আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তিনটি সমকালীন বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী কবিতার অনুবাদ

প্রান্তিক জনগোষ্ঠিগুলোর ভাষা ও জাতিগত অস্তিত্বের সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও সমমর্যাদা দাবী করছি

ধনঞ্জয় রাজকুমার প থ পথকে মালা পরিয়ে দাও ওই পথের গর্ভ থেকেই আমাদের জন্ম হয়েছিল । রঞ্জিত সিংহ আ জ ও সে আ সে আর বিধবা নদীটি এসেছিল আমাদের উঠান পর্যন্ত। মন্দ্রিত রৌদ্রের মতো কী শান্তি স্বপ্ন দেখেছিল সে। বিশ্রামহীন তিনরাস্তার কোন পুলিশপয়েন্টের মতো উদভ্রান্ত এখন। তৃষ্ণাথরথর বুক চাপরিয়ে কেঁদে কেঁদে আমার কাছে চেয়েছিল দু'ফোটা জল আমি নিরুপায় ভয়ে লজ্জায় ঘরের ভেতর নিঃশব্দ বসেছিলাম এখনও আমি ভিজে উঠি চোখে - নিষ্তেজ আমি এমন নিম্নজ! আর বিধবা নদীটি এসেছিল আমাদের উঠান পর্যন্ত।

সন্তোষ সান্তান স ম্প র্ক সি রি জ - ২ ইস্কপনের বিবির সাবঅল্টার্ন য়াবেরুনীর সৌন্দর্যে নিপুন এক কবিতা লিখে যাব, এমন সময় হাতের তালু দাবী করে রাজসুলভ ভাগ্যলিপি। যে শিণ্পের টানে একজন জন্মকবি দারিদ্রের সাথে সংসার পাতে, সেই নির্বাক শিল্প ছড়িয়ে থাকে অতিচেতনায়, যুক্তির বাইরের কোন পৃথিবীতে। ইশ্বরের লীলা যেন মাকড়শার জাল। ইশ্বরও এখন বৃদ্ধ। তাকেও স্ট্রাগল করে বাঁচতে হয়।

আকাঙ্খায় পূর্ণ আজ পিতলের বাটিখানা। প্রতি পদক্ষেপে বিধিনিষেধ, বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ট্যাবু সান্ধ্য আরতির মৃদঙ্গের তালে তালে নাচে নারীদের কন্ঠ। জয়দেবের গীত শুরু হলে আসরের বৈষ্ণব-নামাবলী থেকে নেমে আসের অষ্টসখির প্রানধন কৃষ্ণ। কৃষ্ণ, ময়ুরকন্ঠী রঙের নামবাচক এ বিশেষ্যের দ্বিতীয় অক্ষরটি যুক্তবর্ণ; "ষ" ও "ণ", এ দুই ব্যঞ্জনের মাঝে ছোট্ট একটি ফাঁকও খুঁজে পেলাম না, যেখানে অনায়াসে ঢুকিয়ে দেতে পারব বর্ণিল কিছু মানবতা। এদিকে "ক" খুব একলা, তার সাথে মিশে আছে "ঋ" কার, একা থাকলে তার গায়ে মেখে দিতাম কনেরাঙা মমতা; আর কলঙ্কিনী রাইয়ের জন্য খয়েরি রঙের কিছু স্মৃতি।

কলঙ্কিনী রাই আসলে এমন একটি নাম যার কোনো সর্বনাম নেই, আছে শুধু আকিঁবুকিহীন দুঃখীনি বিশেষন। আমরা জানি, বিশেষ্যের সাথে বিশেষনের ব্যবহার আত্মিক তৃপ্তি এনে দেয়। ঘোমটার মতো শাদা কুয়াশা পৃথিবী মায়ের কোলে ছড়িয়ে পড়লে অবুঝ এ মন বৈষ্ণব-খড়ম, অহংকারী সানগ্লাস, অপরূপ কবিতা সব রেখে বৃন্দাবনের দিকে সরে পা বাড়ায়। *য়াবেরুনী - কাঁচুলি বিশেষ। আগে মনিপুরী মেয়েরা শরীরের উর্ধ্বাংশে ব্যবহার করতো।

*জয়দেব - আষাঢ় মাসে মনিপুরীদের কাঙ উৎসবের সময় কবি জয়দেবের গীতগোবিন্দ গাওয়া হয় ধনঞ্জয় রাজকুমার : আধুনিক বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী কবিতার জনক। জাতি, সংস্কৃতি, অতীত, ও শেকড়কে নিজের বিশাল কাব্যক্ষমতায় ধারন করেছেন। আশির দশক এবং তৎপরবর্তী কবিদের অধিকাংশ অনুসরন করেছেন তার পদাংক। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ : হপনর বাবুয়ানি, ডিগল হাতহানল মোরে, ভিক্ষা দেনে এর আহিগিতৌ, হমাজি গাটর পানি ইত্যাদি। রঞ্জিত সিংহ : নব্বই দশকের কবি।

অরন্য রুপকল্প ও শান্ত সমাহিত বয়ানধরনের পাশাপাশি রাজনীতিশ্পর্শী এক গভীর হাহাকার তার কবিতায় ছুঁয়ে যায়। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ : মোর ইমারঠার মোর প্রেমর কবিতা। সন্তোষ সান্তান : নতুন শতাব্দীর কবি। প্রতিস্ঠান বিরোধিতার তার্কিক জায়গা থেকে হিউমারের মধ্য দিয়ে পেশ করেন কবিতা। বিষ্ণুপ্রিয়া মনিপুরী ভাষার মাসিক সাহিত্যপত্র "নুয়া এলা"য় নিয়মিত লেখেন।

সূত্র: মনিপুরী সাহিত্য সংগ্রহ। ভুমিকা ও অনুবাদ- শুভাশিস সিনহা। ঐতিহ্য, ঢাকা, ২০০৭। ছবি: শক্তিকুমার সিংহের পেইন্টিং

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.