাকে গোলানো চুনের মধ্যে ডুবিয়ে একটা পোজ দিয়েছে আকাশের গায়ে। আর তাতেই ছোপ সাদা মেঘ ছড়িয়ে পড়ে সারা আকাশ জুড়ে। বাহ দারুন তো! আরে সত্যিই তো আকাশ দারুন সুন্দর লাগছে।
খামোখাই এতক্ষন সময় নস্ট করেছি। আমাকে আরেকবার বকা দিতেই যেন রবী ঠাকুরের এক পায়ে দাড়িয়ে থাকা তাল গাছ ওর ডানা ঝাপটাতে লাগল দখিনা বাতাসে। এই সুন্দর আকাশ ওকেও কাছে টানছে। আর থাকবেনা সে মাটির ঘরে। গোল গোল পাতা ঝাপটিয়ে পাখির মত উড়ে যাবে মহাশুন্যের পানে যেখানে কাঠবিড়ালীর সাদা মেঘ একা একা কথা বলে ।
সুন্দর আকাশ দেখে কাঠবিড়ালীর উপর আমার একটা শ্রদ্ধাবোধ চলে আসে। ওর অপরাধ সেতো নগন্য। না হয় খেলোই কটা গাছের ফল তাতেই কি দরকার ওকে নির্মমভাবে পৃথিবীছাড়া করার। ইস!
পৃথিবীর কোন মানুষেরই ওর জন্য একটু দরদ নেই। নজরুল কাজীই একটু দরদ দেখাতো ওর জন্য।
ওর সাথে ভাব করতে চাইতো। মানবতার গান যে গেয়ে চলেছে আজীবন এটুকু জীবপ্রেম তার থাকা স্বাভাবিক। কাঠবিড়ালী মনে হয় নজরুল কাজীর খোঁজেই এধারে ওধারে ঘুরে বেড়ায়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।