আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নাটক - মাউসট্রাপ , অগাথা ক্রিস্টি, (১৮৯০-১৯৭৬)



নাটকটির সারসংক্ষেপ : নাটকটি শুরু হয় একটা হত্যাকান্ড দিয়ে। রেডিওতে ঘোষনা করা হচ্ছে হত্যাকান্ড নিয়ে নানান রিপোর্ট। অন্য পাঁচ খুনের সংবাদের মত করেই সাধারণ মানুষ সহয ভাবেই নিয়েছেন সংবাদটা। তাই ঘটনাটি কোনো মানুষের কাজে তেমন কোনো প্রভাব ফেলেনি। মলি- জিলস পরিশ্রমী ও আন্তরিক নব দম্পত্তি।

তাদের সুখের সংসারে বাড়তি সচ্ছলতা আনতে দু' জন মিলে সমান মালিকানায় একটা গেস্ট হাউজ খুলেছেন মলির খালার বাড়িতে। গেস্ট হাউজটিতে সাইনবোর্ডসহ ছোট ছোট নানান ভুল ও সমস্যা থাকলেও দু'জনার আন্তরিকতায় এতটুকু কমতি নেই। তারা নিজেদের প্রস্তুতি নিয়ে সন্তুষ্ট না তাই ভয় পাচ্ছে এরই মাঝে রেডিওতে হত্যাকান্ডের রিপোর্টগুলো শুনছে। অনেক বরফ পরছে আবহাওয়া খুব খারাপ তাই আবহাওয়া অফিস শহরে গাড়ি চালাতে নিষেধ করেছে। এই আবহাওয়ার মধ্যেও গেস্ট হাউজে একে একে গেস্ট আসতে শুরু করেছেন।

সর্বপ্রথম যে গেস্ট আসেন তিনি একজন যুবক নাম ক্রিস্টোফার । বন্ধুত্ত্বসুলভ আচারণের কারণে মুহূর্তেই গেস্ট হাউজ- এর সাথে মিশে যায় এবং মলির কাজে বন্ধুর মত হাত লাগায়। ব্যপারগুলো জিলস মোটেও পছন্দ করেন না। দ্বিতীয় গেস্ট মিসেস বয়েল ও মেজর মেটকাফ তারা একই ট্যাক্সিতে ভাগাভাগি করে এসেছেন কারণ যাতায়াতের তেমন কোনো সুব্যবস্থা ছিল না। মিসেস বয়েল বেশী প্রত্যাশী স্বভাবের সেই সাথে নিয়ম-রিতীর বেলায় সোজা আঙ্গুরের মত, কড়া।

তাইতো গেস্ট হাউজে ঢুকেই রেলস্টেশন থেকে আসার ভোগান্তি ও হাউজের পুরানো হাল নিয়ে কথা শোনাতে থাকেন মলি ও জিলসকে । মেজর মেটকাফ রিটার্য়েড আর্মি। তিনি খুবই ধৈর্য্যশীল ও ভালো মানুষ। সর্বশেষ গেস্ট মিস কেসওয়েল। পুরুষের মত স্বভাবের একজন যুবতী।

তার পোষাকের সাথে পুরো মিলে যায় রেডিওতে ঘোষনা দেয়া হত্যাকান্ডের হত্যাকারীর পোষাকের সাথে। সব গেস্ট সময় মত চলে এসেছে দেখে মলি- জিলস খুশি হয়েছেন। তারা দু'জন কথা বলছে এরই মধ্যে একজন অনাকাঙ্খিত গেস্ট প্যারাভিসিনি এসে উপস্থিত হয়। প্যারাভিসিনির গাড়ি বরফে নষ্ট হয়ে গেছে তাই তিনি এখানে থাকতে চান । প্যারাভিসিনি আচারণগুলো সন্দেহজনক এবং সব স্বাভাবিক ব্যাপারগুলোকেও তিনি রহস্যজনক করে তুলেন তাই কেউ তাকে তেমন একটা পছন্দ করেন না।

গেস্ট হাউজটি গোছানো ও ফর্মাল না। তাই সব গেস্টদেরই কম বেশী অভিযোগ আছে কিন্তু অভিযোগের মাথা খানিকটা নুয়ে যায় মলির হাতের মজার খাবার ও সুন্দর পরিবেশণের কাছে। গেস্ট হাউজটি ভালো-মন্দ নিয়ে হেলেদুলে ভালোই চলছিল। গত কালের হত্যাকান্ডের বাতাস হঠাৎ এসে থামিয়ে দেয় গেস্ট হাউজটিকে। হাউজটিতে একজন ডিটেক্টিভ সার্জেন্ট আসেন ও গত কালের হত্যাকান্ডের একটি তথ্য দিয়ে সদস্যদের অবগত করেন ।

তথ্যটি হলো লাশের পাশে একটি নোটবুক পাওয়া গেছে যাতে দু'টি ঠিকানা- নিচে লেখা ছিলো এইটা প্রথম। তিনটি ইঁদুরের ছবি আঁকা ও একটি গানের সুর পাওয়া গেছে। গানটি নার্সারীর কবিতা- থ্রী বাইন্ড মাইস। খুনি নার্সারী কবিতা দিয়ে হয়তো তার বাল্যকালের সাথে সম্পর্কীত কোনো কিছু আর তিনটি ইঁদুর দিয়ে তিনজনকে বুঝিয়েছেন। সুতরাং লংরিজ ফার্মের সাথে এখানের কোনো সদস্যদের কোনো রকমের যোগাযোগ আছে কী না বা ছিল কী না তা চেক করতে ডিটেক্টিভ সার্জেন্ট ট্রটার এখানে এসেছেন।

সন্দেহ দূর করতে ট্রটার একজন একজন করে সব সদস্যদের সাথে কথা বলেন। জানতে চেষ্টা করেন যে হাউজটির কোনো সদস্যদের লংরিজ ফার্মের ঐ বাচ্চাদের সাথে সম্পর্ক ছিল কী না। জবাব আসে- না। গেস্ট হাউজ- এর সদস্যদের নিজেদের কথাবার্তার মধ্যে বেড়িয়ে আসে যে একজনের সম্পর্ক আছে ঐ বাচ্চাদের সাথে তিনি হলেন মিসেস বয়েল। মিসেস বয়েল ঐ সময়ে ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন।

তখন মিসেস বয়েলের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করেই গতকালের হত্যাকারী ও তার বড় এক ভাই- এক বোনকে লংরিজ ফার্মে পাঠানো হয়। ফার্মে ফার্মার্ ও তার ওয়াইফের অত্যাচারে বড় ভাই জিমি মারা গিয়েছিল। হয়তো জিমি তার নির্মম পরিণতি বুঝতে পেরেছিল আর তাই উদ্ধারের সাহায্য চেয়ে চিঠি লিখেছিল তার পছন্দের শিক্ষীকার কাছে। কিন্তু শিক্ষীকার কাছ থেকে কোনো সারা মেলেনি। আর বোনটিকে কেউ দত্তক নিয়েছিলেন।

গতকাল লন্ডনে ছোট ভাইটিই হত্যা করেছে সেই ফার্মারের ওয়াইফকে। বাইরে বরফ পরে দরজা পর্যন্ত বন্ধ হয়ে গেছে তার উপর এই মাত্র ফোনটিও ডেড্ হয়েগেলো। সবকিছু মিলিয়ে পরিবেশ কেমন যেন হয়ে উঠেছে। মলি খুবই ভয় পাচ্ছে। জিলস মলিকে শান্ত করে।

প্যারাভিসিনি অবশ্য পুরো ব্যপারটিকে দেখছেন মজা নেওয়ার বিষয় হিসেবে। ট্রটার জিলসকে একটি কাজ দিয়ে নিজ হাতে ফোনের লাইনটি চেক্ করতে চলে যায়। মেজর যান আগুনের জন্য কাঠ-কয়লা আনতে। আজ সন্ধ্যাটা যেন একটু তারাতারিই এলো। মলি চলে যায় রান্না করতে।

মিসেস বয়েল ফায়ার প্লেজের কাছে গিয়ে, একটু দু'পা হেটে রেডিও চালিয়ে চিঠি লেখার জন্য বসে। মিসেস বয়েলের কাছে কেউ একজন আসে। মিসেস বয়েল তাকে দেখে কথা বলে। কিন্তু যিনি এসেছে তিনি কোনো কথা বলেন না বরং রেডিওর ভলিওম বাড়িয়ে দেয়। সুইচ বন্ধ করে ঘরকে অন্ধকার করে দেয়।

মলি ঘর অন্ধকার দেখে রুমে আসে। আলো জ্বেলে রেডিওর ভলিওম কমিয়ে পিছন ফিরেই গলাফাটা চিৎকার দেয়। গতকালের হত্যাকারী (তার দ্বিতীয় ইঁদুর) মিসেস বয়েলকে হত্যা করেছে। মিসেস বয়েলের হত্যা সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছেন। মলি ভয়ে জড়ো হয়ে গেছে।

এবার ট্রটার আগের থেকেও বেশি সাবধান ও কড়া তদন্ত করছেন। ছোট ছোট বিষয়গুলোকেও ছোট করে দেখছেন না তিনি। একটা বিষয়তো নিশ্চিত হত্যাকারী এখানেই আছে। মিসেস বয়েলের হত্যার সময় কে কোথায় ছিল সে অবস্থানগুলো ট্রটার সবাইকে ডেকে জেনে নোট করে রাখেন। কিছু সময়ের মধ্যেই গেস্ট হাউজটি হয়ে উঠে সন্দেহের যুদ্ধত্রে।

যেন ট্রটারের নেতৃত্তে সবাই সন্দেহ যুদ্ধে নেমেছে। যুদ্ধের নিয়ম অনুযায়ি নিজেকে বাঁচিয়ে অন্যকে আক্রমণ করে চলছে একে- অপরকে। সন্দেহের আঘাতে সবচেয়ে বেশী আহত হয়ে যায় ক্রিস্টোফার। ক্রিস্টোফারের দু:সময়ে সত্যিকারের বন্ধুর মতো হাত বাড়িয়ে দেয় মলি। আর এই বন্ধুত্তের মূল্য দিতে হয় মলি ও জিলসের একে- অপরের প্রতি অবিশ্বাসের মধ্যে দিয়ে ।

এতকিছুর পরও যখন কোনো কিছুই হচ্ছিল না, তখন ট্রটার একটা ফাঁদ পাতলো। ট্রটারের ফাঁদে পরলো শিকারী ও শিকার। শিকারী হলো ট্রটার নিজে আর শিকার হলো মলি। মলিই সেই শিক্ষীকা যার কাছে জিমি চিঠি লিখেছিল। ট্রটার কোনো ডিটেক্টিভ সার্জেন্ট নয় সে জিমির ছোট ভাই।

তার নাম জর্জি। মলি তার অপারগতা স্বীকার করে। কাঁদতে কাঁদতে জানায় জিজির জন্য আজও তার দু:খ হয়। মলির ঐ সময়ে নিওমোনিয়া ধরা পরেছিল তাই জিমির সাহায্যে সে আসতে পারেনি। কিন্তু জর্জি তা মানতে পারে না।

তাই এক পর্যায়ে জর্জি মলির গলা টিপে ধরে। এমন সময়ে ঐ স্থানে ফেরেস্তার মতো কেসওয়েল আসেন। কেসওয়েল বুঝতে পারেন যে- জর্জি তার হারানো ছোট ভাই। তার নাম ধরে ডাকেন। স্বস্নেহে বুকে জড়িয়ে ধরেন।

কেসওয়েল তার পরিচয় দেয়। কেসওয়েলের নাম ক্যাথি। দু' ভাই- বোন আবেগে উৎফুল্ল যায়। মলি ফাদেঁ পরেও মুক্তি পায়। তিনি প্রাণে বেঁচে যান।

আজ মলি ও জিলসের বিবাহ বার্ষিকী। শেষ ভালো যার সব ভালো তার এই মতে এক মত হয়ে গেস্ট হাউজটির সদস্যরা সবাই আনন্দে মাতে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.