আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, জরুরি অবস্থা ও যায়যায়দিনের ভূমিকা- দ্বিতীয় কিস্তি

জেনুইন গোপাল - নো ভেজাল

যায়যায়দিন পত্রিকার সম্পাদক পদ দখলকারী শহীদুল হক খান আইজ মহামূল্যবান একটা সরকারী প্রেসনোট বিশেষ সম্পাদকীয় পাতায় নিজের নামে ছাড়ছেন। দালালগো অবস্থান বুঝতে এইডা পড়ার দরকার আছে... বিশেষ সম্পাদকীয় - স্বাধীন মিডিয়ায় পরাধীনতার প্রশ্ন কেন শহীদুল হক খান আমার ৪৫ বছরের সাংবাদিকতা জীবনে আমি মার্শাল ল দেখেছি, জরুরি অবস্থা দেখেছি, রাজনৈতিক সরকার দেখেছি, তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেখেছি কিন্তু যেটা দেখিনি সেটা হলো- দেশের নেতা-নেত্রী, মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির দায়ে কারাগারে। যেটা দেখিনি, জরুরি অবস্থার মধ্যেও প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ শেষ হতে না হতেই সব মহল থেকে নেগেটিভ-পজেটিভ বক্তব্য দিচ্ছে, পত্রিকার পাতা থেকে টিভি পর্দায় তা সব অবলীলায় প্রচার ও প্রকাশ হচ্ছে। রাতের বেলা যদি টিভি পর্দার সামনে বসা যায়, তাহলে দেখা যাবে বিভিন্ন বয়সের বিভিন্ন পরিচয়ের কেতাদুরস্ত ব্যক্তিরা মুখে ফেনা তুলে ফেলছেন সরকারের নানাবিধ কর্মকান্ড- সম্পর্কে। সরকার এটা করেনি, ওটা করেনি, এটা করা উচিত ছিল, ওটা করা উচিত ছিল, এই ব্যর্থতা, সেই ব্যর্থতা ইত্যাদি ইত্যাদি।

সকালবেলা পত্রিকা খুললে দেখা যায় কতো শত মন্তব্য। যে যেভাবে পারছেন বলে যাচ্ছেন। এমনকি দায়িত্বশীল পদে কর্মরত অবস্থায়ও অনেকে সরকারের ভালো নিয়ে বলছেন, মন্দ নিয়ে বলছেন। আমি অবাক হই, আমি বিস্মিত হই, মাঝে মধ্যে নিজেকে প্রশ্ন করি- দেশে না জরুরি অবস্থা? তাহলে এ ভাষায় এসব কথা এরা বলছেন কেমন করে? যারা বলেন তারা অনেকে হয়তো যখন-তখন বিদেশে যাতায়াত করেন, কিন্তু দেশের সামগ্রিক খোঁজও নেন না। পেছনে ফেলে আসা দীর্ঘ সময়ের হিসাব নিতে গেলে হয়তো দেখা যাবে দেশ ও মানুষের কল্যাণে সামান্যতম অবদানও রাখেননি।

কিন্তু তারা বলেন, নিয়মিত বলেন, টিভি ক্যামেরার সামনে বিজ্ঞ ব্যক্তির মতোই বলেন। যারা সঞ্চালকের ভূমিকায় থাকেন তাদের অতীত অনেক রকম ইঙ্গিত দেয় তারপরও বলবো- তারা নিয়মিত অনুষ্ঠান করে চলেছেন, যেসব অনুষ্ঠান নিয়ে অপ্রস্তুত হওয়ার সুযোগ আছে। অপ্রস্তুত হওয়ার কারণ আছে। কিন্তু দেখা যায়, স্বাধীনভাবে তারা অনুষ্ঠান করছেন। টক শো-এর সঙ্গে অনেক টক ঝাল মিষ্টি কথা বলে ফেলছেন-যা সময়ের সঙ্গে যায় না।

জারুরি অবস্থার মধ্যে তো নয়ই। সংবাদপত্রের ক্ষেত্রেও একই কথা। সরকার, সরকারের বিভিন্ন উপদেষ্টা এবং সেনাবাহিনী নিয়ে কটা করার সুযোগ পেলে কেন যেন কেউ সুযোগ হাতছাড়া করতে চান না। একটি পরিচিত দৈনিকের সহযোগী প্রকাশনা হিসেবে প্রকাশ হওয়া একটি সাপ্তাহিকে অশ্লীল মন্তব্য পর্যন্ত করা হয়েছে। সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আলুর দোষ রয়েছে এমন মন্তব্য করে একজন মহিলা সাংবাদিক বর্তমান সময়ে আলুর চাহিদা, আলুর প্রয়োজনীয়তা এবং আলু বিষয়ক আন্দোলনকে কটা করেছেন।

একই অবস্থা দেখা গেল, দেশের দুটি দৈনিকের সম্পাদক তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থ ও সুবিধার প্রয়োজনে সব সম্পাদককে নিয়ে বিশেষ বাহিনীকে অভিযুক্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। বিশেষ বাহিনী কিংবা সম্পাদক মহোদয় কাউকেই ছোট করে না দেখে, কারো প্রতিই আমি আমার অসন্তুষ্টি প্রকাশ না করে শুধু পাঠকদের সামনে কয়েকটি প্রশ্ন তুলে ধরছি। ১. দেশের পত্র-পত্রিকায় আপনারা যেসব সংবাদ পাঠ করছেন তাতে কি কোনোভাবে মনে হয় সংবাদপত্রে স্বাধীনতার কমতি আছে? ২. টিভি চ্যানেলগুলোতে খবর এবং টক শো-এর মাধ্যমে প্রতিনিয়ত যা কিছু প্রচার হয়ে আসছে তাতে কি কোনোভাবে মনে হচ্ছে এদের স্বাধীনতায় কোনো ঘাটতি আছে?৩. একুশে টিভি, চ্যানেল আই, এনটিভি, বাংলাভিশন, এটিএন বাংলাসহ অন্যান্য সবকটা চ্যানেলে প্রতিদিন যেভাবে খবর ও টক শো প্রচার হচ্ছে তাতে কখনো কি মনে হয় দেশে জরুরি অবস্থা আছে? আমরা তো জানি, জরুরি অবস্থা মানেই অনেক বিধিনিষেধ, অনেক নিয়মকানুনের মধ্যে লাগাম টেনে চলতে হয়, বলতে হয়। আমি জানি না, আমার এ বক্তব্যে পাঠক অসন্তুষ্ট হবেন কি না, বিভিন্ন পত্রিকার মালিক, সম্পাদক, সাংবাদিকরা অসন্তুষ্ট হবেন কি না, তবে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা যেমন বিশ্ববাসীর কাছে বলে এসেছেন আমাদের মিডিয়া সম্পূর্ণ স্বাধীন। আমি তাঁর কথায়, তাঁর আন্তরিকতায় যেমন ঘাটতি খুঁজে পাইনি, তেমনি মিডিয়ার স্বাধীনতায় তেমন কোনো ঘাটতি দেখিনি।

বিশেষ বিশেষ পত্রিকা যেভাবে উদার, মুক্ত ও সাহসী সংবাদ প্রচার করছে তাতেও স্বাধীনতার কোনো ঘাটতি নেই। তাহলে কেন বলা হচ্ছে, বিশেষ সংস্থার হস্তেেপ সংবাদপত্র স্বাধীন হতে পারছে না। অতিসত্ত্বর জরুরি অবস্থা তুলে নিতে হবে। হ্যাঁ, জরুরি অবস্থা অবশ্যই তুলে নিতে হবে, তবে এ জরুরি অবস্থা জারি করা জরুরি হয়েছিল কেন, সে অবস্থার জন্য কে বা কারা দায়ী? যদি আমরা আবার সে অবস্থায় ফিরে যেতে না চাই তাহলে সবাইকে সতর্ক হতে হবে, সচেতন হতে হবে, সংযত হতে হবে। এই দেশ আমাদের সবার, সবার স্বার্থে দেশের প্রতি, দেশের মানুষের প্রতি উদার হতে হবে।

এ কারণে কারো ওপর দোষ চাপিয়ে নিজেকে অথবা নিজেদের নির্দোষ প্রমাণের কোনো সুযোগ নেই। সুযোগ নেই অকারণে অন্যকে দোষী সাব্যস্ত করারও।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.