আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ডিটেকটিভ গল্প: সেলিব্রিটি প্রবলেমস কন্টিনিউড (১ম অংশ)

যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে, ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

(এর আগে সেলিব্রিটি প্রবলেমস নামে একটা বস্তাপচা সিরিজ লিখেছিলাম; এই লেখাটার সাথে সেটার কিছুটা সম্পর্ক আছে বললে আছে, আবার নাই বললে নাই ... ওটা না পড়েও হয়ত এটা পুরোটাই বুঝতে পারবেন, আবার ওটা পুরো পড়েও হয়ত এটার কিছুই বুঝতে পারবেননা ... এখন, পড়ে পস্তাবেন নাকি না পড়ে পস্তাবেন , সেটা আপনার ইচ্ছে) ১. পিৎজা হাটে বসে বেশ বড়সড় সাইজের গোটা একটা টুনা পিৎজা একাই সাবাড় করে বেশ ফুরফুরে মেজাজে গুলশান দুই নম্বর মোড়ের দিকে রওয়ানা হয় রায়হান। সন্ধ্যার পরপর এসময়টায় রাস্তায় প্রচন্ড ট্রাফিক জ্যাম হয়। কোনভাবেই যে রিক্সা বা সিএনজি নেয়া ঠিক না সেটা সে জানে। তাই হেরিটেজ ক্লাবে পৌঁছুতে হলে গুলশান দুইয়ের মোড়টা পেরিয়ে সোজা আরো মিনিট বিশেক হাঁটতে হবে। তবে ভরপেট পিৎজা খাবার পর এটা তেমন কোন কঠিন কাজ না, বরং বিপাকের জন্য ভালো।

তাই হেঁটেই রওয়ানা দেবার সিদ্ধান্ত নেয় সে। তাছাড়া আজকের এ্যাপয়েন্টমেন্টটা এত জরুরী যে একদম সময়মতো হাজির হতে হবে। অনেকদিন ধরে একে ধরে ওকে বলে অবশেষে গত সপ্তায় আলমগীর ভাইয়ের এ্যাপয়েন্টমেন্টটা পাওয়া গেছে। নিজের সামান্য ভুল বা অবহেলায় কোনভাবেই যাতে এই সুযোগ হাত ফসকে বেরিয়ে না যায় সেজন্য মোটামুটি প্রাণপণ হয়ে তৈরী হয়ে আছে সে আজ । সে কারণেই হয়তো, ঠিক এই মুহূর্তে তার দুটো হাত অকারণেই কঠোরভাবে মুষ্ঠিবদ্ধ, এবং সেটা দেখে আশপাশের পথচারীদের মনে রায়হান বা তার সম্ভাব্য ক্রিয়া সম্পর্কে ভুল কোন ধারণা জন্মালেও সেজন্য তাদের দোষ দেয়া যাবেনা।

বিকেল থেকেই আর তর সইছিলনা রায়হানের, অতিরিক্ত সতর্কতার কারণে বাসা থেকে বের হয়ে গিয়েছিল এ্যাপয়েন্টমেন্টের সময়ের অনেক আগে। পিজা হাটের কাছে এসে দেখেছে ঘড়িতে বাজছে মোটে ছয়টা ত্রিশ। "আরো একটা ঘন্টা কোথাও দাঁড়িয়ে টাড়িয়ে অপেক্ষা করতে হবে!" ভাবতে ভাবতে নিজের অনর্থক সাবধানতার উপর বিরক্ত বোধ করে সে। তবুও আজ যেরকম বড় একটা ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে তার জীবনে বা ঘটতে পারে বলে সে মনে করছে, সেজন্য এতটুকু কষ্ট করা যেতেই পারে -- এই সান্ত্বণাটুকুই তাকে টেনে নিয়ে যায় পিৎজা হাটের ভেতরে। রায়হানকে খানিকটা পরিচয় করিয়ে দেয়া যাক।

খুব বেশীদিন লাগবেনা, মাত্র দুটো দিন একসাথে ঘুরোঘুরি করলে স্বাভাবিক বুদ্ধিবৃত্তির যে কেউই বুঝে ফেলতে পারবে যে এমন সহজ সরল প্রাণী খোদার জগতে আর দ্বিতীয়টি নেই। একই সাথে এমন বোকা প্রাণীটিও যে মনুষ্য সমাজে সচরাচর দেখা যায়না -- এই সিদ্ধান্তে পৌঁছানোও একই ব্যক্তির জন্য কষ্টকর হবার কথা না। বাবা তার বেশ ধনী মানুষ, মূলত সেজন্যই এ শহরে সে টিকে আছে। নইলে টেনেটুনে বি.এ. পাশ করে আট আটটি বছর এভাবে পায়ের ওপর পা তুলে বাবার হোটেলে কাটিয়ে দেয়া এবং সামান্যতম অভিনয় প্রতিভা না থাকা সত্বেও অভিনেতা হবার জন্য প্রাণান্ত চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া তার পক্ষে সম্ভব হতোনা। সেই ষোল-সতের বছর বয়েস থেকেই নানানভাবে চেষ্টা-চরিত্র করে এসেছে অভিনেতা হবার জন্য।

নানান নাট্যদলের সাথে ঘুরেছে -- দেশের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত। গাঁটের পয়সাও খরচ করেছে দেদারসে। বাবার কাছ থেকে পায়, গায়ে লাগেনা। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়নি। তবে সেটা যতটা না প্রতিভাহীনতার জন্য, তার চেয়ে ঢের বেশী তার অতিরিক্ত রকমের নিরীহ স্বভাবের জন্যে।

যেখানেই গেছে, দেখা গেছে কিছুদিন পর এক ধরনের স্বাভাবিক নিয়মে সবার কাছে হাসির বা উপহাসের পাত্রে পরিণত হয়ে যায় সে। যখন তখন তাকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করে গ্রুপের লোকজন। এমনকি দেখা যায় যে গ্রুপের সবচেয়ে আনকোরা সদস্যটিও কিছুদিন পর তার সাথে এমনভাবে কথা বলে যেন অফিসের বড়সাহেব তার চাপরাশী বা খানসামার সাথে কথা বলছে। আবার ওদিকে অদ্ভুত আরেক প্রাকৃতিক নিয়মে দলের খরচাপাতির ভারও তাকে সইতে হয়েছে যখন তখন, লোকে এমনভাবে তাকে দিয়ে খরচ করায় যেন দেনাদেরকে দিয়ে নিজের খরচ মেটাচ্ছে। এহেন রায়হানের জন্যই আজ সূবর্ণ সুযোগ এসেছে, আলমগীর ভাইয়ের মতো বিরাট অভিনেতা কাম পরিচালক তাকে সময় দিচ্ছেন।

আলমগীর ভাই একটি মেগা সিরিয়াল কমেডী বানাতে চাচ্ছেন, যার জন্যে মিডিয়া জগতের বিরল সব ক্যারেক্টারগুলোর খোঁজ করছেন তিনি। এদের বাস্তবজীবনের চরিত্রের সাথে সামঞ্জস্য রেখে নাটকের চরিত্র নির্মাণ করার পরিকল্পনা তাঁর। সে হিসেবে নাটকের মূল চরিত্রগুলোর একটি, এক বোকাসোকা তরুণের জন্য নাট্যজগতের সবাই যখন সহজ-সরল রায়হানকে একবাক্যেই "পারফেক্ট" বা "সেকেন্ড টু নান" বলে সার্টিফিকেট দিয়ে দেয়, তখন সিরিয়ালের চরিত্র হিসেবে রায়হানকে বিবেচনা করা আলমগীর ভাইয়ের পক্ষ থেকে মোটেও উদারতা দেখানো বা খাতির করার মতো কিছুনা। নিজের প্রয়োজনেই রায়হানকে ডেকেছেন তিনি, যদিও যথারীতি প্রথম থেকেই ব্যাপারটা রায়হান ধরতে পারেনি। গুলশান দুই থেকে হেরিটেজ ক্লাবে যাবার প্রতিটি পদক্ষেপেই তাই আলমগীর ভাইয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা চুঁইয়ে চুঁইয়ে পড়ছে তার।

ব্যাপারটা এমন না যে আলমগীর ভাইয়ের সাথে আজই তার প্রথম দেখা। আগেও বেশ কয়েকবার দেখা হয়েছে, অনেক ঘনিষ্ট আড্ডাতেও তাঁর সাথে ছিল রায়হান। তবুও রায়হানের ব্যক্তিত্বটা এতই দূর্বল যে আজ যদি পাঁচ মিনিট দেরী করার জন্যও আলমগীর ভাই তাকে বাদ দিয়ে দেয়, তাহলেও সে মুখ ফুটে কিছু বলতে পারবেনা। অথবা এতদিনের পরিচয়ের দাবীটুকু তুলতে পারবেনা। নিজেকে অপরাধী ভেবে মুখ নীচু করে ফিরে আসতে হবে তাকে, এমনকি হয়ত ক্ষমাপ্রার্থনাও করতে হবে।

রায়হান জানে যে তার নিজের এই মুখচোরা স্বভাবের ব্যাপারটা নিয়ে সবাই হাসে, এমনকি মাঝে মাঝে তার বাবা-মা, ভাই-বোনেরাও। তাও তার কিছুই করার নেই, সে এরকমই, এবং এটাই সে মেনে নিয়েছে। হাঁটতে হাঁটতে হেরিটেজ ক্লাবের কাছাকাছি আসতেই রায়হান ভাবে যে আলমগীর ভাইকে এখন একটা ফোন দেয়া যায়। ব্যক্তি রায়হানের মতো তার ফোনকেও বেশীরভাগ সময় অগ্রাহ্য করে লোকজন, এবং এবারও যা হবার তাই হয়। নো রেসপন্স, কেউ ধরছেনা।

রেগে মেগে যখন আলমগীরকে নিয়ে একটা খিস্তি ছুঁড়তে যাবে, ঠিক তখনই তার মনে পড়ে যায় আলমগীর ভাইয়ের এসএমএসের কথা। আজই সাড়ে ছয়টার একটু পরে যখন পিৎজা হাটে বসে বসে আলমগীর ভাইকে একবার ফোন করেছিল সে, তিনি ধরেননি। খানিক পরে এসএমএস করে জানিয়েছেন, "Don't Call. Send SMS." অথচ ব্যাপারটা বেমালুম ভুলে গিয়ে সে আবারও আলমগীর ভাইকে ফোন করে বসলো! ভাবতেই ভয়ে কুঁকড়ে গেল সে, সব বুঝি গেল! এখন নিশ্চয়ই ক্লাবে গেলে আলমগীর ভাই রাগারাগি করবেন, হয়তো একারণে তার রোলটাও বাদ হয়ে যাবে। একবার ভাবে যে ফিরে যায় বাসায়, নাটকের রোল পাওয়া তো হবেইনা, বরং গালমন্দের হাত থেকে বাঁচা যাবে, উল্টো দিকে ঘুরেও যায়। তবে পরমুহূর্তেই সামলে নেয় নিজেকে।

মনে মনে নিজেকে সান্ত্বনা দেয়, বলে, 'আজ একটা বিশেষ দিন, আজ কোনভাবেই আশা হারালে চলবেনা। হয় এসপার, না হয় ওসপার'। আত্মকথনে কাজ দেয়, খানিকটা সাহস সঞ্চয় করতে পারে সে, এবং ফলতঃ আক্ষরিক অর্থেই বুক ফুলিয়ে সবেগে হাঁটা শুরু করে হেরিটেজ ক্লাবের দিকে। ক্লাবে পৌঁছাতে যখন আর মিনিট পাঁচের মতো বাকী, তখন একটা এসএমএস করে দেয় আলমগীর ভাইকে, জানায়,"Sorry for the call Sir. Will get there in five mins." ২. হেরিটেজ ক্লাবটা নামে যত বাহারী শোনায় আকারে ততটা নয়। আবার ছোটখাট কুঁড়েঘর যে তাও নয়, মোটামুটি মানের।

তবে এর বিশেষত্ব হলো, মিডিয়া লাইনের প্রায় সবাই এখানকার সদস্য। এর মাঝে আবার আলমগীরের মত যারা পরিচালনায় এসে বিনোদন জগতের ব্যাবসার হাল ধরেছেন তারা হলেন এক্সক্লুসিভ মেম্বার। এক্সক্লুসিভ মেম্বারদের জন্য অবশ্যই বাড়তি কিছু সুবিধা আছে, তাঁরা যেকোন সময়েই ক্লাবঘরে ঢুকতে পারেন, সেজন্য কোন বুকিং দেয়া লাগেনা; যদিও মিটিং ঘর বা কনফারেন্স হল ব্যবহারের বুকিং সবাইকেই দিতে হয়। আবার চাইলে এখানকার ঘর ভাড়া করে আত্মীয় স্বজনদের নিয়ে পার্টিও করতে পারেন তাঁরা। তাছাড়া যে পাসওয়ার্ডটি দিয়ে ভবনের মূল ফটকের ইলেকট্রনিক অটোডোরকে খোলা যায়, সেই পাসওয়ার্ডটিও তাঁরা জানেন, অর্থাৎ জরূরী প্রয়োজনে যাতে ক্লাবঘরে সহজেই ঢুকতে পারেন সে ব্যবস্থাও আছে।

অবশ্য এসবের বিনিময়ে মাসে মাসে একটা ভালো অংকের চাঁদা তাঁদের গুনতে হয়। ক্লাব ভবনটি ছিমছাম একটি তিনতলা ভবন, ভবনের সামনে খানিকটা সবুজঘাসের উঠোন; বাড়ীর প্রতিটি তলায় তিনটি ঘর, আর একতলায় বাড়তি একটা ওয়েইটিং কাম রিসিপশন রূম। রিসেপশন কাউন্টার পেরিয়ে একটু এগুলেই সামনে পড়বে দোতলা আর তিনতলায় ওঠার সিঁড়ি, বাঁয়ে পড়বে মূল করিডোর। করিডোরের দু'পাশের একদিকে বিশাল কনফারেন্স রূম আর ওয়াশরূম, অন্যপাশে দুটো মাঝারী আকারের মিটিং রূম। শনিবার সন্ধ্যায় সাধারণত কেউ ক্লাবে আসেনা, তাই রিসিপশনিস্ট মেয়েটা থাকেনা।

সেজন্যই এই সময়টাকে বেছে নিয়েছে আলমগীর। রায়হানের জন্য না, নামকরা অভিনেতা সাদীর জন্য। সাদীর সাথে একটা হেস্তনেস্ত করে ফেলাটা জরুরী। সাদীকে সময় দিয়েছে সে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায়, আর ঐ নাছোড়বান্দা রায়হানকে সাড়ে সাতটায়। মূলতঃ আজ সাদীর কারণেই এসেছে এখানে সে।

আর মনে মনে ঠিক করে রেখেছে রায়হানকে একটা চরিত্রে রাখবে তার নতুন কমেডী মেগা 'টাকডুমাডুমডুম' এ। রায়হানকে সে বিশেষ পছন্দ করে, এমন নিরলস আনুগত্য এযুগে দেখা যায়না। অনুগত ছেলেগুলোকেই সামনে তুলে আনতে হবে, তাহলেই চেইন অভ কমান্ড ভাংবেনা, কেউ ঘোড়া ডিঙিয়ে ঘাস খাওয়ার সাহস করবেনা -- এটা সে এখন হাড়ে হাড়ে বোঝে। এত বড় অবস্থানে আসার পরও এই সত্য বুঝতে তার এত দেরী কেন হয়েছে সেটা ভেবেই সে অবাক হয়। ঠিক সাড়ে ছয়টায় সাদী এসে হাজির হয়।

সাদীও এই ক্লাবের এক্সক্লুসিভ মেম্বার। নামকরা অভিনেতা ছিল একসময়, টিভি নাটকে। এখন পুরোপুরি ব্যবসায় নেমে পড়েছে, মূলতঃ মডেলিং আর নানান সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড করে তার ফার্ম। অভিনয় জগত ছেড়ে দিলেও এখনও তার জনপ্রিয়তা অনেক তুঙ্গে, হঠাৎ হঠাৎ দু'একটি নাটকে অভিনয় করলে সব পত্রিকায় সে খবর আসে, নাটকের ট্রেইলারে আলাদা ফোকাসে আনা হয় "সাদী অভিনীত" শব্দটি। আলমগীর ভাইয়ের সাথে সে নিজেও আজ একটা হেস্তনেস্ত করত এসেছে, কতদিন আর একা খাবেন তিনি।

সাদী নিজে কোনভাবেই আলমগীর ভাইয়ের উপর নির্ভরশীল না, তবুও বহুদিনের পরিচয় আর একই পরিমন্ডলের মানুষ হওয়াতে ভদ্রতা বলে একটা বিষয় সবসময়ে খেয়াল রাখতে হয়। আলমগীর ভাইয়ের অভিযোগ, সাদী সেই ভদ্রতা বজায় রাখতে পারেনি। রিসেপশন থেকে সাদীকে নিয়ে ওয়াশরুমের বিপরীত দিকের মিটিংঘরে ঢুকে পড়ে আলমগীর ভাই। চেয়ার টেনে বসতে বসতেই বলে, "সাদী, শুনো। তোমরা তো আর মান-ইজ্জত কিছু রাখলানা!" "ক্যান আলমগীর ভাই? আপনে নিজেও কি করেন নাই? আপনেরাও করছেন, এখন আমরাও করুম।

ঝামেলা কোথায়?" "না, তুমি করো, যা ইচ্ছা করো, আমার আপত্তি থাকবো ক্যা। তয়, তুমি মিয়া এত বড় একখান কাম কইরা ফালাইবা, আর আমি ট্যারটাও পামুনা, সেইটার কথা কইতাছি আর কি!" "আপনারে তো আমি জানাইতামই" সাদীর গলা ভারী হয়ে আসে। "হ! তুমি কতদূর জানাইতা সেইটা আমি বুঝি!" আলমগীর রাগে ফেটে পড়েন প্রায়, "আমি কার কাছ থিকা শুনছি জানো? সজিবের কাছ থিকা, সজিব, বুঝলা!!" "কি কন? সজীব কইছে আপনেরে?" সাদীর কন্ঠে বিস্ময়। "আর কে জানাইব? তুমি তো মিয়া চুপের উপর চালাইয়া দিতে চাইছিলা" আলমগীরের কন্ঠে খেদ ঝরে পড়ে। দুজনই রেগে টং হয়ে আছে, ঘরে নীরবতা বিরাজ করে কিছুটা সময়ের জন্য।

আলমগীর নীরবতা ভাঙে, কিন্তু তার কন্ঠ বেশ শীতল আর খবরদারী শোনায়, "এখন যেইটা করতে পারো, সেইটা হইল গিয়া পজেক্ট বন্ধ কইরা দেও। এত বড় ডীল, এমনে এমনে তো আমি ছাইড়া দিতে পারিনা, বুঝছনা কি কইছি?" "এইটা কি কন বড়ভাই? আমগোর ব্যবসা করন লাগবনা? আপনে এতদিন করছেন, আমরা তো নাকটাও গালাইনাই। এখন আপনে ইচ্ছামতন নাক গলাইবেন গলান, কিন্তু সেইটা কি ভালো দেখাইব বড়ভাই?" "শুনো, তোমার গায়ে চর্বি হইছে সেইটা আমি আগেই টের পাইছি। " "এইরাম কথাবার্তা কইলে তো কথা আগাইবনা ভাইজান। " "আইচ্ছা ঠিক আছে, মানলাম।

কিন্তু তুমি এখন যেইটা করতে যাইতাছ সেইটা হইল আমারে এক্কেরে সাইডলাইনে বসায়া দেওয়া। এইবার তোমারে ডীলটা এমনে ছাইড়া দিলে আমার মার্কেট পুরাই আউট হইয়া যাইব, সেইটা তুমি বুঝতাছ? শুনো, তিনকুটি টাকা তো এমনে এমনে আসেনা। হয় পজেক্ট বন্ধ করো, নাইলে অর্ধেক ক্লায়েন্ট আমারে দেও। চাইর মাস পরে একটা চালান পাঠামু আমরা, ক্লায়েন্টরে কইয়া দেও চাইরমাস দেরী হইব। সারাজীবন অপেক্ষা করছে, চাইরমাসে আর কি হইব।

" "এইটা তো ঠিক হইলনা। আমগোর কাম পুরা কমপ্লিট। এখন চাইরমাস পিছানো মানে সব আবার শুরু থিকা করা লাগবো। সেইটা সম্ভব না বড়ভাই। আপনারে আমি এই কথা দিতারি যে পরের চালানে আপনারে জানানো হইব-- এট্টুকই।

তয় যেই জিনিসটা আপনেরে মাইনা নিতে হইব, সেইটা হইল গিয়া এখন মুখ অনেক বাড়ছে। একলা সব খাইতে চাইলে কইলাম সাইডলাইন না, এক্কেরে ইনজুরি হইয়া যাইবেন" "সাদী মুখ সামলাইয়া কথা কও, আমি তোমার বাপের বয়সের হমু কইলাম। পরের চালান পরে দেখা যাইব, আমি কথা কইতাছি এই চালানের। হয় বন্ধ করো, নাইলে অর্ধেক রাইখা দাও। " "স্যরি বস্, সেইটা সম্ভব না।

" আবার নীরবতা আসে ঘরে। সাদী খানিকক্ষণ পায়চারী করে এসে জিজ্ঞেস করে, "সজীবের লগে আপনার কথা হইল ক্যামনে?" "হয় হয়" আলমগীর ভাইয়ের মুখে স্বস্তির হাসি; তিনি বলে যেতে থাকেন, "শুনো মিয়া, তুমরা বড় বড় মাল হইয়া গেছ ঠিকাছে। মাগার এহনও আলমগীরের হাত কম লম্বা না। রেশমা ক্যামনে ফাঁসছে সবই আমি জানি। তুমারেও কইয়া রাখি, আমার কথা মাইনা চুপচাপ থাকো, নাইলে কইলাম সময়মতো সব কথা পত্রিকা আর টিভি অফিসে চইলা যাইব।

রেশমারডাতো শ্যাষ অইছেই ঐ চ্যাংড়া পুলিশের লাইগা, তুমার ক্যারিয়ারও শ্যাষ হইতে কতক্ষণ। কি নাম জানি পুলাটার?" "হাসনাইন" সাদী বিড়বিড় করে বলে, বিরক্তিতে ভ্রূ কুঁচকে আসে তার। তারপর আবারও আলমগীর ভাইকে বোঝানোর উদ্দেশ্যেই বলা শুরু করে, "দেখেন বস্, আপনে এখন এইসব ফাঁস করলে করেন, কিন্তু আপনে নিজে পার পাইবেন তো? আর এরপরে কি অইব সেইটাও ভাইবেন। " "আআমি হইলাম গিয়া মনে করো এমনেও হাত ধুয়া ফালামু কয়দিন পর। সত্যি কথা হইল, হাত তো ধুইয়াই ফালাইছি, মাগার তুমগোর টগবগানি দেইখা আবার নাক গলাইতে হয়।

আমার কথা আমি কইয়া দিছি, এখন তুমারটা তুমি বুঝবা। " আলমগীরের কন্ঠে দৃঢ়তা যেন বাড়ে। একই প্রসংগে কথা চলতেই থাকে, আধঘন্টার মতো প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যায় সাদী যাতে আলমগীর এবারের ডীলে কোন বাগড়া না দেয়। কিন্তু আলমগীরের এককথা, এতদিন সে এই বিজনেসে বিগবস্ ছিল, নতুনদেরকে জায়গা ছেড়ে দিতে হয় এটাও সে জানে। কিন্তু সাদী যেভাবে তার থেকে ছিনতাই করে ফিল্ড দখল করতে চাচ্ছে সেটা সে মানতে পারছেনা।

তারওপর, যেহেতু আলমগীরের হাতে নিশ্চিত প্রমাণ দেয়ার মতো সজীবও আছে, সূতরাং আলমগীর তাকে সহজে ছাড়বেনা। কথাবার্তার মধ্যে একবার সাদী আলমগীরকে দশ লাখ টাকা দেয়ার প্রস্তাবও দেয়, কিন্তু আলমগীর রাজিনা। পুরো বিজনেস ডিলের অর্ধেকটা সে নেবে, এবং এখন থেকে সেই অর্ধেক সে নিজেই হ্যান্ডেল করবে -- এটাই তার দাবী। কারণ আলমগীরও ভালো জানে যে নিজের একচ্ছত্র আধিপত্যের এলাকার এত বড় একটা কাজ বা চালান যাই বলা হোকনা কেন সেটা অন্য কেউ একবার নিয়ে নিলে, পরে সেই মাঠ বা রাজত্ব দখল আর সম্ভব হবেনা। কথা কাটাকাটিতে সাতটা বিশের মতো বেজে যায়।

আলমগীরের ফোন বেজে ওঠে, সে দেখে মোবাইলের ছোট মনিটরে "রায়হান" নামটা উঠেছে। ভয়ংকর বিরক্তবোধ করে আলমগীর, ছেলেটাকে একবার বলেছে এসএমএস করতে। বেকুবটা এরপরেও ফোন করেছে। ফোন ধরেনা আলমগীর, তার বদলে সাদীর দিকে ফিরে উবু হয়ে জুতোর ফিতে বাঁধতে বাঁধতে বলে, "এখনই ডিলে চইলা আসো, আমি তুমারে আর সময় দিবার পারুমনা। এখনই কইয়া ফালাও রাজী নাকি একলগে ব্যাবসা করতে।

নাইলে আমি কাইলকা সকালেই প্রেস কনফারেন্স ডাকুম। তোমার মানসম্মান কইলাম মাটির তলায় গিয়াও বাঁচা পারবনা। " ঠিক এই মুহূর্তে অসহ্য বোধ করে সাদী। এই জানোয়ার টাইপের লোভী কুকুরটা দেখা যাচ্ছে কোনভাবেই ছাড়বেনা। অথচ তিন কোটি টাকার পুরো কাজটা সে প্রায় নিজেই একা গুছিয়েছে।

যদিও হার্টথ্রব গায়িকা রেশমাকে চল্লিশ লাখ আর সুপারহিট অভিনেতা প্রবালকে পঞ্চাশ লাখ টাকা দেবার প্রতিশ্রুতি সে দিয়েছে যেহেতু তাদের ইমেজকে কাজে লাগানো হবে সেজন্য। পুরো প্রজেক্টে তার লগ্নি এক কোটির মতো, হাতে লাভ আসবে দুই কোটি। সেখান থেকে নায়িকা/গায়িকা আর সংশ্লিষ্টদের দিতে হবে প্রায় এককোটি বিশ লাখ। যদিও গায়িকা রেশমা সপ্তাহখানেক আগে ম্যানেজার খুনের দায়ে ধরা পড়েছেন, তাতেও কিছু যায় আসেনা। তার ভাগও তাকে দিতে হবে, জেলে গিয়ে এই প্রতিশ্রুতিতে সাদী তার মুখ বন্ধ করে এসেছে।

অবশ্য প্রবালের কারণে এমনিতেও রেশমা হয়ত মুখ খুলতনা, তাও বলা তো যায়না! মানুষের মন থেকে প্রেম কখন উড়ে যায়। লাভের বাকী যে আশি লাখ, তারও বেশ খানিকটা চলে যাবে নানান আমলাতান্ত্রিক জটিলতায়। মূলত এই চালানে তার নিজের লাভের অংকের চেয়েও বড় যে ব্যাপার তা হলো, ব্যাবসাটি যদি সে পুরোপুরি সফলভাবে করতে পারে, তাহলে এই লাইনের এতদিনের একচেটিয়া অধিপতি আলমগীর খানকে সে ভালো একটা ঝাঁকুনি দিতে পারবে। ভাগ্য ভালো হলে হয়ত সে নিজেই অধিপতি বা ডি ফ্যাক্টো হয়ে যেতে পারবে এ ব্যবসার। শুধু এই উদ্দেশ্যেই সে গত ছয়মাস প্রাণান্ত খেটেছে, ব্যাবসা দাঁড় করাতে আর তথ্যগোপন রাখতে।

এখন তীরে এসে তরী ডুবতে দেয়ার মানে হয়না। মনে মনে কর্তব্য ঠিক করে ফেলে সাদী -- পরেরটা পরে হবে। মুহূর্তেই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় মাথায়, টেবিলের ওপর রাখা ভারী ক্রিস্টালের এ্যাশট্রেটা হাতে উঠে আসে তার, পরক্ষণেই সরাসরি আঘাত হানে উবু হয়ে জুতোর ফিতে বাঁধতে থাকা আলমগীরের মাথার পেছনের অংশে। ফিনকি দিয়ে রক্ত ছিটকে আসে তীরবেগে, ততোধিক বেগে অন্যপাশে সরে আসে সাদী। গায়ে রক্ত লাগেনা এক ফোঁটাও সাদীর, যদিও আলমগীরের তাৎক্ষণিক মুখথুবড়ে পড়ে যাওয়া আর রক্তে ঘর ভেসে যাওয়া দেখে সে ভীষন হতভম্ব হয়ে যায়।

বুঝতে পারে আলমগীর মারা গেছে। সামান্য একটি আঘাত, একটি আঘাতই শেষ করে দিল এত প্রতাপশালী আলমগীর খানকে! হতবিহবল সাদী বুঝতে পারেনা তার কি করা উচিত। এদিক ওদিক তাকায়, নিজেকে কিভাবে বাঁচানো যায়, খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে -- মনে মনে ঠিক করে। ঠিক তখনই, শোনা যায়, আলমগীরের মোবাইল ফোন বেজে উঠেছে, কাছাকাছি এসে সাদী দেখে যে একটি মেসেজ এসেছে। পকেটের কলম বের করে কলমের উল্টো দিক দিয়ে মোবাইলের বাটন চাপ দেয় সাদী।

দেখে, রায়হান নামের একজন মেসেজ দিয়েছে যে পাঁচ মিনিটের মধ্যেই সে হেরিটেজ ক্লাবে আসছে। 'রায়হান কে জানি?' একটু ভাবতেই মনে পড়ে যায় রায়হানের পরিচয়, ধীরে ধীরে সারা মুখে একটি ধূর্ত হাসি ছড়িয়ে পড়ে সাদীর। খুব দ্রুতই মাথায় খেলে যায় তার, ঠিক কিভাবে কি করতে হবে। খুব সাবধানে চেয়ার, টেবিল, দরজার নব, এ্যাশট্রে -- সবকিছু মুছে পরিস্কার করে সে। হাতের কোন ছাপ আর থাকেনা কোথাও।

তারপর ধীরে ধীরে এগিয়ে যায় একটু দূরের টেবিলের উপরে রাখা ফোনের দিকে, রুমাল দিয়ে ফোনের রিসিভার তুলে নেয় কানে। কলমের উল্টোদিক দিয়ে ফোনের বোতাম টিপে ফোন করে গুলশান থানায়। যতদূর সম্ভব বিকৃত আর ভয়ার্ত গলায় বলে, "হেরিটেজ ক্লাব থেকে বলছি স্যার। আমি একটা খুন করে ফেলেছি। " ফোন রাখার আধমিনিটের মধ্যেই রূমের ভেতর ইন্টারকমের বেল বেজে ওঠে।

সাদী বোঝে তার ভিকটিম চলে এসেছে। আলতো করে রুমাল জড়িয়ে রিসিভার তুলে নেয় সাদী, একইভাবে বিনা ছোঁয়ায় পাসওয়ার্ড টিপে দেয় ফোনের কী-প্যাডে। এবং সাথে সাথেই মিটিং ঘর থেকে বের হয়ে ঢুকে যায় করিডোরের ওপাশের ওয়াশরুমের ভেতর। ভেতরে দরজার ওপাশ থেকে আধাস্বচ্ছ কাঁচের অংশটুকু দিয়ে মানুষের ছায়া পর্যন্ত বোঝা যায় সহজেই। অপেক্ষায় থাকে সাদী, কখন ওপাশের ঘরে ঢোকে নবাগত মনুষ্যমূর্তিটি।

সাদীর ভাগ্য ভালো রায়হান নামের ছেলেটি ক্লাবঘরে ঢুকেই ওয়াশরুমে আসেনি। সরাসরি আলমগীর যে রুমে ছিল সে রুমে ঢুকেছে। আলতোভাবে বিনা ছোঁয়ায় ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে ক্লাবঘরের মূল ফটক দিয়ে বের হয়ে আসে সাদী। 'কি বাঁচাটা বাঁচলাম' বলে মনে মনে নিজের প্রশংসা করতে বাধ্য হয় সে। ৩. দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকে প্রথমে রায়হান কিছুই দেখতে পায়না।

খানিক পরে যখন নিচের দিকে নজর যায় তার, মুহূর্তেই মাথা প্রায় পুরোপুরি বিগড়ে যায়। সারা মেঝে রক্তে ভেসে যেন একাকার হয়ে গেছে! হা হয়ে পড়ে আছে তার সকল আশা-ভরসার মানুষটি, আলমগীর ভাই। তাড়াতাড়ি দৌড়ে গিয়ে আলমগীর ভাইকে ধরে, এবং আলমগীর ভাইয়ের মাথাটা হাতে তুলে নেয়ার সাথেসাথেই সে টের পায় যে তার হাতও মেঝের মতো রক্তে একাকার হয়ে গেছে। হতবিহবল রায়হান চিৎকার করে ওঠে, তাড়াতাড়ি করে দাঁড়িয়ে হাতের রক্ত মুছতে গিয়ে নিজের শার্ট, প্যান্ট, ঘরের টেবিল, কয়েকটা চেয়ারের গদি, আর মেঝের এখানে ওখানে নানান জায়গা রক্তের লালরঙে একাকার করে ফেলে। এরমাঝেই তার চোখ পড়ে টেবিলের ওপরে রাখা ছাইদানীটার ওপর।

"নিশ্চয়ই এটা দিয়েই আঘাত করা হয়েছে!" ভেবেই বোকার মতো ছাইদানীটা হাতে নিয়ে নেয় রায়হান, এবং পরমুহূর্তেই বুঝে কি ভুলটা করেছে সে, সবেগে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। সদ্য খুন হওয়া আলমগীরের রক্তের ওপর গিয়ে পড়ে ভারী জিনিসটা। দু'টুকরো হয়ে যায়। হতভম্ব রায়হান কি করবে বুঝে উঠতে পারেনা। এমন সময়েই শুনতে পায় বাইরে গাড়ীর আওয়াজ।

দৌড়ে গিয়ে রিসেপশনের সামনে দাঁড়িয়ে দেখে বাইরে দাঁড়ানো পুলিশের জীপ, পুলিশের পোষাক পরা জনা পাঁচেক লোক নামছে। আর যাবে কই? বাঁ পাশে সিঁড়িটি দেখেই অগ্রপশ্চাৎ কিছু না ভেবে উপরের দিকে ছুটে দৌড় দেয় সে, দোতলা বা তিনতলায় কোন রূম খোলা পেলে সেখানকার কোন ক্লোজেটে লুকোবে -- এই আশায়। ভাগ্য ভালো না খারাপ বলা যাচ্ছেনা, তবে তিনতলার ডাইনিং স্পেসের ক্লোজেটটা খোলা পেয়ে যায় সে, "আপাতত বাঁচা গেলো" ভেবে সেখানে ঢুকেই ঘাপটি মেরে থাকে। 'সামান্য নিঃশ্বাসও নেয়া যাবেনা' -- মনে মনে নিজেকে বোঝায় রায়হান। অথচ বেচারার মাথায়ও আসেনি যে তার জুতোয় কি পরিমাণ রক্ত লেগে ছিলো, আর সেই রক্তের ছাপ ধরে তাকে খুঁজে পেতে পুলিশের দুমিনিটও লাগবেনা।

বাস্তবে এক মিনিটও লাগেনি, ক্লোজটের ভেতর বসে খানিকটা থিতু হতে না হতেই খুব কাছেই বুটের পদধ্বনি টের পায় রায়হান, সেকেন্ডের ব্যবধানঈ দেখা যায় পুলিশের এক সদস্য তার শার্টের কলার চেপে ধরে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে, আর আরেকজন তার শরীরের পেছনের অংশে, বিশেষ করে পশ্চাৎদেশে একের পর এক লাথি দিয়ে যাচ্ছে। দুচারটা লাথি খেয়ে যেই রায়হান বলে ওঠে যে, "সত্যি বলতেছি, আমি করিনাই", তার সাথে সাথেই পরের লাথিটা যেন আরো জোরে এসে পড়ে তার পশচাৎদেশে, আর পুলিশের লোকটা বলতে থাকে, "তাইলে পালাইতেছিলি ক্যান, হারামজাদা! পালাইতেছিলি ক্যান?" লাথিগুঁতো খেতে খেতে পুলিশের গাড়ীতে উঠতে উঠতে রায়হান দেখতে পায় আশেপাশে প্রচুর দর্শকের ভীড় জমে গেছে। রূপালী পর্দায় না হলেও এমন এক জীবন্ত নাটকের মূলচরিত্রে তার অবতারণা হয়ে যায় যে জীবনের এহেন করুণ মুহুর্তেও সে ভাবতে পারে যে তার নাটক টিভিতে দেখালেও এত মানুষ নিশ্চয়ই দেখতনা। তবে ঘটনার আকস্মিকতায় এহেন ভাবনায় আনন্দিত হতে হবে না কষ্ট পেতে হবে সেটা বুঝে উঠতে পারেনা রায়হান। কারণ ঠিক কোন অপরাধে ফেঁসে যেতে যাচ্ছে সে সেটা জানা থাকলেও এর শাস্তি যে কতটা ভয়াবহ তা সেই মুহূর্তে তার মাথায় খেলেনি।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.