ইট মারলে পাটকেল খেতে প্রস্তুত থাকুন .....
গতকাল সম্মানিত ব্লগার যুকরূফা'র "বাংলাদেশ কে ইসলামি রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চাই" শীর্ষক এই পোষ্টে Click This Link "হলদে ডানা" তার মন্তব্যে মানব সম্প্রদায় কে মোবাইল ও কোরআনকে ক্যাটলগ বলে উদাহারন দিয়েছিলেন সহজ বোধ্যতার জন্য, সে প্রেক্ষিতে ব্লগার "মামড়া দ্যা এভার লিভিং" একটি ৮ টি প্রশ্ন সম্বলিত "টেলিফোন নির্দেশিকা আর কোরান একটি জীবনের বিধান" শীর্ষক পোষ্ট Click This Link করেছেন যা নিম্মরূপ:
"আজকা সকাল বেলা ঘুম ভান্গনের পরে এক ব্লগারের কমেনট থেকে নীচের তথ্যটুকু জানলাম
"নোকিয়া কোম্পানির মোবাইল কিনলো। বলুন তো এ মোবাইলটি সবচেয়ে ভালভাবে চলবে কি করলে। - একটি স্কুল ছাত্রও জবাব দেবে- মোবাইলের সাথে দেয়া ক্যাটালগ যে যত ভাল ভাবে অনুসরণ করবে, তার মোবাইল তত ভালভাবে চলবে। পৃথিবী যিনি সৃষ্টি করেছেন, এ আকাশ- সমুদ্র, মহাবিশ্ব যিনি সৃষ্টি করেছেন, যিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষকে অতপর মানুষের প্রতিটি প্রয়োজন পূরণ করছেন, যার দয়া ছাড়া মানুষ এক সেকেন্ড বেচে থাকতে পারে না, --------- অবশ্যই অবশ্যই তারই দেয়া ক্যাটালগ অনুসরণ করলেই এ মানবজাতি কল্যানপ্রাপ্ত হবে। সেটি বাংলাদেশ হোক কিংবা হোক আফ্রিকার দুর্গম জনপদ।
"
এখন প্রশ্ন আইসা যায় এটা কি ধরনের যুক্তি এবং একটি টেলিফোন নির্দেশিকার সাথে কিভাবে আল্লাহর বানী মিল বা অমিল থাকতে পারে। তো আসেন আলোচনা করি।
১. একটি টেলিফোন নির্দেশিকা প্রতিটি টেলিফোনের জন্মের সাথে আসে, কিন্তু আমরা জন্মানোর সময় মানুষ হিসাবে কোন নির্দেশিকা বহন করিনা। আমাদের সৃষ্টিকর্তা আমাদের মাতৃ উদরে আমাদের জন্য কোন নির্দেশিকা দেননা।
২. টেলিফোনের টেকনোলজিক্যাল এবং সোসলজিক্যাল আপডেটের সাথে সাথে নির্দেশিকা আপডেট হয়, কিন্তু কোরান ১৪০০ বছরে আপডেট করা যায়নি।
৩.। টেলিফোন নির্দেশিকা বিভিন্ন ভাষায় নাজিল হয়, কোরান মাত্র এক ভাষায় নাজিল হইসে।
৪. টেলিফোন নির্দেশিকাকে সফট ওয়ার প্যাচ ডাউনলোড করিয়া কাজ করানো যায়। কোরানের কোন প্যাচ ডাউন লোড নাই।
৫. বিভিন্ন ধরনের ফোনের জন্য বিভিন্ন ধরনের নির্দেশিকা থাকে, কোরান কিন্তু ওয়ান সাইজ ফিট অল টাইপ নির্দেশিকা।
৬. টেলিফোন নির্দেশিকা অবলম্বন করে কাজ না হলে, টেক সারভিসে ফোন করে কাজ করানো যায়। কোরান অবলম্বন করে কাজ না হলে কোন ফোন নাম্বার নাই।
৭. টেলিফোন নির্দেশিকার লেখক বহুজন। কিন্তু কোরানের লেখক মাত্র ১ জন।
৮. নকিয়া টেলিফোন কারখানায় ম্যাস প্রডাকসনে তৈয়ার হয় এবং প্রতিটি ফোন দেখিতে এবং কাজ করার ক্ষমতা সমান।
অন্য দিকে মানুষ হিসাবে আমরা প্রত্যেকেই ভিন্ন রকমের। "
উপরোক্ত প্রশ্নে আমার উত্তর:
মামড়া দ্যা এভার লিভিং @
আপনার উদ্বৃত মন্তব্যের লেখক বোধ হয় সহজবোধ্যতার জন্য নোকিয়ার নির্দেশিকাকে রূপক হিসেবে ব্যবহার করেছেন, কোরআন যে মানব জাতীর জন্য আল্লাহ প্রদত্ত ক্যাটালগ, তা কোরআনেই বর্নিত আছে, আল্লাহ বলেন, "আমি কুরআনকে মানুষের হেদায়েতের (নির্দেশিকা) জন্য অবতির্ন করেছি"- আলকোরআন। এ প্রেক্ষিতে আপনার উদ্ভুত প্রশ্রের উত্তর নিম্মে দেয়ার চেষ্টা করছিঃ
১. প্রতিটি মানব জন্মের সাথে একটি করে ক্যাটালগ থাকা জরুরী নয়, যেহেতু ক্যাটালগ আগে থেকেই বিদ্যমান। সব মানুষের সৃষ্টি প্রক্রিয়া, কল কব্জা একই।
২. আদম সৃষ্টির পর হতে আল্লাহ তাঁর সৃস্টি মানব জাতীর জন্য যুগে যুগে দেশে দেশে বিভিন্ন নবীর মাধ্যমে যুগোপযোগি ভিন্ন ভিন্ন ক্যাটালগ পাঠিয়েছেন, তার সর্বশেষ ও আপডেটেড সংস্করন হলো আল কোরআন, এই লেটেস্ট ভার্সন আসার পরে আগের সব ক্যাটালগ রহিত হয়ে গেছে, আর এই ক্যাটালগই (আল কোরআন) অনাদিকাল পর্যন্ত কার্য্যক্ষম থাকবে।
মহান সৃস্টিকর্তা যেখানে নিজেই বলেছেন, "আজ আমি তোমাদের দ্বিন (জীবন ব্যবস্থা) কে পরিপূর্ন করে দিলাম ও তোমাদের উপর আমার নেয়ামতকে পূর্ন করলাম এবং ইসলামকে আমার একমাত্র দ্বীন হিসেবে মনোনিত করলাম" - আল কোরআন। ১৪০০ বছর কেন, ক্বেয়ামত পর্যন্ত এর আর সংস্কারের প্রয়োজন হবেনা, যেমন প্রয়োজন হচ্ছেনা মানব শরীরের আকার, আকৃতি, কাঠামো সংস্কারের।
৩. ফোনের মুল ক্যাটালগ একটাই, বাকি সব বিভ্ন্নি ভাষার সংস্করন, কোরআন আরবী ভাষায় নাযিল হলেও, পৃথিবীর এমন কোন ভাষা নেই যে ভাষায় কোরআন অনুদিত হয়নি। আর কোরআন বুঝা খুবই সহজ, আল্লাহ বলেছেন "আমি কোরআন কে সহজ করে দিয়েছি" ।
৪. কোরআন প্যাচ ডাউন লোড করার জন্য নয়, এটা মানব অন্তরে ডাউন লোড করার জন্য, আত্মস্থ করে তার নির্দেশিকা পালনের জন্য, পৃথিবীতে এমন কোন গ্রন্থ আছে, যাকে কেউ মুখস্থ করতে পারে বা করে সারা জীবন ধরে রাখতে পারে, কেউ কি কোন বাংলা বইও আদ্য প্রান্ত মুখস্থ ও মনে রাখতে পারবে, কিন্তু মহাগ্রন্থ আল কোরআন মুখস্থ করা যায়, আত্মস্থ করা যায়, (ঐযে আল্লাহ বলেছেন আমি কোরআন কে সহজ করে দিয়েছি) - আর এটা পবিত্র কোরআনের অন্যতম মূজেযা।
৫.কোরআনের কেন্দ্রিয় আলোচ্য বিষয় হলো মানব জাতী, মানব জাতীকে ঘিরে যে সকল বিষয় আসতে পারে, সবকিছুর নির্দেশনা আছে এই মহা গ্রন্থে, সো এটা ফ্রি সাইজ, সর্বকালের সব মানুষের জন্য এটা ফিট।
৬. টেলিফোন ক্যাটালগ মানব মস্তিস্কজাত, তাই এর সিমাবব্দ্বতা আছে, কিন্তু কোরআনের রচয়িতা অসিম জ্ঞানের অধিকারি, তাই তাঁর প্রেরিত কোরআনের কোন সিমাবদ্বতাও নাই, হেল্প লাইনে ফোন করারও দরকার পড়েনা। আয়াতুল কুরসিতে (সংক্ষেপিত) আমরা পড়ি - "আসমান ও জমিনে সবকিছু তাঁরই সৃষ্টি ..... তিনি অতীত বর্তমান সবকিছু জানেন ......... কোন কিছুই তার জ্ঞান বহির্ভুত নয় ...... তাঁর ক্ষমতা আকাশমন্ড়লি ও জমিন কে পরিবেস্টন করে আছে ..... আর তিনি সুউচ্চ মহান" আল কোরআন।
৭. টেলিফোন ক্যটালগ লেখেন সেই ফোনের প্রডিউচার (তা এক বা একাধিক হোক বা তার নিযুক্ত কোন এজেন্ট হোক)। আর সমগ্র জগতের (প্রডিউচার) সৃষ্টিকর্তা হলেন, মহাপরাক্রমশালী একমাত্র আল্লাহ, কালেমা তাইয়্যেবায় আমরা বলি - "আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ (সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, উপাস্যযোগ্য) নেই", সুরা ইখলাছে পড়ি - "আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়, তিনি কারো মুখাপেক্ষি নন ...... তার সমকক্ষ কেউ নেই"।
সুতারাং কোরআন রচনায় তিনি আর কারো সহযোগিতা নেবেননা, কেউ তার সমকক্ষ নয়, তিনি একাই কোরআন নাযিল করবেন সেটাই যুক্তিযুক্ত।
৮. নকিয়ার (সব মড়েলের কার্য্যক্ষমতা কিন্তু এক নয়) মত সব মানুষের কার্য্যক্ষমতা যদি এক হতো পৃথিবীতে বিপর্যয় নেমে আসতো, নারী পুরুষে গঠনশৈলী ও স্বভাব এক নয়, এমনকি নারীতে নারীতে – পুরুষে পুরুষেও পার্থক্য আছে, একেক মানুষ একেক রকম কারো সাথে কারো চেহারার মিল নেই, স্বভাবের মিল নেই এমনকি কন্ঠস্বরেরও মিল নেই, এটাই সৃস্টি কর্তার অপরিসীম ক্ষমতার প্রমান। মানুষের মধ্যে উঁচু নিচু, কালো সাদা, ধনী গরিব আছে, এটা আল্লাহর পক্ষ হতে মানব মন্ড়লির জন্য পরীক্ষা স্বরূপ।
ধন্যবাদ .... আপনার প্রশ্নের জন্য, আপনি প্রশ্ন না করলে আমি নিজেও হয়তো এভাবে চিন্তা করতামনা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।