আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলাদেশের গ্যাংওয়্যার-১! অযাচিত পর্যবেক্ষন।

আসেন দুর্নীতি করি। আর এই দুনিয়াটাকেই খুচাই!

বেতাল দেশের বেতাল খবর! কে কার পিছে লাগে কে কার আগে লাগে সেটা বুঝা যায় অফিস টাইমের গাড়ীর দৌড় দেখলে। এক গাড়ীর সাথে এক গাড়ী লাগিয়ে দিলে দেখা যায় মাল্টিডাইমেনশনাল এ্যাকশন। মাঝে মাঝে মনে হয় এ জাতি যদি যুদ্ধবাজ হতো তাহলে দেখা যেতো কেউ কিছু বললেই গ্যাংওয়্যার-বাহারী স্টাইলের ফাইট। তবে বাংলাদেশে বর্তমানে যেটা হয় সেটা শ্রেফ ছোটখাটো কারন।

অবশ্য তাতেও ভাব আছে। যেমন আমাদের এলাকায় একটা মেয়েকে পছন্দ করে দুটো ছেলে। সমস্যা হলো মেয়েটার ফ্যামিলি কিছুদিন হলো এলাকায় এসেছে আর ছেলে দুটো এখানকার স্হানীয়, একসাথে স্কুল পাশ দিয়েছে, একসাথে আড্ডা দেয়, একসাথে ঝামেলা পাকায়। কিন্তু হঠাত শুনি একজনের পেটে আরেকজন ছুড়ি মেরে এলাকা ছাড়া। র‌্যাবের গাড়ী পুলিশের কাভার্ড বাড়ীর সামনে ঘুর ঘুর করে।

এক গ্রুপ আরেক গ্রুপের ফ্যামিলিকে দেখলে মারামারি কাটাকাটি। পাড়ার মধ্যে দেখা যায় র‌্যাবের ক্যাম্প বসাতে হয় অস্হায়ী ভাবে। সাধারন লোকের ভোগান্তি-স্বস্তি দুটোই উধাও। তবে এতো কিছু কি নিয়ে- জাস্ট একটা মেয়ে। এমন হতো এলাকার আধিপত্ব বা চাদাবাজীর বখরা, অথবা টেন্ডারবাজী-তেমন কিছুই না।

সব ননপ্রোডাক্টিভ কাজ। ছোটকালে র‌্যাপ যখন শুনতাম টুপ্যাক শাকুরের র‌্যাপ গুলো মনে বাজতো। যখনই শুনতাম তখন মনে হতো এটাই জীবন। হঠাত শুনলাম একদিন টুপ্যাক শাকুর আর নাই, পরে আরও যেটা শুনলাম সে মারা গেছেন শটগানের গুলি বুকে নিয়ে এবং এ ঘটনায় দেখা যায় ব্যাংক ডাকাতীর ঘটনাও নাকি জড়িত। অবশ্য কৃষ্ঞাঙ্গ যারা র‌্যাপার আছে তাদের সবারই ভাব আছে গ্যাংস্টার হবার।

মাঝে মাঝে মনে হয় র‌্যাপার যদি গ্যাংস্টার না হয় তাহলে তার র‌্যাপ গাওয়াটাই বৃথা। তবে আমাদের দেশে এ কালচার এসে গেলে সবার মাথায় হাত, কারন এমনেই দেশে টাকা বড়ই কম তার উপর এসব দুর্ধর্ষ ডাকাতী। এখন রুট লেভেলে খুব একটা চাদাবাজী দেখা যায় না। ৯০ বা ৮০ এর দশকে দেখা যেতো পাড়ার ডেয়ারিং ছেলেটা এসে দোকানে ঘুর ঘুর করছে। যখন মালিক দোকান থেকে একটুকু বের হলো তখন তাকে ঠেক দিয়ে বললো,"ভাই জান ভালো আছেন? ব্যাবসা বানিজ্য কেমুন চলে? তা সামনে তো পুজা।

এলাকার ছেলেগো জন্য কিছু চাদা লাগে যে! বেশী না ৫০,০০০ দিলেই হইবো। এই নেন স্লীপ!" মালিকের সেদিন থেকে ঘুম নেই। কারন সেই স্লীপ নিয়ে পুলিশ সুপারের কাছে গেলে কোনো কাজ হয় না, বরংচ তার পরের দিন একটু কঠিন ভাষায় গালি দিয়ে আরেকটা স্লীপ ধরিয়ে দিয়ে বলবে ১,০০,০০০টাকা। তখন গোদের উপর বিষ ফোড়া। এটার প্রকোপ ছিলো সবচেয়ে বেশী ৮৭-৮৮ এর দিকে তার পর ৯১-৯৩, তারপরে ৯৭ থেকে ২০০২ পর্যন্ত।

তারপর যা চলেছে সেগুলো হাজার গুনেনা, কোটি, আর যেহেতু কোটি সেহেতু সবগুলোই উপরের লেভেলে। দেখা গেলো মধ্য এবং নিম্ন আয় সমমানের ব্যাবসায়ীরা একটু স্বস্তি পেলো। একটা সাধারন ঘটনা দেখাই, চট্টগ্রাম ইউনি এর আশেপাশে বা ভিতরের দোকান গুলোতেও কিন্তু রেগুলার ছাত্রনেতাদের চাদা দেয় বাকী খাওয়ায়। বিএনপি বা আ.লীগের আন্ডারে যখন দেশটা থাকে তখন তাদের বেশ সমস্যা থাকে কারন হলগুলো থাকে এদেরই আন্ডারে। মাস শেষে বখরা, আবার দৈনিক বখরা, অমুক হলের নেতার বখরা, তমুক হলের ধার, সব মিলে বেসামাল অবস্হা।

তবে তারা খুব শিবির খুব পছন্দ করে। অবশ্য এর পিছনেও কারন আছে। সেটা হলো জামাতের এখানে একটা শক্ত ঘাটি থাকার সুবাদে এলাকার আশেপাশে যত বসতী আছে দেখা যায় সব বাসাতেই কারো না কারো শিবির নেতার সাথে আত্নীয়তা বা সুসম্পর্ক বিদ্যমান। এর ফলে দেখা যায় যখন হলগুলো মোটামুটি শিবিরের দখলে থাকে তখন মাসে মাসে একটা নির্দিস্ট অংকের চাদা দিতে হয়, আর যখন খেতে আসে কোনো নেতা তখন স্বভাবতই আত্নীয়তার সুযোগে কেউ টাকা নেয় না, প্লাস সাথে পায় আলাদা সিমপ্যাথী। আর এসব শিক্ষিত জায়গায় দেখা যায় বাস্তব গ্যাংওয়্যার যখন হল দখল হয়।

অবশ্য এজন্য ছাত্রদের উপর আলাদা একটা বিরক্তি সবাই প্রকাশ করে আর এজন্য দিনকে দিন সরকারী ইউনি গুলো তার আকর্ষন হারাচ্ছে আর জমে উঠেছে প্রাইভেট ভার্সিটি বাণিজ্য! আমি আরেকটা উদাহরন দেই, আমার এক বন্ধু চট্টগ্রামের স্হানীয়। ওর কাছ থেকেই শোনা, উত্তর মাদরাসা নামক এলাকায় নাকি একসময় মাদ্রাসার ছাত্ররা নানা অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষন নিতো। চট্টগ্রামে ৯৬ এর আগ পর্যন্ত এগুলো চলেছিলো। ওখানে বেশ কিছু আন্ডারগ্রাউন্ড ইসলামিক দল ছিলো যারা তখন শরীর চর্চার নামে এসব ট্রেনিং নিতো। এরচেয়ে কড়া ট্রেনিং গুলো হতো পার্বত্য এলাকায় যখন পার্বত্য শান্তী চুক্তি ছিলো না।

রাঙ্গামাটি, বান্দরবন তখন নাকি এখনকার মতো ইচ্ছে করলেই যাওয়া যেতো না। যারাই গহীনে যাবার চেস্টা করতো তারাই কিছু না কিছু এক্সপেরিয়েন্স নিয়ে আসতো। ইদানিং এটা অনেক কমে গেছে। আমার এক বন্ধু যেটা বলেছিলো সেটা হলো তারা জাস্ট একবার জুম পাহাড় দেখতে গিয়েছিলো কাপ্তাইয়ের দিকে। কাপ্তাই এলাকাটা সম্পর্কে একটা কথা বলি।

যেকোনো পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র একটা লস প্রজেক্ট। সস্তার কারনে যত মেগাওয়াটেরই পাওয়ার স্টেশন তৈরী হোক না কেন, দীর্ঘ সময়ের জন্য এটা অবশ্যই একটা লস প্রজেক্ট। কারন সামান্য স্হানীয় বসতীও সেখানে বিদ্যমান থাকে তাহলে তারা অস্তিত্বের সংকটে পড়ে এবং সেখানে অবশ্যই ইকোসিস্টেমের ব্যালেন্স নস্ট হয়। সে কারনেই হোউক ওখানে যারা উপজাতী থাকতো তাদের মধ্যেও দানা বেধেছিলো অস্তীত্ব রক্ষার লড়াই। সেখানে একবার আমার কয়েক বন্ধু মিলে চা বাগান দেখতে যায় খড়স্রোতা নদী পার হয়ে।

আমি আসলে ও জায়গায় ২০০০ এর পর গিয়েছিলাম, এবং বিশ্বাস হোক বা নাই হোক সাইবেরিয়া নামের একটা কম্পিউটার গেমস খেলেছিলাম, সেখানকার দৃশ্য গুলো ছিলো অনেকটা সেরকম। স্বপ্নের সাইবেরিয়া! যাই হোউক ওরা যখন চা বাগান পার হয়ে পাশের পাহাড়ে উঠবে বলে ঠিক করলো, তখন একজনের খেয়াল পড়লো এক উপজাতী জাস্ট পাহাড়ের উপর দাড়িয়ে আছে একটা এক নলা বন্দুক কাধে করে। গায়ের গড়ন আর স্টাইল দেখে মনে হলো ওয়েস্টার্ন সিনেমার ক্লায়েন্ট ঈস্টউড বন্দুক হাতে। এক বন্ধু যখন ক্যামেরা হাতে নিলো এই পোজটা ধরার জন্য, তখন ঐ উপজাতী জাস্ট বন্দুকটা তার দিকে তাক করলো। এই ভয়াবহ দৃশ্য তারা কেউ সহ্য করতেপারেনি, যার ফলে ওখান থেকে চলে আসার প্রায় ৮-৯ বছর পর আমাদেরকে নিয়ে গিয়েছিলো শুধু এ গল্পটা বলার জন্য।

(*আমার এ গল্পটার লেখার কোনো উদ্দেশ্য নেই, শুধু পুরোনো স্মৃতির ঘাটতে গিয়ে বাংলাদেশে কিভাবে গ্যাংওয়্যার হয় এবং তার ধরন সম্পর্কে লেখতে ইচ্ছে হলো। কিছু আছে আমার চোখে দেখা কিছু আছে আমার শোনা। তবে সবগুলোই নাম বিকৃত এবং রেফারেস্ন ছাড়া!)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.