যুগে যুগে হাদীস সংকলনে আলেমদের সাবধানতাহাদীসে রাসূলের এ বিশাল ভাণ্ডারের সংকলন অত্যন্ত সর্তকতা ও সাবধানতার মাঝে সমাপিত হয়। যেন এতে কোন প্রকার মিশ্রন না ঘটে। হাদীসের জন্মের পর থেকে হাদীসগুলো গ্রন্থাবদ্ধ হওয়া পর্যন্ত চুলচেরা বিশ্লেষণের পর তা গ্রন্থায়ন করা হয়। এমনকি গ্রন্থায়নের পরও হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে আলেম সমাজ অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করেন। কোন হাদীস উল্লেখ করলে তা কোন গ্রন্থে আছে তা উল্লেখ করেন।
প্রয়োজন দেখা দিলে এ কথাও বলে দেন হাদীসটির মান কোন পর্যায়ে। যেহেতু হাদীসে রাসূলের (সাঃ) উপর ভিত্তি করে ইসলামী বিধি-বিধান প্রণীত হবে, আদালতে বিচার হবে, হক থেকে বাতিলকে চিহ্নিত করা হবে সেজন্য হাদীস বিশারদরা এ ক্ষেত্রে কোন কসুর করেননি। বরং সকল প্রকার সংকীর্ণতার উর্ধ্বে উঠে হাদীসের সত্যতা যাচাইকে সবকিছুর আগে স্থান দিয়েছেন।
হাদীস বর্ণনায় সাবধানতা গ্রহনে রাসূলের (সাঃ) নির্দেশনা:হাদীস বর্ণনায় এ সতর্কতা ও সাবধানতা খোদ রাসূল (সাঃ) এর যামানা থেকে শুরু হয়। রাসূল (সাঃ) উম্মতকে হাদীস বর্ণনার ব্যাপারে, ইলম প্রচারে যেরূপ উৎসাহ দিয়েছেন, ঠিক তেমনি ভুল বা মিথ্যা কথা প্রচারের ব্যাপারে কঠোর হুশিয়ারী উচ্চারণ করেছেন।
তিনি বলেন, "তোমরা আমার পক্ষ থেকে একটি আয়াত হলেও প্রচার কর। আর বনী ইসরাইলদের কাছ থেকেও বর্ণনা করতে পার- কোন অসুবিধা নাই। কিন্তু, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার নামে মিথ্যা কথা বলবে সে যেন তার স্থান জাহান্নামে ঠিক করে নেয়। "[সহীহ বোখারী, ৬/৪৯৪, হাদীস নং ৩৪৬১] তিনি আরো বলেন, "কোন ব্যক্তির মিথ্যাবাদিতা সাব্যস্ত হওয়ার জন্য এইটুকু যথেষ্ট যে – সে কোন কিছু শুনেই প্রচার শুরু করে দেয়। "[সহীহ মুসলিমের ভূমিকা ১/১০, হাদীস নং ৫] তিনি আরো বলেন,"যে ব্যক্তি কোন একটা বাণীকে আমার বাণী বলে প্রচার করে; অথচ প্রচারকালে তার সন্দেহ হয়-এটা রাসূলের নামে মিথ্যা কথা, তারপরও প্রচার করে সে মিথ্যাবাদীদের একজন।
"[সহীহ মুসলিমের ভূমিকা ১/৮, হাদীস নং ১]
হাদীস বর্ণনায় সাহাবীদের সাবধানতার কয়েকটি নমুনা:রাসূল (সাঃ) এর কাছ থেকে এমন দিক-নির্দেশনা পেয়ে হাদীস বর্ণনায় সাহাবায়ে কেরাম অত্যন্ত সাবধানতা অবলম্বন করতেন। এ রকম সাবধানতা বিশ্ববাসী অন্য কোন জ্ঞানের ক্ষেত্রে আদৌ দেখেনি। একটা হাদীস মুখ দিয়ে বের করাকে তারা অত্যন্ত কঠিন মনে করতেন। হাদীস বর্ণনার সময় তারা ভয়ে থর থর করে কাঁপতেন; না জানি কোন ভুল করে ফেলেন, কোন কথা বৃদ্ধি করে ফেলেন; শেষে তার পরিণতি হবে জাহান্নাম। সেজন্য সাহাবাদের অনেকে রাসূলের (সাঃ) দীর্ঘ সময়ের সঙ্গী হওয়ার পরও খুব কম সংখ্যক হাদীস বর্ণনা করেছেন।
যেমন- আবু বকর (রাঃ); অথচ সাহাবীদের মধ্যে তিনি রাসূল (সাঃ) কে সবচেয়ে বেশী সঙ্গ দিয়েছেন। আর যেসব সাহাবী হাদীস বর্ণনা করতেন তারা ঠিক যতটুকু শুনেছেন এবং তার যতটুকু মনে রাখতে পেরেছেন হুবহু ততটুকু বর্ণনা করতেন। তারা নির্ভুলভাবে মনে রাখতে পেরেছেন এবং হুবহু বর্ণনা করেছেন এ ব্যাপারে নিশ্চিত থাকার পরও বর্ণনা শেষে বলতেন- 'অথবা আল্লাহর রাসূল (সাঃ) যেভাবে বলেছেন ঠিক ঐভাবে। ' অথবা এই জাতীয় কোন বাক্য। নিম্নে সাহাবীদের হাদীসের ক্ষেত্রে তাদের সাবধানতা সংক্রান্ত কিছু বাণী তুলে ধরলাম।
1.ইবনে সিরীন বলেন, "আনাস (রাঃ) খুব কম হাদীস বর্ণনা করতেন। আর যখনি হাদীস বর্ণনা করতেন বর্ণনা শেষে বলতেন, "অথবা আল্লাহর রাসূল (সাঃ) যেভাবে বলেছেন ঠিক ঐভাবে। "[ইবনে মাজাহর ভূমিকা ১/১১, নং ২৪] প্রচণ্ড ভয় ও সাবধানতা রক্ষার্থে তিনি এ কথা বলতেন।
2.আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, "যদি ভুল হওয়ার আশংকা না করতাম তবে তোমাদেরকে এমন কিছু বিষয় জানাতাম যা আমি রাসূলের (সাঃ) কাছ থেকে শুনেছি অথবা তিনি বলেছেন। কিন্তু কিভাবে বলি আমি তো তাঁর মুখে শুনেছি, "যে ইচ্ছা করে আমার নামে মিথ্যা বলে সে যেন তার স্থান জাহান্নামে ঠিক করে নেয়।
" [সুনানু দারেমী, ১/৬৭]
3.শা'বী ও ইবনে সিরীন থেকে বর্ণিত: ইবনে মাসউদ (রাঃ) যখন হাদীস বর্ণনা করতেন তখন তাঁর চেহারা বিবর্ণ হয়ে যেত। তিনি বলতেন, "ঠিক এভাবে অথবা অনুরূপ", ঠিক এভাবে অথবা অনুরূপ"। (অর্থ্যাৎ তিনি ভয়ে একথা বলতেন। )[সুনানু দারেমী, ১/৭২]
4.শা'বী থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: "আমি ইবনে উমারের সাথে এক বছর উঠা-বসা করেছি। এ সময়ে আমি তার কাছ থেকে একটি হাদীসে রাসূল (সাঃ) ও শুনিনি।
"[ইবনে মাজাহর ভূমিকা, ১/১১, নং২৬]
5.আব্দুর রহমান বিন আবী লাইলা বলেন: " আমি রাসূলের (সাঃ) আনসারী সাহাবীদের মধ্যে ১২০ জনের সাক্ষাত পেয়েছি। তাদের যে কেউ যখনি কোন হাদীস বলতেন তখন কামনা করতেন যদি তার বদলে তার অন্য কোন সাথী হাদীসটা বলে দিতেন। তাদের কাউকে যখন কোন ফতুয়া জিজ্ঞেস করা হত তখন তিনি কামনা করতেন যদি তার বদলে তার অন্য কোন সাথী ফতুয়াটা দিতেন। " অন্য এক বর্ণনায় এসেছে- "তাদের কাউকে যখন কোন মাসয়ালা জিজ্ঞেস করা হতো তখন তিনি অন্য কারো কাছে পাঠাতেন। দ্বিতীয় ব্যক্তি আবার অন্যজনের কাছে পাঠাতেন।
এভাবে প্রশ্নকারী আবার প্রথম ব্যক্তির কাছে ফিরে আসতেন। "[ইবনে আব্দুল বার্রের "জামে বায়ানুল ইলম ওয়া ফাদলিহি" ২/১৬৩] সাহাবারা প্রশ্নকারীকে কষ্ট দেয়ার জন্য তা করতেন না। বরং ভুল ফতুয়া দিয়ে জাহান্নামবাসী হন কিনা এই ভয়ে তারা তা করতেন।
6.আব্দুর রহমান বিন আবি লাইলা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: "আমরা যায়েদ বিন আরকামকে বললাম, আমাদেরকে হাদীসে রাসূল (সাঃ) শুনান। তিনি বললেন, আমাদের বয়স ভারী হয়েছে।
আমরা ভুলে গেছি। আর রাসূল (সাঃ) এর হাদীস বর্ণনা করা বড় কঠিন কাজ। " [ইবনে মাজাহর ভূমিকা, হাদীসে রাসূল (সাঃ) বর্ণনা থেকে বিরত থাকা শীর্ষক অধ্যায়। ]
এই সমুদয় বাণী পড়ে আমরা উপলব্ধি করতে পারলাম- সাহাবীরা রাসূলের (সাঃ) হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে কি পরিমান সতর্কতা অবলম্বন করতেন । সাহাবীরা রাসূলের (সাঃ) নামে কথা বলতেই ভয় করতেন থাকতো তাঁর নামে মিথ্যা বলবেন বা রাসূলের বাণীকে ওলট-পালট করবেন।
কিভাবেই বা এহেন কাজ করবেন অথচ তারা ছিলেন সোনার মানুষ যাদের উপর স্বয়ং আল্লাহ পাক সন্তুষ্ট হয়ে গেছেন এবং তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে গেছেন। "মুমিনরা যখন বৃক্ষতলে তোমার নিকট বায়আত গ্রহন করলো তখন আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হলেন…" [সূরা ফাতহ ৪৭:১৮] "আর যেসব মুহাজির ও আনসার (ঈমান আনয়নে) অগ্রবর্তী এবং প্রথম, আর যেসব লোক সরল অন্তরে তাদের অনুগামী, আল্লাহ তাদের প্রতি রাজি হয়েছেন এবং তারাও তাঁর প্রতি রাজি হয়েছেন। আর আল্লাহ তাদের জন্য এমন উদ্যানসমূহ প্রস্তুত করে রেখেছেন যার তলদেশে নহরসমূহ বইতে থাকবে, যার মধ্যে তারা চিরস্থায়ীভাবে অবস্থান করবে, তা হচ্ছে বিরাট কৃতকার্যতা। " সূরা তওবা ৯:১০০]
প্রত্যেক সাহাবী নিজস্ব অনুভূতিতে এত সাবধানী হওয়ার পরও কোন সাহাবী যখন কোন হাদীস বর্ণনা করতেন তখন প্রয়োজন অনুভব করলে শ্রোতা সাহাবীরা তার কাছ থেকে অন্য কোন সাহাবীর সমর্থন তলব করতেন। যেন অজান্তে, অনিচ্ছাকৃতভাবে হলেও কোন ভুল কথা প্রচার লাভ না করে এবং বর্ণনাকারীরা যেন আরো বেশী সাবধানী হন।
যেমনটি ঘটেছে মুগীরা বিন শু'বার সাথে আবু বকরের (রাঃ)।
হযরত ক্বাবিসা বিন যুওয়াইব বলেন, জনৈক (মৃতের) দাদী এসে আবু বকর (রাঃ) এর কাছে দাবী জানালেন তার নাতির উত্তরাধিকার সম্পত্তি থেকে তার প্রাপ্য হক আদায় করে দেয়ার জন্য। তখন আবু বকর (রাঃ) বললেন: আমি তো আল্লাহর কিতাবে ও রাসূলের সুন্নাহ তে দাদীর জন্য কোন অংশ দেখি না। আচ্ছা এখন যাও, আমি লোকদেরকে জিজ্ঞেস করব। তিনি সাহাবীদেরকে জিজ্ঞেস করলেন।
তখন মুগীরা বিন শু'বা বললেন, আমার উপস্থিতিতে রাসূল (সাঃ) জনৈক দাদীকে এক ষষ্ঠাংশ দিয়েছিলেন। তখন আবু বকর (রাঃ) বললেন, তোমার পক্ষে কি আর কারো সমর্থন আছে? তখন মুহাম্মদ বিন মাসলামা দাঁড়িয়ে মুগীর বিন শু'বার অনুরূপ কথা ব্যক্ত করলেন। তখন আবু বকর (রাঃ) দাদীকে তার হক বন্টন করে দিলেন। [সুনানু তিরমিজী, দাদীর উত্তরাধিকারের ব্যাপারে যা এসেছে শীর্ষক অধ্যায়, নং২২৪৭; আবু দাউদ, দাদীর উত্তরাধিকার শীর্ষক অধ্যায়, ২৮৯৪। ] এখানে বলে রাখা ভাল আবু বকর (রাঃ) শু'বা (রাঃ) মিথ্যা বলেছেন এ রকম কোন আশংকার কারণে সাক্ষ্য তলব করেননি, বরং সাক্ষ্য তলব করেছেন অধিক সাবধানতা অবলম্বনে।
কারণ অন্য বর্ণনায় এসেছে সাহাবীরা একে অপরকে মিথ্যাপ্রতিপন্ন করতেন না। যেহেতু তারা মিথ্যা বলতেন না।
এ ধরনের সাক্ষ্য তলবের ঘটনা উমর (রাঃ) এর সাথেও ঘটেছে। হযরত আবু মুসা আশআরী থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: একবার উমরের (রাঃ) বাড়িতে গিয়ে আমি তিনবার অনুমতি চাইলাম। কোন উত্তর না পেয়ে আমি ফিরে আসলাম।
এরপর উমর (রাঃ) আমার জন্য লোক পাঠালেন। (আমি তার সাথে দেখা করার পর) তিনি বললেন, হে আব্দুল্লাহ, আমার দরজাতে খানিক ক্ষণ দাঁড়ানোটাকে যদি তুমি কষ্ট মনে কর, তবে জেনে রাখো তোমার দরজাতে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকাটাকেও মানুষ কষ্টকর মনে করবে। আমি বললাম: কেন আমি তো তিনবার অনুমতি চাইলাম। অনুমতি না পেয়ে চলে আসলাম। (আল্লাহর রাসূলের (সাঃ) পক্ষ থেকে তো) আমাদেরকে এই আদেশ দেয়া হত।
তিনি বললেন (উমর রাঃ) তুমি এ কথা কার কাছে শুনেছ? আমি বললাম, নবী করিম (সাঃ) এর কাছে। তিনি বললেন, আমরা যে কথা শুনি নাই সে কথা তুমি শুনলে কোথা থেকে। তোমাকে অবশ্যই সাক্ষী আনতে হবে, না হয় আমি তোমাকে শাস্তি দিব। আমি সেখান থেকে বের হয়ে মসজিদে সমবেত আনসারদের একটা দলের কাছে আসলাম। এবং তাদেরকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলাম।
তারা বলল: কেন, কেউ কি এ ব্যাপারে সন্দেহ করে। তখন উমর (রাঃ) যা বললেন আমি তাদেরকে তা জানালাম। তারা বললেন আমাদের একবারে ছোট্ট মানুষটি তোমার পক্ষে সাক্ষ্য দিবে। তখন আবু সাঈদ খুদরী অথবা আবু মাসউদ আমার সাথে উমরের (রাঃ) কাছে গিয়ে বললেন: একবার রাসূল (সাঃ) সাদ বিন উবাদার উদ্দেশ্যে বের হলেন। তখন আমি তার সাথে ছিলাম।
নবীজি তার বাড়ীতে পৌঁছে সালাম দিলেন, কোন জবাব আসল না। দ্বিতীয়বার আবার সালাম দিলেন কোন জবাব এল না। তৃতীয়বার আবার সালাম দিলেন। কোন জবাব আসল না। এরপর তিনি বললেন আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করেছি।
এই বলে তিনি ফিরে যাচ্ছিলেন। এর মধ্যে সাদ এসে হাজির। সে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) আমি আপনার প্রতিটি সালাম শুনেছি এবং জবাব দিয়েছি। আমার কাছে ভাল লাগছিল আপনি আমাকে ও আমার পরিবারকে আরো সালাম দিতে থাকুন। তখন আবু মুসা (রাঃ) বললেন, আল্লাহর শপথ! রাসূলের হাদীসের ব্যাপারে আমি সত্যবাদী ছিলাম।
তখন উমর (রাঃ) বললেন, অবশ্যই। কিন্তু আমি চূড়ান্ত নিশ্চিয়তা পেতে চেয়েছি। "
আবার কখনো কখনো বর্ণনাকারী সাহাবীর মুখস্ত শক্তি ঠিক আছে কিনা তা পরখ করে দেখার জন্য সাহাবীরা দুটি ভিন্ন সময়ে একই হাদীস তার কাছ থেকে জানতে চাইতেন। তিনি যদি উভয় সময়ে ঠিক একইভাবে হাদীসটা বর্ণনা করেন তখন প্রমাণিত হত যে হাদীসটা তার মুখস্ত আছে। যেমন আয়েশা (রাঃ) আব্দুল্লাহ বিন আমরের সাথে করেছিলেন।
হযরত উরউয়া বিন যুবাইর থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আয়েশা (রাঃ) বললেন; ভাগিনা, শুনেছি আব্দুল্লাহ বিন আমর আমাদের পথ দিয়ে হজ্জে যাচ্ছে। তার সাথে সাক্ষাত কর এবং তাকে হাদীস জিজ্ঞেস কর। কারণ তার কাছে নবুয়তী জ্ঞানের বিশাল ভাণ্ডার আছে। উরউয়া বলেন, আমি তার সাথে সাক্ষাত করে তাকে অনেক কিছু জিজ্ঞেস করলাম। তিনি রাসূল (সাঃ) থেকে অনেক কিছু বর্ণনা করলেন।
এর মধ্যে একটা হাদীস এরকম বর্ণনা করেন যে, "আল্লাহ পাক সরাসরি ইলম উঠিয়ে নিবেন না। কিন্তু আলেমদের উঠিয়ে নিবেন। আলেমের মৃত্যুর সাথে ইলমেরও মৃত্যু হবে। এরপর কতগুলো মুর্খ সর্দার বেঁচে থাকবে, তারা ইলম ছাড়া ফতোয়া দিবে। এভাবে নিজেও পথভ্রষ্ট হবে এবং অন্যদেরকেও পথভ্রষ্ট করবে।
" উরউয়া বলেন আমি যখন হাদীসটি আয়েশা (রাঃ) কে শুনালাম তিনি হাদীসটিকে বড় কঠিন মনে করলেন এবং মেনে নিতে পারছিলেন না। এমনকি (আমাকে) বললেন, তিনি (আব্দুল্লাহ বিন আমর) কি তোমাকে একথা বলেছেন যে, তিনি এ কথা রাসূল (সাঃ) থেকে শুনেছেন। পরের বছর যখন হজ্জের মওসুম এল তখন আয়েশা (রাঃ) উরউয়াকে বললেন: আব্দুল্লাহ বিন আমর তাশরীফ এনেছেন। তুমি তার সাথে সাক্ষাত করে আলাপ-সালাপ কর। আর এক ফাঁকে তাকে ইলম সংক্রান্ত ঐ হাদীসটির কথা জিজ্ঞেস করে নিও।
(উরউয়া বলেন) আমি তার সাথে সাক্ষাত করলাম এবং হাদীসটি জিজ্ঞেস করলাম। তিনি প্রথমবার যেভাবে বর্ণনা করেছিলেন ঠিক সেভাবে বর্ণনা করলেন। উরউয়া বলেন, যখন আমি আয়েশা (রাঃ) কে তা জানালাম তখন তিনি বললেন: 'আমি মনে করি তিনি সত্য বলেছেন। দেখা যাচ্ছে – তিনি (ইবনে আমর) একটুও কম-বেশী করেননি। [বোখারী, নং ৬৮৭৭ ও মুসলিম, নং ৫৯৭৪]
এভাবে যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে সাহাবায়ে কেরাম হাদীস গ্রহন করতেন।
যদিও সাহাবীদের মধ্যে এমন একজনও ছিলেন না যিনি হাদীসকে বিকৃত করার দুঃসাহস দেখাবেন। তারপরেও অধিক সতর্কতা অবলম্বনে তারা তা করতেন। এছাড়াও সাহাবীদের মধ্যে যারা হাদীস যাচাই-বাছাইয়ে খ্যাতি লাভ করেছেন তারা হলেন- হযরত আবু বকর (রাঃ), হযরত উমর (রাঃ), আলী বিন আবী তালেব (রাঃ), আনাস বিন মালেক (রাঃ), যায়েদ বিন ছাবেত (রাঃ) ও আয়েশা (রাঃ) প্রমুখ।
পরবর্তী পর্বে সাহাবীদের পরবর্তী যুগে হাদীস সংকলনে আলেমদের সতর্কতা নিয়ে আলোচনা করার আশা রাখি। আল্লাহ আমার জন্য সহজ করে দিন
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।