আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ডিটেকটিভ গল্প: সেলিব্রিটি প্রবলেমস কন্টিনিউড (৩য় অংশ)

যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে, ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

১ম অংশ এখানে ২য় অংশ এখানে *************************************************************** ৬. রায়হান যে খুন করেনি, সে বিষয়ে হাসনাইন এখন মোটামুটি নিশ্চিত। একই সাথে নিজের ভেতরে সে যে তাড়াটা অনুভব করছে তা হলো, খুব দ্রুতই পরের পদক্ষেপটা নিতে হবে, তা নাহলে আসামী ফসকে যাবে চিরতরে। করিডোরে বেরিয়ে এসে একটু আগে দেখা হওয়া মেয়েটি, অর্থাৎ রায়হানের বোনকে খুঁজে না পেয়ে প্রায় দৌড়াতে দৌড়াতে হাসনাইন ছুটে যায় মূল ফটকের দিকে, সেখানে কালামকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে। চটপট জিজ্ঞেস করে মেয়েটির কথা। কালামের খেয়াল করার কথা না, সে কিছু বলতও পারেনা।

খানিকটা হতাশ হয়ে সে শ্রাগ করে, কালামকে বলে রাখে যে হেরিটেজ ক্লাবের ম্যানেজার বিপুল সাহেবকে যদি কোথাও দেখতে পায় তবে যেন তৎক্ষণাৎ হাসনাইনের সাথে দেখা করতে বলে। এদিকে হাসনাইনকে তড়িঘড়ি করে বের হতে দেখে রাজুও ছুটে আসে, করিডোরে দাঁড়ানো হাসনাইনকে পাকড়াও করে একপাশে নিয়ে যায়। নীচু স্বরে জিজ্ঞেস করে, "কি হলো হাসনাইন ভাই? নতুন কিছু পাওয়া গেল?" হাসনাইনও গলা নামিয়ে উত্তর দেয়, "শোনো রাজু, আমার ধারনা, না না , আমি প্রায় নিশ্চিত রায়হান খুনটা করেনি। অন্য কেউ। রায়হানকে ফাঁসিয়ে দেয়া হয়েছে।

" "কি বলেন?" রাজু উড়িয়ে দিতে চায়। তার ধারনা আগের রেশমা কেইসের সমাধানের পর হাসনাইনের আত্মবিশ্বাস অতিরিক্ত পরিমাণ বেড়ে গেছে। রাজুর এই আশংকাও হয় যে এই সেলিব্রিটি প্রকৃতির আত্মবিশ্বাসই তাকে ডোবাবে। রাজুর মুখোভঙ্গি দেখে হাসনাইনের বোঝার বাকী থাকেনা যে সে কনভিন্সড হয়নি। প্রাণপণে সে রাজুকে বোঝানোর চেষ্টা করে, "মোবাইল ফোনটা খেয়াল করেছ? আলমগীর খানের?" "হ্যাঁ করেছি, কয়েক ফোঁটা রক্ত লেগে আছে।

", রাজু বলে। বলতে বলতে সে নিজেও ভাবতে চেষ্টা করে ঠিক কোথায় কি এমন ক্লু হাসনাইন ভাই খুঁজে পেল যে হঠাৎ করেই মামলাকে একশো আশি ডিগ্রী উল্টে দিতে চাচ্ছে! "ওটার মনিটরে দেখছ কি লেখা?" "কি?" "একটা এসএমএস জমা ছিলো। খেয়াল করনি?" "আরে না! মনিটর অফ ছিল তো!" "আহা! ঐ মোবাইল ফোনের উপরের অংশটুকু স্লাইড করলেই তো মনিটর অন হয়ে যায়। " "তাই নাকি? খেয়াল করিনি। তা কি লেখা ছিল, হাসনাইন ভাই?" "কি লেখা ছিল সেইটা রায়হানও জবানবন্দীতে অলরেডী বলেছে, কিন্তু তখন খেয়াল করিনি।

কারণ রায়হান বলেনি সে কখন এসএমএসটা করেছিল। এখন আমি মোবাইলে দেখলাম এসএমএস এসেছে সাতটা পঁচিশে, আর গুলশান থানার রাব্বি ভাই বলল তারা খুনীর কাছ থেকে ফোন পেয়েছে সাতটা উনত্রিশে। " বলে হাসনাইন একটু দম নেয়। রাজুর হাবভাব বোঝার চেষ্টা করতে করতে আবার বলতে শুরু করে, "এখন দেখ, সাতটা পঁচিশে রায়হান এসএমএসে লিখল আসতে পাঁচ মিনিট লাগবে, আর পুলিশ ফোন পেল উনত্রিশে; ধরলাম রায়হানের আসতে পাঁচ না, তিন মিনিটই লাগল; তাও তো বলতে পারি যে এক মিনিটের কথা কাটাকাটিতে মানুষ খুন হয়ে যায়না। তাইনা?" "কি জানি? হইতেও তো পারে।

হয়ত রায়হান খুন করবে আগেই প্ল্যান করে রেখেছিল, তাই ক্লাবে আসার পরে এস এম এস করেছে। " রাজু বলার চেষ্টা করে। "তাহলে তো রায়হানের হাতে আগে থেকেই পিস্তল বা ছোরা বা খুন করার কিছু থাকত। কারণ এই ছাইদানীটাও তো এমন না যে সবসময় মিটিংরুমে থাকে, আলমগীর খান ওটা দোতলা থেকে নামিয়ে এনেছে। " উত্তেজনা কমিয়ে এনে বেশ ঠান্ডা স্বরে বলতে থাকে হাসনাইন।

"হুমম, কি জানি, হতেও পারে। " রাজু বিশেষ পাত্তা দিতে চায়না, তাকে নিরুত্তাপই দেখায়। কিন্তু হাসনাইন প্রায় নিশ্চিত হয়ে যায়, মাত্র একদুই মিনিটের কথা কাটাকাটিতে মানুষ খুন হয়না। তাছাড়া, রায়হান আলমগীর খানকে তখনই খুন করতে পারে যখন আলমগীর তাকে বলবে যে কোনভাবেই সে রায়হানকে নাটকে নেবেনা। কিন্তু সেজন্য রায়হান তো কিছুটা সময় ধরে আলমগীরকে অনুরোধ বা অনুনয়/বিনয় করবেই।

আলমগীর বলল তোমাকে নাটকে নেবনা, আর সেটা শুনেই রায়হান হাতের কাছে এ্যাশট্রে দিয়ে আঘাত করে আলমগীরকে মেরে ফেলবে -- এমনটা হাসনাইনের কাছে কোনভাবেই গ্রহনযোগ্য হয়না। তবে রাজুর নির্লিপ্ততায় সে দমে যায়না, নতুন উদ্যমে কালাম এবং গুলশান থানা থেকে আসা আরো দুজন পুলিশ সদস্যকে নিয়ে আবারও যে ঘরটিতে খুন হয়েছে সেটিতে খুঁজে খুঁজে যতরকম খুঁটিনাটি প্রমাণ পাওয়া যায়, সব জোগাড় করে রাখতে বলে, আর নিজে বের হেয় যায় একটু বিশ্রাম নিতে। যদিও রায়হান যে খুনটা করেনি সে বিষয়ে তার বিশ্বাস একদমই টলেনা, তাও "আরো কিছু সলিড প্রমাণ দরকার" ভাবতে ভাবতে এন্ট্রান্সের ভেন্ডিং মেশিনের দিকে এগিয়ে যায় সে। করিডোরের এককোণে কফি হাতে বসে থাকতে থাকতেই হাসনাইন দেখতে পায় যে একটু আগের মেয়েটি আসছে, সোজা তারই দিকে। সাথে একজন বয়স্কমতো লোক, সম্ভবতঃ মেয়েটির বাবা।

এই দফা তাদের সাথে ঠিকমতো পরিচয় হয় হাসনাইনের। মেয়েটির নাম লিয়া, যা ভেবেছিল তাই, রায়হানের ছোটবোন। এবারও মেয়েটিকে দেখে একটু আগের মতোই অনুভূতি হয় তার -- "কোথায় যেন দেখেছি! কোথায়? কোথায়?" প্রচন্ডভাবে নিজের ভেতর অনুভব করতে থাকে হাসনাইন, রায়হানকে বাঁচানো ছাড়া এই মেয়েটির বন্ধুত্ব পাবার আর কোন উপায় নেই। নিজেকে সংযত করে লিয়াকে যথাসম্ভব স্বস্তি দেয়ার চেষ্টা করতে করতে হাসনাইন বলে, "লিয়া, ভেবোনা। তোমার ভাইয়া যদি আসলেই নিরপরাধ হয়, তাহলে আমি তাকে অবশ্যই বাঁচাতে পারবো।

" তবে লিয়ার চেহারা দেখে বোঝা যায়না হাসনাইনের এধরনের সান্ত্বনার বাণীতে ঠিক কতটুকু আস্বস্ত সে হয়েছে। ওদিকে হাজতে বসে ভয়ে, আতংকে আর বিস্ময়ে হতবাক, প্রায় আলাভোলা হয়ে যাওয়া রায়হানও জানতে পারেনা যে তাকে বাঁচানোর জন্য কি ভয়ংকর এক মোটিভেশন তৈরী হয়েছে এসময়ের সবচেয়ে বুদ্ধিমান গোয়েন্দা হাসনাইনের মাঝে। ৭. কালামের মতো অনুগত সহকারী হয়না। যা যা বলা হবে, সে অক্ষরে অক্ষরে পালন করবে। যদিও বুদ্ধিবৃত্তির অবস্থা বা আইকিউ অনুযায়ী ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চে তার থাকার কথা না, তাও শুধু এই একটি কারণেই এ ছেলেটিকে এখানে রাখা যায় বলে হাসনাইনের ধারনা।

ডিটেকটিভদের মাঝে যারা খুব মাথা খাটায়, তারা আবার কালাম যেসব কাজ হুটহাট করে ফেলে সেসব কাজ করতে খুব একটা আরামবোধ করেনা। সম্পুরক হিসেবে এমন লোকদের প্রয়োজনীয়তা বোঝা যায় স্পটে গেলে। একটু আগেও যা যা করতে বলা হয়েছে, বাকী যেসব আলামত টুকে রাখতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, কালাম তার বাহিনী নিয়ে সব একেবারে ঝকঝকে আপ-টু-ডেট করে রেখেছে। যোগাড় করা আলামতের তথ্যগুলোতে আবারও সতর্ক চোখ বুলায় হাসনাইন, খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে থাকে; তার বিশ্বাস একটা নিশ্চিত প্রমাণ অবশ্যই মিলে যাবে। আলামতে চোখ বুলোতে বুলোতেই কালামকে সে জিজ্ঞেস করে, "সব হাতের ছাপ যোগাড় হয়েছে, নিশ্চিত?" "হ্যাঁ, হাসনাইন ভাই।

মোটামুটি মানুষ টাচ করতে এমন সব জায়গা থেকে হাতের ছাপ নেয়া হয়েছে। ম্যাচিংও শেষ, এই ফাইলেই তো রিপোর্ট। " একটা পোলারয়েড ছবি হাতে নিয়ে হাসনাইন ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ছবির জিনিসটাকে দেখে, আবারও নিশ্চিত হবার জন্য জিজ্ঞেস করে, "এটাতে আসলেই কোন ছাপ পাওনি?" "না স্যার। কিচ্ছু পাওয়া যায়নি। " "রক্তের বা আঙুলের কোনটাই না?" "আঙুলেরই পাইনি, আবার রক্তের!!" কালামের কন্ঠে নিশ্চয়তার ছাপ।

আবারও মনের অজান্তে ফুটে ওঠা সেই হাসি দেখা যায় গোয়েন্দা হাসনাইনের মুখে, এবং এবার বেশ তাতে বেশ আত্মবিশ্বাসের ছাপ। সে নিশ্চিত হয়ে যায় যে, রায়হান কোনভাবেই খুনটা করেনি, খুনী অন্য কেউ। এমনকি রায়হানের এসএমএসটা পড়ার পরই যে খুনী গুলশান থানায় ফোন করেছিল সে ব্যাপারেও হাসনাইন নিশ্চিত হয়ে পড়ে। একই সাথে এই ধারনাটুকু করতেও তার কষ্ট হয়না যে, রায়হানের ক্লাবঘরে ঢোকার সময় এঘর থেকে খুনী নিজেই পাসওয়ার্ড দিয়ে রায়হানকে দরজা খুলে দিয়েছিল। মোট কথা, গুলশান থানায় পুলিশকে ফোন করা এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে দরজা খোলা -- দুটো কাজই যে খুনী করেছে, সে ব্যাপারে আর কোন সন্দেহ থাকেনা হাসনাইনের।

পড়িমড়ি করে সে বেরিয়ে যায় কনফারেন্স রুমের দিকে। তার সন্দেহের তীর শুধু একজনের দিকেই, তিনি কেউ নন, সাক্ষাৎ অভিনেতা সাদী মোস্তাফিজ! সাদী তখনও দাঁড়িয়ে বন্ধুদের সাথে গল্প করছে, এটা অপরাধীর সাধারণ মনস্তত্ব। সে ঘটনাস্থল ছেড়ে গিয়ে নিশ্চিতবোধ করেনা। বিশেষ করে যখন অন্য কাউকে ফাঁসিয়ে দেয়া যায়। হাসনাইনকে এগিয়ে আসতে দেখে খানিকটা বিরক্ত যে সে হয়না তা না, কিন্তু মামলার দায়িত্বপ্রাপ্ত ডিটেকটিভ অফিসার বলে কথা, অগ্রাহ্য করতে পারেনা।

হাসনাইন নির্বিকার ভাবে সামনে এসে দাঁড়ায়, যেন সাদী বিরক্ত হোক বা অন্যকিছু হোক তাতে তার কিছু যায় আসেনা। তারপর সাদীকে হাত ধরে টেনে নিয়ে যায় এককোণে, এবং বেশ দৃঢ়তার সাথেই বলে, "সাদী সাহেব, আপনাকে কিছু প্রশ্ন করার ছিল। " "আবার কি?" এবার আর আগের মতো বন্ধুসুলভ আচরণ দেখা যায়না সাদীর, তার বিরক্তি যেন চরমে ওঠে। "দেখুন স্যার, আপনাকে আমাদের সহায়তা করতে হবে, এটা একরকম সামাজিক দায়িত্ব বলতে পারেন। তা নাহলে দেখুন, আজ আলমগীর খান খুন হয়েছেন; কাল আপনি যে শিকার হবেননা, তার নিশ্চয়তা কে দেবে।

" "আপনি আমাকে ভয় দেখাচ্ছেন?" "আরে, না না। বলছি এ্যাক্সিডেন্টের সম্ভাবনা তো যে করো জন্য সমান। " "হয়েছে! লেকচার থামান। কি জানতে চান বলুন?" "সাদী সাহেব, আপনি আবার মনে করার চেষ্টা করুন তো, আপনি যখন করিডোরে বের হয়েছেন, তখন আর কাউকেই দেখতে পাননি? রায়হানকে না? কোনভাবেই না?" "আরে বাবা, বললাম তো না। আমি বাইর হইয়া সোজা গাড়ীতে উইঠা চইলা গেছি।

" সাদীর ভাষা ব্যবহারের পরিবর্তনে হাসনাইন টের পায় যে ভদ্রলোক আর মেজাজ ধরে রাখতে পারছেননা। "আপনি এটাও যে নিশ্চিত আপনি আজ এখানে এসেছেন, তাই তো?" "সেটা না হলে আমাকে প্রশ্নই করতেন না, তাইনা?" সাদী বুঝতে পারেনা কেন তাকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে এসব জিজ্ঞেস করছে। কিছুটা হতাশ বোধ করে সে, তবে ভেতরে ভেতরে কিছুটা আশংকিতও। "তাহলে আমি তদন্ত রিপোর্টে লিখে দিলাম যে আপনি যাবার সময় কাউকে দেখতে পাননি বলে দাবী করেছেন, ঠিক আছে?" "ঠিক আছে, স্যার!" অনেকটা খেদের সাথেই "স্যার" উচ্চারণ করে সাদী। হাসনাইন আমলে নেয়না।

"দেখুন, পরে কিন্তু বলতে পারবেননা যে আপনি ওটা বলেননি। " সাদী থতমত খায়, হাসনাইনের হাত খপ করে ধরে ফেলে, জিজ্ঞেস করে, "হাসনাইন সাহেব, বলুন তো কোন সমস্যা হয়েছে কিনা?" হাসনাইন খানিকটা নির্বিকারভাবে বলে, "না তেমন কিছু না, এমনিই"। বলেই মুখে একটা নিষ;ঠুর হাসি ফুটিয়ে তুলে জিজ্ঞেস করে, "কেন, ভয় পেলেন নাকি? স্যার!"। পুরোপুরি হতভম্ব হয়ে যায় সাদী, রাগে, বিস্ময়ে থরথর করে কাঁপতে থাকে। কড়া স্বরে গলা নিচুতে নামিয়ে বলে, "আপনি ফাজলামো পেয়েছেন? রেশমাকে ফাঁসিয়ে আপনার "সেলিব্রিটি ফিশ" ধরার শখ হয়েছে! না?" হাসনাইন আরো বেশী নির্দয় চোখে তাকায় সাদীর দিকে, বলে, নিজেকে গুছিয়ে নিতে খানিকটা সময় নিয়ে ধীরে ধীরে বলতে শুরু করে, "ক্লাবের অনলাইন ডেটাবেজের রেকর্ড অনুযায়ী আজ ঐ মিটিংরুমে মিশুদের উঠতি ব্যান্ডের পাঁচজন, নিহত আলমগীর খান, আপনি আর রায়হান ঢুকেছে।

" "তো কি হয়েছে? আমি তো বললামই আমি সোয়া সাতটার পরপরই বেরিয়ে এসেছি। " সাদী নিজেকে পরিস্কার রাখতে চায়। তবে সাদীর বক্তব্যকে প্রায় না শোনার ভান করে হাসনাইন বলে যেতে থাকে, "মিটিংরূমের টেবিল, চেয়ার আর আশ-পাশে বিভিন্ন বস্তু, মেঝেতে যতগুলো হাতের ছাপ পাওয়া গেছে সব চেক করা হয়েছে এক এক করে, বুঝলেন?" "তো?" আত্মবিশ্বাসের সাথে বলে সাদী, সে নিশ্চিত জানে যে কোথাও তার হাতের ছাপ থাকার কথা না। "এখন শুনুন, আসল কথা। ওখানে আজকে ক্লাবে আসা সবারই একাধিক আঙুলের ছাপ পাওয়া গেছে, আর সেটা খুবই স্বাভাবিক।

কিন্তু স্যার, অদ্ভুত ব্যাপার হলো, সারা ঘরের কোথাও আপনার একটিও আঙুলের ছাপ নেই! অথচ আপনার দু'হাতে গুণে গুনে দশটি আঙুল দেখা যাচ্ছে। " একটু জিরিয়ে নিয়ে হাসতে হাসতে হাসনাইন বলে, "আপনাকে সন্দেহ করব না তো কাকে করব, স্যার?" নিজেকে গুছিয়ে নেয়ার জন্য খুব দ্রুত চিন্তা করতে থাকে হতভম্ব সাদী। তবে সেদিকে বিশেষ পাত্তা না দিয়ে ধীরে ধীরে মুখে নির্দোষ হাসি ফুটিয়ে হাসনাইন বলে যায়, "একটা তেলাপোকাও কোন জায়গা দিয়ে হেঁটে গেলে ছাপ রেখে যায়, আর আপনি আসলেন, পঁয়তাল্লিশ মিনিট কাটালেন ঐ ঘরে অথচ সেখানে আপনার কোন ট্রেস নেই!" একটু আগে নিজে নিজে তৈরী করা "হাইটা যায়রে পোকা ..." প্রবাদটার এমন সুন্দর ব্যবহার যে এত দ্রুত করা যাবে ভাবতেই তার মুখের হাসি আরো বিস্তৃত হয়। হাসনাইন একাই কথা চালিয়ে যায়, একের পর এক যুক্তির গোলা ছোঁড়ে; বলে, "তার চেয়েও বড় কথা হলো, সাসপেক্ট রায়হান রক্তে মাখামাখি করে সারা ঘরের প্রায় সবকিছুতে হাতের ছাপ রেখে গেছে। অথচ সে গুলশান থানায় ফোন করল, আর সেই ফোনের রিসিভারে কোন রক্ত বা আঙুলের ছাপ নেই! " সাদীর মুখের ভাব পরীক্ষা করতে করতে হাসনাইন বলতে থাকে,"এখন আমাকে বলুন, গুলশান থানায় ফোনটা কি রায়হান করেছে, না অন্য কোন খুনী?" সাদী হতভম্ব।

সে চিন্তা করছে কি বলা যায়। দ্রুত কিছু মাথায় আসুক, খুব দ্রুত। কিন্তু কিছুই আসছেনা। বুঝতে পারছে যে কোথায় তার বিরাট ভুল হয়েছে। নিজে স্বীকার করেছে সে এখানে ছিল, অথচ তার কোন চিহ্ন সে রেখে যায়নি! অন্যদিকে হাসনাইনের মেশিনগানের গুলি যেন বন্ধ হচ্ছেনা।

সে একটানা বলে যাচ্ছে, "আরো সমস্যা আছে, সাদী সাহেব! এতক্ষণ পর্যন্ত যে সিনারিও কল্পনা করা হয়েছে, তাতে ভাবা হয়েছিল যে আলমগীর খান ইন্টারকমের বাটন টিপে পাসওয়ার্ড ইনপুট করে রায়হানকে দরজা খুলে দিয়েছে। কিন্তু ইন্টারকমের কী প্যাডে আলমগীর খানেরও হাতের বা আঙুলের কোন ছাপ পাওয়া যায়নি। তাঁর তো নিজের হাতের ছাপ মুছে রাখার কোন কারণ নেই, তাইনা? শুধু আলমগিরেরই না, সত্য বলতে, কী-প্যাডটিতে একটিও আঙুলের ছাপ পাওয়া যায়নি। তাহলে বলুন, পাসওয়ার্ডঐনপুট করে দরজা কে খুলে দিয়েছে রায়হানকে? নিশ্চয়ই যে খুন করেছে সে! তারপর প্যাডের বাটনে লেগে থাকা হাতের ছাপ মুছে ফেলেছে, অথবা কলমের ডগা দিয়ে বাটন চেপেছে। আপনি কি অমত করবেন?" "আমি কি জানি?" গোঁয়াড়ের মতো শব্দ করে প্রতিবাদ করে সাদী।

"সাদী সাহেব, অপরাধ লুকোনোর চেষ্টা কিন্তু আরেকটা বড় অপরাধ, আপনি ডাবল মামলায় ফেঁসে যাচ্ছেন। " হাসনাইন হাসতে হাসতে বলে। "চোপ!!! তোমার বাড় বেড়েছে, কি আমার ডিটেকটিভ আসছে!!" সাদী দিশেহারা হয়ে পড়ে, উন্মাদের মতো চিৎকার করতে থাকে, "আমি এক্ষুণি আমার ল'ইয়ারকে ডাকছি। তুমি জানো? তোমাদের আইজির সাথেও আমার পরিচয় আছে। তোমার ভিটেতে আমি ঘুঘু চরিয়ে ছাড়বো, বেশী বাড় বেড়েছে, তাইনা?" হাসনাইনও এবার রাগে জ্বলে ওঠে, কঠোর কন্ঠে বলে "সাদী সাহেব, মামলার দায়িত্ব আমার হাতে, এটা ভুলে যাবেননা।

আপনাকে আপাতত খুন হয়েছে যে ঘরে সে ঘরটাতে নজরবন্দী করা হলো। এখান থেকে আপনি নড়তে পারবেননা। কাউকে ফোন করতে হলে বলবেন, আমাদের লোক কানেক্ট করে দেবে। " সাদী ফুঁসছে, হাসনাইন হাসছে। আশেপাশের কেউ এতক্ষণ তাদের কথা শুনছিলনা, এখন চিৎকার চেঁচামেচি শুরু হলে সবাই হতভম্ব হয়ে তাকায়, আর দেখতে পায় তাদের খুব কাছের একজন মামলার সম্ভাব্য আসামী হতে যাচ্ছে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.