আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইউরোপে ২৮ দিন জার্মানীতে প্রথম দিনের শেষ পর্ব

প্রথম পর্ব: সূচনা........আগের পর্ব: জার্মানীতে প্রথম দিন ********************* অফিস যাত্রা: কতক্ষন ঘুমিয়েছিলাম আল্লাহই জানে। একসময় ঘুম থেকে যখন উঠলাম কিন্তু তখন বাইরে তাকিয়ে দেখি পুরাই রাত এবং ঘড়িতে বাজে দুপুর ১.৩০, জার্মানীর হিসাবে এটা ৮টা ৩০ হবে। আমি ইচ্ছা করেই আমার ঘড়ির টাইম কোথাও চেঞ্জ করিনি যাতে যেখানেই যাই বাংলাদেশের টাইম থাকে এবং টাইম নিয়ে গড়বড় না হয়। জার্মানীতে সকাল কখন হবে সেটা তো আর আমি জানি না, তাই ঘুটঘুটে অন্ধকার দেখেও মনে হল এটাই বোধহয় সকাল। আমাদের অফিস ৯টা থেকে সুতরাং উঠলাম, মুখ-হাত ধুয়ে বের হলাম অফিসে যাওয়ার জন্যে।

এই মুহুর্তটা খুব বেশী করে আমার সারাজীবন মনে থাকবে সারাজীবন, কারণ এই অন্ধকারে হাতে শুধু গুগল ম্যাপস এর একটা প্রিন্ট-আউট, বাংলাদেশের বাইরে প্রথম সকাল, যেই দেশে আছি সেখানকার ভাষার "ভ"-টাও জানি না। সুতরাং সফলভাবে অফিসে যেতে যেতে পারাটা বিশাল একটা ক্রেডিট হবে। পথ শুরু হল, একসময় মনে হল জার্মান কারো সাথে টাইমটা ক্রস চেক করা উচিত। রাস্তায় একটা মেয়েকে ক'টা বাজে জিজ্ঞেস করলাম, সে একটু বিরক্তি সহকারেই কব্জি দেখিয়ে বললো "নাই-ও"। আল্লাহই জানে এরমানে কি কিন্তু ইংরেজী আর জার্মান ভাষা হিসেবে যেহেতু ভাই-ভাই (জার্মান ভাষার সবচেয়ে কাছের প্রতিবেশী হল ইংরেজী, আমাদের যেমন আসামি ভাষা) তাই পরে বুঝেছিলাম এটার মানে হলো "No"।

আগের দিন আসার সময়কার রাস্তায় একটা টানেল ছিল, ওটার কথা মাথায় ছিল, একসময় ওটাতে পৌছে গেলাম। এরপরে বামে যেতে হবে, গেলামও সেই মত কিন্তু দেখি পথ শেষ। আবার ফেরত এসে পরের গলিতে গেলাম, ওটাও ডেড-এন্ড। ৩ নাম্বারটায় যেয়ে পেয়ে গেলাম অফিস। কিন্তু......কেউ নাই কেন? দাঁড়ায় আছি, আছি এবং একসময় দেখি একজন কুকুর নিয়ে জগিং করতে করতে যাচ্ছে।

তাকে ডাক দিয়ে ঘড়িতে কয়টা বাজে ইঙ্গিতে জানতে চাইলাম এবং তার উত্তর শুনে পুরোপুরি হ্যাং হয়ে গেলাম। তখন বাজে ভোর ৬টা, আমার মোবাইল দুবাইতে অন করেছিলাম তখন ওখানে আপডেটেড হয়ে গিয়েছিল কিন্তু জার্মানীতে হয়নি তাই টাইম পুরাই ভুল দেখাচ্ছিল। অসহায়ের মত ৩ ঘন্টা না দাঁড়িয়ে থেকে ভাবলাম বাসায় যাই। আমি পথঘাট কিছুই চিনি না, ছিনতাই হলে সবশেষ...তবুও ভাবলাম যাই, শুরুটাই এমন গন্ডগোল খেয়ে শুরু হল, সামনে যা হবার হবে...... দুপুর বেলা: আমার ফ্ল্যাটটা যেখানে ছিল সেই রাস্তাটার নাম "লা'ফেনবার্গস্ট্রাসে"। এই নাম খুঁজে খুঁজে আমি আবার কেমনে জানি ঠিকমত বাসায় পৌছে গেলাম।

বাসার চাবিটা একটু বিদঘুটে টাইপের ছিল তাই তালা খুলতে টাইম লাগলো ৫ মিনিট, এরপরে ঘুম এবং আবার ৮:৩০ এ উঠে অফিসে আসলাম। এবার রাস্তায় অনেক মানুষ তাই ম্যাপস দেখিয়ে সহজেই আসতে পেরেছিলাম। অফিসে সকালে সবার সাথে পরিচয় হয়েছিল আগের দিনেই, এদিন এসে পিসি ঠিকঠাক করলাম। ওদের চার্জার-ল্যান পোর্ট সব একসাথেই, ওটা বাংলাদেশে সাধারনত ব্যবহার করা হয়না। এরপরে বাসায় কথা বললাম, জানালাম ঠিক আছি।

ক্যামেরা বের করলাম ছবি তোলার জন্যে। আমার ডেস্কের পাশেই জানালা আর রাস্তা তাই সকাল বেলার মিঠে রোদ দারুন লাগছিলো। বাইরে তাপমাত্রা তখন ৪/৫ ডিগ্রী। এভাবেই একসময় দুপুর ১২টার দিকে রেনে (আমাদের বস) এসে কথা বললো কেমন চলছে এবং অফিসের আরেকজন "ইয়ারিভ"-কে বললো আমাদের লাঞ্চের জন্যে নিয়ে যেতে। দুপুর ১২টা বাজলেও তখন বাংলাদেশের টাইম অনুসারে বিকাল ৫টা তাই ভাবলাম যাওয়া যায় লাঞ্চে।

ইয়ারিভের সাথে বরিসও আমাদের সঙ্গী হলো কারণ এরা দুইজনই বাইরে লাঞ্চ করে এবং বাকিরা অফিসে লাঞ্চ নিয়ে আসে। লাঞ্চ: আমরা যখন বললাম রাইস জাতীয় কিছু খেলে ভালো হয় তখন তারা আমাদের সেইরকম একটা রেস্টুরেন্টে নিয়ে গেলো। রাইস এবং ম্যাশ-পটেটো খেলাম যদিও ভাতের স্বাদ মিটলো না। ঠিক ২৫দিন পরে আমরা ভাত খেয়েছিলাম দেশ ছাড়ার পর থেকে। খেয়েটেয়ে বিল আসলো ৭ ইউরো, অনুভূতি হলো ৭০০টাকার লাঞ্চ করলাম।

অবশ্য এইরকম অনুভূতি খুব তাড়াতাড়িই নাই হয়ে গিয়েছিলো যখন মার্কেট গুলোতে ঘুরেছিলাম। আপনি যখন বাইরে যাবেন তখন আপনিও সেভাবেই নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবেন। ৭ ইউরো আসলে অনেক, পরে জেনেছিলাম ওইদিন আমাদের জন্যেই আসলে জার্মান কলিগরা ইচ্ছা করেই আমাদের ওখানে নিয়ে গিয়েছিল যদিও রেস্টুরেন্টটা ভালো পশ টাইপের, সাধারনত ওরা ম্যাকডোনাল্ডস এ খায় কারণ ম্যাকের চেয়ে সস্তা এবং ভালো আর কিছুই নাই। না না, ডোনার কাবাব আছে যেটা ৪ ইউরোতে পাওয়া যায় এবং ২ বেলা খাওয়া সম্ভব। আমরা লাঞ্চে অর্ধেক খেতাম, বাকিটা এনে ফ্রিজে রাখতাম এবং রাতে খেতাম।

ওখানে ডিনার টাইম সন্ধ্যা ৭টা, সাড়ে ৭টা। প্রথমে বিশ্বাস হয়নি কিন্তু দেখলাম আসলেই তাই কারণ ওইসময়ই ক্ষিদা লাগে এবং খাওয়ার পরে ১২ ঘন্টার মত (রাত ৮~সকাল ৮টা) ঘুমাতে কোন সমস্যা হয়না। লাঞ্চের পরে ওদের সাথেই মার্কেটে ঘুরলাম কারণ অফিসের নিচের তলায় মার্কেট। জার্মানীতে কোন জায়গাতেই আমি গেটকিপার দেখিনি, সব অটো। দারুন জিনিস এটা, কারণ অটোমেটিক প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে কেউ সামনে আসলে দরজা অটো খুলে যাবে এটা ইমপ্লিমেন্ট করে ওরা গেটকিপার হিসেবে যে কাজ করতো তাকে অন্য কোন প্রডাক্টিভ কাজে লাগাতে পারছে।

শুধু গেট ওপেন করা নয়, সবজায়গাতেই এই প্রাকটিস দেখেছি। মার্কেটে ঘোরা পর্ব আরেকদিন লিখা যাবে, আমি টার্গেট নিয়েছিলাম প্রথম সপ্তাহ একবারে লিখবো কিন্তু এখন মনে হচ্ছে প্রথম দিনটাই একটা পোস্ট হিসেবে দিতে হবে। শেষ: বিকেলে অফিসে কাজ করলাম কিছু। সন্ধ্যায় বের হয়ে বাসায় আসলাম এবং এসে ভাবলাম ডায়েরীতে অনুভূতিগুলো লিখে রাখি। সেইমত লিখেও রাখলাম।

এরপরে টিভি অন করলাম এবং ইংরেজী একটা চ্যানেল পাওয়া গেল, ভালোই মজা লাগলো ওটায় কারণ প্লেইন ইংলিশ বোঝার ক্ষমতা কাজে লাগছিলো....ঘুমায় গেলাম একসময় এবং রাত ৩টার দিকে আবার ঘুম ভেঙ্গে গেলো, কি মুসিবত। টিভি অন করলাম কি হয় দেখি এবং মজা পেলাম অ্যাডাল্ট চ্যানেল দেখে......যতদিন আমি জার্মানীতে ছিলাম প্রতিদিন রাতেই ঘুম ভেঙ্গে যেত এবং এই চ্যানেলটা দেখে বুঝতাম কয়টা বাজে কারণ এটা রাত ২টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্তই ওপেন থাকতো। আজ এ পর্যন্তই। কিছু ছবি দিয়ে শেষ করি প্রথম দিনের ঘটনা: বাসার সামনে: অফিস ডেস্কের ভিউ: বাসার কাছের পার্ক (দুপুরে যেমন লাগে): সেন্ট্রাল স্টেশন: [img|http://media.somewhereinblog.net/images/thumbs/seoul_1326869695_3-Fullscreen_capture_1182012_125329_PM.jpg **** পরের পর্ব: জার্মানীতে ২য় থেকে ৫ম দিন ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.