আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্মৃতির বিভীষিকা.....

জীবন যখন যেখানে যেমন

মাঝেমাঝে কিছু কিছু স্মৃতি বিভীষিকার মত মনের কোনে উঁকি দেয়। মনে হলেই একটা ভয়ের শিহরণ লেগে উঠে গায়ে। ছিনতাইকারীর কবলে হয়ত অনেকেই পড়েছেন কম বেশী। তাই সেই বিভীষিকা অনেকেরই জানা। আমিও ছোটবেলায় একবার উনাদের কবলে পরেছিলাম।

সেই ভীতিকর অবস্থাটাই বর্ণনা করলাম। আমি তখন ক্লাস ফোর এ পড়ি আর আমার ছোট ভাই একদম পিচ্চি,কোলের। তখন ছিনতাইয়ের প্রকোপটা ঢাকা শহরে অনেক বেশী ছিল। সেসময় আমার বড় খালার বড় ছেলের বিয়ের আয়োজন চলছিল। আমার সেজ খালার বাসায় গায়ে হলুদ ছিল।

উনাদের বাসাটা আমাদের বাসা থেকে খুব কাছে ছিল,তখনকার দিনে ৫ টাকা নিত রিকশায়। স্কুল থেকে এসে বাসায় খাওয়া দাওয়া করে বিকালে আমাদের যাওয়ার কথা ওখানে। কিন্তু দুপুরের খাওয়া শেষ হওয়ার সাথে সাথেই আমি আম্মুর সাথে জোরাজোরি শুরু করে দিলাম,যে এখনই চলো। নাহলে সব মজা মিস হয়ে যাবে,সবাই নিশ্চয়ই চলে এসেছে। আমার আম্মু যতই বলে রোদ কমলে যাবো আরেকটু পরে।

আমি ততোই চিল্লাচিল্লি,কান্নাকাটি করতে থাকি। শেষে না পেরে আম্মু বলে আচ্ছা চলো। রেডি হয়ে আমরা রাস্তায় বেড়িয়ে রিকশা নিলাম,পুরা ভর দুপুর,মানুষজন নাই বললেই চলে রাস্তায়....একদম সুনসান নিরব। আমাদের রিকশা যাচ্ছে ধানমন্ডি সেণ্ট্রাল রোডের মধ্যে দিয়ে,ঐখানে আইডিয়াল কলেজ নামের একটা কলেজ আছে। ঐ কলেজটা পেরিয়ে রিকশা সামনে যেতেই,কলেজের ভিতর থেকে একসাথে ৩ টা হোন্ডা বেরিয়ে আমাদের রিকশাটাকে ঘিরে নিল।

সামনে এসে একটা হোন্ডা রিকশার চাকা বেকিয়ে দিল,পাশে একটা থামলো আর পিছনে একটা। প্রতিটা হোন্ডায় ২ জন করে মোট ৬ জন ছিল। প্রথম হোন্ডা থেকে ১ জন নেমে এসে আমার আম্মুর হাতের দিকে আঙুল দেখিয়ে বললো...." খালাম্মা আমরা ডাকাইত,আমরা আপনাদের কিছু করবো না,শুধু আপনার হাতের এই চুড়ি দুটা খুলে দেন "........ আমার আম্মু তখন খেয়াল করলো যে সে এত তাড়াহুড়া করে বেরিয়েছিল যে হাতের চুড়ি দুটা খুলতেই ভুলে গেছিল। আসলে আমিই চিল্লাচিল্লি করে পাগল করে ফেলছিলাম আম্মুকে। তো আম্মু আর কি করবে,রিকশায় আমি ছিলাম আম্মুর পাশে আর পিচ্চি ভাইটা ছিল আম্মুর কোলে।

আম্মু ভেবেছিল চিৎকার করলে যদি আমাদের ২ জনকে কিছু করে। যদিও তাদের হাতে ছুরি বা পিস্তল জাতীয় কিছু ছিল না। তারপরেও মায়ের মন,বলা তো যায় না কিছু করলে ?আম্মু হাত দুটো বাড়িয়ে দিল,লোকটা নিজেই চুড়ি দুটি খুলে তার দুই পকেটে ২ ভরি ২ভরি ৪ ভরি ভরলো। আমি তো লোকটার দিকে তাকিয়েই আছি। সে হোন্ডায় চেপে চলে যাচ্ছিল,আম্মুর গলা দিয়ে কোন আওয়াজই বের হচ্ছিল না।

কোন মতে আমাকে বললো, হোন্ডার নাম্বার দেখ। আমি দেখতে দেখতে হোন্ডা গুলো পাখির মত উড়াল দিয়ে চলে গেল........... তার ৫ মিনিটের মধ্যে বা ৫ মিনিটও হয়নি বোধহয়,একটা পুলিশ হোন্ডা নিয়ে এসে থেমে জিগ্গাষা করে কি হয়েছে। আম্মু সব বলাতে সে বলে আপনি সামনের থানায় যেয়ে জিডি করেন। বলে ঐ পুলিশটা কি সুন্দর হোন্ডা নিয়ে উলটা দিকে চলে গেল.. আমরা আর কি করবো খালার বাসায় যেয়ে সব বলার পরে থানায় একটা জিডি করা হয়েছিল,কিন্তু জীবনেও আর আম্মুর শখের ঐ চুড়ি গুলো পাওয়া যায়নি..... ঘটনাটা ভাবলে এখনও আমার অনেক অনেক খারাপ লাগে। ঐ ঘটনার জন্য আমি নিজেকেই দোষী মনে করি এখনো।

আমি যদি জীদ না করে আম্মুর কথা মত ভর দুপুরে বের না হতাম। তাহলে আম্মুও ধীরে সুস্থে ঠান্ডা মাথায় চুড়ি গুলো খোলার কথা মনে রাখতে পারত। আম্মুর শখের চুড়ি গুলো খোয়া যেত না এইভাবে। তখন সবাই বলেছিল.....চুড়ি গেছে সেটা না হয় আবার আসতে পারে,কিন্তু জানে বেঁচে গেছি সেটার জন্য আল্লাহর কাছে অসংখ্য ধন্যবাদ। জীবনের তো কোন বড় ক্ষতি হয়নি ঐটাই বড় কথা....


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।