"...আমি তোমাদেরই লোক, আর কিছু নয়, এই হোক শেষ পরিচয়। । " [রবি ঠাকুর] - এই যে ভাই ।
- জী ।
- ভাই কয়টা বাজে ?
- জী আমাকে বলছেন ?
- জী ভাই ।
- আপনি শিওর ?
বলে চারপাশে একটু তাকালাম । নাহ আর কেউ নেই, তারমানে আমাকেই ডাকছে ।
- জী ভাই শিওর । কয়টা বাজে ?
- আপনি কি কিছু জানতে চাচ্ছেন ?
- জী, আমি জানতে চাচ্ছিলাম যে, কয়টা বাজে এখন ?
কিছুক্ষণ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে রইলাম । অনুমান করার চেষ্টা করলাম কয়টা বাজে ।
শেষে না পেরে হাল ছেড়ে দিলাম ।
- সরি ভাই, বলতে পারছি না।
- আপনার হাতে তো ঘড়ি আছে । নাকি আপনি সময় চিনেন না ?
- না মানে, আমার এই ঘড়িটা আমাকে গত কয়েক মাস ধরে সময় বলতেসে না ।
- মানে ? কেন ?
- আমার উপর রাগ করছে ।
- কেন ?
- আমি ওকে ঠিক করাচ্ছি নাতো তাই ।
- মানে ? আপনি নষ্ট ঘড়ি হাতে দিয়ে ঘুরতেছেন কেন ? ফাইজলামির আর জায়গা পান না ? মানুষরে হয়রানি করেন ?
- ভাই ঘড়িটার সাথে অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে তো তাই ।
হাসিমুখটাকে একটু সিরিয়াস করে বললাম,
- ভাই, অনেক খুঁজছি, কিন্তু কোন জায়গা পাইলাম না এমন । আপনার সন্ধানে এমন কোন জায়গা আছে কি, যেখানে আমি ফাইজলামি করলে কেউ আমাকে বলবে না, ফাইজলামির আর জায়গা পান না ?
- দেখেন...
- কি দেখব ভাই ? আপনি কি কিছু দেখাতে চাচ্ছেন আমাকে ?
- দেখেন আমার সাথে রসিকতা করবেন না । আপনাদের মত মানুষদের কিভাবে সোজা করতে হয় জানা আছে আমার ।
- ভাই আপনি তো আমার মনে ভয় ঢুকিয়ে দিলেন ।
ওনার ভাব দেখে মনে হচ্ছে তিনি অনেক বড় কিছু একটা করে ফেলেছেন । বললাম,
- ভাই একটু ভালো করে দেখেন তো...
- কি ?
- ভাই সত্যিটা বলবেন প্লিজ...
চেহারায় একটা কান্না কান্না ভাব এনে বললাম,
- আমি দেখতে কুঁজো ? বা আমাকে কি ধনুষ্টংকার রোগীর মত দেখাচ্ছে ?
- মানে ?
- না মানে আমি শুনেছিলাম ধনুষ্টংকার রোগীরা ধনুকের মত বাঁকা হয়ে যায়, আর হয় কুঁজোরা । আপনি বললেন সোজা করবেন । তাই... ।
ভাই আমার কিন্তু সত্যি সত্যি ভয় করছে ।
পারলে আমি ওখানে তখনই কেঁদে দিই । উনি বললেন,
- দেখে, ভালো হয়ে যান । ভালো হইতে পয়সা লাগে না ।
- টাকা লাগে ?
- না, তাও লাগে না ।
- ও, লাগলেও কিছু করার ছিলো না । আমার কাছে টাকা বা পয়সা কোনোটাই নেই । এইদিক দিয়ে ব্যাপারটা একটু ভালো হল । আমার ভালো হওয়ার সম্ভাবনাটা বেশি রইল ।
আমার মুখের হাসিটা দেখে মনে হবে, আমি ক্যান্সার থেকে সেরে উঠে গেছি ।
- দেখেন, আপনি ধনুষ্টংকার রোগী হন বা কুঁজো হন, যেইটা ইচ্ছা হন, কিন্তু আমি আপনাদের মত মানুষ অনেক ভালভাবেই চিনি । সময় থাকতে ভাল হন, নাইলে আমি যদি আপনারে সোজা করার দায়িত্ব নিই, তাইলে কিন্তু আপনি বাপ বাপ করে দেশ ছাড়বেন, হয়ত দুনিয়াও ছাড়বেন ।
- আপনার অনেক মেহেরবানি, আপনি আমার দায়িত্ব নিতে চাচ্ছেন ।
আমার চোখে মুখে তার জন্য কৃতজ্ঞতা ঝরে ঝরে পড়ছে ।
- তা ভাই, সোজা করার প্রক্রিয়াটা কেমন ? মানে অনেক ভয়াবহ নাকি ?
- কেন ? যখন দেখবেন তখন বুঝবেন ।
- না মানে, মনে করেন যদি ভয়াবহতা বেশি হয় তাইলে আপনারে আর কষ্ট দিলাম না, স্বেচ্ছায় ভালো হয়ে গেলাম । আর কম হলে এখনকার মত রয়ে গেলাম, আরো অধিকতর ভয়াবহতা সম্পন্ন মানুষ সোজা করার প্রক্রিয়া জানা কাউকে না পাওয়া পর্যন্ত । তারপর তার সামনে তওবা করে, দুই কানে কানমলা খেয়ে সোজা হয়ে গেলাম ।
- দেখেন আপনি আমার অনেক টাইম নষ্ট করেছেন ।
- জী ঠিক বলেছেন ।
আপনি অনুমতি দিলে আরো কিছুটা সময় নষ্ট করতে পারি । আমার হাতে অঢেল সময় । আপনার সাথে খোশগল্প করতে আমার ভালো লাগছে ।
- আপনার মনে হচ্ছে আমি আপনার সাথে এতক্ষণ চাপা মারছি ?
- মোটেই না । আপনার মত একজন ভালো মানুষ কখনো চাপা মারতে পারে না ।
- আমি ভালো কে বলল আপনাকে ?
- যে মানুষ স্বেচ্ছায় অন্য কারো দায়িত্ব নিয়ে নেয় সে কি মহৎ মানুষের পর্যায়ে পড়ে না ?
- কোন ভুলে যে আপনার কাছে সময় জানতে চাইলাম ।
- আমিও ওইটাই বলতে চাচ্ছিলাম ।
আমার মুখে হাসি । উনি আর দাঁড়ালেন না । এমন ভাবে হাঁটতে লাগলেন, মানে দৌড়াতে লাগলেন যে, আমার কাছ থেকে দূরে যেতে পারলে বাঁচেন ।
##the end##
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।