আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জার্মানীতে বসন্ত



এই দেশ টাতে এসেছি উইন্টার এর শুরুতে... আসার পর থেকে দেখছি,কেমন যেন ঝিম মেরে থাকে দেশ টা। গুমোট আকাশ...কখন বৃষ্টি নামে ঠিক নেই। সারাদিন সুর্যের কোন দেখা নেই। মাঝে মাঝে বাংলাদেশে যখন এমন আবহাওয়া হত,সেই সব কর্মবিমূখ অলস দিনগুলোর কথা মনে পড়ে। বাংলাদেশে এমন দিনে আমরা দরজা জানালা লাগিয়ে কাথা মুড়ি দিয়ে গল্প করতাম।

সাথে থাকত কাচা মরিচ পেয়াজ আর সরিষার তেল দিয়ে মাখানো মুড়ি। জানতাম,একটু পরেই আম্মুর ডাক পড়বে খিচুড়ি,শুটকি ভর্তা আর ডিম ভাজি খেতে। মন খারাপ হয়ে যায় যখন দেখি,এই দেশে এমন দিনে ও কাজে যাচ্ছে সবাই... মেঘলা আকাশ থেকে বরফ পড়ে চারিদিক সাদা হয়ে আছে,তবুও ছুটছে সবাই নিজের কাজে। হাসছে...চলছে...কাজ করছে... খুব মনে পড়ে ছোটবেলায় পড়া সেই কবিতাটা, নীল নবঘনে আষাঢ় গগনে তিল ঠাই আর নাহিরে... ওগো,আজ তোরা যাসনে ঘরের বাহিরে... কিন্ত আমার মনের এই আকুতির কি ই বা দাম এই সব দেশে। একটু পরে অন্য একটা স্মৃতি মনে পড়ে নিজের মনেই হেসে ফেলি,আর মন টা ভাল হয়ে যায়।

বাংলাদেশে থাকতে একবার ঘোর বরষার সময় পর পর অনেকগুলো নাইট ডিউটি পড়েছিল হাসপাতালে। গাইনী ওয়ার্ডে ছেলে রা বেশি কাজ করতে চায়না,তাই মেয়েদের উপরে বেশি চাপ থাকত। হোষ্টেল থেকে হাসপাতাল মাত্র ৫ মিনিটের পথ। কিন্ত এত পানি জমেছে রাস্তায় আর যেহেতু রাত তাই রিক্সা পাওয়া যেতনা। তখন বাথরুমের স্যান্ডেল আর সবচেয়ে পুরোনো জামা কাপড় পড়ে প্রায় কোমর পানি ডিঙ্গিয়ে হাসপাতালে যেতে হয়েছে কয়েক দিন।

ওয়ার্ডে পৌছে সব বদলে ফেলে তবেই ডিউটি করা। আর এক দিন ইমারজেন্সি ডিউটি করতে গিয়ে রাত প্রায় একটায় পার হতে হয়েছিল এই পানির সমুদ্র। যাই হোক,বলতে চেয়েছিলাম এই দেশের সামারের কথা...চলে গেছি উইন্টারে,আর সেখান থেকে পুরনো দিনের স্মৃতিতে। এখানে শীত যতই বাড়ছিল,একটা শুকনো খড়খড়ে দেশে এসেছি,এই ভাবনা টা আমার মনে গেথে যাচ্ছিল। কারন চারিদিকের সব গাছ,সব পাতা মলিন হতে হতে যেন খড়ির মতো হয়ে যাচ্ছিল।

কদিন হল ঠান্ডাটা একটু কমেছে। আমি অবাক হয়ে দেখছি,সব গাছ গুলোতে পাতা গজাতে শুরু করেছে... যতই দেখছি অবাক হয়ে যাচ্ছি,যে গাছ গুলো কালকেই ছিল দাঁড়িয়ে থাকা একটা মৃত লাঠির মত...পাতায় পাতায় এত দ্রুত সেগুলো প্রান ফিরে পেল কিভাবে? যে পথ টা দিয়ে আমি প্রতিদিন যাই আসি,সেই পথে চলতে গিয়ে থমকে দাড়াই। কি আশ্চর্য!!সব গাছ গুলো এমন সবুজ সতেজ আর প্রানময় হল কি করে? একটা দিনে,একটা ঘন্টায় যেন অনেক খানি বদলে যাচ্ছে ওরা। আর কি আশ্চর্য! যেদিকে তাকাই,প্রত্যেকটা গাছেই নতুন পাতার সাথে নতুন ফুলের কুড়ি। যেখান টাতে এতদিন শুকনো কাটার জঙ্গল দেখেছিলাম,হঠাত দেখি উকি দিচ্ছে হলুদ আর টকটকে লাল রঙের ফুল।

শুকনো মরা আপেল গাছে গাছজুড়ে ফুটে আছে সাদা আর পিঙ্ক মিলিয়ে অপরুপ ফুল। ঘাসে ফুটেছে ছোট্ট সাদা ফুল আর সবুজ ঘন পাতার বুকে হাজারো হলুদ ফুল। কোথাও সবুজের মাঝে যেন বেগুনীর চাদর বিছানো। বেলি ফুলের মত অফ হোয়াইট কালারের থোকা থোকা ফুলে ভরে আছে সেদিনের শুকনো কাছটি। আরো অবাক! অসংখ্য ভ্রমর গুনগুনিয়ে ঘুরছে ফুটে থাকা ফুলের ঝাড়টিতে।

বড়ো ছোট এমন কোন গাছ বাকি নেই যেখানে নতুন পাতা আর ফুলের এই সমারোহ নেই। পাহাড়ের উপরের গাছ গু্লোতে নতুন পাতার রঙ মন আর চোখে এমন শীতলতা আনবে আমি ভাবিনি... সত্যিই এই প্রকৃতির বর্ননা দেবার সাধ্য আমার নেই... কিন্ত প্রকৃতির এই রূপ বদলের ধাক্কায় আমার মন টা কেপে ওঠে,নিজেকে প্রশ্ন করি,এটা কি পুলক নাকি ভয়!!! এই মহা সাজ আর সাজের আয়োজনে আমার হৃদয়ের যে পুলক,কোন এক অজানা কারনে তাকে সহ্য করতে আমার কষ্ট হচ্ছে... আমার ছোট্ট মন বুঝতে পারে না,প্রকৃতির স্রষ্টা কেন,কার জন্য এত সওগাত ঢেলে দেন...কি বুঝাতে চান তিনি...আর আমরা কি বুঝি...। স্রষ্টা কিংবা প্রকৃতি কি এভাবে কিছুই বোঝাতে চায় না আমাদের?? না কি এসব কিছুই সৃষ্টি হয়েছে অকারনে...কোন রহস্য নেই এগুলোর... নেই কোন উদ্দেশ্য..। আমি জানিনা...... তবে এতটুকু বুঝি,এর জবাব দিতে পারবে প্রতিটি হৃদয়,যখন সে হৃদয় কথা বলবে নিজের সাথে...

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.