আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আনোয়ার চৌধুরী : অভিবাসী প্রেরণার প্রতীক



আনোয়ার চৌধুরী : অভিবাসী প্রেরণার প্রতীক ফকির ইলিয়াস -------------------------------------------------------------------------------- বাংলাদেশে তার দায়িত্বের মেয়াদ শেষ করে ব্রিটেনে ফেরত আসছেন ঢাকাস্থ ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত আনোয়ার চৌধুরী। চারটি বছর তিনি কাটিয়েছেন বাংলাদেশে। তার একটি বড় পরিচয় তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন বাংলাদেশে, সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর থানার প্রভাকরপুর গ্রামে। বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়ার আগে তিনি তার জন্মমাটিতে গিয়েছিলেন। রোমন্থন করেছেন স্মৃতি।

তার এলাকাবাসী তাকে প্রাণভরে দেখেছেন। প্রভাকরপুরের মাটি ধন্য হয়েছে তার কৃতী সন্তানের পদচারণায়। আনোয়ার চৌধুরী বাঙালির অগ্রযাত্রার একটি অন্যতম উৎসের প্রতীক। তিনি অভিবাসী বাঙালি সমাজের শ্রেষ্ঠ প্রতিনিধি হিসেবে অনুসরণযোগ্য। আজ থেকে প্রায় ৫ বছর আগে লন্ডন থেকে প্রকাশিত ‘সাপ্তাহিক সুরমা’ পত্রিকায় যখন আনোয়ার চৌধুরীর ঢাকায় ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত হওয়ার সংবাদটি পড়ি তখন আনন্দে আমি কেঁদে ফেলেছিলাম।

যে ব্রিটিশ শাসকরা বাংলাদেশকে দীর্ঘদিন শাসন করছে সেই ব্রিটিশ রাজ্যের রাষ্ট্রদূত হয়ে ঢাকায় যাচ্ছেন এক বঙ্গসন্তন! একজন মানুষের জীবনে এর চেয়ে বেশি পাওয়ার আর কিছু থাকতে পারে। বাঙালির রক্তস্রোত নিয়ে এই সন্তান আমাদের মুখ উজ্জ্বল করতেই বেড়ে উঠেছিলেন ব্রিটেনে। করেছিলেন অধ্যবসায়। আমরা জেনেছি, ঢাকায় রাষ্ট্রদূত হয়ে যাওয়াটা আনোয়ার চৌধুরীর জন্য সহজসাধ্য ছিল না। বেশক’টি কূটনৈতিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরই তিনি সে সুযোগ পেয়েছিলেন।

বেশক’জন জাঁদরেল কূটনীতিকের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হয়েছিল তাকে। তিনি চূড়ান্ত পর্যায়ে বিজয়ী হয়েছিলেন। সেসব কথা আমরা তার বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে শুনেছি। শুনেছি নিউইয়র্কে তার সম্মানে, নাগরিক গণসংবর্ধনায় দেওয়া বক্তৃতায়ও। আনোয়ার চৌধুরী বাংলাদেশে এমন একটি মেয়াদে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেছেন; যখন বাংলাদেশে ঘটে গেছে নানা ঐতিহাসিক পরিবর্তন।

ওয়ান-ইলেভেন পাল্টিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশে রাজনীতির হিসাব-নিকাশ। ব্রিটেন বিশ্বের একটি অন্যতম প্রভাবশালী দেশ। সে দেশের একজন রাষ্ট্রদূত, সেই রাষ্ট্রেরই প্রতিনিধিত্ব করেন। জানিয়ে দেন সে দেশেরই মতামত। আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক রীতিনীতি প্রত্যেকটি দেশের রাষ্ট্রদূতকেই সে ক্ষমতা দেয়।

সে নিরিখে আমি মনে করি আনোয়ার চৌধুরী যা করেছেন, যা বলেছেন তা গ্রেট ব্রিটেনের মতামতেরই প্রতিফলন মাত্র। এখানে তার ব্যক্তিগত কোনো পক্ষ-বিপক্ষ নেই, ছিল না। তার বিদায়ক্ষণে আমার বারবার মনে পড়ছে ২০০৪ সালের ২১ মে, সেই ভয়াবহ কালো দিনটির কথা। যেদিন তিনি হজরত শাহজালালের (র.) মাজারে নামাজ আদায় করে বেরিয়ে আসার পথেই জঙ্গিবাদী বোমা হামলার শিকার হয়েছিলেন। সেদিনই তার নিজ গ্রাম প্রভাকরপুরে যাওয়ার কথা ছিল।

অথচ তিনি বোমার স্প্রিন্টার শরীরে নিয়ে আহত হয়ে হাসপাতালগামী হয়েছিলেন। এ ঘটনা গোটা বিশ্বের বাঙালি সমাজকে কাঁপিয়ে তুলেছিল। তীব্র প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছিল বহির্বিশ্বে। তার কারণ ছিল, তিনি অভিবাসী সমাজের প্রেরণার প্রতীক হিসেবেই বাংলাদেশে রাষ্ট্রদূত হয়ে গিয়েছিলেন। বাংলাদেশ ছেড়ে আসার প্রাক্কালে আনোয়ার চৌধুরী প্রায় সবক’টি প্রধান মিডিয়ার সঙ্গেই মতবিনিময় করেছেন।

গেছেন প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও। তিনি বাঙালি প্রজন্মকে জ্ঞানে গরিয়ান হয়ে ওঠার আহ্বান জানিয়েছেন। বলেছেন, বাংলা ভাষার পাশাপশি ইংরেজি ভাষা শিখে প্রজন্ম যেন ব্যাপক জ্ঞান আহরণ করে। তার ভাষায়, ‘ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ ইজ এ পাওয়ার ফর দ্য ওয়ার্ল্ড। ’ তার এ বক্তব্যকে সর্বাংশে সত্য এবং বিবেকি মনে করি।

কারণ বর্তমান বিশ্বে বাঁচতে হলে জানতে হবে । আর জানার জন্য ইংরেজি হচ্ছে ভাষামুখ। যেখানে সব ভাষা এসে মিলিত হয়ে যায়। সিলেটে এক মতবিনিময় সভায় আনোয়ার চৌধুরী জানিয়েছেন, ব্রিটেন বাংলাদেশে ইংরেজি ভাষা শিক্ষার জন্য এক শ’ মিলিয়ন ডলার দিচ্ছে। এ ব্যবস্থাটি তার মেয়াদকালীন সময়েই হয়েছে।

এই মাটি, এই জাতিকে আলোকিত করতে এ উদ্যোগটি খুব প্রয়োজনীয় ছিল। আনোয়ার চৌধুরী তা করে গেছেন । এজন্য আমরা তার কাছে কৃতজ্ঞ। আমরা অভিবাসীরা নানা কারণেই বাংলাদেশে গিয়ে নিরাপত্তাহীতায় ভুগি। লন্ডন প্রবাসী সুরত মিয়া হত্যা মামলার বিচার এখনো হয়নি।

সম্প্রতি দেশে গিয়ে নির্মম নিপীড়নের শিকার হয়েছেন আরেক ব্রিটেন প্রবাসী ব্যারিষ্টার রেজোয়ান। তারপরও আমরা মাতৃভূমিকে ভালোবাসি, বারবার ছুটে যাই সেই টানেই। আনোয়ার চৌধুরী তো আমাদেরই গর্ব। সংযোজন - ১৭ মে ২০০৮ শনিবার বাংলাদেশ ছেড়ে চলে গেলেন আনোয়ার চৌধুরী। তার বিদায় দৃশ্য , টিভিতে দেখছিলাম।

খুব আবেগ আপ্লুত ছিলেন তিনি। বলছিলেন - স্টে ওয়েল বাংলাদেশ। বাংলাদেশের মানুষের মন জয় করে গেছেন তিনি। সকল শুভ কামনা এই কৃতি বাঙালির জন্য। -------------------------------------------------------------------------------- দৈনিক সমকাল ।

১৭ মে ২০০৮ শনিবার প্রকাশিত।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.