আমার ব্যক্তিগত ব্লগ
মনে অনেক দু:খ ছিল (এখনও আছে), জাহাজে করে সেন্টমার্টিন্স গিয়েছি, সাগরের ঢেউ ঠিক মতোন উপভোগ করতে পারিনি। খুব ইচ্ছা করছিল নৌকায় সাগরে ঘুরতে। সুযোগ এসে গেল। ঠিক হলো আমরা ছেড়া দ্বীপে যাব, নৌকায়।
মাঝি সকালে এসে হোটেলে দাড়িয়েছিলেন।
আমাদের নিয়ে হাটা দিলেন বীচ দিয়ে নৌকার উদ্দেশ্যে। হাটছি তো হাটছি। সন্দেহ হলো, ব্যাটা কি আমাদের পায়ে হেটে ছেড়া দ্বীপে নেয়ার ধান্দা করছে? একজন এগিয়ে গিয়ে খোজ নিলেন, নাহ, নৌকার উদ্দেশ্যই যাচ্ছি, সামনেই নাকি তার নৌকা।
খুব ভালো। সামনে যে নৌকাই দেখি মনে করি তার নৌকা, কিন্তু না সে একটার পর একটা পার হয়ে আমাদের এক রাশি প্রবালের মাঝে নিয়ে এলো।
তারপর হাটা দিল সাগর বরাবর প্রবালের উপর দিয়ে। আমরাও ছোটখাট লম্ভ ঝম্ফ দিয়ে প্রবালের উপর দিয়ে এগিয়ে যেতে লাগলাম। এরপর প্রবাল শেষ। সে এবার পানি দিয়ে হেটে সাগরের গভীরে যেতে লাগল। আমাদের মাঝে মাঝে কেউ কেউ ভয় পেয়ে গেল।
নৌকা এতো গভীরে? হাটতে গিয়ে ডুবে না যাই। অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে একরকম জোর করে ওদের টেনে নিয়ে যেতে লাগলাম।
মাঝি একটা ছোট নৌকা দেখিয়ে বলল, যারা ভয় পান তারা ছোট নৌকায় উঠেন, ছোট নৌকা দিয়ে বড় নৌকায় নিয়ে যাব। আমার আত্মভিমানে লাগল, আমি বললাম, আমি হেটেই যেতে পারব (যদিও সাতারের সও জানিনা)। বাকিরা উঠুক।
মাঝি নিজেই আবার বলল, ছোট নৌকা থেকে বড় নৌকায় উঠতে বেশি কষ্ট, এরচেয়ে হেটে যাওয়া ভাল। তাই সই (পরে বুঝেছিলাম এই ব্যাটার সব পরামর্শই ভুল ছিল)। আমার হেটে চললাম। পৌছলাম সেই নৌকায়। এবার আমি সত্যই সত্যই ভয় পেলাম।
পানিতে লাফ দেয়া সহজ নয়, প্রায় কোমর পানি আর ঢেউ মনে হচ্ছিল নিচের দিকে টেনে ধরছে। নৌকা ঢেউয়ে এদিক ওদিক সরে যাচ্ছে। কিভাবে উঠব?
বাকিরা আমার মনোভাব বুঝতে পারছিল। মাঝি আর একজন সফর সংগী নৌকা ধরে চাপ দিয়ে নিচের দিকে নামালেন, আমাকে বললেন লাফ দাও। লাফ দিলাম, পানির টানে বেশি উচুতে উঠতে পারলাম না।
আবার নৌকাও ঢেউয়ে সরে গেল। ওরা সাহস দিল। আবার চেষ্টা করলাম, এই বার পারলাম। দুরে তখনও বাকিরা আসতে আসতে হেটে আসছিল। মাঝি নৌকা টেনে আরেকটু কাছে নিয়ে গেল।
বাকিরাও বহুকষ্টে নৌকায় উঠল। একজনে কোলে করে তুলতে হয়েছিল। অসুবিধা হয়নি। সে না থাকলে আমাদের ভ্রমন এতো মজার হতো না।
ছেড়া দ্বীপ থেকে ফেরার পথে মাঝি বলল, ৪ জন লোক আমাদের সাথে ফিরতে চায় তাদের নাকি আর কোন উপায় নেই (পরে দেখেছিলাম আরো অনেক নৌকা ছিল) ।
আমরা রাজি হলাম না। নৌকাকে বললাম দ্বীপ থেকে ছেড়া দ্বীপ আর সেন্টমার্টিনস এর বর্ডারে চলে আসতে কারন আমরা হাটতে হাটতে সেখানে চলে গিয়েছিলাম, তারপর সেখানে পানিতে নেমে দাপাদাপি করছিলো সবাই। মনে মনে চাইছিলাম নৌকা দেরিতে আসুক, কারন পানি থেকে উঠতে ইচ্ছা করছিল না। কিন্তু আমাদের হাতেও সময় ছিল না জাহাজের সময় ৩টা। এর মধ্যে ফিরে, খেয়ে, হোটেল থেকে জেটিতে জাহাজে উঠতে হবে।
নৌকা চলে এলো। আবার হেটে হেটে একটু গভীরে গেলাম। পথে একটা চোরা প্রবালের টক্কর খেয়ে পায়ে ব্যাথা পেলাম। পরে দেখা গেল। ঐ একটাই প্রবাল আছে ঐখানে আর সবাই একবার করে টক্কর খেলো।
মাঝে মাঝে বালু সরে গিয়ে একটু গর্তও ছিল। সাবধানে পা ফেলে ফেলে এগিয়ে গেলাম।
নৌকার কাছে এসে দেখি বাকিদের আসতে এখনও দেরি, এই সুযোগে পানিতে বসে পড়লাম গলা পর্যন্ত ডুবিয়ে। আবার অবস্থা দূরের কন্যারা ভয় পেয়ে গেল, আমিই যদি ডুবে যাই তো পানি তো ওদের মাথার উপর দিয়ে যাবে।
এবার একবারই উঠতে পারলাম নৌকাতে, হয়তো ভয় পেয়েছিলাম, উঠতে না পারলে সফর সংগীদের টেনে তুলতে হবে।
দুপুরের কড়া রোদে নৌকায় সাগর দেখতে দেখতে ফিরে গেলাম সেন্ট মার্টিন্সে। সাগর একরকম শান্তই ছিল। তবে কয়েক জায়গায় হালকা ঢেউ পেয়েছিলাম। খুশিতে মুখের সব দাঁত বোধ হয় বের হয়ে গিয়েছিল। কড়া রোদের চামড়া পুরিয়ে কয়লা বানিয়ে ফেলেছিলাম।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।