দুঃখটাকে দিলাম ছুটি, আসবে না ফিরে
মানুষেরে ঘৃণা করি'/
ও কারা কোরান, বেদ, বাইবেল চুম্বিছে মরি' মরি'/
ও মুখ হইতে কেতাব-গ্রন্থ নাও জোর ক'রে কেড়ে,/
যাহারা আনিল গ্রন্থ-কেতাব সেই মানুষেরে মেরে। /
পূজিছে গ্রন্থ ভন্ডের দল! - মূর্খরা সব শোনো,/
মানুষ এনেছে গ্রন্থ; - গ্রন্থ আনেনি মানুষ কোনো!/......। (নজরুল)
উপরের চরণ ক'টি নজরুলের। নিচেরগুলিও নজরুলের.....
কুরআন আমার ডংকা
আমার কিসের শংকা
আমার নাহি নাহি ভয়
মুসলিম আমার পরিচয়। ।
(স্মরণশক্তিজনিত সমস্যার কারণে লাইনগুলো এলোমেলো হতে পারে)
একেবারে দুইমেরুর দুটি লেখা, একই লেখকের কলম থেকে বেরিয়েছে। সে কারণেই বোধহয় খুব আস্তিক এবং খুব নাস্তিক দুই দলই নজরুলকে খুব আপন ভাবতে পারে।
উপরের কবিতার শেষের লাইনটি ছাড়া আমি সমস্যা দেখছি না, যারা কেবল গ্রন্থের পূজা করে আমি তাদের দলে নই। .......মানুষ এনেছে গ্রন্থ; -গ্রন্থ আনেনি মানুষ কোন! নজরুলকে ভালবাসি বলেই একথার অর্থ নিজের মত করে ব্যাখ্যা আমি করবো না। তবে, সন্দেহ নেই যে, কোন আসমানী কিতাবই মানুষের বানানো নয়।
কুরআন ছাড়া আর সবই মানুষ তার মত করে বানিয়ে নিয়েছে। বহু মানুষ 'মানুষ' হয়েছে এগ্রন্থের ছোঁয়ায়।
আমি নজরুলকে বাংলা সাহিত্যের একজন অবাক করা কবি বলেই জানি। এমনিতেই কবিদের ছন্দ মিলানোকে আমার কাছে জাদু বলেই মনে হয়। কবি হওয়া সাধনার কোন বিষয় নয়, এটা স্বভাবজাত।
নজরুলের কারণে বাংলা সাহিত্য সমৃদ্ধ হয়েছে অনেক বেশি। আমি নজরুলের সেই গানের কোন বিকল্প খুঁজে পাই না......ও মন, রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ। এ দিনকে কেন্দ্র করে যত গান রচিত হয়েছে টিকেনি, যতটা টিকেছে এই গানটি। একেবারে ইসলামিক সেন্স জাগিয়ে তুলে লেখা হয়েছে এটি। তা সত্তেও যত্রতত্র গাওয়া হয়েছে এ গান।
এই গান শুনেনি বাংলা ভাষার এমন কোন লোক (অন্তত বাংলাদেশী) আদৌ পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না। ট্যালেন্টের জয় হয়েছে.... নজরুল দেখিয়ে দিয়েছেন কিভাবে সত্যকে সুন্দরভাবে তুলে ধরতে হয়।
আমার জীবনে শোনা শ্রেষ্ঠ কবিতা হচ্ছে...... আমি হব সকাল বেলার পাখি, সবার আগে কুসুম বাগে উঠব আমি জাগি। এটিও নজরুলের। নজরুলকে ভালবাসি বলে নয়, কবিতাটিই আমাকে নজরুলের ট্যালেন্ট চিনতে সাহায্য করেছে।
নিজেকে কিশোর ভাবতে ভাল লাগে, মনে হয় প্রত্যেকটি কিশোরকে ডেকে শোনায়। দেখ, আমাদের নজরুল তোমাদেরকে কত্ত ভালবেসে কথাগুলি লিখেছেন। কবিতাটিতে কী নিপূণতায় ফুটে উঠেছে দুরন্ত ছেলের সাথে মায়ের ভালোবাসা। ..... বলব আমি, আলসে মেয়ে ঘুমিয়ে তুমি থাকো।
প্লিজ চলে যাবেন না, কয়েকবার চোখ রাখুন চরণগুলিতে.......প্রত্যেক মা-ছেলেকে শুনিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে......
আমি হব সকাল বেলার পাখি
সবার আগে কুসুমবাগে উঠব আমি জাগি।
সূয্যিমামা জাগার আগে উঠব আমি জেগে
হয়নি সকাল ঘুমো এখন, মা বলবেন রেগে।
বলব আমি, আলসে মেয়ে ঘুমিয়ে তুমি থাকো
হয়নি সকাল তাই বলে কি সকাল হবে নাকো?
আমরা যদি না জাগি মা কেমনে সকাল হবে
তোমার ছেলে উঠলে মাগো রাত পোহাবে তবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।