সাহিত্যের সাইটhttp://www.samowiki.net। বইয়ের সাইট http://www.boierdokan.com
বড় পরিচালকদের মধ্যে ছোটবেলা থেকেই যার সিনেমা দেখার ভাগ্য হয়েছিল তার নাম সত্যজিৎ রায়। বিভিন্ন সীমান্ত শহরে থাকার সুবাদে আমাদের শাদাকালো টিভিতে ভারতীয় টিভি চ্যানেলগুলো ডিডি ওয়ান, ডিডি সেভেন দেখা যেতো। মনে পড়ে স্কুল পড়ার সময় ডিডি সেভেনে সত্যজিৎ রায় রেট্রোস্পেকটিভ হয়েছিল টিভিতে। সম্ভবত তার মৃত্যুর পর এটা হয়েছিল।
একে একে তার সব সিনেমা দেখানো হয়েছি। দেখানো হয়েছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ওপর তৈরি করা তার রবীন্দ্রনাথ ডকুমেন্টারি এবং তার সত্যজিতের ওপর করা শ্যাম বেনেগালের ডকুমেন্টারিটিও। সেবার অনেক সিনেমা দেখানো হলেও কীভাবে যেন পথের পাঁচালী মিস করে গিয়েছিলাম। সেই যে পথের পাঁচালী না দেখা শুরু হলো, এই না দেখা চললো গতকাল পর্যন্ত। স্কুল জীবনের পর, ঢাকা এসে ইনডিয়ান কালচারাল সেন্টারে দেখলাম আবার তার রেট্রো।
ধানমন্ডির ২ নম্বর রোডের কালচারাল সেন্টারে। কত সাল? ১৯৯৯ বা ২০০০ হবে। সেবারও মিস করলাম।
সত্যজিতের প্রতি আমার আকৈশোর মুগ্ধতার অবসান ঘটলো এই দ্বিতীয় দর্শনে। টানা প্রায় ১৫টি মুভি দেখার পর মন অবসন্নতায় ভরে গেল।
সত্যজিতের ব্যকরণ মানা, রেনেসাঁসের চৈতন্য আমাকে পীড়িত করতে থাকলো। পাটভাঙা মুভির নন্দনতত্ত্ব থেকে মনটা একটা সরে গেল।
তারপর প্রায় পাঁচ ছয় বছর আর সত্যজিৎ দেখিনি। অন্য অনেকের বহু দেশের, বহু ভাষার সিনেমা দেখেছি। বড় পরিচালকদের নাম জেনে মুভি দেখার চেষ্টা করেছি।
মুভি দেখে নাম জানার চেষ্টা করেছি। অবশেষে, হঠাৎ করে টিভিতেই একদিন অপুর সংসার দেখলাম। একদিন চিড়িয়াখানার ডিভিডি এনে দেখলাম। একদিন দেবী, চারুলতা, শাখাপ্রশাখা, আগন্তুক এইভাবে এক এক করে দেখতে থাকলাম। জয়বাবা ফেলুনাথ, সোনার কেল্লা দেখলাম।
সত্যজিৎ আসলে একজন নন। সত্যজিৎ বহু। একের ভেতরে অনেক। এই ব্যাপারটা ধীরে ধীরে টের পেতে থাকলাম। তার নিজস্ব ভাষা সেই ভাষায় প্রতিষ্ঠিত কাঠামোর সমালোচনা, সেইভাষায় রাগ ও ক্ষোভের বহিপ্রকাশ।
সেই ভাষার ডিটেইল নতুন করে দেখতে থাকলাম। ঘরে বাইরে যতবার দেখি, কিংবা অরণ্যের দিনরাত্রি মনে হয় একেবারে নতুন করে পড়তে পারা যাচ্ছে। কিংবা তার সবচেয়ে বিপ্লবী মুভি হিরক রাজার দেশে।
না সত্যজিতের সিনেমা একভাবে এক দর্শনে পড়ে ফেলার কোনো উপায় নাই। বহুতলীয় একেকটি মুভিকে বহুভাবেই দেখতে হবে।
এই বোধ আমাকে এক ধরনের অপরাধ বোধের মধ্যে ফেলে দিল। সেই অপছন্দের অপরাধবোধ।
জীবনের একেকটা বাঁকে একেক গতিপথে সত্যজিতের মুভিকে একেক ভাবে পাঠ করা সম্ভব। একবার দেখে দেখছি বললে শেষ হয়ে যায় না।
পথের পাঁচালী আমি গতকাল পর্যন্ত দেখিনি।
কেন? ঠিক যে কারণে পথের পাঁচালী পড়িনি। ঠিক যে কারণে গড অব স্মল থিংস হাতে তুলিনি। সবাই যখন অকুণ্ঠ প্রশংসা করে তখনই মনে হয় কোথাও নিশ্চয়ই একটা ফাঁক রয়ে গেছে। কোথাও একটা ঝামেলা আছে। অজনপ্রিয় বিষয় নিয়ে জনরুচিকে খুব বিপজ্জনক মনে হয়।
তাই পথের পাঁচালী দেখলেই চোখ সরিয়ে নিয়েছি।
কিন্তু এবার আর চোখ সরালাম না।
খুব মুগ্ধ হয়েছি? অবশ্যই। এক মহাকাব্যিক বেদনা বোধ টের পেলাম। কলকাতায় রায় পরিবারে বড় হওয়া একজনের পক্ষে এত বিস্তৃতভাবে অন্য আরেক শৈশবের এতো ডিটেইল ছবি তোলা কীভাবে সম্ভব হলো? সত্যজিৎ তাহলে কি নিজের জীবনে অন্যের জীবনও যাপন করতেন?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।