কিচ কিচ কুচ কুচ কাচ কাচ কোচ কোচ!!! কক্সবাজার সী বিচে সস্ত্রীক দাঁড়িয়ে আছি আমি। সাগরের ঢেউ একেকবার এসে আমাদের গোড়ালি পর্যন্ত ভিজিয়ে দিচ্ছে। পানির ঝাঁপটায় আমার স্ত্রী আনন্দে চিৎকার করে সরে সরে আসছে।
আশেপাশে অনেক মানুষ। সবাই নিজেদের মত আনন্দ করছে।
কারো দিকে কারো মনোযোগ নেই।
স্ত্রীকে জোয়ার ভাঁটার মেকানিজম বোঝানো শুরু করব করব, এমন সময় পাশ থেকে টিশার্ট পরা এক তরুণী এসে বলল, “আপনি সালেহ তিয়াস না?”
আমি ভড়কে গেলাম। এ আবার কোন আপদ রে বাবা। বললাম, “না”।
মেয়েটা বিন্দুমাত্র দমে না গিয়ে বলল, “আপনি সালেহ তিয়াস।
আপনি ফেসবুকে অনুগল্প লেখেন। আপনি সবসময় মুখের বাম পাশের ছবি দেন”।
এ কি আপদ রে ভাই। আমার বউও মেয়েটার কথা শুনে কৌতূহলী হয়ে উঠেছে। তার মনে সন্দেহ ঘনীভূত হচ্ছে।
বউকে ম্যানেজ করার জন্য বললাম, “দেখ তো এসব কি উল্টাপাল্টা বলছে মেয়েটা?”
মেয়েটা দিগুন উৎসাহে বলল, আপনি সম্প্রতি প্রিয়তি ও শাহেদ এই দুই চরিত্র নিয়ে ফেসবুকে একটা অনুগল্প পোস্ট করেছিলেন। সেটা পড়ে মুগ্ধ হয়ে আমি আপনাকে একটা মেসেজ দিয়েছিলাম। আপনি অনেক সুন্দর একটা রিপ্লাই দিয়েছিলেন। আমার ফেসবুক আইডি নীল নীলান্তিকা”।
বউ এবার কুটিল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, “তুমি আজকাল মেয়েদের সাথেও চ্যাট কর? কই জানতাম না তো!”
মেয়েটা আমার বউয়ের দিকে তাকিয়ে বলল, “না না আপু অন্য কিছু মনে করবেন না, ভাইয়া খুব ভালো।
উনি আপনাকে খুব ভালোবাসেন, প্রায়ই উনার ভালবাসার স্ট্যাটাসগুলো আপনাকে উৎসর্গ করেন”।
বউ এ কথায় একটু গলল মনে হয়। “কই, আগে বল নাই তো”।
আমি পড়লাম মহা ফ্যাসাদে। বেড়াতে এসে এরকম একটা উটকো মেয়ের পাল্লায় পড়ার কোন মানেই হয় না।
আমি মেয়েটাকে বললাম, “আমি এখন যাই”।
মেয়েটা বলে উঠল, “না না ভাইয়া যাবেন কেন? আমার অনেক ফ্রেন্ড আপনার ফ্যান। চলুন আমাদের সাথে একটা গ্রুপ ফটো তুলবেন”।
এবার আমার আর ধৈর্য ধরে রাখা সম্ভব হল না। আমি শান্তস্বরে বললাম, “দেখুন, আপনার একটা ভুল হচ্ছে।
আমি সালেহ তিয়াস নই। আমার নাম আখতারুজ্জামান খান। আমি অনুগল্প লিখি না। আমি সামান্য একজন ব্যাংকার। আপনি অন্য কারো সাথে আমাকে গুলিয়ে ফেলছেন।
দয়া করে আমাকে আর ডিস্টার্ব করবেন না”।
মেয়েটা মরিয়া হয়ে বলল, “ভাইয়া এমন করছেন কেন? আমি জানি আপনিই সালেহ তিয়াস। আপনি একটু আগে একটা স্ট্যাটাস দিয়েছেন যে আপনি সাগরের পাড়ে বসে আছেন। আপনার স্ট্যাটাসে আপনি লিখেছেন যে কোন ফ্যানের সাথে দেখা হলে আপনি নিজের প্রাইভেসি মেইনটেইন করার জন্য আপনার পরিচয় গোপন করবেন”।
এবার আমার বউ বলল, “দেখুন আসলেই আপনার ভুল হচ্ছে।
আমাদের কারো মোবাইলে এখন নেট প্যাকেজ নেই। ও বিচে এসে কোন স্ট্যাটাস দেয় নি”।
মেয়েটা তবু নাছোড়বান্দা হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। ওকে তাড়ানোর জন্য আমি বললাম, “আচ্ছা ঠিক আছে দুপুর দুইটার সময় ঝাউবন রেস্তোরাঁয় তোমরা থেক, আমরা তোমাদের সাথে খেতে আসব”।
মেয়েটার চোখে আনন্দের ঝিলিক খেলে গেল।
সে অনেকটা নাচতে নাচতে চলে গেল।
হোটেলে ফিরলাম। সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে যাব, এমন সময় দেখি, মুখে মাস্ক পরা এক লোক তড়িঘড়ি করে উপরে উঠছে।
মাস্কের ডান পাশ দিয়ে লোকটার মুখের এক ক্ষতের অংশবিশেষ ঢাকা আছে। তবু দেখে বোঝা যাচ্ছে ক্ষতটা বেশ বড়, লোকটা হয়তো সেজন্যেই তার মুখ ঢেকে আছে।
অবাক ব্যাপার হচ্ছে, লোকটার চোখ, ফেস কাটিং এমনকি যতটুকু দেখা যাচ্ছে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ির সাইজ – সব অনেকটাই আমার মত। লোকটা তড়িঘড়ি করে উপরে উঠছে। তার পিছন পিছন উঠছে একজন মোটা মহিলা। লোকটার বউ মনে হয়।
আমি কি মনে করে মোবাইলে নেট প্যাকেজ চালু করে তখনই ফেসবুকে সালেহ তিয়াস নামে সার্চ দিলাম।
একটা আইডির লিঙ্ক এল। ছবিগুলো ওপেন করা। দুই মিনিট আগে দেয়া স্ট্যাটাস – “হোটেলে ফিরলাম”।
ছবিগুলো দেখে আর স্ট্যাটাস পড়ে দুইয়ে দুইয়ে চার মিলিয়ে নিতে একদম কষ্ট হল না আমার। ঐ মাস্ক পরা মানুষটিই সালেহ তিয়াস।
মেয়েটার ভাষায় একজন অনুগল্পকার। যার লেখনী বিদ্ধ করেছে ঐ মেয়ে এবং হয়তো ওর মত আরও কজন নারীপুরুষের হৃদয়।
রিসেপশনিস্টকে একটু তেলাতেলি করতেই সালেহ তিয়াসের ভাড়া নেয়া রুমটা বলে দিল সে। আমি বউকে রুমে পাঠিয়ে সেই তলায় দৌড়ে গেলাম। গিয়ে দেখি মানুষটা মাস্ক খুলে ফেলেছে, রুমে কেবল ঢুকতে যাচ্ছে সে, তার মুখের একপাশের গভীর ক্ষত বোঝা যাচ্ছে সহজেই।
আমি ডাকলাম, “এই যে, শুনুন!”
মানুষটি পিছনে ফিরল।
“আমাকে বলছেন?”
আমি দৌড়ে গিয়ে তার সাথে হাত মিলিয়ে বললাম, “হ্যাঁ। আপনি সালেহ তিয়াস না?”
মানুষটি আতঙ্কিত মুখে বলল, “আপনি জানলেন কিভাবে?”
আমি তাকে সব কথা খুলে বললাম। তিনি প্রথমে ভ্রূ কুঁচকে থাকলেও, একটু পরে তার মুখে ফুটে উঠল মৃদু হাসি।
হ্যাঁ, প্ল্যানটা পছন্দ হয়েছে তার।
অতঃপর দুপুরে খাবার সময়, আমি একঝাঁক তরুণ তরুণী পরিবেষ্টিত হয়ে ঝাউবন রেস্তোরাঁয় বসে আছি। বেশ কিছুক্ষণ আগে সালেহ তিয়াস স্ট্যাটাস দিয়েছেন – “আজ দুপুরের খাবার ঝাউবনে খাব”। একেকজন আমাকে একেকটা প্রশ্ন করছে, আমি হাসিমুখে উত্তর দিচ্ছি। একেকজন অটোগ্রাফ চাচ্ছে, আমি হাসিমুখে কিছুক্ষণ আগে শিখে আসা অটোগ্রাফ দিয়ে যাচ্ছি।
ঠিক সেই মুহূর্তে, সাগরের তীরে সালেহ তিয়াস তার স্ত্রীকে নিয়ে বসে আছেন।
প্রতিবারই কোথাও যাবার আগে তিনি ভাবেন যে ফ্যানদের সাথে দেখা করবেন, প্রতিবারই কোথাও গেলে স্ট্যাটাস দেখে ফ্যানরা সেখানে এসে তাকে খুঁজে বেড়ায়, প্রতিবারই তিনি শেষবেলায় নিজের চেহারার গভীর ক্ষতের কারণে সেই স্থানে থাকেন না, পালিয়ে যান। নিজের সাথে যুদ্ধে প্রতিবার হেরে যান তিনি। এবার আর তা করতে হবে। এবার সালেহ তিয়াস মুক্ত, স্বাধীন। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।