মুগ্ধ প্রেমিক তাই ভালোবাসা করে না!
অযথাই..
একটু শুনবেন! এই কথা বলার চাইতে আমরা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি এক্সকিউজ মি বলতে। এটা শুদ্ধ করে বলতে না পারলেও আমরা একসোজ মি বলেই গ্যাজাই অযথাই-। দয়া করে অথবা অনুগ্রহপূর্বক এই বাংলা শব্দগুলো নির্দোষ হলেও আমরা এগুলোকে কথায় কথায় বনবাসে পাঠাই‘প্লিজ’এর দোহাই দিয়ে। ‘বাবা’-‘মা’ কিংবা‘আব্বু’, আম্মু’এই ডাকগুলোর আবেদন যে কোন বাঙালি পিতা-মাতার কাছেই চিরন্তন। কিন্তু এই চিরন্তন আবেদনকেও আমরা নিরন্তর অবহেলা করে অযথাই আমদানি করছি‘ড্যাড’,‘মাম’,‘পাপা’-এ জাতীয় শব্দ।
প্রেমিক-প্রেমিকাকে একসাথে দেখলেই আমরা এদের‘কাপল’বলি। অথচ এদের কত সুন্দর নাম আছে-কপোত-কপোতী, জোড়া শালিক,প্রেমিক জুটি ইত্যাদি। কিন্তু যত সুশ্রব্য বাংলাই থাকুক না কেন আমরা ইংরেজিই বলি-অযথাই! ‘যদি কিছু মনে না করেন’ জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানের নাম বটে। তবু এই কথাটাও অবহেলিত। আমাদের কাছে জামাই আদর পায় ‘ডোন্ট মাইন্ড-জাতীয় কথকথা-অযথাই।
বিরক্ত করবেন না কথার স্থলে আমরা অযথাই ইংরেজি বলি। সাইনবোর্ড ঝুলাই ‘ডোন্ট ডিস্টাব’। ‘নো এন্ট্রি’ নামে হিন্দি সিনেমা হতে পারে। কিন্তু তাই বলে আমাদের দেশে যত্রতত্র প্রবেশ নিষেধের স্থলে ‘নো এন্ট্রি’ নামে হিন্দি শব্দটার ব্যবহার অযথা নয়কি? প্রিয়তমা, প্রেমময়ী , প্রেয়সী এরকম প্রেমময় শব্দ থাকা সত্ত্বে আমরা ডালিং ডালিং বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলি। এরও কি আসলে কোন দককার আছে।
ছোট বেলায় ‘অ: পৃ: দ্র:’ লেখার আগে লিখতে শিখেছি চ.ঞ.ঙ আবার বিশেষ দ্রষ্টব্য, এর মানে বুঝার আগেই ঘ.ই. লিখতাম। তখন না জেনে লিখতাম। এখনস জেনেও ইংরেজি লিখছি, অযথাই। মেহমান, অতিথি কথাগুলোও বোধকরি সুন্দরই। কিন্তু এরপরও আমরা অযথাই এর পরিবর্তে ‘গেস্ট’ শব্দটি ইউজ করি।
কথায় কথায় ইংরেজি বলার সুবিধা- নিজের জ্ঞান জাহির করার সুযোগ বাড়ে। নিজেকে ইংরেজি জানা পাবলিক প্রমাণ করার জন্য অনেকে ‘নাথিং ইস্টিম ইন দ্যা ওয়ার্ল্ড’ জাতীয় ইংরেজিও বলে থাকে। কাজেই আপনার জ্ঞানের বহর করে নিজের জ্ঞান জাহির করুন। খালি কলসি বেশি বাজার কথা ক’জন জানে? এইটা বিল গেটসের, মানে সফটওয়্যার আর কম্পিউটারের যুগ। এই যুর্গের যাবতীয় প্যাঁচালই ইংরেজিতে।
সেজন্য ইংরেজি জানা পাবলিকরা সহজেই এই লাইনে ইন করতে পারেন ইন্টারনেট ই-মেইল চ্যাট করার েেত্রও ইংরেজি জানারাই অগ্রগণ্য। নেট যুগের আলগা পিরিতেই ইংরেজি এসেনশিয়াল বটে। দেশে কোন ফরেনারের সাথে দেখা হলে তার সাথে টক করার জন্য ইংরেজি জানা দরকার। আবার ইংরেজি জানা ব্যক্তিরা বিদেশ গিয়েই এর সুফল ভোগ করতে পারবে। যদিও অধিকাংশ েেত্রই বিদেশীরা অন্যদের সামনে, আমরা ভাঙা ভাঙ্গা ইংরেজি বলতে অভ্যস্ত তবু সেটাইবা ক’জন পারে।
আফটার অল দিস ইজ এ্যা ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজ। চাকরির বাজারে ইংরেজি জানারা সবসময়ই ফাস্ট চয়েস, অবশ্য এেেত্র ভাল ইংরেজি জানতে হয়। জোড়াতালির ইংরেজি দিয়ে ওসব চলে না। ওসবের জন্য ভেতরে মালমসলা থাকা লাগে। আর ইংরেজির মাল সমসাওয়ালা পার্সনরা বিয়ের বাজারেও পাকা ক্যান্ডিডেট! হালের সুন্দরীদের অনেকেই কমবেশি ইংরেজি বলায় অভ্যস্ত।
কাজেই আপনার ইংরেজি বলার আরেকটা সুবিধা হল ওই ধরনের সুন্দরীদের সাথে আপনি ইংরেজি বলায় টেক্কা দিতে পারবেন। একজনের সাথে আরেকজনের জ্ঞান না মিললে কি আর সেয়ানে সেয়ানে ফাইট জমে?
অযথা- ন্যাঁকামো
এ রোগটা মেয়েদের বেশি। অযথাই উল্টাপাল্টা ভাবে নিয়ে আল্ট্রামর্ডান সাজার যে চেষ্টা তাকেই ন্যাঁকামো বলে। কেউ শুদ্ধ বলতে গিয়ে ‘র’-এর স্থলে গড়নজাত ধ্বনি ‘ঢ’ উচ্চারণ করে ফেলেন। যেমন- আবাঢ় কোন তাঢ় সাথে আমাঢ় দেখা হবে-।
’ এই জাতীয় ন্যাঁকামো বাংলায় উচ্চরণ করতে দেখা যায়।
কোন কোন মেয়ে ‘ছি. ছি.’ অথবা না বাবা না,’ ‘ও বাবা’ এ জাতীয় শব্দগুলো যত্রতত্র ব্যবহার করে ন্যাঁকা সাজার চেষ্টা করে। আবার ছেলেদের মধ্যে ‘উফ শিট’, ‘শালা!’ ওহ! নো’ এ জাতীয় শব্দগুলোর অযথাই প্রয়োগ ল্য করা যায়। আবার ছেলে ও মেয়ে উভয়েই যুগের হাওয়ার নামে নতুন ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার করে। যেমন-‘জটিল মুড’, ‘আজাইরা প্যাঁচাল’, ‘এক্সট্রা খাতির’ ‘জোশ ইত্যাদি ইত্যাদি।
ল্যাঙ্গুয়েজনির্ভর ন্যাঁকামো ছাড়াও ছেলেমেয়েরা অঙ্গভঙ্গি অথবা ভাবের ন্যাঁকামিও করে থাকে। যার প্রায় সবাই অযথা।
“অযথা ইংরেজি বলেন কারা”
যারা নিজেদেরকে আল্ট্রামর্ডান যুগের আল্ট্রামর্ডান পাবলিক সাজাতে চান। এ টাইপের লোকেরা মনে করেন ইংরেজি ছাড়া তাদের চলেই না। সেজন্য নিজেকে আল্ট্রামর্ডান বানাতে তারা দরকারি-অদরকারী সবধরনের ইংরেজি বন্যা বইরে দেন।
প্রয়োজনে ইংরেজি বাংলার অদ্ভুত মিশ্রণে হ-য-ব-র-ল অবস্থায় সৃষ্টি করে দেন। কিন্তু তবু ইংরেজি ছাড়েন না। বাংলা জানানো গেলেও মনের কথা জানানোর েেত্র অনেক লোক ইংরেজি ইউজ করে। যেমন- ওয়ান ফোর থ্রি। কি বুঝলেন না? জটিল ইংরেজি মানে হল ‘আই লাভ ইউ’।
অনেকে যাকে ‘ইলু’ বলে থাকেন। মনের কথা জানাতে এ রকম ইংরেজি ছাড়াও পরানের ময়না টিয়াকে সবধরন করতে কেউ কেউ ব্যবহার করেন ডার্লিং সুইটহার্ট, ড্রিমগার্ল জাতীয় শব্দ।
অনেকে কেবল ভাব মারার জন্যই ইংরেজি বলেন। আশপাশে দু’একজন অশিতি অথবা অর্ধশিতি থাকলে তারা ইংরেজি বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলে ফেলেন। শুদ্ধি-অশুদ্ধির দিকে না তাকিয়ে তখন তারা কেবল বলে যান।
তাদের ভুল ধরার মানুষ কই। কেউ নাই বলেই ভাব মেরে ইংরেজি বলে নিজেকে মহাপন্ডিত সাজানোর সুযোগটা তারা গ্রহন করেন।
এ যুগের ছেলে বা মেয়ে উভয়েই জটিল প্রকৃতির। তাই এ যুগের ছেলে বা মেয়ের এক্সট্রা কিউসিটি গ্রো করাতে গিয়ে অনেকে ইংরেজি বলার চেষ্টা করেন। যদিও তাদের ইংরেজিটা ব্রিটিশ-আমেরিকান-ইন্ডিয়ান কোন স্টাইলেই পড়ে না, তবুও তারা নিজস্ব স্টাইলে ইংরেজি বলতে থাকেন।
ডিজুস যুগের পোলাপান এক্সট্রা ক্রেডিট নিতে চাইবেই। এ যুগের কিছু কিছু ভিুককেও ইংরেজি বলতে দেখা যায়। তারা মূলত ইংরেজি বলার মাধ্যমে নিজেদের শিতি জাহির করে জনগানের কাছ থেকে এক্সট্রা খাতির পেতে চায়। মানুষজনও তাকে শিতি ভেবে বেশি বেশি দান করে। আসল হাঁড়ির খবর জানে ক’জন?
“আরও কিছু আল্ট্রামর্ডান”
বাপদাদাদের বাংলা গানকে নির্বাসন দিয়ে বিদেশী গানের সাগরে ডুব মারার চেষ্টা।
লুঙ্গি-শাড়ি-শার্ট-প্যান্ট ছাপিয়ে জটিল জটিল সব পোশাকের সমাহার। বিশেষ করে মেয়েদের েেত্র যা অনেক সময় বিশেষ পর্যায়ে চলে যায়।
বাংলা খাবারের বিশ্বব্যাপী সুনাম থাকলেও এ প্রজন্মের আস্থার নাম ফাস্টফুড। তই হটডগ আর হটপেটিস-পিজাতেই কাটে তাদের সময়। ডাল-ভাতের সাইড নাই।
ইংরেজি না জেনেও বাংলা-ইংলিশ মিলিয়ে মিলিয়ে অনেকে বাংলিশ উচ্চারণে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে।
আকাশ-সংস্কৃতির মাইনকাচিপায় ঘুম ভাঙ্গে আশিক বানায়া আপনে শোনে। আর দিন কাটে এইচবিও কিংবা এএক্সএনএ ফাটাফাটি মুভি দেখে। এসব দেখে দেশীয় সংস্কৃতির অবস্থা কি হয় তা কেউ ভাবে না।
নকলের সংস্কৃতি চলছে সর্বত্র।
গান-বাজনা-সংস্কৃতি-পোশাক-আশাক, আচার-আচরণে সকলে স্বকীয়তা থাকছে। মাঝে মাঝে সব হাস্যকর ঠেকে। এর নাম আল্ট্রামর্ডান?
“কতিপয় আল্ট্রামর্ডান ডায়লগ”
উই আর লুকিং ফর শক্রজ
এটা আমাদের জনৈক মহান ব্যক্তিত্বের উক্তি হলেও এটা এখন রীতিমতো প্রবাদে পরিণত হয়েছে। আফটার অল তিনি একজন মিনিষ্টার। তাছাড়া বাঙালি মাত্রই এরকম পাঁচমেশালি ইংরেজি বলায় মহাঅভ্যস্ত।
তাই এটিকেও একটি কমন স্টাইল বলা যায়। ‘ম্যান ইজ মরট্যাল- মানুষ মাত্রই ভুল!’ ‘টু আর ইজ হিউম্যান’ এটা ক’জন জানে আর ‘ম্যান ইজ মরট্যাল’ ক’জন বলে জানি না। তবে উভয়েেত্রই অনেকে ভাবেন যে দুটোর অর্থই মানুষ মাত্রই ভুল। আসলে কি তাই। মরণশীল মানুষকেও আমরা মানুষের ভুল ভাবি।
এটাও একটা ভুল বটে!
“মাইন্ড করলে সাইন করবেন না”
কথায় কথায় আমরা যে ইংরেজিগুলো ফুটানোর চেষ্টা করি, এর মধ্যে এটি অন্যতম। বাংলা-ইংরেজির মিশ্রণ এখানেও জগাখিচুড়ি অবস্থা। খিচুড়ি রান্না করা জগবাবু শেষ পর্যন্ত বাংলা-ইংরেজি মিক্সড করার ধান্ধায় লিপ্ত হলেন কেন, সেটা অবশ্য ভাববার বিষয়।
‘হাউ ফানি-হাউ ফানি’
হাস্যকর বা মজাদার কোন কিছু দেখলেই আমরা আমাদের ইংরেজি চর্চ শুরু করি। চিৎকার করে বলতে থাকি- হাউ ফানি-হউ ফানি।
কোন কোন সময় এই হাউ ফানি টাই হাঁপানির পর্যায়ে পৌছে যায়। মানে অনেকে ফাউ ফানি না বলে হাঁপানিও বলে ফেলে। ইংরেজির কি চর্চা। হাউ ফানি!
‘আইম সিওর’
নিশ্চয়তা বুঝাতে সিওরের ব্যবহারও আজকাল কিংবদন্তীর পর্যায়ে চলে গেছে। এমনকি রিকশাওয়ালাকে পর্যন্ত বলতে শোনা যায়- আইম শূয়র যে এখানকার ভাড়া বিশ টাকা।
ইংরেজির নামে সিওর আর শূয়রের চর্চাটাও বেশ চালাচ্ছি। “ওখানে যেও না যেও না ওখানে ‘হাপ’ আছে” ছিড়তে জানে না লোম, কাটতে আনে ভেড়া। বলতে জানে না এরপরও আল্ট্রামর্ডান হওয়ার জন্য শুদ্ধ বলার চেষ্টা করে। আলোচিত ডায়লগে ‘সাপ’-এর স্থলে ‘হাস’ বলাটাই প্রমাণ করে ঘটনা কি। আবার কেউ কেউ বলে ওখানে যেও না যেও না ওখানে স্নেইক আছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।