"পসার বিকিয়ে চলি জগৎ ফুটপাতে, সন্ধ্যাকালে ফিরে আসি প্রিয়ার মালা হাতে"
কালপুরুষের দোষ
কালপুরুষ। এই সামহয়্যারইন ব্লগের একটি নিক। এই নিকের আড়ালে রয়েছে একজন মানুষ। একজন সাধারণ মানুষ। অন্য সবার মত সেই মানুষটিও রক্তে মাংশে গড়া।
সে কোন ফেরেশতা নয়। সে কোন অতিমানব নয়। সে কোন মহাপুরুষ নয়। সে শুধুই একজন মানুষ। আর দশজন মানুষ থেকে সে মোটেও আলাদা কেউ নয়।
কালপুরুষ নিকের মানুষটি সামহয়্যারইন ব্লগের একজন নিয়মিত ব্লগার। আর এই নিকের পেছনের মানুষটিকে বাস্তব জীবনে অনেকেই চেনেন। অনেকের সাথেই তার পরিচয়। অনেকের সাথেই তার ঘনিষ্ঠতা। অনেকের সে খুব কাছে মানুষ।
তাই আড়াল বা গোপন বলে তার কিছুই নেই। তার কোন প্রয়োজনও নেই। ৩১শে ডিসেম্বর ২০০৫ সালে তার এই সামহয়্যারইন ব্লগে অভিষেক। টিকে থাকা গুটি কয়েক পুরোনো ব্লগারদের মধ্যে সে একজন- এমন দাবী সে করতেই পারে। দীর্ঘ টানা দুই বছরের অধিক সময় ব্লগিং জীবনে সে অযথা কারও পেছনে লাগেনি, কাউকে সে উত্যক্ত করেনি, অহেতুক সে কারও সাথে বচসায় লিপ্ত হয়নি।
সে কাউকে গালি দিয়েছে এমন নজির নেই বললেই চলে।
আগেই বলেছি কালপুরুষ নিকের আড়ালে সে একজন মানুষ। তাকে সবাই ভদ্র ও মার্জিত ব্লগার হিসেবেই জানে। তবে হঠাৎ আজ কেন সে এতো খারাপ হলো? আজ কেন তার মুখে সেইসব কথা বের হলো যার কারণে তাকে অনেকেই গালিবাজ বলতে দ্বিধা করছে না? কেউ কী কখনো শুনেছেন এক হাতে তালি বাজে? বাজার কথা নয়। একটা মানুষকে দিনের পর দিন ব্যক্তি আক্রমণে কোণঠাসা করার পর সেই ব্যক্তির পিঠ যে দেয়ালে ঠেকতেই পারে সেটা তাদের জানা ছিলনা।
কিছু বিকৃত ও বিকলাঙ্গ মানসিকতার ধারক ও বাহক এবং তাদের সমর্থনপুষ্ট এক শ্রণীর পঙ্গপাল যারা অশ্রাব্য গালি দিয়ে, অশ্লীল ও আপত্তিকর মন্তব্য দিয়ে, মানুষকে হেয় ও উত্যক্ত করে দিনের পর দিন মজা লুটতো- তাদের সেই মনোপলি ব্যবসায় হঠাৎ মন্দাভাবে তারা রীতিমত আতঙ্কিত হয়ে পড়লো। যে অস্ত্র দিয়ে তারা অন্যদের আঘাত করতো সেই অস্ত্র যখন একের পর এক তাদের আঘাত করতে লাগলো তারা তখন সমস্বরে “ম্যা” “ম্যা” করে চীৎকার করে সুশীলদের গুহায় আশ্রয় নিল। তাদের সেই ভোতা অস্ত্র বুমেরাং হয়ে তাদেরকেই এমনভাবে কুপোকাত করবে তাদের জানা ছিলনা। কালপুরুষের শাণিত অস্ত্রে ঘায়েল হওয়া স্বজাতীয়রা দগদগে ঘা নিয়ে মিছিলে নামলো। সাধারণ ব্লগারদের করুণা ভিক্ষার আশায় শুরু হলো তাদের পোষ্টের পর পোষ্ট আর আঘাতের কপি-পেষ্ট।
সাধারণ মানুষ চিরকালই দুস্থদের সেবায় এগিয়ে আসে। তাদের আর্তচীৎকার শুনে অনেকেই এগিয়ে এলো। এলো স্বয়ং সামহয়্যায়ইন ব্লগ কর্তৃপক্ষ।
ব্লগার কালপুরুষ আকাশের সেই নক্ষত্রপুঞ্জ নয়। সে কোন “আদমসুরত” নয়।
সে খোদ আদম। এক আদম সন্তান যদি আরেক আদম সন্তানকে নানা ভাবে তার দম আটকানোর চেষ্টা চালায় তবে দম ফেলবার প্রয়োজনে তারও বেদম জোড়ে আঘাত করার অধিকার আছে। সবাই বলবেন গালিবাজরা গালি দিক, আপনি ভদ্র আপনি কেন দেবেন? অকাট্য যুক্তি। কিন্তু আমি মানতে পারলামনা। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বাঁশের তীর-বল্লম নিয়ে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি ছিল ঘরে ঘরে।
কারণ তখন সাধারণ বাঙালীর হাতে আধুনিক অস্ত্রসস্ত্র কিছুই ছিলনা। যুদ্ধ বিশারদরা বলেন, যুদ্ধ হবে সেয়ানে সেয়ানে, সমানে সমানে। কিন্তু পাকবাহিনীর আধুনিক অস্ত্রের কাছে তীর-বল্লম তখন কিছুই নয়- তবুও স্বাধীনচেতা বাঙালীদের দমিয়ে রাখা যায়নি। যুদ্ধ করার মনোবলটাই অনেক। মনোবল চাঙ্গা থাকলে যুদ্ধে জয় সময়ের ব্যাপার।
গালি যদি তাদের অস্ত্র হয় তবে আমি সেই যুদ্ধ মোকাবেলা করতে সেই অস্ত্র ব্যবহার করবোনা কেন? তারা আমাকে একের পর এক যে অস্ত্র দিয়ে আঘাত করবে আমার কাছে সেই অস্ত্র থাকা সত্ত্বেও কেন আমি তা ব্যবহার করতে পারবো না? কথায় আছে যুদ্ধে ও প্রেমে সবই জায়েজ। তাদের সাথে আমারও এটা এক ধরণের যুদ্ধ। হয়তো প্রেক্ষাপট ভিন্ন। অস্ত্র ভিন্ন। কৌশল ভিন্ন।
এটা স্বাধীনতার মাস। আমি স্বাধীনতা যুদ্ধ খুব কাছে থেকে প্রত্যক্ষ করেছি। এক একদিনের ঘটনা ও দৃশ্য মনে করলে এখনো গা শিউরে ওঠে। এই বয়সেও রক্তে নাচন লাগে। দেশ স্বাধীন হয়েছে, যুদ্ধ শেষ হয়নি।
আজ আমি গালিবাজ, নোংরা একজন মানুষ- তবুও আমার আমার পরিচয় সকলেই জানে। কিন্তু নিকের আড়ালের হে গালিবাজ মহামানব তোমরা তোমাদের পরিচয় দাও- তোমরা কারা? নিকের আড়ালে তোমরা যে এক একটা রাহজাকার নও তার প্রমান কি? তোমাদের পরিচয় জানার অধিকার সবারই আছে। নিক সর্বস্ব জন্তু না হয়ে মানুষের পরিচয়ে আসো। তোমাদের সবাই চিনুক।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।