সঙ্গে সাহিত্যের সুবাস ...
নব্বই দশক থেকে চলচ্চিত্রব্যবসায় মন্দার ভাব দেখা যায়। আশির দশক থেকেই যদিও চলচ্চিত্রের সার্বিক মান পড়তে থাকে এবং দর্শক প্রেক্ষাগৃহবিমুখ হতে থাকে, কিন্তু আশির দশকে তার পুরো প্রভাব পড়েনি। নব্বই দশক থেকে অনুভূত হতে থাকে যে চলচ্চিত্রব্যবসা পড়তির দিকে। শূন্য দশকে পুরো শিল্প ব্যাপক সঙ্কটে নিপতিত হয়।
শূন্য দশকেও প্রায় একশ করে প্রতি বছরে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে, কিন্তু এগুলো সবই ছিল লো-বাজেটের, নকল কাহিনী-সহিংসতা-পর্নো নির্ভর ছবি।
শূন্য দশকের চলচ্চিত্রের গড় বাজেট, টাকার অবমূল্যায়ন হবার পরও, আশির দশকের গড় বাজেটের চেয়ে কম ছিল। ফলে একের পর এক অর্থহীন ছবি নির্মিত হয়েছে, ক্রমাগত লোকসান গোনার পরেও। ব্যবসায়িক মন্দা এতটাই দেখা দেয় যে খোদ প্রেক্ষাগৃহগুলো একের পর এক বন্ধ হতে থাকে। প্রদর্শন-ব্যবসার মূল্যায়নের মাধ্যমে এই মন্দাভাবটা অনুধাবন করা সম্ভব।
বাংলাদেশে চলচ্চিত্র প্রদর্শন-ব্যবসা প্রায় সবসময়ই জমজমাট ছিল।
শুধু চল্লিশের দশকের শেষভাগে একবার সঙ্কটের কথা জানা যায়। ঐ সময় বন্ধ হয়েছিল ব্রিটানিয়া ও প্যারাডাইস সিনেমা হল। এরপর প্রায় অনেক দিন আর কোনও সিনেমা হল বন্ধের কথা জানা যায়নি। কিন্তু হঠাৎ করেই অবস্থার পরিবর্তন হতে শুরু করে। নব্বই দশকের শেষভাগে ২/৩ বছরের মধ্যে বন্ধ হয়ে যায় ঢাকার ৮টি সিনেমা হল।
বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রেক্ষাগৃহের তালিকায় আছে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী রূপমহল, তাজমহল ও মুন, এলিফ্যান্ট রোডের মল্লিকা, গুলশানের জ্যোতি, গুলিস্তানের ঐতিহ্যবাহী গুলিস্তান ও নাজ, এবং শ্যামলীর শ্যামলী। এসব হলের স্থলে কোথাও বহুতল ভবন উঠেছে, আবার কোথাও ওঠার প্রক্রিয়া চলছে। চলচ্চিত্র প্রদর্শন ব্যবসার সঙ্গে যুক্তরা জানান, শুধু বহুতল ভবন করার আকাঙ্ক্ষার কারণে নয়, প্রদর্শন-ব্যবসায় চরম মন্দাভাব বিরাজ করাটাও প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ। পৃথিবীর নানা দেশে যখন শপিং কমপ্লেক্সের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসেবে সিনেপ্লেক্স গড়ে উঠছে, বাংলাদেশে প্রেক্ষাগৃহ ভেঙ্গে শপিং কমপ্লেক্স গড়ে তোলা হচ্ছে।
চলচ্চিত্র-ব্যবসা মন্দা হবার অন্যতম একটি কারণ হলো দর্শক হিসেবে নারীদের হারিয়ে ফেলেছে এই শিল্প।
রমরমা ব্যবসার সময়ে নারীরাই ছিল দর্শকের বড়ো একটি অংশ। সামাজিক কারণেই একজন নারী-দর্শকের সঙ্গে এক বা একাধিক বাড়তি দর্শক প্রেক্ষাগৃহে আসতেন। সা¤প্রতিক চলচ্চিত্র সহিংসতা ও পর্নোগ্রাফি নির্ভর হয়ে পড়ার কারণে নারী-দর্শকেরা একেবারেই প্রেক্ষাগৃহে আসছেন না।
এফডিসির ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ সরকারকে ২০০১-০২ অর্থবছরে জমা দিয়েছিল ৮ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা রাজস্ব। আর ২০০৫-০৫ অর্থবছরে এই জমা কমে ৬ কোটি ৩৮ লক্ষতে এসে দাঁড়ায়।
পরিচালক মতিন রহমান জানাচ্ছেন, একসময় চট্টগ্রাম, যশোর, খুলনা প্রভৃতি জেলাশহর হতে প্রচুর টাকা আসতো একটি ছবি হিট হলেই। এ জে মিন্টুর 'বাংলার বধূ' চট্টগ্রাম থেকে শেয়ারমানি এনেছিল ১২ লাখ টাকা, 'রাঙাভাবী' এনেছিল ৮ লাখ টাকা। এখন ছবি চট্টগ্রামে ভালো চললে আসে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা। (রহমান, ২০০৫)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।