সূর্য
দূরে ছাদে দাঁড়ানো মহিলার পিছনে-
সূর্যটি এমন ছবি হয়ে আছে -
লাগছে সূর্যটি স্থির- যতটা স্থির
গাজীর পটে কৃষানীর নিষ্পলক চোখ-
কিংবা যতটা স্থির বাসনা শাঁখা ও সিঁদুর ঘিরে-
ক'দিন আগেই সূর্যটাকে হাতের
উপর ডিমের মতো নিয়ে বন্ধুরা ছবি তুলেছে সমুদ্র সৈকতে-
আমি অবশ্য সমুদ্রের জলে
সন্তের মতো চোখ করে কখনো দেখিনি
সূর্যের ডুবে যাওয়া। বাবাও দেখেনি। তবে-
তার চোখের ভেতর আমাকে ডুবুরির মত
নামিয়ে দিয়ে ঘুরিয়ে এনেছে সাত মহাসাগরের
তলদেশ- দেখিয়ে এনেছে নটিলাসের যাত্রাপথ-
নানান দ্বীপের ধন রত্ন- পাখির দুঃখ-
মানুষের মুক্তা, বন মোরগের অক্ষত পালক
কিছু কুড়িয়ে এনেছিলাম সেখান থেকেই। যা এখনো
কিছু সঞ্চিত আছে নখ- দাঁতের বর্ম ঘেরা জাদুঘরে।
এখনো মাঝে মাঝে নেমে যাই তোমার চোখে
লেজের নৃত্যে জলের আনন্দ কোলাহল হলে
সেখানে সূর্যের আলো এমন বিভক্ত হয়-
এমন রংধনু করে আনাগোনা - কুলকুল গানে
এমন আনন্দ নামে কাছের ঝরনা থেকে - আহা!
কী আনন্দের ঘোরে পাহাড়ী সবুজের ঘুমঘুম মাদকতায়-
আমি ঘুমে টলতে টলতে-
জলের গহনে আত্মার মাকু ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বানাই সাঁতার -
তিমিরা সাথে আসে-
আসে পদ্মার রুপালি শুশুকের ঝাঁক
ইলিশের ডিম সব মাছ হয়ে
পৃথিবীর ব্যাকরন ভেঙ্গে দিয়ে আমাকে করে অনুসরন।
বাবাটা এমন - বেশিক্ষণ আড়ালে থাকলে বড়
অস্থির হয়ে যায়- তারপর হাতে তালি বাজিয়ে
ডানে বামে ছু মন্তর ফু দিয়ে
কী এক বিশাল লম্বা সুতার মাথায় একতারা আটকে
পাঠিয়ে দেয় আমার খোঁজে -
পাঠিয়ে দেয় ফেরৎ আসার জরুরি বার্তা।
এখন! তুমি যে এমন দিলে ডুব - কোথায় দিলে!
অজন্তার দেয়ালে আঙুলের ছাপ ফেলে
আমার সূর্য - সমুদ্র আর সমস্ত সাঁতার সহ
কোথায় লুকোলে তুমি? অথচ বলো
পালাবার আগে উচিত ছিলো নাকি - আমাকে
শিখিয়ে যাওয়া একতারা পাঠাবার গোপন মন্ত্রখানা ?
সূর্য পিতা, তোমার রহস্য ঘিরে
পিতার প্রপিতামহের পূর্বপুরুষগন ধর্ম করেছে রচনা -
দিন রাতের হিসেব মিলেতে না পেরে -
বেহেশত দোজখের গল্প শিখিয়ে গেছে;
দেখে যাও সে গল্প আজ আঙুল তোলে
আমাদের কেমন শাসায়!
হায়ারোগ্লিফিক বলো, বলো-
ব্যাবিলনের শূন্যোদ্যানে ফুটে উঠা ফুলের অচেনা ভাষার কথা
এই আমি পিতার জিনবাহী আদিম মানব
তামাম মানব মানবীর একরত্তি অংশ
বীজ হয়ে তোমাকেই ধর্ম মানি।
এ আমার রাজ্যপাট নেই-
তরবারীর ধারে ধারে ঝলসে উঠা
ক্ষমতার তীব্র সংকেত নমস্য জানিনি কোনোদিন -
শুধু এক তুমি আছ -
এখন সন্ধ্যা বেলা
সুরমা রঙের মসলিন তুমি ঘনিয়ে নিচ্ছ নিজের চারধারে
গঙ্গা সুরমার জল ও জল পাড়ে
রাত্রির কাহিনী বুনে দিচ্ছ হাওয়ায় হাওয়ায় -
সূর্যপিতা, আদি পিতার বিস্তির্ণ চোখই
সংরক্ষিত একমাত্র মৌলিক গ্রন্থ এখানে
আর কোনো কিতাবের ভাষা এতটা অবিকৃত নয় -
এই সন্ধ্যায় অসংখ্য পিতার চোখ থেকে নেমে
তোমার দীর্ঘায়ু চেয়ে সকল সন্তান এখন
গোল হয়ে বসে মৌন রব প্রথম তারাটি জ্বলে উঠা পর্যন্ত -
আর তার আগেই ঘরে ঘরে জ্বেলে দেবো সান্ধ্য প্রদীপ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।