আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হাদীসে রাসূল (সাঃ) নিয়ে কেন এই সংশয়? (সমাপ্তি পর্ব)



সাহাবীদের পর থেকে হাদীস গ্রন্থায়িত হওয়া পর্যন্ত সময়ে হাদীস গ্রহনে আলেমদের সাবধানতা সাহাবায়ে কেরামের প্রজন্ম ছিল উম্মতের সবচেয়ে উত্তম প্রজন্ম। দ্বীনদারী ও পরহেজগারী ছিল তাদের সমাজের মৌলিক বৈশিষ্ট্য। কিন্তু ইসলামের বিজয় অভিযানের সাথে সাথে বিজিত অঞ্চলের লোকেরা ইসলামে প্রবেশ শুরু করল। তাদের মধ্যে এমন লোকও ইসলাম গ্রহন করল যাদের উদ্দেশ্য ছিল নিজেকে মুসলিম হিসেবে জাহির করে ইসলামের ক্ষতি করা। যেমনটি করেছিল অগ্নি উপাসক "আব্দুলাহ বিন সাবা" ও তার সাঙ্গ-পাঙ্গরা।

এ শ্রেণীর লোকেরা তাদের অশুভ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য কিছু কিছু বানোয়াট বাণী রাসূল (সাঃ) এর নামে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করল। আর এই ষড়যন্ত্রকে মোকাবিলা করার জন্য মুহাদ্দিসরা এক নতুন অস্ত্র গ্রহন করলেন। যখনি কোন ব্যক্তি বলত, রাসূল (সাঃ) হাদীসে এ কথা বলেছেন, সঙ্গে সঙ্গে তাকে জিজ্ঞেস করা হত তুমি কার কাছ থেকে শুনেছ। যদি সে কোন বর্ণনাসূত্র উল্লেখ করতে পারত এবং তার উল্লেখিত বর্ণনাকারীরা সত্যবাদী, দ্বীনদার ও সুন্নতের অনুসারী হতো তাহলে তার হাদীস গ্রহন করা হত। আর যদি তাকে বর্ণনাকারীরা মিথ্যাবাদী হত অথবা বিদআতী হত তখন তার হাদীস প্রত্যাখান করা হত।

মুহাম্মদ ইবনে সিরীন বলেন, "সনদ হচ্ছে দ্বীনকে রক্ষাকারী। যদি সনদ জিজ্ঞেস করা না হত তাহলে যার যা ইচ্ছা সে ওটাকে দ্বীন বলে চালিয়ে দিত। " [সহীহ মুসলিমের ভূমিকা, ১/১৫] অন্যদিকে সময়ের ব্যবধানে রাসূল (সাঃ) ও পরবর্তীতে আগত মুহাদ্দিসদের মাঝখানে সেতু স্থাপনকারী রাবীদের (বর্ণনাকারী) সংখ্যা বেড়ে গেল। আর মানুষ মাত্রই সকলের মুখস্ত শক্তি সমান নয়। বরং কারো কারো মুখস্ত শক্তি অত্যন্ত দূর্বল।

সেজন্য হাদীসের সাথে সনদ উল্লেখ করা অপরিহার্য হয়ে পড়ে। যেন সংশ্লিষ্ট রাবীদের (বর্ণনাকারীদের) গুণাগুণ বিশ্লেষণ করা যায়। তারা কি দ্বীনদার, না দ্বীনদার নয়। তাদের মুখস্ত শক্তি কি মজবুত, না দূর্বল। এ কারণে ওসমান (রাঃ) নিহত হওয়ার পর থেকে সনদ ছাড়া কোন হাদীস গ্রহন করা হত না।

যার ফলে মুহাদ্দিসদেরকে যেমন রাসূলের (সাঃ) বাণীটা মুখস্ত করতে হত ঠিক তেমনি বর্ণনাকারীদের নাম ও ক্রমধারা মুখস্ত করতে হত। বিশিষ্ট তাবেয়ী ইবনে সিরীন বলেন, "পূর্বে হাদীসের সনদ (বর্ণনাকারীদের সিলসিলা) জিজ্ঞেস করা হত না। আর যখন থেকে ফিতনা শুরু হল (ওসমান (রাঃ) হত্যার পর) তখন থেকে মুহাদ্দিসরা বলা শুরু করলেন, 'তোমাদের বর্ণনাকারীদের নাম বল। ' তখন বর্ণনাকারীদের অবস্থা পর্যালোচনা করা হত যদি তারা সুন্নতের অনুসারী হতেন তাদের হাদীস গ্রহন করা হত। আর যদি তারা বিদআতী হতেন তখন তাদের হাদীস গ্রহন করা হত না।

" [সহীহ মুসলিমের ভূমিকা, পৃষ্ঠা ১/১৫] এভাবে হাদীসকে রক্ষা করার জন্য নতুন দুটি জ্ঞানের উদ্ভব হয়। একটিকে বলা হয় "ইলমুল রিজাল"(বর্ণনাকারীদের পরিচয় সংক্রান্ত) অন্যটিকে বলা হয় "আল জারহ ওয়াত তাদীল" (রাবীদের সমালোচনা বা তাদের গুণাবলী নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ)। সনদ বলতে সেসব ব্যক্তিদের পরম্পরাকে বুঝানো হয় যাদের মাধ্যমে হাদীসটি রাসূল (সাঃ) থেকে শুরু হয়ে পরবর্তী বর্ণনাকারীর কাছে এসে পৌঁছেছে। " হিজরী পঞ্চম শতাব্দী পর্যন্ত, এমনকি এরপরেও হাদীসের যত মৌলিক গ্রন্থ রচিত হয় সবগুলোতে হাদীসের সাথে সনদ উল্লেখ করা হয়। কোন পাঠক হয়তো প্রশ্ন করবেন কোথায় আমরা তো অনুদিত সহীহ বোখারী ও সহীহ মুসলিম বা অন্য কোন হাদীসের গ্রন্থে বর্ণনাকারীদের কোন সিলসিলা দেখি না; শুধু সাহাবীর নাম দেখি।

জবাব হল, আপনারা যদি আরবীতে মূল কিতাবগুলো দেখতেন তাতে সনদ দেখতেন পেতেন। যেমন আপনি যদি সহীহ বোখারীর মূল আরবী কিতাবে প্রথম হাদীসটা খোলেন, দেখতে পাবেন সেখানে লেখা আছে- حَدَّثَنَا الْحُمَيْدِىُّ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ الزُّبَيْرِ قَالَ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ قَالَ حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ سَعِيدٍ الأَنْصَارِىُّ قَالَ أَخْبَرَنِى مُحَمَّدُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ التَّيْمِىُّ أَنَّهُ سَمِعَ عَلْقَمَةَ بْنَ وَقَّاصٍ اللَّيْثِىَّ يَقُولُ سَمِعْتُ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ - رضى الله عنه - عَلَى الْمِنْبَرِ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ - صلى الله عليه وسلم – يَقُولُ....... অর্থ: আব্দুল্লাহ বিন যুবাইর আলহুমাইদী আমাদের কাছে হাদীস বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন: সুফিয়ান আমাদের কাছে হাদীস বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: ইয়াহইয়া বিন সাঈদ আল আনসারী আমাদের কাছে হাদীস বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: মুহাম্মদ বিন ইব্রাহীম তাইমী তাকে সংবাদ দিয়েছেন যে, তিনি "আলকামা বিন ওক্কাছ লাইছিকে" বলতে শুনেছেন এবং তিনি (আলকামা) বলেন, আমি উমর (রাঃ) কে মিম্বরে দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেন: রাসূল (সাঃ) বলেছেন: "……."[সহীহ বোখারী, ১/৪] কিন্তু বাংলা ও ইংরেজীতে অনুদিত অধিকাংশ গ্রন্থগুলোতে এ দীর্ঘ সনদ উল্লেখ করা হয়নি। শুধুমাত্র সাহাবীর নাম ও হাদীসের মূল কথাটা রাখা হয়েছে। যেন অনুদিত গ্রন্থের কলেবর বেড়ে না যায়। তার সাথে হয়তো প্রকাশকরা মনে করেন অনুবাদের পাঠকরা এ সনদ থেকে খুব বেশী উপকৃত হবেন না।

কারণ অনুবাদের পাঠকের মূল উদ্দেশ্য থাকে রাসূলের বাণীটা জানা। আর যারা সনদ জানতে চায় তারা তো মূল কিতাব দেখতে পারেন। কিন্তু আমি মনে করি সনদ সহ অনুবাদ করাটাই শ্রেয় ছিল। যাতে অনুবাদের পাঠকরাও সনদের মাধ্যমে সুন্নাহকে হেফাযতের এ মহান বৈশিষ্ট্য জানতে পারতেন। যে বৈশিষ্ট্য শুধুমাত্র উম্মতে মুহাম্মদীর রয়েছে।

অন্য কোন ধর্মাবলম্বীরা তাদের নবী পর্যন্ত তাদের ধর্ম গ্রন্থসমূহের একটা বর্ণনাসূত্রও বলতে পারবে না; যেখানে মুসলমানরা হাজার হাজার বর্ণনা সূত্র বলতে পারবে। এভাবে "ইলমুল রিজাল" ও "জারহ ওয়া তাদীলের" এদুটি অস্ত্রকে ব্যবহার করে মুহাদ্দিসে কেরাম কোন বাণী কি "হাদীস", নাকি "হাদীস নয়" তা নির্ণয় করতে পারতেন। যখন কেউ বিশেষ কোন মুহাদ্দিসের কাছ থেকে কোন হাদীস বর্ণনা করতেন তখন রাবী বিশ্লেষকরা দেখতেন- এই ব্যক্তির জন্ম কবে এবং সে যার কাছ থেকে হাদীসটা বর্ণনা করছে তার মৃত্যু কবে। যদি কোন অসামঞ্জস্যতা দেখতেন তখন প্রমাণ করে ফেলতেন যে এ ব্যক্তি আসলে হাদীসটা শুনেনি। অথবা কখনো দেখতেন এ ব্যক্তির অবস্থান কোথায় এবং সে কোন্ কোন্ দেশ ভ্রমন করেছে।

আর যার কাছ থেকে বর্ণনা করছেন তিনি কোন দেশে অবস্থান করেছেন এবং কোন্ কোন্ দেশ ভ্রমন করেছেন। যদি দেখতেন এখানে কোন অসামঞ্জস্যতা আছে তখন স্পষ্ট হয়ে যেত যে এ ব্যক্তি হাদীসটা শুনেনি। অনুরূপভাবে রাবীর মুখস্ত শক্তিও পরীক্ষা করতেন। কতগুলো হাদীসকে ওলট-পালট করে দিয়ে রাবীকে জিজ্ঞেস করতেন- এ হাদীসগুলো ঠিক আছে কিনা? ঠিক না থাকলে কিভাবে ঠিক হবে? যেমনটি বাগদাদবাসী ইমাম বোখারীর সাথে করছিলেন। ইমাম বোখারী বাগদাদে আসলে তারা এক হাদীসের সনদকে আরেক হাদীসে লাগিয়ে একের পর এক একশটা হাদীস ইমাম বোখারীর কাছে পেশ করেন।

পেশ করা শেষে ইমামকে জিজ্ঞেস করেন 'হাদীসগুলো ঠিক আছে কিনা?' ইমাম বোখারী এত বেশী ধী শক্তির অধিকারী ছিলেন যে একবার মাত্র শুনে তাদের উল্লেখকৃত প্রতিটি হাদীস মুখস্ত করে ফেলেন। প্রথমে তারা যেভাবে উল্লেখ করেছে ঠিক সেভাবে হাদীসটি উল্লেখ করে বলতেন- 'আমরা এভাবে কোন হাদীস জানি না। ' কিন্তু আমরা হাদীস জানি এইভাবে- তখন প্রত্যেক হাদীসের যে সনদ সে হাদীসের সে সনদটা দিয়ে হাদীসটা উল্লেখ করতেন। মুহাদ্দিসদের মধ্যে যারা অত্যন্ত পরহেযগার, মুত্তাকী ছিলেন তাদের একটা অংশ হাদীস গ্রন্থায়নের আগ পর্যন্ত "ইলমুল রিজাল" ও "জারহ ওয়াত তাদীল" এ দুটো বিষয়ে সবিশেষ গুরুত্ব দেন। তারা রাবীদের পরিচয়, তাদের জীবনী, তাদের দ্বীনদারী ও আখলাক ইত্যাদি সম্পর্কে গভীরভাবে তথ্য নিতেন এবং সে আলোকে রাবীদের উপর সিদ্ধান্ত দিতেন।

কোন ব্যক্তি যদি জীবনে একটা মিথ্যা কথা বর্ণনা করত তার কাছ থেকে আর কখনো হাদীস গ্রহন করা হতো না। কোন ব্যক্তি অতি দ্বীনদার, পরহেজগার হওয়ার পরও তার মুখস্ত শক্তিতে দূর্বলতা থাকার কারণে তার হাদীসের মান কমে যেত। এভাবে তাদের ছাত্ররা রাবীদের পরিচিতি ও গুণাগুণ তাদের শিক্ষকদের কাছ থেকে শুনে মুখস্ত করতেন। পরবর্তীতে এ দুটো বিষয়ে স্বতন্ত্রভাবে বহু গ্রন্থ রচিত হয়। এ গ্রন্থসমূহে রাবীর পরিচয়, তিনি কোথায় কোথায় ভ্রমন করেছেন, কার কার কাছ থেকে হাদীস শুনেছেন এবং তার কাছ থেকে কে কে হাদীস শুনেছেন ইত্যাদি বিষয় উল্লেখ থাকত।

সাথে সাথে একথারও উল্লেখ থাকত তিনি কোন মানের ও কোন স্তরের রাবী। নিম্নে রাবীদের একটা স্তর বিন্যাস তুলে ধরলাম। এ বিন্যাসটি প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস ইবনে হাজার আসকালানী (মৃ ৮৫২হিঃ) উল্লেখ করেছেন। এ বিন্যাসে একেবারে প্রথমে স্থান দেয়া হয়েছে- সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য রাবীদের, আর একেবারে শেষে রাখা হয়েছে মিথ্যাবাদীদের, যাদের একটি কথাও মুহাদ্দিসরা গ্রহন করেননি। (অবশ্য কোন কোন মুহাদ্দিস এ স্তর বিন্যাসে সামান্য ব্যতিক্রম করেছেন।

) ইবনে হাজার রাবীদের বারটি স্তর উল্লেখ করেন। সকল সাহাবী হলেন প্রথম মানের রাবী। দ্বিতীয় স্তরের রাবীদের বলা হত- ছিকাহ ছিকাহ (নির্ভরযোগ্য ২বার)। তৃতীয় স্তরের রাবীদের বলা হত- ছিকাহ (নির্ভরযোগ্য ১বার)। চতুর্থ স্তরের রাবীদের বলা হত- সাদুক (সত্যবাদী), লা বা'স (কোন অসুবিধা নাই)।

পঞ্চম স্তরের রাবীদের বলা হত- সাদুক সায়্যিউল হিফয (সত্যবাদী, কিন্তু মুখস্তে দূর্বল) ষষ্ঠ স্তরের রাবীদেরর বলা হত- মাকবুল (চলনসই)। সপ্তম স্তরের রাবীদের বলা হত- মাসতুর (তার গুণাগুণ অজ্ঞাত)। অষ্টম স্তরের রাবীদের বলা হত- যয়ীফ (দূর্বল)। নবম স্তরের রাবীদের বলা হত- মাজহুল (অজ্ঞাত পরিচয়)। দশম স্তরের রাবীদের বলা হত- মাতরুক (পরিত্যাজ্য)।

একাদশ স্তরের রাবীদের বলা হত- মুত্তাহাম বিল কাযিব (মিথ্যার অপবাদে দুষ্ট)। দ্বাদশ স্তরের রাবীদের বলা হত- কাজ্জাব, (মিথ্যাবাদী) ওযি' (জালকারী)। যুগে যুগে যেসব হাদীস বিশারদের কথা "জারহ ওয়া তাদীল" (রাবীর সমালোচনা) শাস্ত্রে গ্রহনযোগ্যতা পায় তাদেরকে আলেমসমাজ সময়কাল অনুযায়ী বিভিন্ন স্তরে ভাগ করেছেন। যেমন- প্রথম স্তরে রয়েছেন সাহাবীরা। তারা হলেন- হযরত উমর (রাঃ), আলী বিন আবী তালেব (রাঃ), আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ), আনাস বিন মালেক (রাঃ) ও আয়েশা (রাঃ) প্রমুখ।

দ্বিতীয় স্তরে রয়েছেন- তাবেয়ীরা। তারা হলেন- সাঈদ বিন মুসায়্যিব (মৃ ৯৪হিঃ), সাঈদ বিন যুবায়ের (মৃ ৯৫হিঃ), উরউয়া বিন যুবাইর (মৃ ৯৪হিঃ), হাসান বসরী (মৃ ১১০হিঃ), আমের শাবী (মৃ ১০৩হিঃ) প্রমুখ। তৃতীয় স্তরে রয়েছেন- তাবে তাবেয়ীরা। তারা হলেন- শুবা বিন হাজ্জাজ (মৃ ১৬০হিঃ), সুফিয়ান বিন সাঈদ ছাওরী (মৃ ১৬১হিঃ), আব্দুর রহমান বিন আমর আল আওযায়ী (মৃ ১৫৭হিঃ), মালেক বিন আনাস (মৃ ১৭৯হিঃ), আব্দুল্লাহ বিন মুবারক (মৃ ১৮১হিঃ), এবং ইয়াহইয়া বিন সাঈদ আল কাত্তান (মৃ ১৯৮হিঃ) প্রমুখ। চতুর্থ স্তরে রয়েছেন- তাবে তাবেয়ীদের আরেকটা স্তর।

তারা হলেন- ওকী' বিন জাররাহ (মৃ ১৯৭হিঃ), আব্দুর রহমান বিন মাহদী (মৃ ১৯৮হিঃ), মুহাম্মদ বিন ইদ্রিস শাফেয়ী (মৃ ২০৪হিঃ), এবং সাঈদ বিন মানসুর (মৃ ২২৮হিঃ) প্রমুখ। পঞ্চম স্তরে রয়েছেন- তাবে তাবেয়ীদের পরের স্তর। তারা হলেন- আহমাদ বিন হাম্বল (মৃ ২৪১হিঃ), আলী বিন আব্দুল্লাহ বিন জাফর মাদিনী (মৃ ২৩৪হিঃ), ইয়াহইয়া বিন মায়ীন (মৃ ২৩৩হিঃ), ইসহাক বিন রাহুইয়া (মৃ ২৩৮হিঃ), আবু বকর বিন আবি শায়বা (মৃ ২৩৫হিঃ), আব্দুর রহমান বিন ইব্রাহীম দিমাসকী (মৃ ২৪৫হিঃ) এবং আমর বিন আলী আল ফাল্লাস (মৃ ২৪৯হিঃ) প্রমুখ। ষষ্ঠ স্তরে রয়েছেন- এদের পরের স্তর। তারা হলেন- মুহাম্মদ বিন ইসামাইল বোখারী (মৃ ২৫৬হিঃ), আবু যুরআ (মৃ ২৬৪হিঃ), আবু হাতিম রাজী (মৃ ২৭৭হিঃ), মুহাম্মদ বিন মুসলিম (মৃ ২৭০হিঃ), আবু যুরআ' দিমাসকী (মৃ ২৮১হিঃ), সালেহ বিন মুহাম্মদ (মৃ ২৯৩হিঃ), মুসা বিনা হারুন (মৃ ২৯৫হিঃ) এবং আব্দুল্লাহ বিন আহমদ (মৃ ২৯০হিঃ) প্রমুখ।

সপ্তম স্তরে রয়েছেন- আহমাদ বিন শুয়াইব নাসায়ী (মৃ ৩৫৩হিঃ), আবু আরুবা হাররানী (মৃ ৩১৮হিঃ) এবং আলী বিন সাদ (মৃ ২৯৭হিঃ) প্রমুখ হিজরী দ্বিতীয় শতক থেকে পঞ্চম শতাব্দী পর্যন্ত "ইলমুল রিজাল" (রাবী পরিচিতি) নিয়ে যেসব গ্রন্থ রচিত হয়েছে তার কিছু নমুনা নিম্নে তুলে ধরছি- 1.হাইছাম বিন আদীর (মৃ ২০৭হিঃ) তাবাক্বাতু মান রাওয়া আনিন নাবী (নবীজি (সাঃ) থেকে যারা বর্ণনা করেছেন তাদের নানা স্তর)। 2.আবু হাতেমের (মৃ ২৭৭হিঃ) তাবাক্বাতুত তাবেয়ীন (তাবেয়ীদের বিভিন্ন স্তর) 3.ইমাম মুসলিমের (মৃ ২৬১হিঃ) তাবাক্বাতুস সাহাবা ওয়াত তাবেয়ীন (সাহাবী ও তাবেয়ীদের বিভিন্ন স্তর) 4.ইবনে হায়্যানের (মৃ ৩৬৯হিঃ) তাবাক্বাতুল মুহাদ্দিসীন বি ইসবাহান (ইসবাহানের মুহাদ্দিসদের বিভিন্ন স্তর) 5.ইবনে সাদের (মৃ ২৩০ হিঃ) আত তাবাক্বাতুল কুবরা। 6.আলী বিন হুসাইনের (মৃ ৪২৯হি) তাবাকাতুর রিজাল (মহাপুরুষদের স্তরগুলো) শুধুমাত্র সাহাবীদের নিয়ে যেসব গ্রন্থ রচিত হয় সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল_ 1.আবু উবাইদের (মৃ ২০৭হিঃ) আস সাবাহা (সাহাবা চরিত) 2.আলী বিন মাদিনী (মৃ ২৩৪হিঃ) মান নাযালা মিলাস সাহাবা সায়েরাল বুলদান (সাহাবাদের যারা নানা দেশে অবস্থান করেছেন) 3.আবু মানসুরের (মৃ ৩০১হিঃ) আস সাহাবা (সাহাবা চরিত) 4.আব্দুল্লাহ বিন আবু দাউদের (মৃ ৩১৬হিঃ) আস সাহাবা (সাহাবা চরিত) 5.মুহাম্মদ বিন মানদার (মৃ ৩৯৫হিঃ) মারিফাতুস সাহাবা (সাহাবাদের পরিচয়) 6.ইবনে আব্দুল বারের (মৃ ৪৬৩হিঃ) আল ইসতিয়াব 7.আবু নুআইমের (মৃ৪৩০হিঃ) মারিফাতুস সাহাবা (সাহাবাদের পরিচয়) হিজরী দ্বিতীয় শতক থেকে পঞ্চম শতাব্দি পর্যন্ত "জারহ ওয়া তাদীল" (রাবী সমালোচনা) বিষয়ে যেসব গ্রন্থ রচিত হয় সেগুলোকে আলেমরা তিনশ্রেণীতে বিভক্ত করেন। প্রত্যেক শ্রেণীর গ্রন্থগুলোর কিছু নমুনা নিম্নে আলাদাভাবে তুলে ধরলাম- নির্ভরযোগ্য-অনির্ভরযোগ্য উভয় ধরনের রাবীদের জীবনী নিয়ে লিখিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহ: 1.লাইছ বিন সাদের (মৃ ১৭৫হিঃ) "আল জামউ বায়নাছ ছিকাত" (নির্ভরযোগ্য ও অনির্ভরযোগ্য রাবীদের জীবনী) 2.ইবনে মুবারকের (মৃ ১৮১হিঃ) "আত তারিখ" (এই গ্রন্থেও নির্ভরযোগ্য ও অনির্ভরযোগ্য উভয় ধরনের রাবীদের আলোচনা স্থান পায়) 3.আবু নু্আইম (মৃ ২১৮হিঃ) "আত তারিখ" (এই গ্রন্থেও নির্ভরযোগ্য ও অনির্ভরযোগ্য উভয় ধরনের রাবীদের আলোচনা স্থান পায়) 4.ইয়াকুব বিন সুফিয়ান ফাসাবীর (মৃ ২৭৭হিঃ) "আল মারিফ ওয়াত তারিখ" 5.আবু হাতেমের (মৃ ৩২৭হিঃ) "আল জারহ ওয়াত তাদীল" 6.খলিলীর (মৃ ৪৪৬হিঃ) "আল ইরশাদ" শুধুমাত্র দূর্বল রাবীদের জীবনী নিয়ে লিখিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহ: 1.ইয়াহইয়া বিন সাঈদ আল কাত্তান (মৃ ১৯৮হিঃ) "আদ যুয়া'ফা" (এতে শুধু অনির্ভরযোগ্য বা দুর্বল রাবীদের আলোচনা স্থান পায়) 2.ইয়াহইয়া বিন মায়ীনের (মৃ ২৩৩হিঃ) "আদ যুয়া'ফা" (এতে শুধুমাত্র দুর্বল রাবীদের আলোচনা স্থান পায়) 3.ইবনে খুজাইমার (মৃ ৩১১হিঃ) "আদ যুয়া'ফা" 4.ইবনে আদীর (মৃ ৩৬৫হিঃ) আল কামিল ফিদ যুয়া'ফা" 5.হাকেমের (মৃ ৪০৫হিঃ) "আদ যুয়া'ফা" 6.খতীব বাগদাদীর (মৃ ৪৬৩হিঃ) "আদ যুয়া'ফা" ইত্যাদি শুধুমাত্র নির্ভরযোগ্য রাবীদের জীবনী নিয়ে লিখিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহ: 1.আলী বিন মাদিনীর (মৃ ২৩৪হিঃ) "আছ ছিকাত ও মুতাছাব্বিতুন" 2.আহমাদ আলইজলীর (মৃ ২৬১হিঃ) "আছ ছিকাত" 3.ইবনে হিব্বানের (মৃ ৩৫৪হিঃ) "আছ ছিকাত" 4.ইবনে হিব্বানের "মাশাহিরু উলামায়িল আমসার" 5.ইবনে শাহীনের (মৃ ৩৮৫হিঃ) "তারিখু আসমাইছ ছিকাত" ইত্যাদি এছাড়াও "ইলমুল রিজাল" ও "জারহ ওয়াত তাদীলের" উপর রয়েছে আরো অগনিত, অসংখ্য গ্রন্থ। যেগুলোর উল্লেখে প্রবন্ধের কলেবর অনেক বেড়ে যাবে।

"ইলমুল রিজাল" ও "জারহ ওয়াত তাদীল" এ দুটি ইলমকে পুঁজি করে হাদীস বিশারদরা হাদীসকে সম্পূর্ণ নির্ভেজালভাবে উম্মতের সামনে পেশ করেছেন। শুধুমাত্র সহীহ হাদীসগুলোকে সংকলিত করেই তারা ক্ষান্ত হননি, বরং যেগুলো হাদীস নামে সমাজে প্রচলিত আছে অথবা বিভিন্ন বই-পুস্তকে লেখা আছে কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সেগুলো হাদীস নয় সে বানোয়াট কথাগুলোও তারা একত্র করে সংকলন বের করেছেন। যেন তাদের প্রাণের চেয়ে প্রিয় নবীর উম্মত বিভ্রান্ত না হয়, বিপথে না যায়। এ প্রবন্ধের প্রথম পর্বে "মাউজু হাদীস" বা বানোয়াট কথাগুলো নিয়ে সংকলিত অনেকগুলো গ্রন্থের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। ইচ্ছা করলে পাঠক প্রবন্ধের সে অংশ দেখে নিতে পারেন।

এত ত্যাগ-কুরবানী এবং এ পরিমাণ সাবধানতা পৃথিবীর আর কোন জ্ঞানের গ্রন্থগুলো সংকলনে গৃহীত হয়েছে বলে আমার জানা নাই। যে এ্যরিস্টটল, সেক্সপিয়রের বাণী আমরা হর-হামেশা মুখে আওড়িয়ে থাকি যদি জিজ্ঞেস করা হয় এ্যরিস্টটল বা সেক্সপিয়র পর্যন্ত এ বাণীর একটা মাত্র বর্ণনাসূত্র আমাদেরকে দেন তো, কেউ কি দিতে পারবেন?! যে বিজ্ঞান নিয়ে আমরা গর্ব করি প্রাচীন বিজ্ঞানীদের বাণী বা থিওরীগুলো যে ঠিক ঐ বিজ্ঞানীর বাণী বা থিওরী তা কি বর্ণনাসূত্রের মাধ্যমে কেউ প্রমাণ করতে পারবেন?!। অনুরূপ কথা আমরা বলতে পারি জ্ঞানের প্রতিটি শাখার ক্ষেত্রে। অথচ কোন প্রকার বাক্য ব্যয় ব্যতিরেকে পৃথিবীর সকল ধর্মের সকল মতের মানুষ প্রত্যেক জ্ঞানের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বাণীকে সংশ্লিষ্ট প্রবক্তার বলে মনে করে। কোন দিন তো শুনা যায় নাই "মধ্যাকর্ষন শক্তির" প্রবক্তা নিউটন না অন্য কেউ এ নিয়ে মাতামাতি করতে।

অথচ হাদীসে রাসূল (সাঃ) স্বাব্যস্তকরণে যে চুলচেরা বিশ্লেষণ হয়েছে তাতো দূরে থাক এসব বাণীগুলোর প্রবক্তা যে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি তা সাব্যস্ত করার প্রয়োজনটুকু মনে করেননি ঐ সব জ্ঞানের গবেষকরা। যদি কেউ করে থাকে তবে সে জ্ঞানের ছাত্ররা আমাদেরকে লিখে জানাক। এমনকি পৃথিবীর অন্যসব ধর্মগ্রন্থগুলোরও কোন সনদ নাই। লোকমুখে শুনে বিশ্বাস করা হচ্ছে- এটা অমুকের বাণী। বাস্তবে সে বাণী সংরক্ষণ ও মিশ্রনমুক্ত রাখার কোন চেষ্টা আদৌ কোন ধর্মের অনুসারীদের মাঝে নাই।

শুধুমাত্র ইঞ্জিলের কিছু সনদ আছে। তাও "পল" পর্যন্ত গিয়ে হারিয়ে গেছে। ঈসা (আঃ) পর্যন্ত পৌঁছেনি। আর হাদীসে রাসূলের (সাঃ) একজন ছাত্রকে আপনি জিজ্ঞেস করে দেখুন রাসূল (সাঃ) পর্যন্ত বর্ণনা সূত্র আপনাকে শুনিয়ে দিবে। আধুনিক প্রিন্টিং পদ্ধতিতে ছাপা হওয়া হাদীসের মূল আরবী গ্রন্থগুলোর প্রতিও যদি আপনি নজর দেন তাহলে দেখতে পাবেন গ্রন্থের শুরুতে সংশ্লিষ্ট গ্রন্থের পাণ্ডুলিপির ছবি দেওয়া আছে।

কত সালে কে পাণ্ডুলিপিটি তৈরী করেছেন তাও উল্লেখ আছে এবং এই গ্রন্থ যে ঐ লেখকের বা ঐ সংকলকের তাও প্রমাণ করা আছে সমকালীন অন্যান্য গ্রন্থাকারদের উক্তি দিয়ে বা অন্য কোন আলামত দিয়ে। এ প্রবন্ধের সমাপ্তিতে বলতে চায়- প্রিয় মুসলিম, নব্য জাহেলিয়াতের কবলে পড়ে, আদর্শিক বা তথ্য সন্ত্রাসে আক্রান্ত হয়ে আপনি যেন বন্যার পানিতে ভেসে যাওয়া খড়-কুটা না হন। নিজের দ্বীনকে আঁকড়ে ধরুন। নিজেকে ইসলামী জ্ঞানে আলোকিত করে তুলুন। বাতিলের ষড়যন্ত্রের প্রতিরোধে নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে ইসলামী জ্ঞান আহরণ করুন এবং সঠিকভাবে তা জাতির সামনে তুলে ধরুন।

আর অজানা বিষয়ে চুপ থাকুন। কারণ না জেনে ইসলামী বিধি-বিধান নিয়ে কথা বলা জঘন্য অপরাধ। ইসলামী শরীয়াতে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। আল্লাহ তাআলা বলেন, وَلَا تَقْفُ مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ إِنَّ السَّمْعَ وَالْبَصَرَ وَالْفُؤَادَ كُلُّ أُولَئِكَ كَانَ عَنْهُ مَسْئُولًا (36) অর্থ: যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান নেই সে বিষয়ে আলোকপাত করো না। নিশ্চয় কর্ণ, চক্ষু ও আত্মা প্রত্যেকটি এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।

[সূরা ইসরা বা বনী ইসরাইল ১৭:৩৬] অন্য আয়াতে কারীমাতে আল্লাহ তাআলা বলেন, قُلْ إِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّيَ الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ وَالْإِثْمَ وَالْبَغْيَ بِغَيْرِ الْحَقِّ وَأَنْ تُشْرِكُوا بِاللَّهِ مَا لَمْ يُنَزِّلْ بِهِ سُلْطَانًا وَأَنْ تَقُولُوا عَلَى اللَّهِ مَا لَا تَعْلَمُونَ অর্থ: "(হে মুহাম্মদ) আপনি বলুন, আমার প্রতিপালক প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য অশ্লীলতা, পাপকাজ, অন্যায় ও অসংগত বিদ্রোহ করাকে হারাম ঘোষণা করেছেন। এবং হারাম ঘোষণা করেছেন তাঁর সাথে অংশীদার স্থাপন করাকে; যার পক্ষে তিনি কোন প্রমাণ অবতীর্ণ করেননি এবং তিনি হারাম ঘোষণা করেছেন- 'না জেনে তাঁর নামে মিথ্যা বলাকে। " [সূরা আরাফ ৭:৩৩] সুতরাং কুরআন ও সুন্নাহর সঠিক জ্ঞান ছাড়া ইসলাম নিয়ে কথা বলা মানে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নামে মিথ্যা বলা; যা কবীরা গুনাহর অন্তর্ভূক্ত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- "আল্লাহ তাআলা বান্দাদেরকে ইলম দেয়ার পর সরাসরি ইলম উঠিয়ে নেবেন না, কিন্তু তিনি আলেমদেরকে তাদের ইলম সহ উঠিয়ে নেবেন; এরপর শুধু অজ্ঞ লোকেরা থাকবে, তাদের কাছে শরয়ী বিষয়ে সিদ্ধান্ত চাওয়া হবে, তারা তাদের মন খোদ মত সিদ্ধান্ত দিবে। এভাবে তারা নিজেরাও পথভ্রষ্ট হবে এবং অন্যদেরকেও পথভ্রষ্ট করবে।

[বুখারী, হাদীস নং ৬৮৭৭, কুপ্রবৃত্তির তিরস্কার শীর্ষক অধ্যায়] আল্লাহ আমাদেরকে হেফাযত করুন। আমীন। সমাপ্ত নিম্নের সাইটগুলো থেকে আপনি ইংরেজী, আরবী ও বাংলা ভাষায় ইসলাম সম্পর্কে জানতে পারবেন। http://www.islam-qa.com http://www.islamhouse.com http://www.islamonline.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.