সাহিত্যের সাইটhttp://www.samowiki.net। বইয়ের সাইট http://www.boierdokan.com
এই জীবনে একটা শিক্ষা ছোটবেলায় পাইছিলাম, সেটা হইলো বিপদে না পড়লে কেউ শিখতে চায় না। ঠকতে ঠকতে বা ঠেকতে ঠেকতে মানুষ শিখে বেশি। পানি খাইতে খাইতে সাঁতার শিখে, উষ্ঠা খাইতে খাইতে হাঁটা শিখে। শিক্ষা অর্জন যদি সারভাইভালের সঙ্গে যুক্ত না হইতো তাইলে মানুষ কি এইভাবে শিখতো? অবশ্য জ্ঞানীদের কথা আলাদা।
শিক্ষা হইলো নেশা এনাদের কাছে। কিন্তু আমাদের মতো সাধারণ মানুষের কাছে শিক্ষা হইলো তফাতে থাকার জিনিশ। এখন কেউ যদি আমার নিকটে আইসা বলে, মাহবুব তুমি আমার কাছে আসো, তুমি এইটা তো জানো না তোমারে শিখাই। তাইলে আমি কী ভাববো? প্রথমত ভাববো এই শিখাটা আমার কোন কামে লাগবো। দ্বিতীয়ত, সে যে শিখাইতেছে সেইটার পিছনে তার উদ্দেশ্য কী।
এই দুইটার কোনোটার সুদত্তর না পাইলে ফাও কামে কেউ কিছু শিখতে চায় না। এখন ভাবে ঘোষণা দিয়া যদি কোনো দৈনিক পত্রিকা বাইর হয় যে তারা বাঙালি জাতিকে শিখাইবে, তাইলে সেই শিক্ষা কয়জনে নিবে? মানুষ দৈনিক পইড়া খবর জানতে চায়, টাকা দিয়া তারা বিশ্লেষণ কেনে তথ্য কেনে। এইগুলা থিকা শেখে বটে কিন্তু সম্পাদকরে মাস্টার মশাই মনে কইরা শেখে না। কিন্তু শফিক ভাই এমন একটা পত্র্রিকা বাইর করলেন যেইটার উদ্দেশ্য হইলো একটা স্কুল বা কলেজ হওয়া। আর উনি সেইটার হেডমাস্টার।
সঠিক উচ্চারণে ইংরেজি লেখা উচিত। যে যে বানানে আছে সেইভাবে লেখা উচিত। তাই না? শফিক ভাইয়ের বিশাল অবদান হইলো তিনি বাঙালি জাতিকে সঠিক বানানে ইংরেজি লেখা শিখাতেছিলেন। কিন্তু প্রশ্ন হইলো, সঠিক বানানে ও উচ্চারণে বাংলা শিখাটা কি উচিত না? উনি কিন্তু এইখানে উল্টা অবস্থান নিলেন। বানান নিয়া বিতর্ক যখন তুঙ্গে তখন সঞ্জীবদা একদিন কইলেন, আমার মেয়েকে আমি তো যায়যায়দিন পড়তে দেব না।
সে ইস্কুলে গিয়ে পাঁচ বানান পাচ লিখুক এটা আমি চাই না।
শফিক ভাই বাংলা বানান আর উচ্চারণ শিখাইতে চাইছিলেন বিকৃত কইরা আর ইংরেজি বানান ও উচ্চারণ শিখাইতে চাইছিলেন সঠিক কইরা। এক জায়গায় রক্ষণশীল আরেক জায়গায় বিপ্লবী। জিনিশটা সবাই বিশ্লেষণ কইরা দেখে মানে নাই তা না। কিন্তু শফিক ভাইয়ের ঘোর ভক্ত লোকেও কিন্তু কিন্তু করছে।
শফিক ভাই বলতেন, ভাষাকে সহজ করার জন্য তিনি এইটা করতেছেন। কেউ তার কথা বিশ্বাস করে নাই। তার সম্পাদিত পত্রিকার নিউজগুলা প্রথম থেকে বাংলা একাডেমীর বানান রীতিতেই ছাপা হইতো। নিউজ সেকশন তার কথা মানে নাই। শুধু ফিচারের ম্যাগাজিনগুলোতে তার বানান রীতি ব্যবহৃত হইতো।
পরে অমিতদাদের স্যাক করার পর নিউজে শফিক ভাইয়ের বানান রীতি ফিরে আসছিল। বানান নিয়ে কিছু বলতে গেলেই শফিক ভাই টিটকারি দিতেন। তিনি যে একটা বিপ্লবী কাজ করছেন এইটা বলতেন। শেষে যায়যায়দিনের কলিকালে শফিক ভাইয়ের উপলদ্ধি হইলো এই বানান মানুষ নিতেছে না। নিবে না।
তখন তিনি বাংলা একাডেমীর বানানে ফিরলেন বটে। কিন্তু চন্দ্রবিন্দু ফিরাইলেন না। এই দুঃখে আমি হিতাহিত জ্ঞানশূণ্য হয়ে ব্লগ লিখতে বসছি।
বানান সংস্কার, ইংরেজি শিক্ষার আসর, সাহিত্য শিক্ষার আসর এইসব নিয়া ওপেন কলেজ হওয়ার কথা আছিল। বাঙালি সেই ওপেন কলেজ দেখতে পাইলো না।
কারণ, আগে তো পত্রিকা হইতে হবে। সেই পত্রিকাকে সফল হইতে হইবে। তারপর সেই সফল পত্রিকার সম্পাদকের কথা লোকে শিক্ষণীয় মনে কইরা শুনবে। এইগুলা বাদ দেই। সোজা কথা কই।
হেড মাস্টারের অ্যাপ্রোচ শিক্ষিত লোকে নিতে পারে নাই। পত্রিকা তো শিক্ষিত লোকেই পড়ে।
যায়যায়দিনে জয়েন করার আগ দিয়া আমি জানতাম না, ওইখানকার সাহিত্য পাতার বিদেশী দশা হইবে। রাইসু ভাই আছেন। সঞ্জীবদা, অমিতদা আছেন।
বিদেশী সাহিত্য পাতা কেমনে হয়? আমি ভাবছিলাম, বড় জোর মৌচাকে ঢিল হবে। শফিক ভাই এই সাহিত্য পত্রিকাটা সুন্দর করে বের করতেন। আইডিয়াটা চমৎকার ছিল। কিন্তু জয়েন কইরাই শুনলাম বিদেশী সাহিত্য নির্ভর একটা কিছু হবে। রাইসু ভাই কিছু বুঝানোর চেষ্টা করে ততোদিনে ক্ষান্ত দিছেন।
শফিক ভাইয়ের সঙ্গে সাহিত্য বিষয়ক প্রথম আলাপের কথা তো কইছিই। শফিক ভাইয়ের পরামর্শ অনুসারে আমরা ম্যাগাজিনের প্রথম দ্বিতীয় সংখ্যা করলাম। শফিক ভাই দেখি তেমন খুশি না। চিন্তামূলক, তাত্ত্বিক লেখা বাদ দিতে কয়। দেয়া হইলো।
তারপরও উনি কয় কঠিন হইতেছে। এই লেখা পইড়া আমার ড্রাইভার তো বুঝবে না। আমরা আরও সহজ করলাম। কিন্তু তারপরও উনি আমাদের দিকে চির নাখোশের ভঙ্গিতে তাকায়া থাকেন। ফাঁকে তারে জিজ্ঞাসা করা হইলো, আমরা কিছু কিছু দেশী সাহিত্য ছাপবো কি না।
উনি সোজা না কইরা দিলেন। বললেন, আমি না বলা পর্যন্ত বিদেশী জিনিশই ছাপো। এদেশে কেউ লিখতে জানে না। কীভাবে লিখবে সেটা আমার কাছে শিখতে হবে। বুঝেছো?
সো, আমরা ওইভাবেই ছাপি।
দেশী সাহিত্য বলতে, পাঠকের পাঠানো গল্প। আর রিপৃণ্ট নামে একটা বিভাগ। আর আমি লিখতাম সাময়িকী রিভিউ। বাকী সব শফিক ভাইয়ের মতো। তারপরও উনি কন।
না এইভাবে না। পরে একদিন আমরা ভাবলাম, কীভাবে করবো এইটা ওনারে জিগাই। গিয়া জিগাইলাম, শফিক ভাই কী কী ম্যাটার দেব সেইটা আপনিই বলেন। উনি কন, গার্ডিয়ান দেখো, নিউ ইয়র্ক টাইমস দেখো। বলাবাহুল্য আমরা সেইগুলাই দেখতেছিলাম, ছাপতেছিলাম।
ফলে, সিদ্ধান্তে আসা গেল, উনি তৃপ্ত হবেন না। আমাদের কাজ এইভাবেই চালাইতে হবে।
বাংলা ভাষায় ওনার কাছে দুইজন লেখকের নাম খুব শুনতাম। বনফুল আর সৈয়দ মুজতবা আলী। এনাদের লেখা রিপৃন্ট করতে বলতেন।
করা হইলো। রাইসু ভাই চলে যাওয়ার পর আবার আমারে বললেন বনফুলের লেখা রিপৃন্ট করতে। আমি বেশি বেশি করে বনফুল রিপৃন্ট করে ওনাকে তৃপ্ত করতে পারলাম। বনফুল, আমার প্রিয় লেখক, ক্ষমা করবেন। এইভাবে অনেক রিপৃন্ট করে আপনার হাত থেকে আমার মুক্তি মিললো।
রাইসু ভাই যাওয়ার পর আমি একা। ম্যাগাজিন চালাই। ৩২ পৃষ্টা থেকে ১৬তে নেমে আসলো। শফিক ভাইয়ের মনও পরিবর্তন হইলো কিছু। ১৬ থেকে ব্রড শিটে দুই পৃষ্ঠায় আইলো।
শফিক ভাইয়ের মন আরও নরম হইলো। আমি ততোদিনে বিদেশী সাহিত্যে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। নেট থেকে ম্যাটার নামাই অনুবাদ করি, ছাপি। ঝুট ঝামেলা নাই। হঠাৎ একিদিন শফিক ভাই কইলেন, এবার কিছু দেশী লেখা ছাপো।
আমি অনেক আগে শোনা শফিক ভাইয়ের কথাটা ফেরত দিলাম তাকে, বললাম শফিক ভাই এদেশের কারো লেখা হয়? উনি আমার উত্তরে একটু চমকে গিয়েছিলেন মনে পড়ে। আমি তীরে এসে আর তরী ডুবাই নাই। ওইভাবেই বাকীটা সময় পার করেছিলাম। কিন্তু দেশী সাহিত্য বিষয়ে উনি কী করতে চান এই পরখ করার বাসনা হইলো আমার মনে। আমি বিভিন্ন লেখকের সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য একটা লিস্ট করে তার কাছে নিয়া গেলাম।
তিনি দেখলেন। কিছু বললেন না। পরে একদিন এসে বললেন, আপাতত আইডিয়াটা ড্রপ করো।
তবে হ্যাঁ। আমি এবং আমরা কিছু দেশী সাহিত্য ছেপেছিলাম।
বলাবাহুল্য বিশেষ ক্লেশ শিকার করে।
বানান ও সাহিত্য ছাইড়া এখন আসি ম্যাগাজিন প্রসঙ্গে।
যায়যায়দিন দৈনিক মাত করে দিল ম্যাগাজিন দিয়া। সাত দিন সাতটা ম্যগাজিন। গ্রেট।
এই দেশে কোনো সম্পাদককে আপনি যদি বলেন, একটা হাই বাজেটের পত্রিকা করেন। উনি বিভিন্ন পত্রিকা থেকে সাংবাদিক আনবেন। বিভিন্ন বিভাগ, রঙিন পাতা-পুতা করে ভরায়া দিবেন। সঙ্গে হয়তো তিনচারটা ম্যগাজিনেরও ব্যবস্থা করবেন। সঙ্গে ২৪ পৃষ্টার দৈনিক।
শফিক ভাই, এই জায়গায় খেল দেখালেন। সাতটি ম্যাগাজিন করে।
এরপর কিছু দিন গেলে আপনি এখন সম্পাদককে বলেন, ভাই লাভ দেখান। মানে অন্তত ব্রেক ইভেনে আইনা দেন। সম্পাদক চোখ বন্ধ করে একের পর এক ম্যাগাজিন পাতা বন্ধ কইরা দেবেন।
পাতার দায়িত্বে থাকা লোকদের বরখাস্ত করবেন। সহজ হিসাব। শফিক ভাই এইখানে মাত কইরা দিলেন। তিনি একেবারে ১০৪ জনরে বরখাস্ত কইরা তারপর ম্যাগাজিন বন্ধ করলেন। পাতা কমাইলেন।
আমার প্রশ্ন হইলো, ভাই চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট তো আপনে আমি না। ২৩ বছর ধইরা সম্পাদনা তো আপনে করতেছেন আমি না। তো যে জিনিশ কইরা লাভ হইবো না সেইটা আপনি করতে যান কোন হিসাবে। আর সেই রেলাভের জন্য সাংবাদিকদের ভিক্টিমাইজই বা করেন কোন হিসাবে?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।